আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

~~ আষাঢ়ে গল্প ~~

তোমারে যা দিয়েছিনু-সে তোমারি দান,গ্রহণ করেছ যত-ঋণী তত করেছ আমায় রনিঃ বাবা এসব কি শুনছি? তুমি নাকি কালু ডাকাতকে হাতের লাগালে পেয়েও ছেড়ে দিয়েছ? বাবাঃ তুই কেমন আছিস বাবা? রনিঃ আমি ভাল আছি। বিদেশে কোন কিছুর কমতি নাই। কিন্তু কথা সেটা নয়, তুমি নাকি............ বাবাঃ বৌমা, আমার দাদু ভাই, দাদু বোন ওরা সব কেমন আছে?খুব দেখতে ইচ্ছে করে ওদেরকে। রনিঃ বলেছি তো সবাই ভালো আছে। বাচ্চাদের সামার ভেকেশন হলে দেশে একবার এসে ঘুরে যাব।

শোন বাবা, তুমি কথা এড়িয়ে যাচ্ছ। কি করে পারলে তুমি, কালু ডাকাতের মত একটা ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী, খুনি কে হাতের কাছে পেয়েও ছেড়ে দিয়েছ!? কেয়ার টেকার বলেছে আমাকে, বাড়ির লোকজন সাবাই মিলে নাকি কালু ডাকাত কে পুরোপুরি বশে এনে ফেলেছিল! তুমিই নাকি অন্তিম মুহূর্তে এসে ওকে ছেড়ে দিতে বলেছ! ছিঃ বাবা! কি করলে এই বুড়ো বয়সে! আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধব কাওকে তো মুখ দেখাতে পারছি না!! হ্যালো বাবা, শুনতে পারছ তুমি? কি হল, কথা বলো। এই পাগলামো টা কেন করলে? হ্যালো............!! বাবাঃ হ্যালো......হ্যালো...... নেটওয়ার্ক পাচ্ছি না। পরে কথা বলব। বাবা ইচ্ছে করেই লাইনটা কেটে দিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।

বিশ মিনিট পর আরেকটা ফোন আসে। মনিঃ হ্যালো বাবা, কেমন আছো? বাবাঃ এইতো মা, এই বয়সে আর যেমন থাকা! কবে যে আজরাইল এসে জান কবজ করে!! তোরা সব বাইরে থাকিস। একা একা ভালো লাগেনা। তোর মা টাও বড় অসময়ে আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেল!! মনিঃ মা তো স্বাভাবিক ভাবে যায়নি বাবা। বাজাররে গিয়েছিল।

হঠাৎ কালু ডাকাত আর তার বাহিনী মিলে বাজারে হামলা করল। আচমকা মায়ের শরীরে গুলি লাগলো। কত কষ্ট পেয়ে মা মারা গেল! আর তুমি নাকি সেই কালু ডাকাত কে হাতের কাছে পেয়ে ছেড়ে দিয়েছ! বাবাঃ না রে মা, কালু ডাকাত যে তোর মায়ের হত্যাকারী এটা জাস্ট লোকের বুলি। পুরোপুরি সত্য নাও হতে পারে। আর তাছাড়া ‘’ পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে নয়‘’ তারপর ‘’ক্ষমা মহৎ গুন’’ এগুলো ছোট বেলায় তোর মা-ইতো তোদেরকে শিখিয়েছে, না? ভুলে গেছিস? মনিঃ বাবা শোন, নীতি বাক্য তো আরও আছে, ‘’অন্যায় যে করে আর যে সয়, দুজনেই সমান অপরাধী!” সব মানছি, তাই বলে তুমি একটা ভয়ঙ্কর ক্রিমিনালকে ছেড়ে দেবে? যার পেশী বলে ওই এলাকার কেও শান্তিতে ঘুমাতে পারত না! কত লুট পাট ও করেছে! কত মানুষ কে প্রত্যক্ষ- পরোক্ষভাবে ও মেরেছে! এলাকার ত্রাশ ছিল সে! এমন একটা লোককেই কেন ক্ষমা করে তোমার মহত্ত্বের পরিচয় দিতে হবে? তাহলে বাকি ছোট, বড়, সিচকে চোর গুলো কি দোষ করল? তাদেরও তো ক্ষমা পাবার অধিকার আছে।

পৃথিবীতে তাহলে শাস্তির বিধান আছে কেন? Justice delay means justice denied. আইনের ভাষায় ন্যায্য বিচার বলে তো আর কোন টার্ম থাকে না তাহলে। বাবাঃ থাক না মা ওসব কথা! মনিঃ লোকে তো বলাবলি করছে যে, কালু ডাকাতের বাবা তোমার বন্ধু, সহকর্মী ছিল দেখে তুমি ওকে ক্ষমা করেছ! তোমার আশে পাশের উজির নাজিরের চাপে পড়ে, ওরা নাকি বড় সুকৌশলে তোমার কাছ থেকে ক্ষমাটা আদায় করে নিয়েছে!! পাপ নাকি বাপকেও ছাড়ে না বাবা। তাহলে তুমি কেন ছেড়ে দিলে? বাবাঃ ওসব কিছু না। আমি তখন ঘুমুচ্চিলাম রে মা। ওরা এত করুন ভাবে সব বলল যে............ মনিঃ তোমার বয়স হয়েছে বাবা।

ঠিক মতো চলাফেরাও করতে পার না। তোমার কি দরকার ছিল ঠিক মতো যাচাই বাছাই না করে এত বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেবার!! তুমিতো বড় ফুফু কেও একবার জিজ্ঞেস করতে পারতে!! বাবাঃ কি যে বলিস না মা! তোর ফুফুর কি আর এত সময় আছে?! কত কাজ ওনার, তার ওপর ঘরে বাইরের শত্রুর কি আর অভাব আছে! তাছাড়া তোর বড়দাদার শত্রু গুলোকে পৃথিবীর নানা জায়গা থেকে ধরে এনে ওদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দেয়াটা কি চারটে খানি কথা !! তার উপর আমাদের সবার প্রিয় এই বাড়ি করার সময়, এলাকার যেসব লোকজন এর বিরোধিতা করেছিল, আপা ঠিক করেছে সবাইকে তাদের প্রাপ্য শাস্তি দেবে। যত দেরীই হোক। মনিঃ নিঃসন্দেহে ওগুলো সব ভালো কাজ। আমারাও তো তাই চাই।

সব অপরাধীদের বিচার হোক। তিনি যেমন বড়দাদার শত্রুদের বিচার চান, তেমনি কালু ডাকাতের হাতে যারা প্রাণ হারিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; তারাও তো তার বিচার চায়। যা চলে যায় তা যেমন ফিরে আসে না, তেমনি অপরাধী শাস্তি পেলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলো অন্তত সান্ত্বনা খুঁজে পায়। বড় ফুফুও তো তাই করছেন। বাবাঃ তুই শুধু আমার এই একটা সিদ্ধান্তই চোখে দেখলি? কেন পাশের বাসায় যে তোর ছোট খালা আছে, চার বছর আগে তার কেয়ারটেকার ও তো রুস্তম ডাকাত, জয়নাল ডাকাত কে হাতে পেয়ে ছেড়ে দিয়েছে, মাফ করে দিয়েছে!! মনিঃ তখনও বাবা ব্যাপার টাকে কেও ভাল দৃষ্টিতে দেখেনি।

এর ফলাফল তো ছোট খালা আর তার পরিবার এখন পাচ্ছেই বাবা। উনি যে ভুল করেছেন, সেটা কি তোমাকেও করতে হবে, বাবা? তুমি না বলতে, ‘’ তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন!’’ বাবাঃ বড় বেশী কথা বলা শিখেছিস। কেও আমার খোঁজ খবর রাখিস না, আমার নাম নিশানাও এলাকার কেও কেও জানে না। যা করেছি বেশ করেছি। কিছু একটা করে এলাকার লোকজন কে তো আমার অস্তিত্তের প্রমাণ দিতে পেরেছি!! অলি গলি তে এখন শুধু আমার কথা! আমার বেশ লাগছে!! মনিঃ তুমি চেঁচাচ্ছ কেন বাবা।

বড় অর্থহীন লাগে শুনতে। এগুলো মানায় না তোমাকে। তুমি এলাকার সম্মানিত, আর সম্মানিত লোকরা প্রচার বিমুখ হয়, ভালো কাজ গুলো আড়ালে থেকে করার চেষ্টা করে। জোর করে জনপ্রিয় হবার চেষ্টা করা বোকামি, বাবা। আকাশে চাঁদ উঠলে সবাই দেখে।

বাবাঃ আমি যাই এখন। শরীর ভাল লাগছে না। এক নাগারে কথা বলতে পারি না। তাছাড়া নামাযের সময় হয়ে গেছে। যাই- ভালো থাকিস।

বাবা মোনাজাতে বসে। ‘’হে মাবূদ! একটা খুনিরে ক্ষমা করে দিলাম আমি;বুঝে-না বুঝে। তুমি কি আমারে ক্ষমা করে দিয়েছ ? এলাকার মানুষ গুলা কি আমারে ক্ষমা করে দিছে?’’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।