পারলে নিজেকে ইকারাকাস বানিয়ে ...
Click This Link
বাপ্পিকে এভাবে চলে যেতে হবে তা আমারা কেউ কখন কল্পনাও করিনি। মনিপুর স্কুল থেকে বিসিআইসি কলেজ, তারপর ময়মংসিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
সেখান থেকে ভালভাবে পাশ করে বের হয়ে একটা চাকরি পেল। গতবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এভেনিং এম,বি,এ তে ভর্তি হয়। গত পরশু ছিল ওর এম,বি,এ -র শেষ পরীক্ষা।
স্কুল জীবন থাকতেই বাপ্পি ছন্দার প্রেমে পরে। এরপর থেকে বাপ্পি আর ছন্দাকে কখনো আলাদাভাবে চেনাতে হত না। কমার্স কলেজে এইচ,এস,সি পাশ করে ছন্দা। এরপর বাপ্পি ময়মংসিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় আর ছন্দা অই কমার্স কলেজেই। এ কমার্স কলেজে অনার্স পড়ার সময় ছন্দাকে প্রায়ই অন্য ছেলের সাথে দেখা যেত, কিন্তু বাপ্পিকে এসব বললে বিশ্বাস করতো না,বরং বলতো সব ঠিক আছে।
বাপ্পির অন্ধ ভালবাসা ই ছিল ওর এ অকাল পরিনতির কারন। ছন্দা যে কলেজে পড়তো আমিও একই কলেজে পড়তাম। প্রায়ই বাপ্পি ময়মংসিং থেকে চলে আসতো ছন্দার সাথে দেখা করতে। তখন ওর সাথে বসে আড্ডা হত খুব। এইহ,এস,সি পাশ করার পরে এমনিতেই সবার সাথে যোগাযোগটা কেমন যেন ঢিলে হয়ে গেলেও বাপ্পির সাথে ভালই কন্টাক্ট হত।
তখন দেখতাম ছন্দার জন্যে হাসিমুখে বাপ্পিকে ঘন্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে। ছন্দার বিষয়ে কিছু বললে ও বিশ্বাস করতো না। অন্ধ বিশ্বাস ওকে আসলেই অন্ধ করে দিয়েছিল।
মেয়েটাকে বাপ্পি শেষ পর্যন্ত বিয়ে করেছিল। কিন্তু বাপ্পির মায়ের সাথে কোনভাবেই ছন্দার কলহ থামছিল না।
এদিকে বাপ্পিও ছন্দার চরিত্রের কলুষিত দিকগুলো নিয়ে বেশ সিরিয়াস হয়ে ওঠে, কারন নিজের বিয়ে করা বউ বলে কথা। কিন্তু ছন্দার চরিত্র পাল্টায় নি। বিয়ের পরেও অন্য ছেলেদের সাথে ছন্দার ঘনিষ্ঠতা ছিল। মাস সাতেক আগে ওদের একটা ফুটফুটে মেয়ে জন্ম নেয়। নাম রাখা হয় মানহা।
বাপ্পি হয়তো ভেবেছিল যা নিজের মেয়ের কথা ভেবে হয়তো ছন্দা এবার নিজেকে পাল্টে নিবে। কিন্তু সবি বৃথা গেল।
বাপ্পি আসলে পরে যায় উভয় সঙ্কটে। একদিকে ওর মমতাময়ী মা যে কিনা সন্তানের পরিবারের সুখের জন্যে নিজেকে নিজের মাঝেই গুটিয়ে নেয় আর অন্যদিকে (চরিত্রহীনা) স্ত্রী আর সদ্য জন্ম নেয়া মেয়ে মানহা।
বেশ কিছুদিন ধরে বাপ্পিকে খুব চুপচাপ হয়ে পড়তে দেখা যায়।
যে বাপ্পি একাই আড্ডা- আসর মাতিয়ে রাখতো ওর এমন রুপ এমনিতেই মন খারাপ করে দিত। নিজের মায়ের সাথে দেখা করতে হত গোপনে
কারন, ছন্দা জানতে পারলে তা নিয়ে খুব যন্ত্রণা করত, ঝগড়া করতো। এরকম মানসিক যন্ত্রনার মাঝে একমাত্র সান্তনা ছিল ওর ফুটফুটে মেয়েটা। ওর মুখের দিকে চেয়ে অনেক কিছুতেই বাপ্পি চুপ হয়ে যায়। কিন্তু ছন্দার কোন ভাবান্তর ছিল না।
গতপরশুদিন পরীক্ষা শেষে বাপ্পি ওর মার সাথে ইফতারি করতে যায়। সেখানে ইফতারি করে রাত ৮-থেকে ৯ টার মধ্যে বাসায় ফিরে আসে। এরপর আমাদের পুরনো বন্ধু দিপ যার সাথে বাপ্পির পারিবারিক ঘনিষ্ঠতা ছিল, সে দেখতে পায় বাপ্পির বাসার কাজের মেয়েকে রাত ১১টার দিকে, পুলিশের সাথে হেতে যাচ্ছে। তখন দিপ জানতে পারে যে বাপ্পি নাকি সুইসাইড করছে। সাথে সাথে ছুটে যায় ও।
এর মধ্যে আরেক রাজুও চলে আসে খবর পেয়ে। থানা পুলিশ আর লাশ টানাটানি। ছন্দা জানায় যে গতরাতে দুজনের ঝগড়া হলে একসময় বাপ্পি রাগ করে অন্যরুমে চলে যায় এবং সেখানে সে সিলিং ফ্যানের সাথে ফাঁস দেয়। পরে সে দেখতে পেয়ে সিলিং থেকে বাপ্পির লাশ নামাতে গেলে সেখান থেকে পরে বাপ্পির মাথার পেছন দিকে ফেটে যায় ও রক্ত পড়তে থাকে। কিন্তু ছন্দার কথা অনুযায়ি ঐ ঘরের অনেক কিছু মেলে না।
পুলিশের সাময়িক পর্যবেক্ষণে জানা যায় যে ঘরের দরজা খোলা ছিল, ফাঁস দেয়ার জন্যে যেরকম প্রস্তুতি বা লক্ষন থাকার কথা তা আদৌ নেই। (বরং পুলিশ ঘরে অন্য পুরুষ থাকার নমুনা পেয়েছে বলে জানা যায় যদিও সকালেই পুলিশের আচরণ রহস্যময় ভাবে পাল্টে যায়। ) রাতের বেলায় লাশ থানায় নিয়ে আসা হয়। ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া আসে। ছন্দার বাবা আসেন।
তিনি আবার আওয়ামীলীগের অখ্যাত নেতা। টাকাপয়সা ওয়ালা লোক, প্রতিপত্তিও আছে। যার প্রভাব দেখা যায় থানায় মামলা গ্রহন কাজের ক্ষেত্রে। মিরপুর থানা প্রশাসন খুনি ছন্দার বিরুদ্ধে মামলা গ্রহন করার যথেষ্ট প্রমান পেলেও তা গ্রহন করতে চায়নি ছন্দার বাবার হস্তক্ষেপে। কিন্তু মিডিয়া আর কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুর উপস্থিতি বাপ্পির মায়ের পক্ষে শক্ত অবস্থানে থাকলে থানায় মামলা গ্রহন করে খুনের দায়ে ছন্দাকে গ্রেফতার করা হয়।
ছন্দার বাবা বলেন-
"আমার মেয়ের কোন দোষ প্রমান করতে পারলে আইন যা বলবে আমি তাই মেনে নেব। "
মিডিয়াতেও তার প্রভাব লক্ষ্যনিয়। মিডিয়াগুলো যেভাবে কাভার করে গেছে সে রকম প্রতিফলন পাওয়া যায় নি। মিরপুর থানা প্রশাসন কে এ বিষয়ে বেশ রহস্য করতে দেখা যায়। খবর নিয়ে জানা গেছে ছন্দার বাবার অর্থ আর ক্ষমতার প্রভাবে অনেক কিছু পাল্টে গেছে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার আগেই।
স্কুলে পড়াকালীন সময়ে বাপ্পির দুই বোন মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। ২০০৩ সালে ওর বাবা মারা যায়। তাই আপনজন বলতে ওর মা ছাড়া আর কেউ ছিল না। তাই এখন ওর পরিবারের একমাত্র জীবিত মানুষ ওর মা অসহায় হয়ে পরেছে সাত মাসের নাতিকে নিয়ে। মহিলা নিজেও বুঝতে পারছেন যে এমন অসহায় অবস্থায় তিনি মামলা চালিয়ে নিতে পারবেন না, চালিয়ে নেয়ার মত অর্থও তার নেই।
ঢাকা মেডিক্যাল এ ময়না তদন্ত শেষে লাশ বিকেলে মনিপুর স্কুলের স্থানীয় আমতলা মসজিদে নিয়ে আসা হয়। জানাজ শেষ মনিপুর স্কুলের মাঠে বাপ্পির লাশ নিয়ে আসা হয় শেষবারের মত ওকে দেখার জন্যে। স্কুল-কলেজের পুরনো বন্ধুদের ভিড়ে বারবার একটাই গুঞ্জন উঠছিল-
"বাপ্পি কখনই সুইসাইড করার ছেলে না। সব কিছু ঘটেছে ছন্দার অন্য পুরুষের সাথে ঘনিষ্ঠতার সুবিধার্থে। "
আমরা যারা বাপ্পিকে কাছে থেকে দেখেছি তারা জানি বাপ্পি সুইসাইড করবে কোনদিন।
ছন্দার চরিত্র নিয়ে আশেপাশের লোকজন, বন্ধুমহল কারো কাছেই নতুন করে কিছু বলার নেই। তাই আমাদের বন্ধুদের একটাই আক্ষেপ হয়তো ছন্দার বাবার প্রভাবে খুনি ছন্দার কিছুই হবে না শেষ পর্যন্ত। কারন বাপ্পির মা এই বয়সে এসে স্বামী-সন্তান সব হারিয়ে আর্থিক দুরাবস্থায় এ মামলা নিয়ে তেমন একটা কিছু করতে পারবেন বলে আশা করা যায় না। তার উপর আছে কোলে রাখা বাপ্পির একমাত্র সন্তান মানহা।
এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ছন্দার বাবা ছন্দাকে বাঁচানোর জন্য তার সর্বচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করচেন বলে জানা গেছে।
আসুন আমরা মানহা ও তার দাদি এবং আমাদের প্রয়াত বন্ধু বাপ্পির জন্যে দোয়া প্রার্থনা করি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।