আমিও বাধ ভাংতে চাই... আম্মু, তুমিতো এখন অনেক ছোট। এই কথাগুলা বুঝা তো দূরের কথা, শোনার বয়েসই তোমার হয়নি। কিন্তু জানো, আমি জানিনা এই কথাগুলো তোমাকে বলা পর্যন্ত আমি থাকবো কিনা জানিনা। তাই অনেক মানুষকে বলে যেতে চাই যেনো ওরা তোমাকে বলে দেয়।
আম্মুজী, এটা আমার বন্ধুদের কথা।
ওরা কারা জানো? যারা তুমি আসার আগেই তোমাকে ভালোবেসেছিলো। আমার চে বেশি। আমি তখন 4/2 মাত্র শুরু করেছি আর ভাবছি তোমাকে নিয়ে কিভাবে এত্তো পথ পার হব? প্রথমে একজনকে বলেই আমার সাহস শেষ! তোমার ওই খালামণিটাই সবাইকে বলেছে আর সবাই যে আমাকে কেমন একটা অভ্যর্থনা দিলো, জানো? আমার মনে হল, হ্যাঁ, সেই প্রথমবার, যে আমি অনেক বড় একটা দায়িত্ব নিয়েছি,যেটা আসলেই অনেক সাহসীদের কাজ। এরপর শুরু হোল আমাকে সাপোর্ট দেয়া। জানো তোমার এই খালামণিগুলো আমাকে এক মহূর্তের জন্যেও চোখের আড়াল করেনি।
তখন চলছে থিসিস নিয়ে চরম দৌড়াদৌড়ি। প্রতি রবি আর বুধবারে ঢাউস একটা ব্যাগ আর সাথে ল্যাপটপ নিয়ে ক্যাম্পাসে যেতাম আমি। গিয়ে কি দেখতাম জানো? সকাল ৮টায় আমার জন্য কেউ না কেউ সিভিল বিল্ডিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আমার হাত থেকে জোর করে ব্যাগগুলো নিয়ে ক্লাসে দিয়ে আসতো ওরা। শত আপত্তিতেও কান না দিয়ে।
আমার নির্ঘুম রাতগুলার কষ্টগুলো তখন কোথায় যেনো হারিয়ে যেতো!
আমার তখন অনেক ক্ষুধা লাগতো। এত্তোবার নামতে হলে আমার অনেক কষ্ট হোত। কিন্তু ওরা কি করতো জানো? আমাদের তখন এক এক জনের এক এক জায়গায় ক্লাস হয়। তবু যে যখনই ক্যাফেতে যেতো আমাকে একবার জিজ্ঞেস করে যেতো। আর দুপুরের খাবারের বেলায় তো কথাই নেই।
হাতে গোণা কয়েকদিন ছাড়া আমাকে ওরা ওই সময় নিচে নামতেই দেয়নি। এজন্য অনেকদিন ওদের অনেক কষ্টও হয়েছে, একসাথে নিজেরা খেতেও পারেনি। তাতে কি? তোমাকে ওরা ভালোবাসতো যে খুব!
আরো কিছুদিন পরের কথা। তুমি তখন আর একটু বড়। একজন আমাকে বলে রেখেছিলো আমি প্রথম যখন তোমাকে টের পাবো ওকে যেন জানাই, তক্ষুণি।
হলের র্যাগের জন্য আমরা সবাই সেদিন হলে ছিলাম। সারারাত না ঘুমিয়ে গল্প করেছি। রাত মনে হয় তখন দেড়টা। আমি প্রথম তোমাকে টের পেলাম। ওই খালামণিটা কিভাবে যেনো বুঝে গিয়েছে! আর তখন সবার কী যে আনন্দ!
আমার তখন অনেক দোষ।
আমি একটু চেয়ার দুলিয়ে কাজ করতে পারি না, টেবিলের কোণায় দাঁড়াতে পারিনা। কেউ না কেউ ছুট্টে আসে। আমি নাকি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি। বোঝ! আর ওরা কেউ তখন ব্যস্ত আমাকে জুস কিনে পরীক্ষার হলে দিয়ে আসতে, অথবা আমার ক্লিয়ারেন্সের ফর্মে সিগনেচার যোগাড় করতে।
এরপর তুমি যখন চলেই এলে, সব্বাই কী যে খুশী।
এক এক জন এসে তোমাকে কোলে নিয়ে বসে থাকতো আর তোমার এই রাতজাগা আম্মুটা স্বার্থপরের মতো ঘুমিয়ে নিতো। ওদের মেহমানদারী না করেই। আর কত্তগুলা খালামণি তোমাকে দেখতে এসেছে তিন মাস পর। আমার অনেক অভিমান হয়েছিলো। ওরা কেনো দেরী করেছিলো জানো? নিজেরা কাপড় কিনে আর ডিজাইন দিয়ে তোমার জন্য জামা বানিয়ে এনেছিলো।
বিশ্বাস কর মা, আমি এত্তো ভালোবাসা মাখা উপহার আর কোনদিন পাইনি।
তোমাকে আর কত্তজনের কথা বলবো বলো? আম্মু যাদের সাথে স্কুলে পড়েছি সেই বন্ধুদের কথা তো তুমি জানোই। এক এক জনের বাসা এক এক জায়গায়। তবু শুধু তোমার জন্য ওরা একসাথে হয়ে আমাদের বাসায় আসতো। ফোনে, নেটে, এসএমএস করে সারাক্ষণ খবর নিতো তোমার,আজও নেয়।
আম্মুজী, সব কথা লিখতে গেলে বিরাট বড়ো একটা বইই হয়ে যাবে। তুমি ঠোঁট উল্টিয়ে ভাবতে বসবে, আম্মু এদ্দিন পর সব বাড়িয়ে বাড়িয়ে লিখেছে। বিশ্বাস কর সব তো লিখিই নাই, এগুলো লিখতেই আমার চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে। জানিনা রে মা,তুমি না আমি এতো ভাগ্যবতী যে আল্লাহ আমাকে এমন বন্ধু দিয়েছেন। তুমি তোমার এই খালামণিগুলোকে কক্ষণো ভুলে যেওনা।
ওদের বাচ্চাদেরকেও অনেক আদর কোর। আমি যে ওদের সে আদর ফেরত দিতে পারিনি আম্মু, চেষ্টাও করতে পারিনি। সে আমারই দোষ। তুমি আমাকে এত্তো ব্যস্ত করে রেখেছো আমি কারুর সাথে যোগাযোগও করতে পারিনা। তুমি বড় হলে ওদের কাছে আমার হয়ে মাফ চেয়ে দিয়ো, আচ্ছা? আর আল্লাহর কাছে দোয়া কোর, যেনো আমরা আল্লাহর কাছে গিয়েও এমনই একসাথে থাকতে পারি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।