হিংসা-বিদ্বেষ বিহীন, ভালবাসায় পরিপূর্ণ পৃথিবী চাই (এটি একটি কপি-পেষ্ট পোষ্ট)
দৈনিক কালের কন্ঠ, জুলাই ২৬, ২০১১
মংলা বন্দর দীর্ঘ আট বছর পর লোকসান কাটিয়ে লাভে ফিরেছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মংলাকে গতিশীল ও আধুনিকায়নে নানামুখী উদ্যোগ ও প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে দীর্ঘদিনের স্থবির এ বন্দর ফের সচল হয়েছে। ইমেজ সংকট ও লোকসানের ঘানি কাটিয়ে সম্ভাবনার পথে ঘুরে দাঁড়িয়ে গত অর্থবছর থেকে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে এ বন্দর। ২০১০-১১ অর্থবছরে মংলা বন্দর ৯ কোটি ৯২ লাখ ৯২ হাজার টাকা লাভ করেছে। বন্দরে দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমদানি-রপ্তানিও বেড়েছে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, বন্দরের উন্নয়নে গৃহীত সব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে রাজস্ব আয় আরো বাড়বে। উন্মোচিত হবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বার।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর 'চালনা পোর্ট' নামে মংলা বন্দরের যাত্রা শুরু হয়। নাব্যতা সংকটের কারণে ১৯৫৪ সালে বন্দর ব্যবস্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয় বর্তমান অবস্থানে।
সে সময় বন্দরে গড়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫টি বাণিজ্যিক জাহাজ আগমন ও নির্গমন করত। পশুর ও মংলা নদীর মোহনায় ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কর্মচঞ্চল বন্দর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে বন্দরটি। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, লাগামহীন দুর্নীতি, পাইলট ও কাস্টমসের হয়রানি এবং ঘন ঘন শ্রমিক ধর্মঘটে বন্দর অচল হয়ে পড়ে। তা ছাড়া বিগত সরকারগুলোর একচোখা নীতি, ভুল পরিকল্পনা আর অদূরদর্শিতার কারণে দেশের দ্বিতীয় এ সমুদ্রবন্দরটি ধীরে ধীরে জৌলুস হারায়। ব্যবসায়ীরা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ হারাতে থাকেন।
একসময় বন্দরটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। আয়ের চেয়ে ব্যয়ও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এ থেকে উত্তরণে নানামুখী উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ডক শ্রমিক পরিচালনা বোর্ড বিলুপ্ত করে শ্রমিক নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ পদ্ধতি চালু করায় বর্তমানে আমদানি-রপ্তানিকারকদের পণ্য হ্যান্ডলিং ব্যয় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
এ ছাড়া দ্রুত পণ্য খালাস-বোঝাই শেষে বাণিজ্যিক জাহাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বন্দর ত্যাগের নিশ্চয়তা পাচ্ছে। ফলে আগের চেয়ে এ বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন দ্বিগুণ বেড়েছে।
সূত্র আরো জানায়, নব্বইয়ের দশক থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে এ বন্দর স্থিতিশীল ছিল। এর পর ২০০১-০২ সাল থেকেই অর্থনৈতিক অবস্থায় টানাপড়েন শুরু হয়। বন্দরে জাহাজ আগমন কমে যাওয়াসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ওভারটাইম, জ্বালানি-বিদ্যুৎ খরচ, অন্যান্য ভাতা ও অপ্রয়োজনীয় খরচের কারণে মংলা বন্দর ধারাবাহিক লোকসানের মুখে পড়ে।
বিগত বছরগুলোয় বন্দরটির আশঙ্কাজনকভাবে আয় কমে যাওয়ার নেপথ্যের কারণ হিসেবে সূত্রটি বলছে, জাহাজ আগমন ও মালামাল ওঠা-নামার পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণেই বন্দরের এ বেহাল দশা অব্যাহত ছিল।
মংলা বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪-০৫ সালে বন্দরে আয় হয় ২৩১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। কিন্তু বন্দরের ক্রমহ্রাসমান স্থবিরতার কারণে জাহাজের আগমন-নির্গমনের সঙ্গে সঙ্গে মালামাল লোড-আনলোডের পরিমাণ ও আয় কমতে থাকে। ২০০৫-০৬ সালে আয় কমে দাঁড়ায় ১৭৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়। ২০০৬-০৭ সালে আরো কমে ১৭২ কোটি ১৬ লাখ টাকায় দাঁড়ায়।
২০০৭-০৮ সালে ১০৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ও ২০০৮-০৯ সালে ১৩৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০০৯ সালে স্থবির মংলা বন্দরকে গতিশীল করতে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। হাতে নেওয়া হয় মংলা বন্দরে জাহাজের আগমন বৃদ্ধির উদ্যোগ। সে উদ্যোগে সফলতাও আসে। ফলে মংলা বন্দরে দেশি-বিদেশি জাহাজের আগমন-নির্গমন এবং মালামালের ওঠানামা বৃদ্ধি পায়।
বেড়ে যায় বন্দরের রাজস্ব আয়। ২০০৯-১০ সালে আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকায়। ২০১০-১১ সালে রাজস্ব বেড়ে ৮০৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা হয়।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক পরিচালক মাহবুবুল্লাহ জানান, ২০০৮-০৯ সালে বন্দরে ১৩৯টি বিদেশি জাহাজের আগমন-নির্গমনের মাধ্যমে ১১ লাখ ৩৮ হাজার টন মালামাল লোড-আনলোড হয়। ২০০৯-১০ সালে ১৫৬টি বিদেশি জাহাজের মাধ্যমে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার টন মালামাল ওঠানামা হয়।
২০১০-১১ সালে ২৬১টি জাহাজের আগমন-নির্গমনে প্রায় ২৮ লাখ টন মালামাল লোড-আনলোড হয়।
মংলা বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর আবুল কালাম আজাদ জানান, মূলত ২০০২-০৩ সালের পর থেকে মংলা বন্দরে স্থবিরতার সৃষ্টি হয়েছিল, যা গত ২০০৮-০৯ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এ সময় বন্দরে জাহাজ আগমন একেবারেই নিম্নতম পর্যায়ে পেঁৗছায়। মাঝেমধ্যেই বন্দর জাহাজশূন্য হয়ে পড়ত। তবে ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মংলা বন্দরকে সচল ও গতিশীল করতে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে বন্দরে দেশি-বিদেশি জাহাজ আগমন ও নির্গমন বৃদ্ধি পায়।
ফলে গত বছরে বন্দরটি ব্যয়ের চেয়ে ৯ কোটি ৯২ লাখ ৯২ হাজার টাকা বেশি আয় করেছে।
তিনি আরো জানান, ২০০৯ সাল থেকে বন্দরটির মাধ্যমে সরকারের আমদানি করা চাল ও গম খালাস হচ্ছে নিয়মিতভাবে। এর আগে আমদানি করা খাদ্যশস্যের ৪০ শতাংশ মংলা বন্দরের মাধ্যমে খালাসের নীতিমালা থাকলেও দীর্ঘদিন এটি কার্যকর ছিল না। তিনি আরো জানান, সরকারের উধ্যোগের কারণে ২০০৯ সালের ৩ জুন গাড়িবোঝাই জাহাজ মংলা বন্দরে খালাসের জন্য আসে। এ পর্যন্ত এ বন্দরের মাধ্যমে বিদেশ থেকে কয়েক হাজার রিকন্ডিশন গাড়ি খালাস হয়েছে।
এ ছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষের আয়ের প্রধান খাতগুলো হচ্ছে_জাহাজ ও কনটেইনারে কার্গো হ্যান্ডলিং, পানি বিক্রি, ব্যাংক সুদ, জমির ইজারা ইত্যাদি। এসব খাতের ওপর কর্তৃপক্ষ কঠোর নজরদারি করায় টানা আট বছর পর বন্দরটির গতিশীলতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মংলা বন্দর গত আট বছরের লোকসানের ধারা কাটিয়ে লাভের মুখ দেখছে।
সূত্র: দৈনিক কালের কন্ঠ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।