সবাইকে শুভেচ্ছা...
’রব তেরা কোন হ্যায়?’
থতমত খাইয়্যা গেল আসামী। কি বলিতে হইবে কিছু বুঝিতে পারিল না। অসহায়ের মত চারদিকে তাকাইল। মনে হইল কাহাকে যেন খুঁজিতেছে সে। দর্শকের আসনে বসা অনেকেই বিড় বিড় কি একটা নাম উচ্চারণ করিল যাহা আসামী পর্যন্ত পৌঁছাইল না দূরত্বের কারণে।
উকিল আবারও জিজ্ঞাসা করিল, ’রব তেরা কোন হ্যায়’, এইবার চড়া গলায়।
’রব মেরা হাসিনা হ্যায়’, অনেকটা যন্ত্রের মত উচ্চারণ করিল এ যাত্রায়।
মারহাবা মারহাবা শব্দে মুখরিত হইয়া গেল চারিদিক। কোর্টে বসা সবাই হাফ ছাড়িয়া বাঁচিল, যাক, শেষ পর্যন্ত মনে করিতে পারিয়াছে। বিচারক কিছু বুঝিতে পারিলেন না।
তাহার দুই চোখে দুইটা আগুনের গোল্লা জ্বলিতে দেখিল আসামী। থরথর করিয়া কাঁপিয়া উঠিল তাহার সর্বাঙ্গ।
’কোন হ্যায় তেরা রব?’
’পরোয়ারদিগার, হাসিনা মেরা রব হ্যায়’
দর্শকদের আসন হইতে কেউ একজন খুক করিয়া হাসিয়া উঠিল। বাকিদের মাঝেও সংক্রামিত হইল এই হাসি। হাসির রোল পরিয়া গেল চারিদিকে।
তবে বিচারক হাসিলেন না। তিনি কঠিন দৃষ্টিতে তাকাইলেন জিল্লুর দিকে। জিল্লু যাহা বুঝিবার তাহা বুঝিয়া গেল। ফাটা বেলুনের মত চুপ্সাইয়া গেল তাহার শরীর।
যেনতেন আদালত নহে, খোদ ঈশ্বরের আদালত বসিয়াছে আজ।
গোসসায় আছেন তিনি। উপলক্ষটাও ভয়াবহ। কোথাকার কোন জিল্লু তাহার নিজের লেখা আমলনামায় হাত দিয়াছে। তাও আবার একবার নয়, একাধিক বার। ঈশ্বরের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করিয়া তাহার পেয়ারের বান্দাদের ভাগ্য নিজ হাতে লিখিবার সাহস করিতেছে।
। উপায় না দেখিয়া মিনি হাশর ঘোষনা করিতে বাধ্য হইলেন তিনি। অবকাশকালীন আখেরাতে বিচার চলিতেছে জিল্লু মিয়ার। বিচারকের আসনে খোদ ঈশ্বর। উকিল হিসাবে নিয়োগ পাইয়াছেন আজরাইল।
জিল্লুরের কোন উকিল নাই। ইহাই নাকি এই দুনিয়ার নিয়ম।
- বান্দা, তোমাকে আমি মগজ দিয়াছি, বিবেক দিয়াছি, বিবেচনা করিবার তৌফিক দিয়াছি, এইসব জলাঞ্জলি দিয়া কোন লালসায় তুমি কাগজে সই করিলে? তোমার কি জানা নাই এই সবের মালিক একমাত্র আমি?
’আমার নেত্রী কখনো ভুল করিতে পারেন না’, দম দেয়া পুতুলের মত বাহির হইয়া গেল জিল্লুরের মুখ হইতে। ঈশ্বর নড়িয়া চড়িয়া বসিলেন।
’হে গন্দমখোর আদম, একটু আগে বলিলে তোমার রব, এখন বলিতেছ তোমার নেত্রী, জানিতে খায়েস হয় কে এই নেত্রী, কে এই রব? বাংলাদেশি নেতা-নেত্রীদের খাতাপত্র ঘাঁটিবার ইচ্ছা হয়না আমার , ইহাতে সর্বাঙ্গ অপবিত্র হয় কেবল।
বরং তুমিই বর্ণনা কর তোমার কেইস।
আগের মত আবারও কাউকে খুঁজিবার চেষ্টা করিল দর্শকদের আসনে। এন্টেনার মত চারদিকে চোখ ঘুরাইল। কিছু একটা বলিতে চাহিল, কিন্তু মুখ হইতে একটা শব্দও বাহির হইল না। এইভাবে দুইশত বছর (আখেরাতের) পার করিয়া দিল সে।
ঈশ্বরের তাড়া আছে, আরেক বাংলাদেশি নেতাকে শূলে চড়াইতে হইবে আজ, তাড়াহুড়ার তাগাদা দিলেন তিনি। কিন্তু জিল্লু নীরব। সেই যে মাথা নীচু করিল ২০০ বছরেও আর সোজা হইল না। ঈশ্বর উপায় না দেখিয়া হাবিল-কাবিল ভাতৃদ্বয়কে তলব করিলেন।
হে পেয়ারের হাবিল-কাবিল, জিল্লু যখন কাগজে সই করে তোমরা নিশ্চয় ডাইনে-বামে আছিলা, কথাবার্তা যাহাই হইয়াছিল তাহা নিশ্চয় রেকর্ড করিয়াছ, হুকুম করিতেছি, বাজাও সে রেকর্ড।
বলিতে সময় লাগিল কিন্তু বাজিতে সময় লাগিল না। ঈশ্বরের আরশ কাঁপিয়া উঠিল ১৩ কোটি ডেসিবেল ক্ষমতাসম্পন্ন শব্দ তরঙ্গের শানিত আওয়াজে। বাজিতে শুরু করিল রেকর্ড।
- নানা, আছেন কেমন? তা কি করিতেছিলেন?
খটাস আওয়াজ শোনা গেল রেকর্ডে। শ্রোতাদের বুঝিতে আসুবিধা হইল না, চেয়ার হইতে দাঁড়াইতে হইয়াছে বৃদ্ধ জিল্লুকে।
এমন একজন ফোন করিয়াছেন যাহার সাথে চেয়ারে বসিয়া কথা বলিবার অনুমতি নাই।
-জ্বে ভাল। আপনের দয়ায় প্রেসিডেন্টগীরি করিতেছি। দোয়া কইরেন।
- হুম! ফুলটাইম চাকরীডা দিয়া আমি বোধহয় ভুলই করছি।
আপনের বিশেষ কস্ট হইতেছে নিশ্চয়?
- হে হে, কষ্ট হইলেও ইহা বড়া মধুর। অধিকন্তু আপনার সেবা আমার সুন্নত। ইহাই আমার আখিরাত, ইহাই জান্নাত।
হাত দিয়া দুই কান ঢাকিবার ব্যর্থ চেষ্টা করিলেন সর্বশক্তিমান।
- না না, এইভাবে বলিবেন না, বলিলে শরম লাগে।
- কিভাবে বলিলে শরম কম লাগিবে একখান সিদ্ধান্ত দিয়া শাসনতন্ত্র সংশোধন করিলে বিশেষ উপকৃত হইতাম। আপনি না পারিলে মোজ্জামেলকে দিয়া করাইয়া নিবেন।
- শুনিয়া মনে হইতেছে দিন দিন আপনার শক্তি বর্ধিত হইতেছে। এই শক্তি যদি এইভাবে বাড়িতে থাকে আপনের অবস্থা কি হইবে একবার ভাবিয়া দেকেছেন কি?
- না ভাবি নাই। ভাবনার ব্যাপারে আপনের কোন নির্দেশনা এখনও হাতে পাই নাই।
কথায় বলে, পাইয়া করিও কাজ, করিয়া পাইও না। নির্দেশনার অপেক্ষায় রহিলাম।
- আমি সবদিক ভাবিয়া দেখিয়াছি, আপনে আমার বিশেষ পেয়ারের মানুষ, তাই আগামী ৬০ বছর প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেখিতে চাহি আপনেরে। আমি না থাকিলে আমরিকায় জন্ম নেয়া আমার নাতনিরও প্রেসিডেন্ট হইবেন এমনটাই আমার বাসনা। আপনাকে অনেকদিন বাঁচিতে হইবে।
এর উপায়ও বাহির করিয়াছি ইতিমধ্যে। মন দিয়া শুনেন, আপনাকে শাদি করিতে হইবে।
জিল্লুরের শরীর দিয়া বিদ্যুতের চমক বহিয়া গেল। চোখ চক চক করিয়া উঠিল। ভাবিল, আহা, জীবন কত অম্লমধুর! ’জ্বে, আফনের আদেশ শিরোধার্য, জিল্লু হুকুমের দাস মাত্র’।
শুনিয়া বিশেষ পুলকিত হইলাম। কাজ অনেক আগাইয়্যা রাখিয়াছি। আগামীকাল আপনের ডেরায় সুরঞ্জিতরে পাঠামু। হের হাতে ডকুমেন্ট থাকব একটা, আপনাকে স্বাক্ষর করিতে হইবে ঐ ডকুমেন্টে। এইটা আসলে আপনের কাবিননামা।
আমি মনে করি শুভ কাজে দেরী ভাল নহে। চটজলদি সই করিয়া জাতিকে আনন্দ দিবেন আর আপনিও পুলকিত হইবেন। বলিয়া রাখি, গত রাইতে খোয়াবে স্বঙ্গবন্ধুরে দেখছি। যাহা করিতেছি সবটাই হইতেছে উনার ইচ্ছায়।
অডিও হইতে এইবার ভিডিওত সুইচ করিল হাবিল-কাবিল ভ্রাতৃদ্বয়।
পরদিন ডকুমেন্ট সহ সুরঞ্জিত আসিল। নিজের ’কাবিননামায়’ স্বাক্ষর তর সইছিল জিল্লুরের। সুরঞ্জিতকে অন্দরমহলে ডাকিয়া ফিসফিস করিয়া জিজ্ঞাস করিল, ’তাইনের চেহারাডা কি্মুন, দেখছুইন আপনে? সুরঞ্জিত সন্দেহের চোখে তাকাইল তার দিকে। খারাপ একটা ইংগিত সহ ঝামটা মারিয়া উত্তর দিল, ’ফোয়া মাইনসের চেহারা দিয়া আফনের খাম খিতা? হুনছি তাইনেগো বাড়িত গিয়া জিয়াফত খাইছিলা, চেহারা দেকার কি সৌভাগ্য হয় নাই? যাই হোক, হেয় অহন জেলে, ফাঁসির দিন গুনতাসে। হাতে খলম নেউক্কা, সই দরখার।
বাঘে ধরলে বাঘে ছাড়ে, মাগর শেখ হাসিনায় ধরলে ছাড়ে না। বেড়াতেড়া খইরেন না, তয় আফনেরেও ছাড়ব না’।
জিল্লু কিছু বুঝিল না। কয়েক সেকেন্ড চুপ করিয়া রহিল। দেরি দেখিয়া ধমক লাগাইল সুরঞ্জিত।
জিয়াফতের দিন লক্ষীপুরের তাহেরের দেয়া দামি কলমটা হাতে লইল ও ভেতরের পুলক ভেতরে চাপিয়া ডকুমেন্টে স্বাক্ষর করিল। সুরঞ্জিত খেয়াল করিলে দেখিতে পাইত শুধু হাত না গোটা শরীর কাঁপিতেছে জিল্লুরের।
- বাবা হাবিল-কাবিল, আফনেরা ইডা যকন রেকর্ড খরলা, আমারডাও নিচ্চয় রেকর্ড খরছ? আমার কাহিনীডা বাজাইয়্যা হোনাওজ্ঞা। তাইনে এখৈ খায়দায় আমারেও বিয়া দিসিলা।
- রে পাপিষ্ঠ, তুই কিডা?
- হেয় আবদুস সামাদ আজাদ।
হাবিল কাবিল না, ভারী গলার উওরটা এল লম্বা মত একজনের মুখ হইতে। তাহার হাতে তামাক টানার পাইপ আর গায়ে কালা হাফ কোট।
এবার দেখা যাক কাদেরকে জিল্লুর ক্ষমা করছেন বা করবেনঃ
http://youtu.be/37CNkWJD7dw
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।