আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাঁচ সংকটে নাকাল দেশ

বাংলা আমার দেশ * বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা * নিত্যপণ্যের উর্দ্ধগতি * আইন-শৃঙ্খলার অবনিত * শেয়ারবাজারে ধস * গ্যাস-বিদ্যুৎ পানি সংকট পাঁচ মহাদুরবস্থায় পড়েছে দেশ। এগুলো হচ্ছে বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিত্যপণ্যের উর্দ্ধগতি, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনিত, শেয়ারবাজারে ধস ও গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংকট। এসব সমস্যায় সরকার দেশবাসীকে আশার বাণী শুনালেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংকটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশব্যাপী মহাসড়কের বেহাল দশা। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও চলে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

সরকারের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে বিভিন্ন স্থানে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে ‘গণপিটুনি’র নামে গণহত্যার ঘটনা। জোড়াতালি দিয়ে সড়ক-যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের ফলাফলও শূন্য। দফায়-দফায় দামনির্ধারণ করেও ‘চিনি’র দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। ।

সারাদেশের মহাসড়কগুলোর বেহাল দশা অনেক দিন ধরে চললেও ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে পরিবহন মালিকরা গাড়িচলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর টনক নড়ে সরকারের। জাতীয় সংসদে সরকার ও মহাজোটের সিনিয়র সংসদসদস্যরা যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। বাকি সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে তাদের সমর্থন জানান। তবে যোগাযোগমন্ত্রী নয়, দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেন সওজের প্রধান প্রকৌশলী শাহাব উদ্দিন। গত ১৭ আগস্ট মহাসড়ক সংস্কারের জন্য পাঁচ শর্তযুক্ত ৬৯০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে।

ঈদের আগে এ সংস্কার কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে। সারা দেশে বিদ্যুতের বর্তমান চাহিদা ৭ হাজার ৫০ মেগাওয়াট, এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীর চাহিদা ৩ হাজার ৫ শ’ মেগাওয়াট। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার দায়িত্বগ্রহণের সময় বিগত জোট সরকারের রেখে যাওয়া বিদ্যুতের সঞ্চয় ছিলÑ ৩ হাজার ২৮৫ মেগাওয়াট। সেখানে, গত আড়াই বছরে, ৫ হাজার ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পেরেছে সরকার। রেকর্ডপরিমোণ উৎপাদনের পরও প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট সংকট থেকে গেছে।

ফলে লোডশেডিং দূর হয়নি এবং বিদ্যুৎ না পেয়ে সাধারণ মানুষও বিক্ষুব্ধ। বিদ্যুতের দাবিতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে পানিসরবরাহও বিঘিœত হচ্ছে। ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে পানির উত্তোলন ব্যাহত হওয়া ছাড়াও সরবরাহ লাইনে পানি থাকছে না। ঢাকা ওয়াসার ৫৯০টি পানির পাম্পের মধ্যে ৩৪০টি চালু রয়েছে।

দুই শতাধিক পানির পাম্পে বিদ্যুতের ডুয়েল সংযোগ থাকলেও অনেক সময় দুটি লাইনেই একই সঙ্গে লোডশেডিং হচ্ছে। এ কারণেও কোনও-কোনও এলাকায় পানিসংকট দেখা দিয়েছে। এ সংকট এতটাই তীব্রতা পেয়েছে যে মুসল্লিদের ওজুর পানি দিতেও ব্যর্থ হচ্ছে অনেক মসজিদ কর্তৃপক্ষ। তাতে বাড়ছে দৈননিন্দন জনরোষ। বর্তমান সরকার দুই বছর সাত মাস অতিক্রান্ত করলেও আবাসিক এলাকায় নতুন গ্যাসসংযোগ দিতে পারেনি।

একই ঘটনা ঘটছে শিল্পকারখানায়ও। এছাড়াও সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় গ্যাসসরবরাহ বন্ধ আছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে সিএনজি স্টেশনে চার ঘণ্টার জায়গায় ৬ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে জনদুর্ভোগ বেড়েছে।

তারপরও দিনের বেশিরভাগ সময় আবাসিক এলাকায় গ্যাস থাকছে না। রাজধানী ঢাকার প্রায় সবগুলো এলাকাতেই গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পুরনো ঢাকা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মগবাজার, বাড্ডা এলাকায় দিনের বেলা গ্যাস থাকে না। সরকারের পক্ষ থেকে সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ দু ঘণ্টা অতিরিক্ত বন্ধ রাখা ছাড়া আর কোনও উদ্যোগ নেই। রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে চিনি অন্যতম।

সরকার তেল, চিনি, ডাল ও ছোলার নাম নির্দিষ্ট করে দিলেও সেই দামে কোথাও পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। চিনির দর নির্ধারণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে সরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল ফারুক খান একেক দিন একেক কথা বলেন। চিনি বিষয়ে তিনি যতবারই কথা বলেছেন ততবারই বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। টিসিবি’কে শক্তিশালী করার উদ্যোগ এখন পর্যন্ত সরকারের ভুলভুলাইয়া বুলিতেই সীমাবদ্ধ।

নিত্য প্রয়োজনী কোনও পণ্যের দামই স্থিতিশীল থাকছে না। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের মূল্য। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সরকার পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে। সরকারের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে সাভারে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার পর নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ৫ জনকে। খোদ রাজধানীতেই প্রকাশ্য দিবালোকে ৪০ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে।

অলিতে-গলিতে প্রতিদিনই ছিনতাই হচ্ছে। বেড়েছে ডাকাতিও। র‌্যাবের গুলিতে লিমনের পা হারানোর ঘটনা জনমনে গভীর দাগ কাটার পর উত্তরায় র‌্যাবের ক্রসফায়ার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দেশের অভ্যন্তরে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে মৌলবাদী জঙ্গিরা। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর সদস্যরা প্রকাশ্যে মিছিল করেছে রাজধানীতে; হামলা চালিয়েছে তারা পুলিশের ওপর।

সব মিলিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের আড়াই বছরের মধ্যেই জনগণের আস্থা হারানোর পথে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকার। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।