আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাসল গেইন এবং ওজন বৃদ্ধির উপায়ঃ পর্ব এক

আপনারা সবাই জানেন, উচ্চ ক্যালরী যুক্ত খাবার বা জাঙ্কফুড খেলেই ওজন এবং ফ্যাট বাড়ে। প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে ওজন বাড়ানোর জন্য বেশি বেশি আলু, ফাস্টফুড, মিস্টি, কোল্ড ড্রিংক্স এইগুলা খেতে থাকব? হ্যা খেতে পারেন, ওজন ও বাড়বে কোন সন্দেহ নেই। লজিক তো তাই বলে! কিন্তু কথা যেখানে সুস্থ্যতার, সেখানে একটু বুঝে শুনে আগানোর প্রয়োজন আছে বৈকি! ফ্যাটি খাবার খেলে ওজন বাড়বে, কিন্তু সমস্যা হল সবার ন্যাচারাল ডাইজেস্ট সিস্টেম বা মেটাবলিজম সমান নয়। আপনি যখন ই বেশি বেশি জাঙ্কফুড খাবেন ওজন বাড়ানোর জন্য, আপনার ডাইজেস্ট সিস্টেমের উপর চাপ পড়বে। দেখা গেল ওজন বাড়াতে গিয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়বেন।

ওজন বাড়ানোর অনেক উপায় আছে। কিন্তু সবগুলোই আপনার জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। ওজন না বাড়ার ও অনেক কারন আছে, ওসব আলোচনায় যাবনা কারন পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাবে এবং অনেকে পড়তে বিরক্তি বোধ করবেন। আমি আজ কিভাবে ডাইজেস্ট সিস্টেমের উপর বাড়তি প্রেশার ক্রিয়েট না করে ন্যাচারালি ওজন বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করব। বন্ধুবর সাম্য বলছিল অনেক খাবার পরেও ওর ওজন বাড়েনা।

বন্ধু-বান্ধব আর ভাই বেরাদারদের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে এই KFC, ঐ BFC, স্টার কাবাব... কোথায় না খায়! তারপর ও নো চেইঞ্জ। সেই আদী এবং অকৃত্তিম স্যাম ই রয়ে যায়! শুধু সাম্য নয়, এমন উদাহরণ আরো ভুরি ভুরি আছে। এই যে অনেক খাবার পরেও যাদের ওজন বাড়েনা, জীমের ভাষায় এদের কে বলা হয় “হার্ড গেইনার”, সোজা কথায় এরাই হল আসল রাক্ষস! কারন এই টাইপ মানুষের মেটাবলিজম বা হজমশক্তি এত্ত ভাল যে খাবার গ্রহনের প্রায় সাথে সাথেই হজম হয়ে ক্যালরী বার্ন হয়, তাই পুষ্টিগুলো গায়ে লাগেনা। ওজন বাড়েনা এই অজুহাতে পৃথিবীর তাবৎ ভাল ভাল খাবারগুলো ধ্বংসের পেছনে এ ধরনের মানুষগুলো দায়ী! আমাদের কপাল ভাল এদের সংখ্যা কম, না হলে ফুড চেইনের বারটা বাজিয়ে কবেই দূর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যেত! লেট’স কাম টু দ্য পয়েন্ট, আবার অনেকে দেখবেন ঠিক এর উল্টো। অনেক কম খাবার গ্রহন করেন তারপর ও মোটা হয়ে যান।

এদের মেটাবলিজম দূর্বল বা লো। এখন প্রশ্ন করতে পারেন, মেটাবলিজম বেশি হওয়া ভাল নাকি কম? ওয়েল, শো রুম থেকে বাইক কিনতে গেলে কোন বাইক টি কিনবেন? যেটি অল্প তেলে বেশি দূর যায় কিন্তু স্পীড কম, নাকি যেটির স্পীড বেশি কিন্তু মাইলেজ কম! অবশ্যই স্পীড এবং মাইলেজ দু’টো মিলিয়ে যে বাইক টি ভাল সেটি কিনবেন। এখানেও ব্যাপার টি এগজ্যাক্টলি তাই। মেটাবলিজম বেশি হওয়াও ভাল না, আবার কম হওয়া টাও ভাল না। কারন মেটাবলিজম হাই হলে আপনি যা খাচ্ছেন সবই বার্ন হয়ে যাচ্ছে শরীরের কাজে লাগার আগেই, আবার কম হলে অল্প খেলেও আপনি মুটিয়ে যাচ্ছেন কারন আপনার ক্যালরী বার্ন হচ্ছে কম।

বলতে পারেন, আমার জন্মই হয়েছে হাই মেটাবলিজম নিয়ে, তাহলে আমার কি ওজন বাড়ানোর কোন উপায় নেই? হ্যা আছে। আর আজ সেটা নিয়েই আলোচনা করব আমরা। পূর্বের পোস্টে বলেছিলাম, যদি কোন কায়িক পরিশ্রম না করে সারাদিন কেবল শুয়ে-বসে কাটিয়ে দেই, তাহলেও আমাদের প্রায় ১৭০০ থেকে ২২০০ কিলোক্যালোরী পরিমান শক্তি খরচ হবে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য। সেই হিসাবে শরীরবৃত্তীয় কার্য্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতি ঘন্টায় ৫৫-৭৫ ক্যালরী বার্ন হবে আমরা যদি কোন কাজ নাও করি। আর কাজ করলে ক্যালরী বার্ন রেশিও আরো বেশি হবে।

তাই যারা হার্ডগেইনার বা রাক্ষস, তারা খাবার গ্রহনের পর পর ই ক্যালরী বার্ন হতে শুরু করে, প্লাস প্রতি ঘন্টায় শরীরবৃত্তীয় কার্য্যক্রম পরিচালনার জন্য ও আলাদাভাবে ক্যালরী বার্ন হচ্ছে। ফলে ওজন বাড়ানোর জন্য বাড়তি ক্যালরী শরীরে থাকছেনা! সুতরাং বুঝতেই পারছেন, ওজন বাড়াতে হলে আপনার সিস্টেম কে বাড়তি ক্যালরী ধরে রাখতে হবে। আর সেটা করতে হবে আপনাকেই। কিভাবে? আসুন দেখি। যেহেতু বেঁচে থাকার জন্য আমাদের ১৭০০-২২০০ কিলোক্যালরী দরকার হয় এবং এই ক্যালরীর যোগান আসে আমাদের তিনবেলার খাবার থেকে।

প্রতিদিন কিন্তু ক্যালরী গ্রহনের পরিমানে সামঞ্জস্য থাকেনা। কোনো দিন কম, কোনো দিন বেশি। আপনি যদি ৫/৬ ঘন্টা বিরতি দিয়ে তিনবেলা খাবার গ্রহন করেন, তবে এই তিনবেলার মাঝে আরো তিনবেলা পরিমাণে অল্প তবে ভারী ক্যালরীযুক্ত কিছু না কিছু অবশ্যই খাবেন। এতে আপনার শরীর প্রয়োজনীয় ক্যালরী বার্ন করার পরেও শরীরে বাড়তি ক্যালরীর রিজার্ভ থেকে যাবে, ঐ রিজার্ভড ক্যালরী কে আপনার সিস্টেম ফ্যাটে কনভার্ট করে ফেলবে। ফলে আপনার ওজন বাড়বে।

আপনি এক বেলা খাবার গ্রহনের পর সেই খাবার হজম হতে আড়াই থেকে তিনঘন্টা সময় নেয়। এরমধ্যেই ক্যালরী গুলো বার্ন হয়ে যায় এবং আপনার সিস্টেম পুনরায় ক্যালরী গ্রহনের জন্য প্রস্তুত হয়। তাই ৫/৬ ঘন্টা পর পর না খেয়ে আড়াই/তিন ঘন্টা পর পর অবশ্যই কিছু খাবেন। আমি ধরে নিচ্ছি আপনি তিন বেলা মূল খাবারের পাশাপাশি আরো তিনবেলা হাল্কা খাবার বা অন্যান্য খাবার খাচ্ছেন, তাই প্রতিবেলা যে খাবার ই খান না কেন অবশ্যই ৪৫০+ ক্যালরী নিতে চেষ্টা করবেন। কোন খাবারে কত ক্যালরী জানতে হলে পূর্বের পোস্টে ঢু মেরে আসুন।

একবারেই হাজার ক্যালরী নিবেন না বা বেশি খাবেন না, অল্প অল্প করে ঘন ঘন খাবার খেতে চেষ্টা করুন...(টু বি কন্টিন্যুড) এই পর্ব আপাতত এখানেই শেষ করতে হচ্ছে সবার পড়ার সুবিধার্তে। এই পোস্ট টি কে তাই ভূমিকা পর্ব বলা চলে। আগামী পর্বে ওজন বাড়ানোর জন্য যেসব খাবার খাবেন এবং যে ব্যায়ামগুলো করবেন সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।