প্রায় প্রতিটি মানুষের জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যা সময় বা কালের গহ্বরে কখনও হারিয়ে যায়না..... একটি মুহুর্ত, একটি ক্ষণ অমলিন অম্লান হয়ে থাকে বছরের পর বছর... যুগের পর যুগ....
“মুছে যাক গ্লানি. মুছে যাক জরা
অগ্নি স্নানে শূচি হোক ধরা..”
সুস্থ, সুন্দর নির্মল নতুন জীবনের আহ্বান জানিয়ে নতুন বছর তথা গ্রীষ্মের আগমন ঘটে আমাদের দেশে, পহেলা বৈশাখের উৎসবের আমেজ শেষ হতে না হতেই (কখনও তার কিছু দিন আগে থেকেই) সাধারণ জনজীবন অতীষ্ট হয়ে উঠে দাবদাহে.... সূর্যের প্রখর তেজে ঘর্মাক্ত, পিপাসার্ত মানুষের মনে রবি বাবুর বৈশাখ সঙ্গীত নয়, এক পশলা বৃষ্টি অথবা হীম শীতল রাত্রির আকুতি আচ্ছন্ন করে রাখে....
গোলার্ধের প্রায় উল্টো দিকে প্রতিবছর কাঙ্খিত গ্রীষ্মকালটি প্রকৃতপক্ষেই আনন্দবার্তা বয়ে আনে। সামার বা গ্রীষ্ম মানেই এখানে আনন্দ আর উৎসব.. পরিবার পরিজন সহ দল বেঁধে কোথাও বেরিয়ে পরা, কখনও দূরে কোথাও, কখনও ঘরের কাছেই. .. যে যার সামর্থ মতো দুহাতে লুটে নেয় রৌদ্রজ্জ্যল সময়টার সবটুকু আনন্দ।
এই বছর আমেরিকার অধিকাংশ স্থানে গ্রীষ্মের আগমন ঘটেছে বেশ রুদ্র রূপে... সূয্যিমামার রক্ত চক্ষু প্রায় ভস্মীভূত করে দিতে চাইছে মাঠ, ঘাট, পথ প্রান্তর। এমন উন্নত একটি দেশেও গ্রীষ্মের দাবদাহে প্রাণহানী ঘটেছে বেশ কিছু মানুষের! ছোট্ট ফ্যান যুক্ত ঠান্ডা পানির স্প্রে বোতল বিক্রী হঠাৎ বেড়ে গেছে, গরমে অতীষ্ট মানুষ অনেক সময় স্থান কাল ভুলে নেমে পড়ছে সামনের জলাশয়ে কিছুটা স্বস্তি কিছুটা প্রশান্তির আশায়- হোক তা ক্ষণিকের!
আমেরিকার বড় অংশ জুড়ে তিন অংকের তাপমাত্রার কছে ঘরের এয়ার কন্ডিশনার যখন প্রায় হার মেনে বসে আছে, তখন কিছু কিছু অংশে শীত নিবারনের জন্য রুম হিটারটিকে সচল রাখতে হচ্ছে দিনের প্রায় অধিকাংশ সময়!!! মহাদেশ বলে কথা- এখানেই একটি দেশ আর মহাদেশের পার্থক্য প্রকট হয়ে উঠে!!
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর তাপমাত্রা তিন অংক দূরের কথা অর্ধ শতকের নীচে বিরাজ করলেও “সামার” কে তো আর এমনি এমনি চলে যেতে দেয়া যায়না..... রৌদ্রজ্জ্যল একটি দিন পেলেই মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে পরে আনন্দের খোঁজে।
আমাদের দেশে গ্রীস্মকালের দাবদাহের সাথে সাথে কাঙ্খিত কিছুর আগমন ঘটে- তা হলো আম, জাম, লিচু কাঠালের মতো রসে ভরপুর সুমধুর ফলের সমারোহ!!! তেমনি এই দেশেও গ্রীষ্মের আনন্দ উৎসবে সামিল হয় হরেক রকম সতেজ ফলের বর্ণিল উপস্থিতি।
দাবদাহ খরতাপ নয়, আমার পছন্দ মেঘলা আকাশ, রিমঝিম বৃষ্টি আর তার পরে মিষ্টি হিমেল হাওয়ার শীতকাল তাই বন্ধুবান্ধবদের হরেক রকম পরিকল্পণা এড়িয়ে গ্রীস্ম উৎসব থেকে যথাসাধ্য দূরে সরে থাকি। এবার গ্রীষ্মের ভিন্ন রূপ দেখে মনে হলো, তাপমাত্রা আর আকাশের মেজাজ যেমনই হোক সকলে মিলে একটু ঘুরে আসা যায়...
রৌদ্রের গ্যারান্টি আছে এমন স্থানই বেছে নেয়া হলো, আর এসময় বেড়ানো মানেই সৈকত- হোক তা সমুদ্র অথবা লেকের পাশে... জলের একদম কোল ঘেঁষে...
গন্তব্যে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে, তাই লেকের পানিতে চাঁদের আলোর
ঝলমলে হাসি দেখেই রাত্রির সৌন্দর্য অবগাহনে সন্তোষ্ট হতে হলো।
সকালে ঘুম ভেঙে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হলাম এই গ্রীষ্মেও কুয়াশাচ্ছন্ন মেঘলা ভোরের স্নিগ্ধ পবিত্র আমেজে!
সময়ের সাথে সাথে শুরু হলো সূর্য আর মেঘের লুকোচুরি খেলা।
বৃষ্টি ছাড়া ভ্রমন অসম্পূর্ণ এই আমার প্রতি সৃষ্টি কর্তার কৃপা হলো, আবহাওয়া পূর্বাভাসে ঝলমলে রৌদ্রজ্জ্যল দিন সম্পর্কে নিশ্চিত করা হলেও সবকিছু উপেক্ষা করে চারপাশ আঁধার করে বৃষ্টি নামে!!!!
রৌদ্রপ্রেমী যে ভীনদেশী বন্ধুটি আবহাওয়া দেখে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে স্থান নির্বাচন করেছিলো, তাঁর মুখ আকাশের চেয়ে ঘনকালো মেঘ গ্রাস করেছে মরিয়া হয়ে বললো, “দেখো তোমার জন্য এমন অসময়ে বৃষ্টি এসেছে, তোমার সাথে সাথে বৃষ্টি চলে এসেছে। তুমি দয়া করে মেঘকে একটু বলো রৌদ্রকে নিয়ে আসতে”।
সামনের লেকের ঘভীর জলে বৃষ্টির টাপুর টুপুর দৌড়ঝাপের আনন্দ থেকে বন্চিত হবো জেনেও বন্ধুটিকে স্বান্ত্বনা দিয়ে বললাম; “আমার সাথে বৃষ্টি এলেও তোমার সাথে রৌদ্র আসার কথা। মন খারাপ করোনা, মেঘকে বলেছি তোমার মতো রৌদ্রপ্রেমিকার জন্য রৌদ্রকে একটু পাঠিয়ে দিবে :-)”
কিছুক্ষণ পর চারপাশের সাথে সাথে আমার বন্ধুর মুখটিও আলো ঝলমলে করে রৌদ্রের আগমন।
ব্যস্ত শহরের কোলাহল থেকে বেশ দূরে পর্যটনের চমৎকার স্থানটি জুড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমারোহ-
পাহাড়, লেক আর ঘনসবুজ চারপাশের সাথে এক হয়ে মিশে আছে বিভিন্ন ফলের বাগান।
কোথাও পরিপূর্ণ বর্ণিল ফল,
আবার কোথাও সদ্য ফুল থেকে উঁকি দিয়ে ফলের সবুজ কচি মুখ..
বিভিন্ন বর্ণের ফলের পাশে মাঝে মাঝে নিজের অস্তিত্ব জাহির করছে গর্বিতা পুষ্পরানী
একবার মুগ্ধতা গ্রাস করলে প্রায় সবকিছুই সুন্দর হয়ে উঠে..
তাই ফেরার সময় পথের পাশে নিতান্ত অবহেলা অযত্নে ফুটে থাকা প্রায় মৃত ফুলের গুচ্ছ,
লেকের অসামান্য সৌন্দর্য,
পহাড়া চূড়া থেকে ওপারের পৃথিবীটা- সবকিছুই হয়ে উঠেছিলো মনোমুগ্ধকর!!
নিজ শহরের কাছাকাছি পৌঁছতেই ঝুম বৃষ্টি বরণ করে নিলো যেনো...
পথে বৃষ্টির ছটা আর মেঘের নাচনে ভিজিবিলিটি প্রায় শূণ্যের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলো কখনও কখনও....
সমুদ্রের নেশার মতো, সব জলরাশির নেশা আছে মনে হয়!
তাই ঘরে ফেরার পরও ছুটে যাই অদূরের লেকে...
এদিকে ঘরের বাগানে কে যেনো অভিমান করেই বললো, দূর দূরান্তে ছুটে চলেছো অথচ এই আমরা এখানেই আছি....
মুগ্ধ হলাম একটি ছোট ডালে সাতজনের সহাবস্থান দেখে।
মনযোগ পেয়েই কিনা জানিনা দুদিন পর যেনো আরো নতুন করে সাজালো নিজেকে...
সাতটির স্থানে আজ দশটি পূর্ণ ও দুটি কুঁড়ির অপরূপ ছটায় মুগ্ধ ও আপ্লুত হলাম!!
শুরুতেই যে অমলিন অম্লান মূহুর্তের কথা উল্লেখ করেছি......এই গ্র্রীস্মের পাগলাটে রূপে বড় বেশি মনে পড়ছে, গতবছর এমন এক সময় দেখা অপার্থিব প্রায় অলৌকিক সন্মোহনী দৃশ্যের কথা!!!
একবছরের পরও যা আচ্ছন্ন করে রেখেছে, যে দৃশ্য অবলোকনের সুযোগ পেয়ে সৃষ্টি কর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে যাই আজও...
অপরূপা প্রকৃতির বাস্তবের সৌন্দর্য পুরোপুরি ধারন করার মতো ক্ষমতা বিশ্বের কোন ক্যামেরার নেই বলে বিশ্বাস করি, তারপিও স্মৃতিটুকু ধরে রাখার এক ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র আমাদের!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।