বসন্তে মাতাল আমি এক অপূর্ণতা ... সারাদিন যেই ছেলেটা মাঠে পড়ে থাকতো। শুকনো মৌসুমে ক্রিকেট আর বর্ষা এলেই ফুটবল নিয়ে মেতে থাকতো, ওয়াপদা'র পেছনের মনির দেওয়ানির দীঘি যারা লাফালাফি করে ব্যস্ত রাখতো সেই ছেলেটা মাঠ ছেড়ে ঘরে। হঠাত করে সেই ছেলেটার ঘরমুখি হওয়ায় আশ্চর্য হয়ে উঠতে হয় বৈকি। আম্মা বলে কিরে বাড়িতে ক্যান যা বাইরে যা। মাঠে যা।
আমি মাঠে যাই না। বাসায় থাকি সন্ধ্যার আগে বাসা থেকে বের হই এরপর রাতে জোসনা থাকলে উদাস হয়ে হাটাহাটি করি এরপর আবার বাসায় সেই আগের মত।
ইতোমধ্যে মাঠে আমি নেই কোথায় গেছি ইত্যাদি নিয়ে অনেক বন্ধুই চিন্তিত। আমাকে খুঁজে বেড়ায় তারা কিন্তু আমি নেই। বনে বাঁদারে, হাটে বাজারে আমি নেই।
আমি যে বাসায় থাকতে পারি এই চিন্তা তারা কল্পনাতেও আনতে পারে নি। অথচ আমি দিব্যি বাসায়।
তখন এইটে পড়তাম। স্কুল যাওয়া পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছি। সারাদিন বই নিয়ে ব্যস্ত।
দিনে দুইটাটা আড়াইটা অথবা তিনটা বই শেষ হয়ে যায়। বই বলতে একাডেমিক নয় হুমায়ুন আহমেদ নামের একজন লেখক আছেন তার উপন্যাস। ধারাবাহিক ভাবে তার 'হিমু' সিরিজের উপন্যাসগুলো পড়ছি। হিমু পড়তে পড়তে আমার অবস্থা অন্যরকম হয়ে গেছে। সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়ে লাইব্রেরি যাই দুই তিনটা বই উঠাই এরপর রেল কলোনীর দিকে উদাস ভবে হেটে আসি।
প্রাইমারি থেকে ছোটদের পাতার লেখাগুলো পড়তাম লেখা পাঠাতাম। সিক্সে উঠে বড়বোনদের কড়া নির্দেশেও উপন্যাস নামের নিষিদ্ধ বস্তু দুএকবার পড়েছি। সেভেনেও একই অবস্থা। এইটে উঠেই আমাকে আর পায় কে এই সুযোগেই এতোদিন ছিলাম। আমি বড় হয়ে গেছি।
এখন থেকে সব পোড়তে পারবো। যদিও সেবা প্রকাশনীর রহস্য পত্রিকা পড়া কখনই নিষিদ্ধ ছিল না তবুও অনেক সঙ্কোচ।
'তোমাদের এই নগরে' দিয়ে শুরু এরপর গোটা এইটে হুমায়ুন কম্পলিট দেয়ার চেষ্টা করেছি। লাইব্রেরি যখন যোগান দিতে পারে নি তখন এগিয়ে এসেছে বন্ধু শাকিল। সে ইয়া বড় বড় সমগ্র কিনে আনতো।
আগে আমাকে৩ই পড়তে দিতো তারপর সে। হুমায়ুন আর হিমু বলতে তখন অন্যরকম অবস্থা।
চরিত্রে ভয়াবহ ভাবে 'হিমু' ভর করেছে। হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে এতোটাই পাগল হয়ে গেলাম যে আমার বন্ধু দ্বীপ, শিমুল কে নিয়ে 'হুমায়ুন অনুরাগী সংঘ' নামে একটি সংগঠন খুলে ফেললাম। বিভিন্ন পত্র পত্রিকার পাঠক পেজে লেখালেখি করতাম।
সেই সুবাদে 'আজকের কাগজ' পত্রিকার 'কাগজ পাঠক' পেজে হুমায়ুন অনুরাগী সংঘের কমিটি ও বই সাহায্য চেয়ে লিখলাম। আতিয়ার ভাই নামে এক বড় ভাই ছাড়া আর কেউ সাহায্য করতে আসেনি। নাইনে উঠেছি ওঠার পর একদিন স্কুলে গেলাম। হিসেব করে দেখা গেলো দুইদিন স্কুলে গেছি। আর গড়ে আড়াইটা উপন্যাস শেষ করেছি।
অবশ্য এরমধ্যে সুনীল, শীর্ষেন্দু, বুদ্ধদেব, বিভূতি, সুচিত্রাও আছে।
নাইনেও একি অবস্থা। স্কুলে রেজিস্ট্রেশন শেষ আমি জানিই না। যখন জানলাম তখন বলা হলো আমাকে ২০০৫ সালে এসএসসি দিতে হবে। তখন ২০০২ চলছে।
হিমুগিরি ছুটে যাওয়ার মত অবস্থা।
আরেক ফ্রেন্ড জুটেছে সেও আরেক হিমু। দুইজনেই সন্ধ্যার পর ঘন্টা দুই অথবা তিন হেটে ঘরে ফিরি। যাই হোক প্রাইভেটে এক স্যারের কাছে অঙ্ক করতে শুরু করেছিলাম। সেই স্যার কে হাতে পায়ে ধরে স্কুলে নিয়ে গিয়ে প্রধান অফিস সহকারিকে রাজশাহী পাঠাই।
এরপর হয় রেজিস্ট্রেশন। ২০০৪ সালেই এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। নাইনের শেষের দিকে হিমুত্ব কমতে থাকে। সেই হিমালয়ের উচ্চতা কমে গেলেও এখনো শেষ হয়ে যায় নি। আকাশে চাঁদ উঠলে গৃহত্যাগী হতে না পারলেও হেটে হেটে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরি... বাইরে হিমু না থাকলেও বুকের ভেতরে এখনো হিমু থেকে গেছে...
হুমায়ুন আহমেদ কে নিয়ে লেখা-
একটি নোবেল পুরস্কার এবং হুমায়ুন আহমেদ
হিমুকে নিয়ে একটি গল্প লিখেছিলাম।
হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পর। বোঝাতে চেয়েছি হিমুদের প্রস্থান নেই-
হিমু আছে! এইতো হিমু
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।