আধারে নয় আলোতে ভয় দৃশ্যগুলো শব্দময় শুন্যতায় ভিড়ে হারিয়েছে স্তব্ধ সময়.... স্বপ্নময় ঘুমে নয় শব্দগুলো দৃশ্যময়.. শূন্যতায় নির্বাসিত স্তব্ধ সময়... কিছু দিন আগে প্রতিদিনের মতো কোচিং শেষে বাসায় ফিরছিলাম । হঠাৎ এক বন্ধু ফোন দিয়ে বলে আমাদের পাশের বাসার এক আপু নাকি আত্মহত্মা করেছে । শুনে প্রথমে আশ্চর্য হলাম, কারন ১৫/১৬ দিন আগেও এই মেয়ের সাথে জমায় আড্ডা দিয়েছি। মেনে নিতে একটু কষ্ট হলেও কিছুই করার নাই।
মেয়েটি এইচ, এস, সি, পরীক্ষা দিয়েছিল, দেখতে সুন্দরী এবং মিষ্টভাষী।
পড়ালেখায় ওতটা ভাল না হলেও খুব একটা খারাপও ছিলনা। মারা যাওয়ার কথা শুনে ওদের বাসার উদ্দেশে রওনা হলাম। মরা মানুষ দেখতে যাওয়া হয়তো অনেকের most favourite timepass, ঐ দিন বুঝ্তে পারলাম। নিহত মেয়েটির বাসার কাছাকাছি গিয়ে এত ভীর দেখে আমি একটু আশ্চর্যই হলাম। প্রায় ১৫০ জন মত লোক জমাট হয়ে গিয়েছে বাসার আশেপাশে।
বাসায় গিয়ে দেখি মেয়েটির মা অজ্ঞান হয়ে পরে আছে, মাঝেমাঝে জ্ঞান ফিরছে কিত্তু তীব্র আর্তনাদ, কষ্ট, ক্ষোভ এসবের সাথে পেরে উঠছেন না, মেয়েটির মৃতদেহ post mortem করাতে নিয়ে গেছে। মেয়ের বাবাও ওখানে গিয়েছেন। sucide note এ মেয়েটি তাকে যেন post mortem না করা হয় সেকথা বলে গেলেও পুলিশি কারনে post mortem বাঁধা দেয়া যায়নি। যাই হোক কিছু কারনে ঐদিন লাশ দাফন করা সম্ভব হওনি। পরদিন আর যাওয়া হল না।
যাকে বোনের মত দেখছি, সুন্দর একটা ছবি মনে আছে, কি দরকার বিভৎস একটা স্মৃতি মনে রাখার মিলাদে গিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল, আন্টিকে কিছু অতি দরদ দেখানো লোক বারবার জিজ্ঞাসা করছিল "কেন করল? কি হয়েছিল? আপনি বুঝেন নাই?"
common scenceless মানুষের কথায় মেজাজ খারাপ হল। মা যদি বুঝতো মেয়ে মারা যাবে তাহলে কি মেয়ে মরত?? এই সাধারন বুদ্ধি তাদের নাই দেখে ঘৃণা হল। আন্টিকে এর কিছুদিন আগে হাসপাতাল থাকে আনা হয়েছে, উনি আপুর হঠাৎ চলে যাওয়াতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হয়ত এই অবস্হা গুলো সেই হীন লোকদের চোখে পড়েনি।
কিছুদিন সব ঠিকই গেল, সবাই শোকে কাতর।
একদিন হঠাৎ এক পরিচিত আমাকে বলে -"কিরে তোর সাথেতো অনেক খাতির ছিল, আসল কাহিনী জানস না??"
আমি তো আর বুঝিনি কি বলে, পরে কি বলতে চায় জিঞ্জাসা করায় জানলাম তারা বলছে, "আরে !! মেয়ে কি না কি করসে, pregnant ছিল, বাপ মা জানবে তাই মরসে "
এই কথা শুনে কি বলব খুঁজে পাই নাই, পরে আরো কয়েকজন কে এই সব আজেবাজে মন গড়া কথা বলতে শুনেছি। আমি রাগারাগি করায় আমাকে শুনতে হয়েছে -" ধুর তুই তো জানসই না " এক পর্যায়ে ঝগড়া লেগে যায়, অনেক যৌক্তিক কথা শুনিয়ে সেই সময় তাদের মুখ বন্ধ করলেও তারা কি সতিই চুপ থাকবে কিনা আমার সন্দেহ । আমার কথা, এত কাহিনী যদি থাকত, post mortem report এ কি তা আসত না?? আর একটা মেয়ে মরেও শান্তি পাবে না?? কোন দোষ না করেও তাকে দোষারোপ করা হবে???
মানলাম সে আত্মহত্মা করেছে, অনেক বড় ভুল। কিন্তু আপু কে নিয়ে যারা এত নোংরা কথাগুলো ছড়াচ্ছে ওরা কি করছে??
ছোটবেলা থেকে দেখছি, কেউ মরলে তার গুন গান করে সবাই উল্টায় ফেলে। যেমন -"উনি অনেক ভাল ছিল, কতো helpful " যা না তার থেকে বারিয়ে বলতে দেখেছি অনেকবার।
কিন্তু এখানে তো সবাই বেশি তৎপর, মরার পরেও মেয়েটাকে নোংরা অপবাদ দিতে পিছপা হ্য়নি।
এক এক জনের কথা বার্তায় মনে হয়েছে উনারা সেইরকম কিছু তথ্য নিয়ে ঘুরতেসেন ঘৃণা হয় এদের মানসিকতায়, ঘৃণা হয় এদের উপস্থিতিতে। এরা অসুস্থ, কবে উনারা সুস্থ হবে??
মেয়েটা মারা গেল। তার দোষ কি সে মারা গিয়েছিল নাকি সে একজন মেয়ে ছিল ??? নাকি এই সমাজের gossip freak রা নতুন নিয়ম করেছে, হঠাৎ একটা মেয়ে মরা গেলে, মরার পরেও তাকে পরোক্ষ ভাবে মিথ্যা নোংরা কিছু কলঙ্ক মাথায় নিয়ে থাকতে হবে?? আজও উত্তর পাইনি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।