প্রথম আলো: এবার রমজান মাসে আমদানিনির্ভর ভোগ্যপণ্যের দাম কি যৌক্তিক পর্যায়ে আছে?
মাহবুবুল আলম: আমদানি পণ্যের দাম নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম এবং দেশে পণ্যের সরবরাহের ওপর। এবার আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল ছিল। দেশেও রোজার চাহিদার চেয়ে অত্যধিক পণ্য আমদানি হয়েছে। এই দুই কারণেই মূলত এবার রমজান মাসে সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ও পণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে আছে। এমনকি অনেক পণ্য আমদানি খরচের তুলনায় কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
এতে ভোক্তারা সুফল পেয়েছেন, ব্যবসায়ীরা লোকসান দিয়েছেন।
প্রথম আলো: প্রতিবছর রমজান মাসের আগে বাজার তদারকি হয়। এবার বাজার তদারকির কোনো সুফল পাওয়া গেছে?
মাহবুবুল আলম: বাজার তদারকির কারণে পণ্যের দাম স্থিতিশীল হয় না, এবারও হয়নি। এবার আন্তর্জাতিক বাজারদর এবং সরবরাহব্যবস্থা ভালো থাকায় সুফল মিলেছে। প্রতিবার রমজান মাসে সরকার বাজারে কিছু পণ্যের দাম ঠিক করে দেয়।
এবারও হয়েছে। এখন কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কেনা দামের চেয়ে ছোলা, চিনিসহ কয়েকটি পণ্য কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তাহলে এখন সরকার কি এসব পণ্য কিনে নেবে?
প্রথম আলো: তাহলে বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে সরকারের কী করা উচিত?
মাহবুবুল আলম: আমরা বহুবার সরকারকে বলে আসছি ভোগ্যপণ্যের একটি যুগোপযোগী তথ্যভান্ডার গড়ে তোলার জন্য। একটি আলাদা তদারকি সংস্থা এই তথ্যভান্ডার নিয়ে কাজ করবে। কোন পণ্যের চাহিদা কত, উৎপাদন ও আমদানি কত হচ্ছে, পণ্যের সংকট হবে কি না—এসব বিষয়ে পূর্বাভাস থাকলে সরকারের জন্যই ভালো।
তাহলে রমজান মাসের আগে দরদাম ঠিক করে দেওয়ার দরকার হবে না। কোনো পণ্যের সংকট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকার নিজেও সেই পণ্যের মজুত গড়ে তুলতে পারে। সংকটকালীন সেই পণ্য যৌক্তিক মূল্যে বাজারে ছেড়ে সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে পারে। তাহলে কেউ অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানোর সুযোগ পাবে না।
প্রথম আলো: কয়েক বছর ধরে বলা হচ্ছে, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে।
আসলেই কি সে রকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে?
মাহবুবুল আলম: এটা ঠিক, একসময় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ থেকেই সারা দেশে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ হতো। তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। যোগাযোগের সমস্যার কারণে অনেক পণ্যই এখন চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে নিয়ে ঢাকা বা অন্যত্র সরবরাহে খরচ বেশি; বরং অনেক কম খরচে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার বড় আমদানিকারকেরা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নদীপথে কম খরচে পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য খাতুনগঞ্জের ওপর মুখাপেক্ষী হতে হচ্ছে না। কয়েক বছর ধরে চিনি, ডালসহ অনেক পণ্যের ব্যবসা ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে।
যখন যেখানে সুবিধা তৈরি হবে, সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য রমরমা থাকবে—এটাই স্বাভাবিক। তবে এখনো চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার।
প্রথম আলো: বলা হয়ে থাকে, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে অনেকে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। বড় গ্রুপগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে তাঁরা সরে পড়ছেন। ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোও ভোগ্যপণ্য আমদানিতে অর্থায়ন পাচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে।
বাজারে এর কোনো প্রভাব আছে কি না?
মাহবুবুল আলম: যেকোনো ব্যবসা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এতে লাভ-লোকসান থাকবে। অনেকে ওভার ট্রেডের কারণে লোকসানে পড়লে এ ব্যবসা ধরে রাখতে পারেন না। কেউ প্রতারণার শিকার হয়ে এ ব্যবসা ছেড়ে গেছেন। এভাবে বিভিন্ন কারণে অনেকে এ ব্যবসা ছাড়লেও নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান কিন্তু জায়গা দখল করে নিচ্ছে।
কারও জন্য আমদানি বন্ধ হচ্ছে না কিন্তু; বরং এখন আগের চেয়ে প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে। প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে বড় বড় ব্যবসায়ী কখনো কখনো লোকসানও দিচ্ছেন। আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। এটা চলবেই।
[সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুদ মিলাদ]।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।