আবীর শাকরান মাহমুদ এক বছর,
১২ মাস,
৩৬৫ দিন,
৮৭৬৬ ঘন্টা।
একটি বছর কিন্তু কম সময় না।
এরকম বহু বছরের একটা বছর চলে গেল তোমাকে ছাড়া।
"কী সহজে হয়ে গেল বলা,
কাঁপলো না গলা
এতটুকু, বুক চিরে বেরুলো না দীর্ঘশ্বাস, চোখ ছলছল
করলো না এবং নিজের কন্ঠস্বর শুনে
নিজেই চমকে উঠি, কি নিস্পৃহ, কেমন শীতল। "
আমার প্রজন্মের অন্য বাকি চারজনের মত ছোটবেলা আমার কিন্তু তোমাকে নিয়ে কাটেনি।
তখনো রবীন্দ্র-শরতের ক্লাসিকের ঘেরাটোপ থেকে বেরুতে পারিনি। হিমু-রূপা, মিসির আলী, শুভ্র তখনো আমাকে টানেনি।
কেউ তোমার বইয়ের ভক্ত শুনলে নাক শিটকাতাম। কত পাতলা কথা লিখে লোকটা! ইনার বই কীভাবে মানুষ কিনে!!!
হুমায়ূনের বিশালতা দেখলাম ০৯ এর একুশে বইমেলায়। সবে মাত্র আমার গল্পের বইটি বের হয়েছে।
কিছুদূরেই অন্যপ্রকাশ, অন্বেষার স্টল। দেখতাম, তোমার বইয়ের কাটতি। সবার হাতে হাতেই তোমার বই। খুব ঈর্শা হত। সিরিয়াসলি, কী লিখেন উনি?
বাসায় এসে ধরলাম বাসায় পড়ে থাকা ‘শঙ্খনীল কারাগার’।
এরপরই ধরলাম ‘নন্দিত নরকে’।
ছোট দু'টা বই। কয়েক ঘন্টার মাঝে শেষ হয়ে এল। বের হয়ে আসলাম এক নরক থেকে। ঢুকে পড়লাম হুমায়ূনের ভক্তের কারাগারে।
পরদিনই কিনে ফেললাম গল্পসমগ্র। এখনো মনে আছে প্রথম গল্পটি।
‘রূপা’।
জীবনে কম শর্টস্টরি পড়িনি। কিন্তু ‘রূপা’ আমার পড়া সেরা রোমান্টিক গল্প।
এরপর তোমার বই কম পড়িনি। পুরা জীবনীও গিলেছি। বাদ দেইনি বলপয়েন্ট, কাঠপেন্সিল, ফাউন্টেইন পেন, রংপেনসিল , হোটেল গ্রেভার ইন কোনটাই।
মনে পড়ে ‘জোছনা ও জননী’ পড়ে কেঁদেছিলাম। সত্যিই...
একটি বই মানুষকে কিভাবে আটকে রাখতে পারে, সেটা বাংলা সাহিত্যে খুব বেশি লেখক করে দেখাতে পারেনি।
মানুষের চোখে, হয়তো তোমার সব লেখা সমান গভীর নয়। কিন্তু তুমি দেখিয়েছ, ইচ্ছে করলেই পাশের বাড়ির মেয়েটির চোখ সাগরের চেয়েও গভীর হতে পারে। বাসার কাজের ছেলে হয়ে ওঠে প্রাকৃত বুদ্ধিজীবি। বেকার যুবক হয়ে ওঠে মহাপুরুষ। কিংবা রাস্তার ভিখারী কিংবা রিকশাওয়ালাও হতে পারে গভীর দার্শনিক।
তোমার সার্থকতা এখানেই।
এ বছর তুমি ছিলে না।
বইমেলায় আগের মত ভিড় ছিল না।
ঈদে টিভি চ্যানেলে ছিল না বিনোদন।
উপহার হিসেবে নতুন বইয়ের কাটতি গেছে কমে।
যে মেয়েটা বছরে একটা বই কিনে পড়ত, তার বইয়ের কোটাও শূন্য থেকে গেল।
সাহিত্য, জনপ্রিয়তা, গণমাধ্যম- সব শাখায় পুরাপুরি সফল এরকম একজন সব্যসাচী আসতে আরো কত বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে আমাদের, জানিনা।
হুমায়ূন,
তুমি শুধু লেখক নউ। কোন যুগও নউ।
বাংলা সাহিত্যে তুমি এক শতাব্দী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।