রাজধানীতে বিভিন্ন কারণে অপহরণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর থেকে রেহাই পাচ্ছে না খোদ পুলিশ প্রশাসনের পরিবারের সদস্যরাও। গত ১৩ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় পুলিশ অফিসার বেলায়েত হোসেনের ছেলে রাকিবকে অপহরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অপহৃত রাকিবের মা রাবেয়া বেগম (৩২) বাদী হয়ে গত ১৪ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন/২০০০ এর ৭/৩০ ধারায় মামলা করেন। মামলা নং : ৪৪, তাং : ১৪-০৮-১১।
ওয়ারি (ডিসি) অফিসে ট্রেনিংরত এসআই মো. বেলায়েত হোসেন।
তার আদরের একমাত্র শিশুপুত্র মো. রাকিব (১১)। গত ১৩ আগস্ট রাকিবকে অপহরণ করে বাড়ির পাশের প্রতিবেশীরূপী এক অপহরণকারী চক্র। বেলায়েতের বাড়ির পাশেই বাস করত অপহরণকারী মো. উজ্জল ওরফে হৃদয় চৌধুরী (২০) এবং তার সহযোগী বড় বোন দিলরুবা (৪০)। তারাই রাকিবকে ফুসলিয়ে অপহরণ করে নিয়ে গেছে বলে বেলায়েতের পরিবার জানায়।
গত ১৩ আগস্ট শনিবার ইফতারির পর আনুমানিক রাত ৮টা ১৫ মিনিটে সবার চোখের আড়ালে রাকিবকে পড়ার টেবিল থেকে ফুসলিয়ে ঢেকে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা।
সে সময় সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত থাকাতে কেউ বুঝতে পারেনি। পরে রাকিব বাসায় নেইÑ বুঝতে পেরে তারা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও রাকিবকে পাননি। রাকিবের মা তার একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। রাবেয়া বেগমের ২ মেয়ের মধ্যে বড় রোকসানা আক্তার (১৪) অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ও ছোট রাহিমা আক্তার নির্ঝর (২) এবং একমাত্র ছেলে রাকিব (১১) যাত্রাবাড়ীর আল ইমরান প্রি ক্যাডেটের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র।
রাকিবের বাবার সাথে কথা বলে জানা যায়,
দীর্ঘদিন ধরেই মো. উজ্জল তার শিশুছেলে রাকিবকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে আসছিল। অপহরণকারী তাকে দামি মোবাইল, ল্যাপটপ, মজার খেলনা ও ভারত থেকে আরো দামি জিনিস কিনে দেয়ার লোভ দেখায়। প্রায়ই সে রাকিবকে এটা-সেটা কিনে দিত। এমনকি রাকিবকে উজ্জল মোবাইলও কিনে দিয়েছিল বলে তার পরিবার জানায়। কিন্তু রাকিবের মা এটা ভালো চোখে দেখেননি।
তাই রাকিবের বাবা-মা উজ্জলকে বুঝিয়ে অনুরোধ করেন তার ছেলের সাথে এরকম না করতে ও রাকিবের সাথে না মিশতে।
কিন্তু উজ্জল গোপনে রাকিবের সাথে চলত ও তাকে ফুসলিয়ে যেত ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সে রাকিবকে সাবার অলক্ষ্যে ঘর থেকে বের করে নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় বলে রাকিবের পরিবারের অভিযোগ। রাকিবের বাবাসহ সবাই অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারেন অপহরণকারী উজ্জলের আরেক নাম হৃদয় চৌধুরী। সে পাশেই বস্তিতে থাকত।
কিন্তু কোনো বাসাতেই তারা ১-২ মাসের বেশি থাকত না। ফলে তাদের নির্দিষ্ট ঠিকানা এলাকাবাসী ঠিকমতো বলতে পারে না।
এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে গত ১৫ আগস্ট সকালে শনির আখড়ায় এক সাংবাদিকের বাসা থেকে উজ্জলের বড় বোনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কিন্তু ওই মহিলা যে শিশু অপহরণ মামলার একজন আসামি তা ওই সাংবাদিক জানতেন না বলে জানান।
ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. মোক্তার হোসেন জানান, মূল আসামি উজ্জলকে এখনো ধরা যায়নি। তার বড় বোন দিলরুবাকে ধরে রিমান্ডে আনা হয়েছে। সে স্বীকার করেছে রাকিবকে তার ভাই উজ্জ্বলই অপহরণ করেছে। কিন্তু অপহরণকারীর অবস্থান সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তিনি আরো বলেন, মুক্তিপণের জন্য রাকিবকে অপহরণ করা হয়নি।
রাকিবের সাথে অশিক্ষিত উজ্জল চলাফেরা করত বলে রাকিবের বাবা উজ্জলকে মারধর করেছিল। আর তারই প্রতিশোধ নিতে উজ্জল রাকিবকে অপহরণ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি জানান, গত ১৬ আগস্ট রাকিবকে ফিরিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও অপহরণকারীরা তা করেনি। তারা তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু রাকিবের পরিবার ও এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, অপহরণের ৬ দিনেও পুলিশ রাকিবের সন্ধান দিতে পারেনি।
অন্যদিকে উজ্জলের বড় বোন দিলরুবাকে গ্রেফতার করার কারণে অপহরকারীরা বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান অব্যাহত রেখেছে বলে রাকিবের বাবা জানান। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।