অন্ধকার দেয়ালে তোমার আলো জন্ম দেয় মিথ্যে ছায়াকে.....
হাজার বছর আগে মগাস্তান-এর কোনো এক জায়গা...
আমি হাদী। আজ আমাকে দাস হিসাবে খরিদ করলেন মগাস্তানের সবচেয়ে ধনী লোক, বাশার আল মগদাদীয়া। দাস হিসাবে আমার চাহিদা মন্দ ছিলো না, জন্মগত ভাবে পেশিবহুল পেটা শরীর আর কালো চামড়া। বেশ চড়া দাম দিয়েই নিলামে কিনে নিয়েছেন আমার মালিক।
১ বছর পরঃ
আহারে, এইটাই কি জীবন?? হেন কোনো কাজ নাই যে মালিক আমারে দিয়া করায় না।
খাটতে খাটতে বুক পিঠ সব এক হয়ে গেলো। রক্ত পানি করা খাটুনির পরেও ঠিক মতন ২ বেলা ভাত দিতে চায় না। হালার বাশার আল মগদাদীয়া, সে নাকি মগাস্তানের সেরা ধনী। ব্যাটার মত কিপটা শয়তান আর একটাও নাইকা দুনিয়ায়।
৫ বছর পরঃ
ইয়া খোদা, তুমি এই বাশার আল মগদাদীয়ার বিচার কইরো।
দাস হইয়া জন্মানোই আমার অপরাধ। দিনরাত ঘন্টার পর ঘন্টা খাটা খাটনি করি, আর সামান্য ভুল হলেই চলে চাবুকের পর চাবুক। এইতো গত কাল আমার প্রিয় বন্ধু মাহমুদকে সামান্য ভুলের জন্য শূলে চড়িয়ে মারা হল।
আমরা কি মানুষ না?? মাঝে মাঝে মনে হয় বিদ্রোহ করি, বাশার আল মগদাদীয়ার লাল বাত্তি জ্বালায়া দিই। কিন্তু কি করব।
ঘরে আমার বউ বাচ্চা। আমি কিছু করতে গেলে ওদেরকেও শূলে চড়িয়ে মারা হবে। বাচ্চা গুলার চেহারার কথা মনে করে চাবুক খেয়ে যাই, আর গরুর মতন খাটি।
১৫ বছর পরঃ
জীবন যৌবন সবই দিলাম মগদাদীয়ার দাসত্ব করতে করতে। এখন বয়স বাড়ছে, দুর্বল হয়ে গেছি, আমারে লাত্থি দিয়ে ভাগায়া দিলো।
মগদাদীয়া তার বুড়া দুর্বল দাসদের রাখে না,হত্যা করে। আমাকেও করবে। এই হইল জীবন! এই দাসত্ব থেকে দুনিয়া কবে মুক্তি পাবে??
২০২০ সাল, বাংলাদেশের কোনো এক জায়গায়...
আমি মুন্তাজুর রহমান। আজ ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে জয়েন করলাম দেশের সবচেয়ে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান মগাটেল-এ। দেশের চাকরীর বাজারে আমাদের চাহিদা মন্দ নয়, দেশের সবচেয়ে নামী ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটি, মুয়েট( মগা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেক) থেকে পাস করেছি।
বেশ হ্যান্ডসাম সেলারী দিয়েই আমাকে নিয়েছে মগাটেল এন্ড কোং।
১ বছর পরঃ
ধুস সালা, ড্যাম একটা লাইফ। দুনিয়ার সব কাম কাজ আমার উপর চাপায়া দিসে মগাটেলের Boss-রা। কাজের প্রেশার আর টেনশনে হার্টের ব্যারাম হয়া যাচ্ছে এই অল্প বয়সেই। এত খাটুনির পরেও বেতন বাড়ার কোনো নাম গন্ধ নাই।
হালার মগাটেল, এইটা নাকি দেশের সেরা করপোরেট প্রতিষ্ঠান! মগাটেলের মতন ফন্দিবাজ আর ইমপ্লয়ি মারা প্রতিষ্ঠান এই মূলুকে আর একটাও নাই।
৫ বছর পরঃ
ইয়া আল্লাহ, তুমি এই মগাটেলের বিচার কইরো। ইঞ্জিনিয়ার হয়া জন্মানোই আমার অপরাধ। দিন রাত ঘন্টার পর ঘন্টা আফিসে পরিশ্রম করি, আর সামান্য ভুল হলেই চলে বসের অকথ্য গালাগালি। এইতো গতকাল আমার প্রিয় কলিগ রমিজকে সামান্য ভুলের জন্য ফায়ার করা হলো।
আমরা কি মানুষ না?? মাঝে মাঝে মনে হয় বিদ্রোহ করি, মগাটেলের লালবাত্তি জ্বালায়া দিই। কিন্তু কি করব। ঘরে আমার বউ বাচ্চা। আমার চাকরী চলে গেলে ওদেরকেও না খেয়ে মরতে হবে। বাচ্চা গুলার চেহারার কথা মনে করে গালি খেয়ে যাই আর গাধার মতন খাটি।
১৫ বছর পরঃ
জীবন যৌবন সবই দিলাম মগাটেলে সার্ভিস দিতে দিতে। এখন মগাটেলের প্রজেক্ট শেষ, আমারে লাত্থি দিয়া ভাগায়া দিলো। মগাটেল কোনো বয়স্ক লোক পালে না, তাই আমাকেও ফায়ার করলো। এখন বউ বাচ্চা নিয়া কই যামু। এই দাসত্ব থেকে দুনিয়া কবে মুক্তি পাবে??
.
.
.
.
.
মগাটেল সিরিজের অন্যান্য পর্বঃ
১.দ্য ২০৩৫- মগাটেল ও আমি
২.মগাটেল আর পদ্মা সেতু
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।