Click This Link
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর বা শিক্ষাভবনে বদলি হয়ে আসার জন্য পাঁচজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সই, সিলমোহর ও জোর সুপারিশসহ আবেদন জমা দিয়েছেন একজন পিওন। এক পিওনের বদলিতে ৫ মন্ত্রীর সুপারিশ থাকাটা কোনও গরম খবর না হলেও ওই বদলির আবেদনে যে মন্ত্রীবর্গের সই ও সিল ব্যবহার করা হয়েছে তা সবই জাল হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় এখন তা হয়ে উঠেছে ‘টক অব দ্য শিক্ষাভবন’। আর মন্ত্রীদের জাল সিল, সই ও সুপারিশসহ আবেদন জমা দেয়া ও তদন্তে তা ধরা পড়ায় ওই পিওন এখন শিক্ষাভবনে বদলি হয়ে আসার চিন্তা বাদ দিয়ে চাকরি বাঁচানোর তদবির করে যাচ্ছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। মানবজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর শিক্ষাভবনে চাকরি করে কোটিপতি বনে যাওয়া ও নানা অপকর্মে অভিযুক্ত পিওন মো. জালাল উদ্দীনকে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মুন্সীগঞ্জে বদলি করা হলেও কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি ঢাকার ইসলামিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন। বর্তমান জালালের পক্ষে পুরান ঢাকায় অবস্থিত ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরি করাটা খুবই ‘কষ্টসাধ্য’ ব্যপার হয়ে উঠেছে আর তাই তিনি আবারও শিক্ষাভবনে আসতে চান।
শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর গ্রামের মরহুম মাস্টার জান শরীফের পুত্র জালাল চলতি বছরের মার্চ মাসে তার বদলির আবেদনটি জমা দেন শিক্ষাভবনের মহাপরিচালক মো. নোমান-উর রশীদের কাছে। মহাপরিচালক বরাবর লেখা ওই আবেদন জমা দেয়ার পরপরই জালাল বদলির আদেশ জারি করতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের। আবার দু’একজন কর্মকর্তা জালালের আবেদনটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনার জন্য তদবিরও শুরু করেন। এক পর্যায়ে আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে নিযুক্ত এক কর্মকর্তার সন্দেহ হলে জালালের আবেদনের ওপর লেখা সুপারিশ, স্বাক্ষর ও সিল আসল কিনা তা যাচাই করে দেখার সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষামন্ত্রীসহ সব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও হুইপের কাছে ওই আবেদনটি দেখানো হলে তারা সবাই নিশ্চিত করেন যে, ওই সুপারিশ বা সই তাদের নয়।
সবই জাল বা নকল। ওই আবেদনে দেখা যায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সুপারিশসহ স্বাক্ষরের তারিখ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ আর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সুপারিশ একই মাসের ২৫ তারিখের। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের সই ফেব্রুয়ারির ২৫ ও ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়ার একই মাসের ২২ এবং সরকার দলীয় হুইপ আ স ম ফিরোজের ২৩। বদলির কারণ হিসেবে জালাল তার আবেদনে লিখেছেন- ‘পুরান ঢাকার অসহনীয় যানজটের কারণে স্কুলে যেতে খুবই কষ্ট হয়। বেশ কয়েক বছর যাবৎ এ স্কুলে কষ্টের মধ্যে আছি তাই অধিদপ্তরে বদলি হতে চাই।
’
শিক্ষা ভবনের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তদন্তে কিছু লিখিত প্রশ্নের স্বহস্তে লিখিতভাবে জবাব দেন জালাল। লিখিত প্রশ্নের জবাবের মাধ্যমে জালাল মন্ত্রীদের নকল সুপারিশ সংবলিত আবেদন জমা দেয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তদন্ত দলের কাছে তিনি মৌখিকভাবে জানান, সরকার দলীয় একটি ছাত্রসংগঠনের এক নেতা, যিনি সম্পর্কে জালালের ভাগ্নে, তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সুপারিশ যোগাড় করার। মৌখিক এমন কথার জবাবে তদন্ত দল জালালের কাছে জানতে চায় তার ওই ভাগ্নের নাম। তার উত্তরে জালাল বলেছে, ওই ‘ভাগ্নে’র নাম তার মনে নেই।
মাঝে মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা হয়। শিক্ষা ভবনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন জালালের তদন্ত অব্যাহত আছে, আর এরই মধ্যে তিনি তদবির করছেন মন্ত্রীদের সই-স্বাক্ষর জালিয়াতির অপরাধ থেকে পার পেয়ে যাওয়ার জন্য। আইন অনুযায়ী জালালের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল মামলা অথবা বিভাগীয় মামলাও করা যায় বলে শিক্ষা ভবনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সই, স্বাক্ষর জালিয়াতির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জালাল স্বীকার করেন, বদলির আবেদন জমা দিয়েছিলেন তবে এ জাল সই, স্বাক্ষরের প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যান। স্কুলের বেশ ক’জন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জালাল আবারও শিক্ষা ভবনে বদলি হতে কয়েক জন মন্ত্রীর সুপারিশসহ আবেদন জমা দিয়েছিলেন তবে তা নিয়ে এখন একটু ‘ঝামেলা’ চলছে।
জালালের একজন সহকর্মী জানান, প্রায় ২০ বছর আগে শিক্ষাভবনে অবস্থিত বিজ্ঞান শিক্ষার একটি প্রকল্পে চাকরি নিয়েছিলেন জালাল। কয়েক বছর পর তার চাকরিটি স্থায়ী হলে জালাল নেমে পড়েন কোটিপতি হওয়ার মিশনে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।