সতর্ক করন " জামাত শিবির , যে কোন রকমের মৌলবাদী, ধর্ম ব্যাবসাই ও বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত সকল জানয়ারের প্রবেশ নিষেধ" ৩১ আগস্টের মধ্যে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদচ্যুত না করলে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান ধর্মঘট করে ঈদ পালনের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী জনতা।
গতকাল বুধবার শহীদ মিনারে আয়োজিত প্রতিবাদ কর্মসূচিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। পরীক্ষা ছাড়া চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার সুপারিশ করায় সমাবেশ থেকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানেরও পদত্যাগ দাবি করা হয়। দেশের পরিবহনব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও পরিবহন খাতে দুর্নীতি বন্ধেরও দাবি জানানো হয়।
সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং স্বাভাবিক নিহত হওয়ার নিশ্চয়তা দাবি করে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ।
২৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টায় প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে শহীদ মিনারে উপস্থিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। সাড়ে ১১টায় তাঁরা সবাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে যান। এরপর নির্ধারিত সময়েই শুরু হয় প্রতিবাদ সমাবেশ।
সমাবেশের শুরুতে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘কোনো সভ্য দেশে এভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মরতে পারে না।
প্রতিদিন মানুষ মরবে আর আমরা নিশ্চুপ হয়ে থাকব, তা হতে পারে না। সড়কের বেহাল দশার দায় অবশ্যই যোগাযোগমন্ত্রীর। ’
আবুল মকসুদ বলেন, ‘তারেক-মিশুকের মৃত্যুর পর আমরা ভেবেছিলাম যোগাযোগমন্ত্রী নিজেই পদত্যাগ করবেন। কিন্তু সেই বোধ তাঁর নেই। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা তাঁকে পদচ্যুত করার দাবি জানাচ্ছি।
এ দাবি মানা না হলে আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঈদ পালন করব। ’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মতো প্রতিভাবান লোক চলে গেলেন। এই দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং গুরুত্বপূর্ণ একজন মন্ত্রী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আমি তাঁকে বলতে চাই, এসব কথা বলে সাধারণ জনগণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার না করে, কারা এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত তাদের নাম প্রকাশ করুন। তাদের বিচার করুন। ’
মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত অদক্ষ মন্ত্রীদের কারণে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাধারণ মানুষের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে দুই মন্ত্রীর কারণে দূরত্ব ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। কাজেই এসব মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।
তাঁদের পদচ্যুত করেন। তাহলেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাধারণ মানুষের দূরত্ব কমবে। ’
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘৩১ আগস্টের মধ্যে ব্যর্থ মন্ত্রীরা পদত্যাগ না করলে শহীদ মিনারে ঈদ পালনের যে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, আমরা তাতে যোগ দেব। ’
মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক কামাল লোহানী বলেন, ‘মানুষ যে ভোট দিয়েও বিপদে পড়তে পারে, সেটা আমরা এখন এসে বুঝতে পারছি। আমরা অনেক আশা করে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিলাম।
কিন্তু আজ দ্রব্যমূল্য, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা সমস্যায় মানুষ আশাহত। মহাজোট সরকার মানুষের মনোভাব বুঝতে পারছে না। ’
কামাল লোহানী বলেন, ‘নৌমন্ত্রী আজ কোনো রকম পরীক্ষা ছাড়াই চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার কথা বলছেন। আর যোগাযোগমন্ত্রী একজন মহান ব্যক্তিত্ব। তিনি গাড়ি-বাড়িসহ কোটি টাকার মালিক।
তিনি সৈয়দ বংশের লোক। সাধারণ কোনো কাজ তিনি করেন না। কোটি টাকা দিয়ে তিনি অফিস সাজান। তিনি কোটি টাকার সেতু নিয়ে ব্যস্ত। এসব অদক্ষ মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিতে হবে’।
৩১ আগস্টের মধ্যে ব্যর্থ দুই মন্ত্রী পদত্যাগ না করলে শহীদ মিনারে অবস্থান সমাবেশ করব আমরা। ’
কামাল লোহানী বলেন, ‘হাসপাতালে মিশুক মুনীরের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে যোগাযোগমন্ত্রী বলেছেন, আপনাদের ড্রাইভারের দোষ ছিল। কী হাস্যকর আমাদের মন্ত্রী। কোন পরিস্থিতিতে কী কথা বলতে হয়, সেই মানবিক বোধটাও তাঁর নেই। আপনারা এত রসিকতা করছেন কীভাবে? জনগণ তো আপনাদের রসিকতা করার জন্য নির্বাচিত করেনি।
’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘দেশে এখন আদর্শ নয়, লুটেরাদের রাজনীতি চলছে। এই রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। আমি সাধারণ মানুষের এ কর্মসূচিতে সংহতি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দেশবাসীকে এ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। ’
অনুষ্ঠানে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যু ৎ -বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বাংলাদেশে দুর্ঘটনা কোনো আকস্মিক বিষয় নয়, দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত থাকা একটি বিষয়।
তাই এর দায়দায়িত্ব অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে। কিন্তু যোগাযোগমন্ত্রী সেটি করছেন না। কারণ তিনি দেশি-বিদেশি ঠিকাদারদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত।
ঈদের দিন শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘যাঁর হারিয়েছে তিনিই জানেন এর কষ্ট। কয়েক দিন দুর্ঘটনা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, কিন্তু কারও কোনো আচরণের পরিবর্তন হয়নি।
সারা হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের জন্য যে আইন রয়েছে তাতে অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে। অনেকেই এমন আইন নিজেদের সুবিধার্থে ব্যবহার করেন এবং এসব আইনের সাজাও খুব কম। যে সরকার যখন যেভাবে ইচ্ছা আইন বানিয়ে নিয়েছে। এসবের পেছনে রয়েছে যোগাযোগ ও নৌ মন্ত্রণালয়ের হাত।
অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিক মৃত্যু কামনা করি।
আমরা বছরের পর বছর শোক করছি। এভাবে শোক করতে করতে আমরা পাথর হয়ে যাব। তাই আর শোক না করে রাস্তায় নামতে হবে। সড়কের এ অবস্থার জন্য দায়ীদের অপসারণে বাধ্য করতে হবে। ’
মিশুক মুনীরের ছোট ভাই আসিফ মুনীর বলেন, ‘আমি জানি না যোগাযোগমন্ত্রী ঈদের আগেই পদত্যাগ করবেন কি না।
আর শুধু মন্ত্রীর পদত্যাগই নয়, আমাদের পুরো পরিবহনব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে। ’
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
নারী নেত্রী ফরিদা আকতার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি তারিক আলী, চলচ্চিত্র গবেষক মানজারে হাসিন মুরাদ, এটিএন নিউজের বার্তা সম্পাদক প্রভাষ আমিন, চেঞ্জমেকার্সের সভাপতি তানভিরুল ইসলাম, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ অনন্য রায়হান প্রমুখ সমাবেশে বক্তব্য দেন। ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও রক্তদাতা সংগঠন সন্ধানীর ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী সিলেট থেকে এসে সমাবেশে যোগ দেন।
এ ছাড়া সেলিনা হোসেন, জুয়েল আইচসহ দেশের বরেণ্য ব্যক্তিরা এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্লাস্ট, ছাত্র ইউনিয়ন, জাতীয় ছাত্র সমাজ, নির্যাতনবিরোধী ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ, বি-স্ক্যান, কেপাং ফাউন্ডেশন, উবিনীগ, এটিএন নিউজসহ আরও অনেক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেছে। কানাডা, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে ফোন করে অনেক প্রবাসী এ কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানান।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।