আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাবিয়া দোযখে ১ ঘন্টা অতঃপর............

প্রতিদিনকার মতো আজ়কেও চকবাজ়ার থেকে ক্যাম্পাসে ফিরছিলাম। ২নম্বর গেট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী ৩ নম্বর তরীতে উঠলাম(এখানে ছোট বাসকে তরী বলা হয়)। তরীতে যদিও ভিড় ছিল তবুও স্বস্তি পাচ্ছিলাম এই ভেবে যে কিছুদুর গেলেই সিট পাওয়া যাবে। তরীটা নতুন নামানো হয়েছে এবং অন্যান্য তরীর তুলানায় বেশ বড়ো। সিট সংখ্যা বেশি,তাছাড়া নতুন হওয়াতে বেশ ঝকঝকে তকতকে দেখাচ্ছিল।

আবার দেখি সাউন্ড সিস্টেম ও জুড়ে দেয়া আছে। আর তাতে হালের হিন্দি গান ধুমধারাক্কা বাজতেছিল। বেশ ভালোই লাগছিল যদিও তখনো দাঁড়িয়ে ছিলাম। এই সুখযানটি যখন মুরাদপুর মোড় ক্রস করে মুরাদপুর-অক্সিজেন রাস্তায় প্রবেশ করলো তখনই শুরু হলো শিরোনামে উল্লেখিত আসল পর্ব। সাধারনত এখানে জ্যাম ৫ থেকে ১০ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়না।

তবে আজ যা ঘটলো তার-ই সবিস্তার বর্ননা দিচ্ছি এখনঃ তরীগুলোর সাধারন নীতি হলো বিন্দু পরিমাণ জ়ায়গা খালি থাকতেও এরা যাত্রী ঊঠাবে। একেবারে পণ্যবাহী ট্রাকের মতো গাদাগাদী আর ঠাসাঠাসি করে লোক তুলে নিবে। ভিতরে চাপেন,ডানে চাপেন,বামে চাপেন ইত্যাদি হচ্ছে হেল্পার আর কন্ট্রাক্ট্ররের ননস্টপ বুলি। যাই হোক, তরী তখনো হামজারবাগ এলাকায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। ৫মিনিট যায়,১০মিনিট যায়,১৫মিনিট যায়...তরী তো আর সামনে এগোয়না।

এভাবে ২০মিনিট যায়,২৫মিনিট যায়,৩০মিনিট যায়...সোনার তরী তো আর সামনে চলেনা। আর এদিকে আমাদের মত যে সব প্রানীদের ঠেলে ঠেসে গাদাগাদি করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে তাদের অবস্থা যে কি তা সহজেই অনুমেয়। যারা এই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন তারা খুব সহজেই বুঝতে পারছেন আমাদের অবস্থা তখন কি। প্রত্যকের শরীর থেকে দরদর করে ঘাম বেয়ে পড়ছে আর সবাই ঘামে ঘেমে নেয়ে একাকার। যেহেতু একটূও নড়াচড়ার সুযোগ নেই এবং সবাই এক জন আরেক জনের পেটে পীঠে লেগে আছে তাই খুব সহজেই একজনের শরীর চুয়ে পড়া ঘাম আরেকজনের শরীরে অনায়াসে প্রবেশ করছে।

একজনের শরীর ঘামানো দূষিত পদার্থ আরেকজনের শরীরে কি চমৎকারভাবে ট্রান্সমিশন হচ্ছে!!!এভাবে দূষিত পদার্থের ট্রান্সমিশন আর জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসা জ্যাম আর সাথে উচ্চ তাপমাত্রা তো আছেই। এর সাথে ফ্লেভার হিসেবে আছে উচ্চশব্দে চলতে থাকা হিন্দি গান আর পাশের ডাস্টবিনের সুমিষ্ট ঘ্রান!!!!!!!!!!এভাবে ৩৫ মিনিট যায়,৪০মিনিট যায়,৪৫মিনিট যায়......কিন্তু তরী তো আর সামনে এগুচ্ছেনা। উহ!!ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। ৫০মিনিট যায়,৫৫মিনিট যায়...তরী যেন এবার একটু নড়েচড়ে ওঠে। কয়েকফুট রাস্তা সামনে যেতেই আর এক বিপত্তি!বাংলাদেশের মহা ভদ্রলোক এক ড্রাইভার রংসাইডে গাড়ি ঢুকিয়ে দিয়ে দিব্যি গালাগাল শ্রবণ করে যাচ্ছে।

এই জঞ্জাল পার করতে আবার কয়েক মিনিট কেটে গেল। মোবাইলে সময় দেখে নিলাম। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে পুরো এক ঘন্টা অতিবাহিত করলো আমাদের এই সুখের তরী। আর তরীর সাউন্ড সিস্টেমে চলতে থাকা সেই হিন্দি গান বেজ়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। কি সব গান!!!!!মুন্নি বদনাম হুয়ে ডারলিং তেরে লিয়ে............।

ভাবলাম ঢাকা শহরের জ্যাম-অভিশাপ কি এই হেলদি নগরীখ্যাত চিটাগাং এ এসেও লাগলো নাকি?এই হলো আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থা। যারা হাট হাজারী রোডে এসেছেন তারা দেখেছেন যে তিনটা জেলায়(পার্বত্য চট্টগ্রাম,রাঙ্গামাটি আর খাগড়াছড়ি) যাওয়ার ১টি মাত্র রাস্তা তাও আবার কি মহা প্রশস্ত!!!!!!যেভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে যোগাযোগ ব্যবস্থার কি হাল হয় তা আল্লাহই ভালো জ়ানেন। যাই হোক, এভাবে ঘামে মাখামাখি আর শব্দদূষনের মত আযাবগজব সাথে নিয়ে গড়াগড়ি খেয়ে আরও ১ ঘন্টা সময় পার করে গাড়ি ভার্সিটির ১নং গেট অতিক্রম করতেই যখন ভার্সিটির সুমিষ্ট হাওয়া এসে গায়ে লাগলো তখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললাম --জাহান্নাম হইতে বিদায়!!! এ এম নুরুদ্দিন সোহাগ শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ,  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।