আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কলিকালে রাজা-রানীদের কত কিচ্ছাকাহিনী দেখতে হবে!

ছোটবেলায় যত রাজা-রানীদের গল্প পড়েছি বা শুনেছি, সব গল্পেই তাদের থাকে একচ্ছত্র ক্ষমতা। ইচ্ছে হলে একে বনবাসে পাঠায়, তাকে বনবাসে পাঠায়। ইচ্ছে হলে উজিরের নাক কেটে দেয়। ইচ্ছে হলেই যা ইচ্ছে তাই করে। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না।

সবাই খালি জ্বী হুজুর জ্বী হুজুর করে। কারো উপর রাজা-রানী যদি সামান্য কারণেও নাখোশ হয়, তাহলেই সর্বনাশ, রাজা-রানীর হালকা ইশারায় জল্লাদ এক কোপে ঐ লোকের কল্লা কেটে ফেলে। কিন্তু সবসময় জানতাম এসব রুপকথার গল্প। গল্প শোনার বয়স পিছনে ফেলে এসে এখন টের পাচ্ছি, আমরা বড়রা কী বোকা!! ছোটদের গল্পই তো ঠিক, আসলেই তো রাজা-রানীরা যা ইচ্ছে তা করতে পারে। আমরা তো গল্পের দেশেই বসবাস করি।

আমাদের দেশের বাস্তবতা বরং গল্পের চে’ও আজগুবী। বাস্তবের রাজা-রানী গল্পের রাজা রানীর চে’ও শতগুনে বেশী ক্ষমতাবান। এরা ইচ্ছে হলেই সাংবাদিক জামাই-বউ দেরকে ঘরে ঢুকে ছোট্ট বাচ্চার উপস্থিতিতে নৃশংসভাবে ছুরি দিয়ে ঘা দিয়ে দিয়ে মারতে পারে। এরা ইচ্ছে হলেই যাকে তাকে গুম করে ফেলতে পারে। এরা ইচ্ছে হলেই কেউ কোনো দোষ না করলেও, এমনকি সে যদি সামান্য দর্জিও হয়, তাকেও দিনে-দুপুরে-প্রকাশ্যে সবার চোখের সামনে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে খুন করে ফেলতে পারে।

এরা ইচ্ছে হলেই যাকে তাকে যখন তখন যেখানে সেখানে থেকে ধরে বেঁধে নিয়ে যেতে পারে। এরা ইচ্ছে হলেই এমনকি কোর্টের দরজা থেকে সাক্ষী তুলে নিয়ে যেতে পারে। এরা ইচ্ছে হলেই পুতুল নাচের মত সুতার আগায় বিচারকদেরকেও নাচাতে পারে দেখতে দেখতে এখন বুড়াবুড়িদের মত বলতে ইচ্ছে হয়, বাউরে, কলিকালে রাজা-রানীদের আরো যে কত কিচ্ছাকাহিনী দেখতে হবে! কাউকে আসলে চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার দরকার নেই দেশে কী হচ্ছে, কারন অবস্থা এখন এমন, ঘরের দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছে রাজা-রানীদের ইচ্ছের ফলাফল। আপনার ছোট মেয়েটা স্কুল থেকে ফিরবে তো? নাকি রাস্তায় সরকারী বা বিরোধী দলের প্রতাপশালী নেতার বখাটে ছেলেটা তুলে নিয়ে যাবে? আপনার কলেজ-ইউনিভার্সিটি পড়া ছেলেটা দিন শেষে ফিরে আসবে তো? নাকি ডিবি পুলিশ হঠাৎ যেখানে পাবে সেখান থেকেই আপনার ছেলেকে তুলে নিয়ে যাবে আর আপনার কাছে ফোন আসবে মোটা অংকের টাকা যোগাড় করতে, নিজের গায়ের রক্ত বিক্রি করে হলেও পরিচিতদের হাতে পায়ে ধরে হলেও সেই টাকা যোগাড় করে ছেলেকে আনতে গিয়ে দেখবেন অলরেডী তাকে মেরে-পিটে হাফ-মরা করে ফেলেছে? আপনি অফিস থেকে সুস্থভাবে ফিরবেন তো? নাকি রাস্তায় ফেরার পথে হঠাৎ একদল লোক আপনাকে ঘিরে ধরে কোপাতে কোপাতে বা ককটেল মেরে মেরেই ফেলবে? অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারন রাজা-রানীদের ‘সংস্কৃতি’র প্রভাব জনগনের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে।

তাই দেখেন না, রাজা-রানীদের মত উজির-প্রজারাও প্রায় সবাই এক ধরনের মব-লিঞ্চিং এটিচ্যুডে ভুগছে। যে যাকে যেখানে পারে ধরে রাস্তায় ফেলে কোপাকুপি করে বা বোমাবাজী সহ যত নির্মম-নির্দয়-অমানবিকভাবে সম্ভব ততভাবে মেরে ফেলার এক প্রতিযোগীতা যত্রতত্র। বলতে গেলে বাংলাদেশে জাতিগত স্বভাবে পরিনত হয়েছে এই কোপাকুপি বা বোমাবাজী। পত্রিকার পাতা খুললেই লম্বা লম্বা কিরিচ-দা হাতে ‘স্টুডেন্ট’দের ছবি! চোখে মুখে কাউকে কোপানোর জন্য প্রবল কিলবিলে ইচ্ছে চিকচিক করছে। আর ধরুন, এইরকম চরম অনিশ্চিয়তায় ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে আপনি কিছু বলতে গেলেন, সেরেছে! খবরদার, রাজা রানীদের নাখোশ করলে কিন্তু সাগর-রুনির মত রাত-বিরেতে আপনাকেও গপাগপ খেয়ে ফেলবে দানবরা।

আপনার বাচ্চা হয়ত সাগর-রুনি’র বাচ্চার মত সৌভাগ্যবান নাও হতে পারে, সেও হয়তো গাপ হয়ে যাবে, কেমনে বলি! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.