আত্মবিশ্বাসহীনতায় প্রকট হচ্ছে আত্মার দেউলিয়াত্ব, তবুও বিশ্বাস আগের মতই নিশ্চল.. জীবনের কোন্ পর্যায়টা সবচেয়ে আনন্দের, এমন জিজ্ঞাসার জবাব ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতেই পারে, তবে আমার ধারণা অধিকাংশ মানুষের কাছে তেইশ পূর্ববর্তী জীবনটাই সবচেয়ে আনন্দের। মানুষ তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতিগুলো এই প্রথম ২৩বছরে সঞ্চয় করে, এরপর বাকি জীবন কাটে সেই স্মৃতির পর্যায়ক্রমিক উল্টানো-পাল্টানো অথবা নাড়াচাড়ায়। কারণ, তেইশ পরবর্তী সময়ে জীবনের জটিলতা যেচে এসে মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয়; তখন হয়ত এক কাপ কফি খাওয়ার আগেও মানুষ মাথা ঝাঁকায় আর দুই ধরনের ভাবনা ভাবে; এক, আহ, বন্ধুদের সঙ্গে এভাবে কফি খাওয়ার দিনগুলো খুব দ্রুতই হারিয়ে যাবে, দুই, স্কুল-কলেজে কত মজা করেই না কফি খেতাম! তেইশের পরে মানুষ কথায় কথায় স্মৃতি হাতড়ানোর অভ্যাস রপ্ত করতে থাকে; যত বয়স বাড়ে তত সেই অভ্যাসের চর্চাও বেড়ে চলে এক্সপোনেন্টশিয়াল হারে।
আমি এখন চব্বিশের শেষপ্রান্তে অবস্থান করছি, তাই তেইশজনিত তৃষ্ণা (স্মৃতিবিশ্লেষণ একধরনের তৃষ্ণাই বোধহয়!) একটু একটু করে বোধ করতে শুরু করছি, অপেক্ষায় আছি কবে এই তৃষ্ণা বেদুইনের ছটফটানিতে রূপ পায়!
জীবনের দিক অসংখ্য: আলোকিত বা সৌন্দর্যময়, গতানুগতিক, অন্ধকারাচ্ছন্ন, এবসার্ড বা উদ্ভট, প্রভৃতি। মানুষমাত্রই এই দিকসমূহের অন্তর্ভুক্ত, এবং আমি একজন মানুষ এ ব্যাপারে কখনোই কোন সন্দেহ পোষণ করিনা।
মাত্রার হেরফেরে আমার জীবনেও এই দিকগুলো আছে অবশ্যই, তবে উদ্ভট দিকটার প্রতিই আমার যাবতীয় ভাল লাগা, দূর্বলতা কিংবা পক্ষপাতিত্ব। যা কিছু মার্জিত বা সাদরে গ্রহণীয় সেই ব্যাপারগুলোর প্রতি ছোটবেলা থেকেই একধরনের তীব্র বিকর্ষণ বোধ করতাম। তাই সত্যিকার অর্থেই অনুভব করি, আমার মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ একটা স্তরে এসে বাধা পড়ে গেছে, এখান থেকে পরবর্তী স্তরে যেতে পারছেনা, পূর্ববতী স্তরও কার্যত অদৃশ্য হয়ে গেছে---- অর্থাৎ ঐ স্তরটাই এখন আমার ব্যক্তিক আইডেন্টিটি। তবে উদ্ভটতার কোন সর্বজনমান্য মানদন্ড নেই বলে এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় আপাত মনে হওয়া এইসব কার্যক্রমকে উদ্ভট বলা উচিৎ হবে কিনা, আবার এটাও সত্য মানুষ তার নিজস্ব চিন্তার জগতে ঈশ্বর। আমার মন যেহেতু এদেরকে উদ্ভট সাব্যস্ত করেছে, সেহেতু অন্যের চিন্তারাজ্যে তারা কী সাব্যস্ত হল সেই চিন্তায় মগ্ন হবার কোনই মানে হয়না।
জীবনের প্রথম সাতবছর আমি গ্রামে কাটিয়েছি। ঐ সময়ে দুটো কাজ প্রায় নিয়মিতই করা হত: ১. বাঁশের কঞ্চির মাথায় দড়ি বেঁধে দিতাম; সেই দড়িবাঁধা কঞ্চিগুলোকে মনে করতাম গরু, এমনকি নিড়ানী দিয়ে ঘাস কেটে এনে সেই কঞ্চির সামনে রাখতাম। বাঁশের মাথা চোখা করে কেটে খুঁটি বানিয়ে বাড়ির এখানে ওখানে পুঁতে রাখতাম, এবং কঞ্চিতে বাধা দড়ির খোলাপ্রান্ত ঐসব খুঁটিতে বাধতাম, যেন সত্যিকারের গরুই বাঁধা আছে খুঁটিতে। এই কাজটার জন্য কম বকা হজম করতে হয়নি তখন।
২. আমাদের বাড়িতে ছোট ছোট অনকেগুলো নারিকেল গাছ ছিল।
সেই গাছগুলোর ডাল কাটতাম সুযোগ পেলেই। আমার পরিকল্পনা ছিল ঐ ডাল দিয়ে অদ্ভুত কোন যন্ত্র বানানোর, কী যন্ত্র তা জানা ছিলনা, কিন্তু কখনো ডালের সঙ্গে কঞ্চি বেঁধে, অথবা ডালের ভেতর দিয়ে কলম ঢুকিয়ে একটা যান্ত্রিক কাঠামো তৈরির চেষ্টা করতাম । আমি নারিকেল গাছের ডালগুলো দিয়ে যান্ত্রিক কাঠামো কেন তৈরি করতে চাইতাম বিষয়টা এখনো পরিষ্কার নয়, তবে কঞ্চিগরুর বিষয়টা অনুমেয়: ঐসময় নানীবাড়ী যাওয়া হত খুব, নানীদের ছিল গোয়ালভরা গরু--- এই সূত্রটা আমাকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। ৯৪সালে আমরা গ্রাম ছেড়ে মানিকগঞ্জ শহরে আসি। প্রথমদিকে আমরা একটা টিনশেড বাসায় ভাড়া থাকতাম; শহরের সেন্টারপয়েন্টে অবস্থিত হলেও বাসাটা ছিল বেশ খোলামেলা, অনেক ফাঁকা জায়গা ছিল।
আমি আর আমার ছোটভাই মিলে উঠোনের সামনে ১-২ফুট দৈর্ঘ্যের গর্ত খনন করে তাত পানি ঢেলে পুকুর তৈরি করতাম, পুকুরে কঞ্চি অথবা ডালপালা দিয়ে সাঁকো তৈরি করতাম, এরপর সেই সাঁকোতে পিপড়া ছেড়ে দিতাম; ব্যাপারটা খুবই উপভোগ করতাম বলে এটা প্রায় নিয়মিতই করা হত। কাছাকাছি সময়ে জন্ডিসে আক্রান্ত হই। আমাকে তখন বেশ কয়েকটি স্যালাইন পুশ করা হয়েছিল; আমি স্যালাইনের প্যাকেটগুলো জমিয়ে রাখি, পরে তাতে পানি ভরে গাছে পুশ করি; এখানেও আমার ছোটভাই ছিল সার্বক্ষণিক সঙ্গী।
তবে আমার ছোটভাইয়ের মূল অবদান অন্যখানে, মূলত ওখান থেকেই আমার লেখক হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা ২ভাই মুখে মুখে গল্প বা কাহিনী বানাতাম, এটা ছিল আমাদের খুব পছন্দের একটা খেলা; ও একটা চরিত্র বানাতো, আমি একটা চরিত্র বানাতাম।
অতঃপর চরিত্রগুলো ঘিরে কাহিনী বয়ান করতাম একটানা । শুরুতে দুটো চরিত্র ছিল। একজনের নাম বুটকো ভিয়ে, অন্যচরিত্রটির নাম এখন আর স্মরণে নেই। চরিত্র দুটো কথা বলত ঠোঁটের সঙ্গে ঠোঁট জোড়া লাগিয়ে, ফলে উচ্চারণগুলো স্পষ্ট লাগতোনা। কোন পরিকল্পনা থাকতনা, আমরা কথা বলতে বলতেই চরিত্রগুলোর পরিণতি ঠিক করতাম।
বুটকো ভিয়ে ছিল অত্যধিক মোটা, আর অপর চরিত্রটি স্বাভাবিক আকৃতির কিন্তু কুটিল প্রকৃতির। আমি কুটিল চরিত্রটি নিয়ে কাজ করতাম, আর আমার ভাই করত বুটকো ভিয়ে। এই কাহিনী বানানো খেলাটি আরও জমজমাট হয় ১-২বছর পরে। বুটকো ভিয়ে বাদ, তার স্থলে অনেকগুলো নতুন চরিত্র নিয়ে আমরা মুখে মুখে গল্প বানাতে থাকি, এবং এবারকার খেলাটা আমাদের ভাইয়ে ভাইয়ে তীব্র প্রতিযোগীতার অনুষঙ্গ হয়ে উঠে। এই কাহিনীতে ঘটনা সাজিয়ে আমরা চেষ্টায় থাকতাম নিজের বর্ণিত চরিত্রটি কৌশলে অন্যের চরিত্রটিকে যেন পর্যুদস্ত করে।
এই কাহিনীতে ক্রমাগত নতুন চরিত্র আসতে থাকে, আমরা নিজেরাও বুঝতে পারতাম না কখন কিভাবে তারা আসবে। কাহিনীতে আমরা হেমায়েতপুর নামে একটা গ্রাম বাছাই করি, ঐ নামে সত্যিই কোন গ্রাম আছে কিনা তা তখন মূখ্য ছিলনা। সেই গ্রামের মাতব্বরের নাম পাচু মিয়া, কিন্তু তার উচ্চতা মাত্র ৪ফুট ২ ইঞ্চি বলে মানুষজন তাকে বলত গুইট্যা পাচু। পাচু মিয়া অত্যন্ত ধুরন্ধর প্রকৃতির, কথা বলে অস্বাভাবিক টোনে, তার ৫০হাজার লাঠিয়াল বাহিনী আছে, যারা নৌকায় করে আসে, এবং প্রতিবারই তাদের নৌকা ডুবে যায়, তারা তখন সাঁতরিয়ে পাড়ে উঠে। পাচু মিয়ার বিশ্বস্ত অনুচর নিয়ামত--- তার শরীরে অসুরের শক্তি।
এই চরিত্র দুটো সৃষ্টির একটা সাইকোলজিকাল ব্যাখ্যা এখন খুঁজে পাই: চাচা চৌধুরী কমিকের চাচা চৌধুরী আর সাবু-ই মূলত পাচু আর নিয়ামতকে প্রভাবিত করেছিল। তবে বাকি চরিত্রগুলোর ব্যাপারে কোন ব্যাখ্যা্ এখনো পাইনি। একটা চরিত্র ছিল আনিস যে নিজেকে গ্রামের সবচেয়ে ডেয়ারিং ছেলে বলে দাবী করত, সবধরনের আগ্নেয়াস্ত্র তার কাছে থাকত; একই ধরনের আরেকটি চরিত্র ছিল পলাশ, কিন্তু সে নিজেকে বলত গ্রামের সবচেয়ে ভদ্র ছেলে। একটা চায়ের দোকান ছিল গ্রামে, রজবের চায়ের দোকান; সেই দোকানে সারাদিন বসে চা খেত কাদের, আর মানুষের নামে বদনাম করত। কিন্তু বড় ভাইকে দেখে কাদের খুবই ভয় পেত, ভাই তার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে প্রায়ই বাড়ি থেকে বের করে দিত, সে তখন রজবের দোকানে গিয়ে ভাইয়ের বিরুদ্ধেও হম্বিতম্বি করত।
সময়ের বিবর্তনে কাহিনীতে যুক্ত হয় মেজর জালিম, যে অপরাধীকে ধরলে চাবুক পেটা করত, পরে গায়ে লবণ মাখিয়ে দিত। দুটো পুলিশ চরিত্র ছিল, একজনের নাম ইনস্পেক্টর দুরমুজ, অন্যজন আহমেদ ইবনে কালাম ইবনে শরীফ ইবনে রহমত বিন শরীফ। কিন্তু এত বড় নাম মনে রাখতে পারেনা বলে নিজের নাম পাল্টে নতুন নাম রাখে সুজন। সুজন এবং দুরমুজ দুজনই ঘুষখোর; দুরমুজের চাচা মন্ত্রী বলে সে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ঘুষ নেয়ার সময় সে একটা দাড়িপাল্লায় উঠে বসে থাকে, মানুষজন অন্যপাল্লায় টাকা দিতে থাকে।
পক্ষান্তরে সুজন অত্যন্ত নিচুস্তরের পুলিশ--- ২-১০টাকা ঘুষ নিতেও তার বাধে না, ভিক্ষুকের কাছ থেকেও ঘুষ নেয়। সামান্য রিকশাওয়ালাও তাকে ধরে চড় মারতে পারে, কারণ সে পিস্তল চালাতে জানেনা; একটা ভেসপা হোন্ডা আছে যেটা রিকশারও পিছনে পড়ে। সুজনের বন্ধু প্রফেসর আলিম, কৌরি কলেজ তার চাকরিস্থল, কিন্তু মাসে বেতন তোলার দিন বাদে কখনোই কলেজে যায়না। সুজন এবং আলিম পরস্পরকে মানুষের সামনে অপদস্থ করে মজা পায়, একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি মামলা করে। প্রতদিনই সুজনের চাকরি যায়, কিন্তু দুরমুজকে ঘুষ দিয়ে আবার শিস বাজাতে বাজাতে ফিরে আসে।
উপায়ন্ত না দেখে এসপি দুজন রক্ষী রাখে যারা প্রতিদিন সুজনকে ১০০বার কান ধরে উঠবস করায়। সুজনের বাড়ির দারোয়ান আছে একজন, যে সুযোগ পেলে বাড়ির ইট খুলে খুলে বিক্রি করে, আবার রাতের আঁধারে আলিম সুজনের বাড়িতে গিয়ে চুরি করে খাবার খায়, সুজন আর আলিম ঈদের দিন পরিচিত ছোট-বড় সবাইকেই সালাম করে সালামির আশায়। তাদের আরেক বন্ধু জজ জালিয়াত; জালিয়াত কোর্টে যায়না , তার কোযার্টারের জমিও মানুষের কাছে বিক্রি করে দেয়। আরেকটা চরিত্র হরফুন মওলা, যে কয়েক একর জমি কিনে নিজেই একটা রাজ্য গড়ে তুলেছে; সেখানে তার রাজপ্রাসাদ আছে, ঐ এলাকায় সবাই তার প্রজা, তাকে কর দিতে হয়, এবং তারও একটা মন্ত্রীপরিষদ আছে। এই চরিত্রগুলোর ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত হত আমাদের হাতে।
প্রতিটি চরিত্রই কোন না কোনভাবে পাচু মিয়ার সঙ্গে পরিচিত ছিল, তবে আস্তে আস্তে সুজনই বেশি চলে আসে আমাদের কাহিনীতে। মুখে মুখে তাৎক্ষণিক কাহিনী তৈরি করে সবগুলো চরিত্রকে চালিয়ে নেয়ার খেলাটা এমনকি বড় হওয়ার পরও আমরা দুইভাই চালিয়ে গিয়েছি; আশপাশের মানুষজন বলত দুই ভাই কী যে ফুচুরফুচুর করে এক জায়গায় হলে। আমার ইচ্ছা আছে, জীবনের একটা পর্যায়ে এই চরিত্রগুলো নিয়ে সত্যি সত্যিই একটা কমিক সিরিজ করার, কারণ ঘটনাগুলো এত মজার ছিল, এখনো মনে পড়ে। আমার বাকি কর্মকান্ডগুলোতে আমার ভাইয়ের কোন সংযুক্তি নেই। ওখানে আমি একা।
ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটারদের প্রতি আমার বিশেষ ধরনের ফ্যাসিনেশন ছিল। আমি ভাবতাম ক্রিকেটাররা সাধারণ মানুষ নয়, ওরা ভিনগ্রহের কেউ, এমনকী পেপারে শচীন টেন্ডুলকারের স্ত্রীর ছবি দেখেও বিশ্বাস হয়নি ক্রিকেটারদের কোন পরিবার থাকতে পারে। আরও মনে হত মাঠগুলো এত বড় যে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত দেখা যায়না। তখন থেকেই ক্রিকেটারদের ছবি সংগ্রহ করা আরম্ভ করি। পেপার কাটিং, স্টিকার, যখন যেভাবে পারি, কিন্তু পরে জানতে পারি আমার এক বন্ধুও এই কাজটা করে, তখন আর এই কাজে আগের মত উৎসাহ পাইনি।
তার কিছুদিন আগে থেকে প্যাড জমানো শুরু করেছিলাম। ২য় যে বাসায় আমরা ভাড়া থাকতাম, তার নিচতলায় দুজন রিপ্রেজেন্টেটিভ ভাড়া থাকত; এক আংকেল একবার আমাকে কয়েকটা প্যাড দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই শুরু; চেনা-জানা যার কাছে প্যাড পেয়েছি নিয়ে নিয়েছি। একটা সময়ে ৫০ এর অধিক প্যাড জমিয়ে ফেলি। এই প্যাডগুলোতে লিখে লিখেই আমার গল্প লেখার শুরু হযেছিল।
আমার জীবনে ক্লাশ টু একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়। তখন থেকেই নামতা শেখা শুরু; শিখতে গিয়েই গুণ ব্যাপারটার সঙ্গে পরিচয় হয়; আমি একটি সংখ্যাকে অন্য একটি সংখ্যা দিয়ে গুণ করতে চেষ্টা করলাম মনে মনে, এবং কিছুদিনের মধ্যেই আবিষ্কার করি খুব সহজেই গুণ করতে পারছি, কোন ক্যালকুলেটর লাগছেনা। আরও অবাক ব্যাপার হল, আমি উপলব্ধি করলাম আমি সংখ্যাগুলোকে যেন দেখতে পাচ্ছি মানুষের আকারে, আশেপাশের ঘটনার মাঝেও সংখ্যা চলে আসছে। এবং এই আবিষ্কারের ব্যাপ্তি বাড়তে বাড়তে এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে পরিচিত যে কোন মানুষই এখন আমার কাছে সংখ্যা হয়ে যাচ্ছে; কোন একজন চেনা মানুষকে স্মরণ করতে গেলে তার চেহারার বদলে কোন একটা সংখ্যা মনে পড়ে।
ক্লাশ সিক্সে মাকড়সা পালনের একটা নেশা পেয়ে বসেছিল।
পাশের বাসার এক আন্টি আমার জন্মদিনে এক বক্স মিমি চকলেট দিয়েছিলেন; আমি সেই বক্সটাকে ব্যবহার করেছিলাম মাকড়সা পালনক্ষেত্র হিসেবে। প্লাস্টিকের বক্স ছিদ্র করে তাতে শলাকা ঢুকিয়ে কাঠামোর মত বানিয়েছিলাম, তারপর সেখানে ৫-৬টা মাকড়সা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ২-১দিনের মধ্যেই মাকড়সার জাল ছড়িয়ে পড়ে শলাকাজুড়ে। খাবার হিসেবে পিপড়া, মশা,মাছি দিতাম, কিন্তু সম্ভবত মাকড়সাসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় কিছু কিছু মাকড়সা মারা যায়; খাবারগুলো তাদের কতটা উপকারে আসছিল বোঝা যাচ্ছিলনা। কিন্তু আমার এই প্রকল্পটাও ভেস্তে যায় আম্মুর হস্তক্ষেপে।
তার ধারণা মাকড়সার পেছনে আমি অনেকখানি সমষ্ট করছি, তাই আমাকে না জানিয়েই একদিন মাকড়সার বাক্সটা ছুড়ে ফেলা হয়।
ক্লাশ ফোরে উঠার পর আমার নতুন একটা অভ্যাস গড়ে উঠে : মাটির তৈরি শোপিস কে ক্রিকেটার বানিয়ে ক্রিকেট খেলা। বিষয়টা ব্যাখ্যা করি। প্রতিবছর ডিসেম্বরে মানিকগঞ্জ শহরে বিজয়মেলা হয়। সেই মেলায় মাটির তৈরি ছোট ছোট বাঘ,খরগোশ ,পাখি,উট প্রভৃতি পাওয়া যেত।
আমাদের বাসায় এধরনের বেশ কিছু শো-পিস জমা হয়েছিল। একদিন কী মনে করে যেন শোকেজ থেকে শোপিসগুলো বের করে আনি; মোট ২২টা শোপিসকে ১১জনের দুটি দলে বিভক্ত করি, বিছানার মাঝ বরাবর সামান্য দুরত্বে দুটি লোশনের বোতল রাখি স্ট্যাম্প হিসেবে, বিছানার চারধারে ১১জন ফিল্ডার সাজাই; অন্য দলের দুজন ব্যাটিংয়ে নামে। বল হিসেবে ব্যবহার করি পুতির মালার পুতি। আমি একপ্রান্ত থেকে পুতির বল ছুড়ে দিচ্ছিলাম, সেই বল ব্যাটিংয়ে দাঁড়ানো শোপিসের গায়ে লেগে সৃষ্ট ফলাফল অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছিল। যেমন, শোপিসে লেগে বলটি যদি পেছনে থাকা লোশনের বোতলকে আঘাত করে, এর মানে হল বোল্ড আউট।
একইভাবে শোপিসে লেগে বলটি উড়ে গিয়ে কোন একটা ফিল্ডার শোপিসের কাছে পড়া মানে ক্যাচ আউট; একদল ব্যাটিং শেষে অন্যদল ব্যাটিংয়ে নামত, সবশেষে ফলাফল নির্ধারিত হত। আইসিসি ট্রফির সময় এই খেলাটা বাসার সবার নজরে আসে প্রথমবারের মত। প্রতিটি খেলার আগে একটি দলকে বাংলাদেশ ধরে খেলতাম, সেখানকার ফলাফল পরে মূল খেলার সঙ্গে মেলাতাম। ফাইনাল ম্যাচের আগে আমার খেলায় কেনিয়া দলটা ১৬৬রান করেছিল ১২ ওভাবে; পরে বৃষ্টির কারণে মূল ম্যাচেও বাংলাদেশকে কাছাকাছি একটা টার্গেট দেয়া হয়েছিল। ব্যাপারটাতে বাড়াবাড়িরকম আনন্দ পেয়ে বাসার সবাইকে খেলাটা সম্পর্কে বলেছিলাম; তখনকার মত সবাই মজা পেলেও পাগলামি এবং শিশুতোষ আখ্যা দিয়ে পরে খেলাটার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
আমি অবশ্য তাও খেলতাম, এবং তা ক্লাশ এইট পর্যন্ত!
ক্লাশ সিক্সের বিজ্ঞান বইয়ে পেপারওয়েট বানানোর একটা কৌশলের বর্ণনা ছিল, আমার কৌশলটা বেশ ভাল লেগে যায়। কৌশলটা হল, কলম বা প্লাস্টিক জাতীয় জিনিসকে গলাতে হবে, ফিলামেন্ট বাল্বের পেছনের ঢাকনা ও ফিলামেন্ট খুলে ফেলে সেই ফাঁকা জায়গা দিয়ে কলম বা প্লাস্টিককে গলিয়ে ফোটায় ফোটায় ফেলতে হবে। বাল্বের ভেতরের শূন্যজায়গা গলিত পদার্থে পূর্ণ হয়ে গেলে বাল্বটি বেশ কিছুক্ষণ ধরে ঠান্ডা করবার পর ভেঙ্গে ফেলতে হবে। এই কাজটা করতে গিয়ে বাসার সব কলম পুড়িয়ে ফেলেছি, দোকান থেকে নতুন কলমও কিনে এনেছি গলানোর উদ্দেশ্যে; কিন্তু এই প্রক্রিয়াটা আমাকে খুব বেশিদিন আকর্ষণ করতে পারেনি।
ক্লাশ এইটে উঠার পর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের আদলে নিজেই একটা লাইব্রেরী গড়ে তুলি ইস্টার্ন মডার্ন লিটারেচার সেন্টার (ই.এম.এল.সি) নামে।
সীল-প্যাড-সদস্য ফরম বানিয়ে রীতিমত তুলকালাম কান্ড! বাসায় বড় আপা-ছোট আপার যত বই ছিল সবগুলোকেই ই.এম.এল.সি এর আওতায় নিয়ে এলাম। কিন্তু আমার বন্ধুদের অনেকেই বই নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছিলনা, ফলে বড় আপা-ছোট আপাও নিজেদের বই মানুষকে পড়তে দেয়ার বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি জারি করে।
ক্লাশ নাইনে আমার চিন্তাধারায় একটা বড়মানের পরিবর্তন আসে। আমি হঠাৎই ভাবতে শুরু করি, বছরের প্রতিটা দিনই যদি বিশেষ হত! এই ভাবনা থেকে আমি ডায়েরি লেখা শুরু করি, কিন্তু এতে তেমন কোন বিশেষত্ব পাচ্ছিলাম না। তখন নতুন প্রকল্প নিই : মানুষের জন্মদিন সংগ্রহ শুরু করি।
আমার ইচ্ছা ছিল ৩৬৫ দিনই যেন চেনা-অচেনা কোন না কোন মানুষের জন্মদিন থাকে, যাতে আমি একটু হলেও তাকে নিয়ে ভাবি। কাজ ভালই চলছিল, কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি সিনেমায় ফেরদৌসকেও একই ধরনের কাজ করতে দেখে এই ব্যাগারে সম্পূর্ণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। তখন ভিন্ন একটা পরিকল্পনা মাথায় আসে। নিজের হাতের লেখা নিয়ে আমি যারপরনাই হতাশ; তাই ইচ্ছা হয় সবধরনের মানুষের হাতের লেখা যোগাড় করবার। এই মনোভাব থেকেই ডায়েরিতে মানুষের হাতেরে লেখা সংগ্রহ করতে শুরু করি।
যে কোন মানুষ পেলেই আমি তার দিকে ডায়েরি বাড়িয়ে দিতাম কিছু একটা লিখে দেবার অনুরোধ জানিয়ে। এই প্রকল্পটা আমাকে সত্যিই অনেক আনন্দ দিয়েছে, এখনো দেয়। ২০০২-২০০৯ এই ৭বছরে আমি প্রায় ১০০০জন মানুষের হাতের লেখা সংগ্রহ করেছি ডায়েরিতে। কিন্তু ২০০৯ সালে আমার পরিচিত এক সিনিয়র ভাইকে ডায়েরিটা দিয়েছিলাম কিছু একটা লিখে দিতে; বাসায় নেয়ার পর ডায়েরিটা আর খুঁজে পাচ্ছেনা সে। জানিনা আর কখনো ডায়েরিটা ফেরত পাব কিনা, এখনো উনার সঙ্গে দেখা হলেই ডায়েরির কথা বলি, কিন্তু উনি কোন সদৃত্তর দিতে পারেননা।
যখন থেকে মানুষের লেখা সংগ্রহ শুরু করেছি, তার কিছুদিনের মধ্যেই আরও একটা প্রকল্প শুরু করি। এই প্রকল্প মানুষের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ। একটা ডায়েরিতে প্রশ্ন লেখা থাকত, যার সাক্ষাৎকার নেয়া হবে তার সম্পর্কে উপরে কিছু লেখা হত, এরপর একে একে প্রশ্ন করা হত। প্রতিটি মানুষের জন্যই সম্পূর্ণ আলাদা প্রশ্ন ছিল, একই প্রশ্ন কখনোই পুনরাবৃত্তি করা হতনা। প্রায় ১০০-১৫০ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে এখনো পর্যন্ত, কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে উপলব্ধি করি ইন্টারভিউয়ের মূল লক্ষ্য থেকে আমি সরে যাচ্ছি।
কারণ, আমি যেসব প্রশ্ন করতাম তা দিয়ে একজন ব্যক্তিমানুষকে কোনভাবেই যাচাই করা সম্ভব ছিলনা, অধিকন্তু আমি তাদের উত্তরগুলোও পরিমার্জন করে লিখতাম, ফলে সাক্ষাৎকারটা এক অর্থে আমার নিজেরই সাক্ষাৎকার হয়ে উঠছিল।
আগেই বলেছি ক্লাশ নাইন আমার চিন্তা-ভাবনায় একটা বিশাল আলোড়ন তুলেছিল। ছোটবেলা থেকেই অত্যধিক লাজুক প্রকৃতির ছিলাম, মেয়েদের রীতিমত ভয় পেতাম, নিজের মামাতো-খালাতো বোনদের সঙ্গেও কথা হতনা। কিন্তু ক্লাশ নাইনে ঊঠবার পর কী হল বুঝলাম না; কয়েকজন বন্ধু মিলে নারী বিদ্বেষী সংঘ (নাবিস) গঠন করে ফেলি। এই সংঘের কথা পরিচিত বন্ধু-বান্ধব, এমনকি বয়সে বড়রাও জেনে ফেলে।
আমরা সংঘের মূলনীতি ঠিক করে সদস্য সংগ্রহ করতে থাকি, আমি সেই সংঘের সভাপতি। ২বছরে অনেক সদস্য সংগ্রহ করি। কিন্তু কলেজে উঠবার পর একে একে সবাই সংঘ ছাড়তে থাকে, একটা পর্যায়ে আমিই সংঘের একমাত্র সদস্য হিসেবে রয়ে যাই। সংসার ব্যাপারটাকে মানতে পারিনা, পরিবার প্রথাকে ভাল লাগেনা, তাই ঘোষণাই দিয়ে ফেলি জীবনে কোনভাবেই বিয়ে করবোনা। গতবছর পর্যন্ত এই মনোভাবে স্ট্রিক্ট ছিলাম, কিন্তু প্রকৃতির নিয়মে আমিও আপোষকামীতে রূপান্তরিত হয়েছি।
ফলে নাবিস সংঘটি এখন বিলুপ্ত।
নটরডেম কলেজে আমার সময়টা ভালই কেটেছে বলবো। ঐসময়েই আরও একটা প্রকল্প শুরু করি ‘আপন ভুবন’ নামে। এটাও ডায়েরি কেন্দ্রিক প্রকল্প। চেনা মানুষদের মধ্যে যাদেরকে ব্যতিক্রমী মনে হত, কিংবা অসাধারণ মেধাবী মনে হত তাদেরকে ডায়েরি দিতাম, তারা তাতে নিজেদের সম্পর্কে লিখতো; লেখার একটা নিম্নসীমা ছিল; অন্তত ৪ পৃষ্ঠা লিখতেই হত।
এতে করে, অন্যরকম মনে হওয়া মানুষগুলোর জীবনের অনেক আকর্ষণীয় দিকগুলো আমি জানতে পেরেছি। ২৩বছর বয়স পর্যন্ত যতগুলো প্রকল্প করেছি, আমার দৃষ্টিতে আপনভুবনই তার মধ্যে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক ।
ক্লাশ নাইনে পড়ার সময় সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতার আয়োজন করাটাও আমার জন্য খুব চমৎকার একটা অনুভূতি ছিল। ভবেশ রায়ের লেখা ‘কে কী কেন কবে কোথায়’ বইটা আমার জন্য দুর্দান্ত অনুপ্রেরণাদায়ী ছিল। সেই বই আর পেপার থেকে প্রশ্ন করতাম।
মোট ৬টা দল অংশ নিয়েছিল, প্রতি দলে ২জন, প্রতিযোগীদের সবাই আমার সহপাঠী; শুধু একটা দলে আমার ছোট ভাই ছিল। ঐ সময়গুলো ছিল সম্মোহনী। ব্যাট-বল আর টেপ কেনার জন্য আব্বুর কাছ থেকে নিয়মিতই কিছু আলাদা টাকা পেতাম। সেই টাকা দিয়ে পুরস্কার কিনেছিলাম। এখন যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন যেন স্কুলজীবনের সেই উদ্দম আর পাইনা, দিনে দিনে আমি এক জড়পদার্থে পরিণত হচ্ছি।
ড্রাস্টিকাল চেঞ্জ বলতে যা বোঝায় আমার ক্ষেত্রে বোধহয় তাই হয়েছে।
নানা কারণেই ক্লাশ নাইন আমার জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ। সংখ্যা সংক্রান্ত আমার দক্ষতাগুলো ততদিনে চেনা-জানার গণ্ডি অতিক্রম করে ফেলেছিল; আমাদের স্কুলের এক শিক্ষক বিষয়টা জানতে পেরে বিজ্ঞান মেলায় প্রোজেক্ট দিতে বলেন; প্রোজেক্টের নাম তিনিই ঠিক করে দেন---‘জীবন্ত কম্পিউটার’। বড় আর্ট পেপারে বিভিন্ন সংখ্যার গুণফল নমুনা হিসেবে লিখে রেখে আমি বসে ছিলাম, মানুষজন এসে বিভিন্ন সংখ্যার গুণ জিজ্ঞেস করছিল; আমি তৎক্ষণাৎ ফলাফল বলে দিচ্ছি এই ব্যাপারটা অনেককেই বিস্মিত করেছিল। এছাড়া, ঐ প্রোজেক্টে আরও একটা আবিষ্কার আমি দেখিয়েছিলাম --- একটি পূর্ণসংখ্যার ঘনমূল যদি পূর্ণসংখ্যা হয়, তবে ক্যালকুলেটর ছাড়াই তা বলে দেয়া সম্ভব স্রেফ সংখ্যাটি দেখেই।
এই প্রসঙ্গটা অফটপিক, তবুও উল্লেখ করি। রাতে চলাফেরা করা সবসময়ই আমার জন্য বিপজ্জনক, কারণ গাড়ির লাইট আমার সহ্য হয়না, মাথায় চক্কর দেয়, তখন রাস্তা পার হওয়াটা মুশকিল হয়ে পড়ে। এজন্য রাতে সাধারণত একা রাস্তা পার হইনা। এই সমস্যাটা কবে থেকে শুরু হয়েছে মনে নেই।
আমার প্রকল্পগুলোতে কখনোই কোন সমর্থন পাওয়া যায়নি, বরং এগুলো ক্রমেই আমায় আত্মকেন্দ্রিক মানুষে পরিণত করেছে, তবুও আমার সময়গুলো আমার কাছে মহানন্দের--- বৈচিত্র্যের ঘাটতি যতই থাকুক।
২৩ পরবর্তী জীবনে বৈষয়িক ভাবনা আমার প্রকল্পগুলোর রাশ টেনে ধরতে চাইলেও আমি এখনো কোন না কোন প্রকল্প তৈরি করছি, যা শুধুই আমার নিজস্ব বিনোদনের জন্য। হয়তবা আরও অনেকদিন পরে সেইসব প্রকল্প নিয়ে নতুন কোন লেখা লিখবো।
যদিও এসব করতে গিয়ে আমার বিকাশটা সুষ্ঠুভাবে হয়নি, তবুও কিছু ব্যাপার আমার মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। এখন যে কোন আজগুবি ভিজুয়ালাইজেশন তৈরি হয়ে যায় স্বতঃস্ফূর্তভাবেই, মানুষও এক একটা মৌলিক সংখ্যার ইমেজ হয়ে যায়; আর ক্ষতিকর প্রভাব হল মনোযোগহীনতা। এখন আমি সুনির্দিষ্ট কোন বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারিনা, কোন বক্তৃতা শুনলে তার একটা লাইনও মনে রাখতে পারিনা, কোন বই থেকে উদ্ধৃতি দিতে পারিনা।
তাই লাভ-ক্ষতির যোগফলে কোন্ পাল্লাটা ভারী হল বুঝে উঠতে পারছিনা। বাস্তবতা থেকে ক্রমশই ফ্যান্টাসির জগতে চলে যাওয়ার একটা প্রবণতা আমাকে কোন গন্তব্যে নিয়ে এল তাও হিসেব করিনি; মাঝে মাঝে প্রচন্ড হতাশ হই বাস্তব জীবনের অনিবার্য ব্যর্থতায়, আবার পরক্ষণেই ভাবি ব্যর্থ হচ্ছি তো কী হয়েছে? জীবন কি থেমে আছে? জীবন কখনো থেমে থাকেনা, তবে চলার ধরনটা সবসময়ই একটা প্রশ্ন; চলার ধরন প্রশ্নে আমি আবারো নাজুক। মাথায় কেবলই আইডিয়া ঘুরে, আশায় থাকি হয়তবা একদিন একটা কিছু অন্যরকম হবেই। তবে সেজন্য আমি আদৌ প্রস্তুত কিনা তাও ভেবে দেখিনি। অনিয়ন্ত্রিত, অগোছালো,অপরিকল্পিত --- জীবনে ‘অ’ এর এমন আধিক্য কখনোই ভাল কিছু বয়ে আনতে পারেনা; আমার ভয়টাও এখানেই, কারণ সম্পর্কে আমি ‘অ’ এর মাসতুতো ভাই!
দেখবার জগতটা যত বেশি সম্ভব দীর্ঘ করবার ইচ্ছা আছে আমার, দেখা যাক সেই ইচ্ছার কতটুকু বস্তবায়ন করতে পারি।
২৩ পূর্ববর্তী জীবনটা এলোমেলো কেটেছে, ২৩ পরবর্তী জীবনে তার কতটুকু পরিশোধিত হয় এটা দেখবারও তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমার--- অর্থাৎ আমি আমার নিজের জীবনেরই একজন পর্যবেক্ষক। জীবন আসলে কী চায়, আর আমিই বা কী চাই এই বিপরীতমুখী প্রশ্নের ঘূর্ণনে সময় কেটে যাচ্ছে, আর অপচয়ের রিসাইকল বিন টা ওজনে ভারী হচ্ছে; অর্জন সে এক বিরাট প্রশ্নবোধক! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।