না, সরল সাদাসিধা জীবনযাপনে অভ্যস্ত কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী সোনারগাঁও হোটেলের ভিভিআইপি’র সুবিধা নেননি। চাও রেস্টুরেন্টে বিশেষ খাবারের আয়োজন ছিল তার জন্য, কিন্তু তিনি তা খাননি। খেলেন হোটেলের সাধারণ অতিথিদের জন্য রান্না করা বুফের খাবার। প্রটোকল ভেঙে খেতে ঢোকেন সোনারগাঁও হোটেলের নিচ তলায় ঝরনার পাশে অবস্থিত ঝরনা রেস্টুরেন্টে। সেখানে হঠাৎ তার প্রবেশে অবাক হয়ে যান হোটেলের স্টাফরা।
তার জন্য হোটেলের দোতলায় চাও রেস্টুরেন্টে ইটালিয়ান, চাইনিজ, থাই খাবারসহ বিভিন্ন ধরনের বাংলাদেশী খাবারের আইটেম ছিল। বিশেষ করে তার পছন্দের স্যামন ফিস ও ভেজিটেবল ক্যানালোনি ছিল মেন্যুতে। তা জানা সত্ত্বেও যাননি। সোনারগাঁও হোটেল সূত্র জানায়, ২৪শে জুলাই রাতে সোনিয়া ভারি খাবার খাননি। লাঞ্চ করেছেন কেবল ২৫শে জুলাই দুপুরে।
২টা ২০ মিনিটে ঝরনা রেস্টুরেন্টে প্রবেশদ্বারে আসেন। এ সময় নিরাপত্তা রক্ষীরা তার সঙ্গেই ছিলেন। তারাও জানতেন না তিনি দোতলায় যাবেন না। তাদেরও অবাক করে দেন সোনিয়া। তবে নিরাপত্তা রক্ষীদের কাউকে ঝরনা রেস্টুরেন্টের ভেতরে নেননি।
অন্য গেস্টের সমস্যা হতে পারে এ চিন্তা করেই সবাইকে বাইরে থাকতে বলেন। তারা হোটেলের রেস্টুরেন্টের বাইরেই দায়িত্ব পালন করছিলেন। নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে লাঞ্চ সারেন তিনি। এর আগে সফরসঙ্গী এক মন্ত্রীকে নিয়ে ঝরনা রেস্টুরেন্টের গেটে যেতেই তাকে দেখে ফেলেন রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার লিউ ডি সিলভা। তিনি এগিয়ে গিয়ে নমস্কার জানিয়ে ভেতরে নিয়ে যান তাকে।
সোনিয়া ঝরনা রেস্টুরেন্টের সাত নম্বর টেবিলটি পছন্দ করে সেখানেই বসেন। ওই সময় রেস্টুরেন্টে বসে খাবার খাচ্ছিলেন হোটেলের বিদেশী গেস্টরা। সোনিয়া ঝরনায় ঢুকে নিজেই বুফে খাবার আনতে চান। তখন ম্যানেজার জানান, তিনিই তাকে সেবা দিতে চান। সোনিয়া জানতে চান কি কি মেন্যু আছে।
তাকে বাংলাদেশী, চাইনিজ, থাইল্যান্ড ও ইন্ডিয়ান খাবারের বিভিন্ন আইটেমের কথা জানান। তিনি মনোযোগ দিয়ে শোনেন। একটু চুপ থেকে বলেন, আমি ডাব খেতে চাই। সঙ্গে সঙ্গে ম্যানেজার ডাবের পানির ব্যবস্থা করেন। হোটেলের ডাব গাছ থেকেই ডাব আনানো হয়।
দু’টি ডাব কেটে দু’জনকে গ্লাসে দেয়া হয়। সোনিয়া বাংলাদেশী ডাবের পানির প্রশংসা করেন। এরপর কি খাবেন জানতে চাইলে ম্যানেজারকে বলেন, একটু ঘন ডাল, সেই সঙ্গে নান রুটি, আর মাছ। তিনি ব্রেক করা ভেটকি মাছের একটি পিস খান। এরপর ওই মাছের স্বাদ বর্ণনা করে ম্যানেজারের কাছে আরও একটু মাছ নিতে চান।
বলেন, মাছটি খুব মজা হয়েছে। আমি কি আর একটু নিতে পারি? এরপর ম্যানেজার তাকে আরও এক পিস মাছ দেন। সেটিও খান। এছাড়া তিনি খান নানরুটি, ঘন ডাল ও সবজি। ডাবের পানি ও সাদা পানি ছাড়া কোন ধরনের কোমল পানীয় বা জুস খাননি।
এব্যাপারে ম্যানেজার জিজ্ঞেস করলে জানিয়েছেন কোমল পানীয় খান না। খাবারের শেষ দিকে সামান্য একটু সাদা ভাত নিয়েছিলেন। তবে সবটুকু ভাত খাননি। প্রায় বিশ মিনিট তিনি রেস্টুরেন্টে ছিলেন। শেষ দিকে খান ডেজার্ট।
কেক, পুডিং পেস্ট্রি থাকলেও খাননি। খেয়েছেন আম ও পেঁপে। আনারস, কাঁঠাল, অন্যান্য ফল দিলেও খাননি। খাবারের শেষে ঝরনা রেস্টুরেন্টের খাবারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি সব কথা ইংরেজিতেই বলছিলেন।
ম্যানেজারকে বলেন, আপনার হোটেলের সার্ভিস খুব ভাল। আমার কাছে খাবারও ভীষণ ভাল লেগেছে। আপনাকে ধন্যবাদ। ম্যানেজারও তাকে ধন্যবাদ দেন। এরপর সোনিয়া চলে যান।
সোনিয়ার রেস্টুরেন্টে খাবারের বিল আসে ৩০৬০ টাকা। ওখানে প্রতিজনের খাবারের বিল ১৫৩০ টাকা। দু’জনে খান। ওই টাকা তার রুমের বিলের সঙ্গে যোগ করে দেয়া হয়। সোনিয়াকে রেস্টুরেন্টে সার্ভিস দেন সেখানকার ম্যানেজার লিউ ডি সিলভা ও তার সহকারী ইলোরা।
তাকে আপ্যায়ন করতে পেরে তারা ভীষণ আনন্দিত। সিলভা আগেও এ ধরনের ভিভিআইপিদের সেবা করেছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও তার স্ত্রী হিলারি, স্পেনের রানী সোফিয়ারও সেবা করতে পেরেছিলেন তিনি। ঝরনা রেস্টুরেন্টে আছেন প্রায় তিন বছর। এর আগে চাও রেস্টুরেন্টে ছিলেন।
তিনি বলেন, সোনিয়া গান্ধীকে আপ্যায়ন করতে পেরে ভীষণ ভাল লাগছে। তিনি আমাদের আপ্যায়নে ভীষণ খুশি। খাবারের প্রশংসা করেছেন। বলেছেন খাবার খুব ভাল হয়েছে। তিনি বলেন, সোনিয়া গান্ধীকে কাছে থেকে দেখে মনে হয়েছে একেবারেই সাদামাটা মানুষ।
তবে দারুণ স্মার্ট। সব মিলিয়ে অসাধারণ।
এদিকে সোনিয়া গান্ধী সোনারগাঁও হোটেলে থাকলেও দুই দিনের অবস্থানকালে খুব বেশি খাবার খাননি। তিনি খুব সাধারণ খাবার খান। রুটি, সবজি, ডালই তার পছন্দ।
এছাড়াও সাধারণ রুটি খেতে পছন্দ করেন নাস্তায়। ২৫শে জুলাই সকালে রুমেই হাল্কা নাস্তা করেছেন। তিনি ছিলেন হোটেলের আটতলায় প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে। যারা তার সেবা দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন তিনি তাদের কাছে এটা ওটা চাননি। হোটেলের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের পরিচালক আওয়াল হোসেন বলেন, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী আমাদের এখানে অতিথি হয়েছিলেন।
এটা হোটেলের জন্য বড় ব্যাপার। আমরা বাংলাদেশে আসা বিশ্বের প্রায় সব অতিথিকেই আপ্যায়নের সুযোগ পাই। তারপরও তিনি এবারই প্রথম আমাদের এখানে এলেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।