আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ম্যাকগাইভার বেলা


অবশ্য পেটের টানে আবার ফিরে আসি স্বপ্নের নায়কের কাছে। আহা সেই নায়ক। কি অসাধারন তার হাসি। দেখলেই নিজেকে হারায়ে ফেলি। উফ- কি সুন্দর চিন্তা ভাবনা।

কোত্থেকে কোথায় কি নিয়া যে চিন্তা করে কে জানে। আহা এমন একজন মানুষ হতে কে না চায়? ছোট বেলা আমি তো ম্যাকগাইভার দেখার জন্য পাগল হয়ে যেতাম। আমাদের বাসায় ছিল একটা সাদা কালো টেলিভিশন। সেটাতে আমি সবাই কে নিয়ে বসে থাকতাম। আমার সব সময়ের সঙ্গী হিসেবে পেতাম বাসার সবাইকে।

কিন্তু আমি যা বান্দর আছিলাম- আমার ম্যাকগাইভার দেখার সময় ম্যাকগাইভারের মত করে দেখা চাই। সুতারাং এখন হবে ম্যাক ম্যাক পরিবেশ। যেদিন ম্যাকগাইভার দেখাবে সেদিন বাসায় যত দড়ি পাওয়া যেত সব একসাথে করতাম বিকাল থেকে। টিভি টা ছিল আমাদের যে রুমে সেই রুমে দুইটা খাট ছিল। আর টিভি ছিল সেই দুই খাটের মাঝা মাঝি।

তখনকার দিনের খাটের স্ট্যান্ড ছিল মশারি তানাবার জন্য। আমি সেই স্ট্যান্ড গুলোকে খুটি বানায় পুরা রুমে দড়ি টাঙাইতাম। এটা আসিলো আমার ম্যাকগাইভার দেখার ম্যাকগাইভারি স্টাইল। কেউ কিছু বললেই শুরু হইয়া যাইত আমার কান্না কাটি। আমার চিৎকার শুনে সবাইকেই এই দড়ি দড়ি পরিবেশের সাথে ম্যাকগাইভার দেখতে হইত।

আহা কি ছিল সেই দিন গুলি। আমার একটা বিশাল ঝুড়ি ছিল। সেই ম্যাকগাইভার এর মত আমার তো এত বুদ্ধি ছিল না( এখন ও নাই) তাই আমি একটা ঝুড়ি রাখতাম আর তাতে থাকতো আমার জমানো যন্ত্রপাতি(বাসার যত ভাঙ্গা চোরা ইলেকট্রনিক জিনিস পত্র) আমি সেগুলা দিয়া স্কুল থেকে এসে খেলতাম নিজের সাথে নিজে। নিজেকে ম্যাকগাইভার বানায়া টিস টিস ডূম ডূম মুখে শব্দ করে খেলা। উলটা পালটা চিৎকার ।

আমার সাথে একবার আমার এক জিগরি দোস্ত আসল খেলতে। কিন্তু আমার খেলার সাথে খাপ খাওয়াইতে না পেরে দোস্ত আমার হাত ভাইঙ্গা ফালাইসে। আমি হেরে কইসিলাম ম্যাকগাইভার স্টাইলে গামছা রে প্যারাশুট বানায়া ছাদ থেকে ( একতলা ) লাফ দিতে। ঐ বেচারা যার পর নাই দিল লাফ। ঐ টা ছিল আমার পরীক্ষা মূলক অভিযান।

আমার এর আগে বান্দরামির জন্য হাত ভেঙ্গে গেছিল তিন বার, মাথা ফাটছিল ৪ বার তাই পরীক্ষা টা বন্ধুর উপর চালাইয়া দিলাম। দোস্তের ওইখান থেইকা চ্যাংদোলা হইয়া পড়তে দেখে আমি দৌড়াইয়া পালাইছিলাম ঐ খান থেকে। পরে আমি অবশ্য মাফ চায়া নিসি। ঐ বন্ধু আমার সাথে কোন দিন আর খেলতে আসেনাই-আমি খেলতে কইলেই আমারে এড়ায়া যায়( এখন ও আমারে ডরায় ) তারপর একদিন ভুত চাপল ম্যাকগাইভারের মত আমার ও একটা ছুড়ি লাগব। কিন্তু আমি ছুড়ি পাই কই? আমার ছোট কাকারে ধরলাম- কইলাম কাকা আমারে একটা ছুড়ি কিনা দাও- উনি আমারে নিয়া মার্কেটে অনেক ঘুরল- কিন্তু ছুড়ি পাওয়া গেলনা।

শেষে আমি নিজেই নিজের ছুড়ি বানাইলাম বাঁশ এর কাঠি দিয়া আর স্কুলে তো আমি তখন হিরু । কিছু হইলেই আমি আমার রাবার ব্যান্ড লাগানো বাঁশ আর আইসক্রিমের কাঠি লাগানো ছুড়ি দেখায়া কইতাম দেখ এটা কি বানাইসি । অবশ্য কাজের সময় এই একটা জিনিস আমার সাথে বিট্রে ও করছিল। আমি খুব আশায় আসিলাম এটা দিয়া ম্যাক স্টাইলে সব কিছু খুলা যাবে। আমি একদিন বাসার টেপরেকর্ডার টা মজা কইরা খুলতে যাইয়া ছুড়ি টা ভাইঙ্গা ফালাইসি কি আর করা শেষে ছুড়ি বানাও বাদ দিলাম।

ক্লাস নাইনে থাকতে আমার এক বন্ধুর কাছে দেখলাম সেই ম্যাক ছুড়ি। কিন্তু আমি এটা কেম্নে কিনি? আমার কাছে তো টাকা নাই। শেষে জমাতে শুরু করলাম। তখন এটার দাম আছিল ৯০০ টাকা। আমি প্রতিদিন ৫ টাকা করে জমাতে লাগলাম।

হুম ২০০ টাকায় এসে আমার সঞ্চয় থেমে গেল । পরীক্ষার পর সেই টাকা আর বৃত্তি পরীক্ষার পাওয়া টাকা দিয়ে কিনে ফেললাম একটা হাওয়াইন গিটার ( আমার এক গাধা ভাই বুদ্ধি দিসিল হাওয়াইন কেনার জন্য) কিন্তু এটা শিখতে পারলাম না। লেখা পড়ার জন্য শেখা হয়নাই। এখন ও পড়ে আছে বাসায় এক কোনায়/// ম্যাকগাইভারকে নিয়া গুজবের অভাব ও আছিলনা আমাদের বন্ধুদের মাঝে। একদিন ক্লাস ৩ তে থাকতে শুনলাম ম্যাকগাইভার মারা গেছে।

আমি বিশ্বাস করিনাই। আমার এক ভাই কইল একি কথা। এখন থেকে নাকি আরেকজন অভিনয় করবে-শুনেই মেজাজ খারাপ হইয়া গেল সবার উপর। আমি দুইদিন শোক পালন করে দেখি আবার ম্যাকগাইভার দেখায়। আমি তো ব্যাক্কল হইয়া গেলাম।

। তারপর সেই ভাই রে আচ্ছাসে ধোলাই। ছোট বেলা বড় ভাই দের মাইর দেয়া জায়েজ আছিল। এখন নাই। এখন ও আমি সেই প্রেম থেকে বাইর হইতে পারিনাই।

এখন ও ম্যাকগাইভার এর এপিসোড অফিসের সার্ভার থেকে নামাই আর দেখি। কত কারেন্ট শক খাইসি, কত আছাড়, কত পরীক্ষা করতে যাইয়া বাসায় জিনিস নষ্ট করছি, কত ক্যালকুলেটর ওলট পালট করে ফেলসি। কিন্তু আমার ম্যাকগাইভার প্রিতি কমেনাই। কিছু ছবি দিলাম ম্যাকগাইভারের। আসেন দেখে নেই সেই ম্যাকগাইভার কে- কেমন আছেন ম্যাকগাইভার? সেই যৈবনের ম্যাকগাইভার ম্যাকরে নিয়া সেইকালের পোলা পাইনের পাগলামি খালি গায়ে ম্যাকগাইভার কি দারুন বুদ্ধি দিপ্ত চেহারা- ( মাসুদ রানার চাইতে ও সুন্দর ) এই পোষ্টার টা আমি ১০টাকা দিয়া কিনসিলাম সেই ক্লাস ৪ এ থাকতে সেই সময়ে মেয়েদের কাছে ক্রেজ ম্যাকগাইভার এই পোষ্টার আমার ছোট মামা কিনা দিসিল আমাকে কিন্তু কালকে দেখি আমার সেই ম্যাক বূড়া হইয়া গেছে এখন এই অবস্থা ম্যাকের অবশেষে ম্যাকগাইভার ( আসল নাম এখন অনেকেই জানেনা) এর দীর্ঘ জীবন কামনা করি।

আজকের এই পাগলা কবির জন্ম যে এই ম্যাকের জন্য। এই ম্যাক বেঁচে থাকুক সকল শিশুর অন্তরে এই কামনায় ম্যাকগাইভারীয় অন্তিম শুভেচ্ছা  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।