আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়াশিংটনের সেই সাদাবাড়ি

'নিভৃত নয়নে যা ধরা পড়ে দৃশ্যপটে,স্মৃতি করে রাখব তারে আমার এই আতসকাচে । । ' একজন শখের চিত্রগ্রাহক সোভিয়েত রাশিয়া নখদন্তবিহীন হয়ে যাবার পর পৃথিবীর একমাত্র সুপার পাওয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । সেই অসীম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রটির রাজধানী ওয়াশিংটন ডি সি । এর নামকরণ হয়েছে একজন প্রেসিডেন্টের নামে ।

এর নানাবিধ আকর্ষণ সারা বছর পর্যটকদের কাছে আছে । সবচেয়ে বেশি আকর্ষণের হচ্ছে সেই সাদা বাড়িটা যা একনামে ''হোয়াইট হাউজ'' নামে পরিচিত । পটোম্যাক নদী তীরে ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটি মার্কিন প্রেসিডেন্সী, মার্কিন সরকার, ও মার্কিন জনগণের প্রতীক হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে । ১৭৯২ সালের অক্টোবরে আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন এই ভবনটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এর নির্মাণ কাজ তদারকীও করেছেন তিনি ।

যদিও তিনি এই ভবনে বসবাস করেননি । প্রেসিডেন্ট জন এ্যাডামস সর্ব প্রথম এই ভবনে বসবাস শুরু করেন এবং পরবর্তীতে প্রত্যেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই ঐতিহাসিক ভবনটিতে বসবাস করেন । প্রতিদিন দেশ বিদেশের প্রায় ৬ হাজার দর্শক এই ভবনটি পরিদর্শনে আসেন । তাই চলুন আমরাও ''হোয়াইট হাউজ'' থেকে ঘুরে আসি । আপনি কি জানেন আজ যে ভবনটিকে বিশ্বের সকলে একনামে ''হোয়াইট হাউজ'' হিসেবে চেনে আগে কিন্তু এর ভিন্ন নাম ছিল ।

প্রেসিডেন্ট প্যালেস, প্রেসিডেন্ট হাউস, এক্সজিকিউটিভ ম্যানশন ইত্যাদি নামের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে সর্বশেষ ''হোয়াইট হাউজ'' নামে পরিচিত হয় । ১৯০১ সালে প্রসিডেন্ট রুজভেল্ট এই নামকরণ করেন । আমেরিকার স্থপতি জর্জ ওয়াশিংটন ১৭৮৯ সালে যখন প্রসিডেন্ট নির্বাচিত হন তখন আমেরিকার জন্য একটা আলাদা ক্যাপিটাল সিটি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন । আর তখনই খুঁজে পেতে পটোম্যাক নদীর ধারে মেরীল্যান্ড এবং ভার্জিনিয়ার কিছু অংশ নিয়ে এই ক্যাপিটাল সিটির জন্য জায়গা নির্ধারন করেন । পরবর্তীতে এর নামকরণ হয় ওয়াশিংটন ডি সি (ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া) ।

আইরিশ বংশোদ্ভুত আর্কিট্যাক্ট জেমস হোবান এই হোয়াইট হাউজের নক্‌শা করেন । ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৮০০ সালে । ভবনটি নির্মাণে সেই সময় খরচ হয়েছিল প্রায় ৩০ লাখ ডলার । ওয়াশিংটন ডি সি এর কনটিটিউশন এভিনিউতে অবস্থিত হোয়াইট হাউজ ভিজিটর সেন্টার থেকে প্রতিদিন সকাল ৮:৩০ মিনিট থেকে ১০ টা পর্যন্ত ৬ হাজার টিকেট বিনামূল্যে বিতরন করা হয় দর্শনার্থীদের জন্য । একজন দর্শনার্থী নাম পরিচয় লিপিবদ্ধ করে তার নামে সর্বাধিক চারটি টিকেট পেতে পারেন ।

এই টিকেট সংগ্রহের জন্য ভিজিটর সেন্টারের বাইরে লাইনে দাঁড়াতে হয় । টিকেট কাউন্টার সকাল ৮ টায় খুললেও টিকেট সংগ্রহের জন্য ভোররাত থেকে লাইন শুরু হয়ে যায় । হোয়াইট হাউজ পরিদর্শনে আগ্রহীদের লম্বা ভীড় এড়িয়ে টিকেট প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে চাইলে যত ভোড়ে সম্ভব লাইনে দাঁড়ান উচিত । তবে আমাদের দেশের মত টিকেট ব্ল্যাকার আছে ওখানেও । যাদের কাছে প্রতি দশ ডলারে একটি টিকেট পাওয়া যায় ।

টিকেট হাতে নিয়ে চলে আসেন হোয়াইট হাউজের সিকিউরিটি গেটে । টিকেটের সিরিয়াল অনুযায়ী গাইড এসে এক একটা দল করে ভিতরে নিয়ে যাবে । ২০ জন থেকে ৩০ জনের জন্য একজন করে গাইড থাকে । হোয়াইট হাউজ পরিদর্শনের শুরুতেই ব্রোঞ্জ মূর্তির প্রেসিডেন্ট জেফারসন তাঁর বাম হাতে স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র এবং ডান হাতে একটি কলম নিয়ে আপনাকে স্বাগতম জানাবেন । ইচ্ছে করলেও পুরো হোয়াইট হাউজ আপনি ঘুরে দেখতে পারবেন না ।

দর্শকদের জন্য নির্ধারিত এলাকার বাইরে যাওয়া নিষেধ আছে কর্তৃপক্ষের । ৩য় ও ৪র্থ তলার পুরনো আমলের ব্যাবহৃত কিছু কক্ষ যেমন শয়নকক্ষ, অতিথি ও অফিস কক্ষ দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত । দেখতে পাবেন ৪০ জন প্রেসিডেন্টের সিল, জন এ্যাডামস থেকে বিল ক্লিনটন পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দস্তখত ইত্যাদি । মনে দুঃখ পাবেন তবু জেনে রাখা ভাল যে হোয়াইট হাউজের ভেতরের কোন ছবি দর্শকদের তোলা নিষেধ । ৬ তলা বিশিষ্ট হোয়াইট হাউজে রয়েছে ১৩২ টি কক্ষ, ৩৫ রেস্টরুম, ৪১২ টি দরজা, ১৪৭ টি জানালা, ২৮ টি ফায়ার প্লেস, ৮ টি সিঁড়ি, ৩ টি এলিভেটর, ২ টি বেসমেন্ট, ২ টি পাবলিক ফ্লোর এবং প্রেসিডেন্টের পরিবারের জন্য ২ টি ফ্লোর ।

এছাড়াও হোয়াইট হাউজের বাসিন্দাদের বিনোদনের জন্য রয়েছে বিশাল বাগান, টেনিস কোর্ট, জগিং ট্রাক, সুইমিং পুল, মুভি থিয়েটার এবং বিলিয়ার্ড রুম । বিশ্ববিখ্যাত এই হোয়াইট হাউজ তৈরী হয়েছে ২০ একর জমির উপর । গেট রয়েছে ভবনের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে । পুরো হোয়াইট হাউজটি রং করার জন্য ৫৭০ গ্যালন রং এর প্রয়োজন হয় । হোয়াইট হাউজের সেফরা ৫ টি শিফটে কাজ করেন ।

তারা একসঙ্গে ১৪০ জন অতিথিকে ডিনার এবং ১ হাজার মেহমানকে নাস্তা করাতে পারেন । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।