বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদটি আসলে কি জন্য রাখা হয়েছে, আমরা কেউ কি তা জানি? মনে হয় জানি না। প্রাচীন রাজা বাদশাহদের আমলে তাদের হেরেম পাহারা দিতে রাখা হত খোঁজাদের…………..বিংশ শতাব্দীর এই ডিজিটাল যুগে এসেও বাংলাদেশের রাজাদের হেরেম পাহারা দিতে দরকার হয় সেইসব খোঁজাদের, আক্ষরিক অর্থে সেই ধরনের খোঁজা পাওয়া দুষ্কর হলেও মানসিক দিক থেকে খোঁজা লোকজন খুঁজে ঠিকই বের করছে সরকার নামধারী বাদশাহরা অত্যন্ত সু্দক্ষভাবে,সুনিপুনভাবে।
আর আমরাও খোঁজা জাতি, সেই খোঁজা হয়ার জন্য কি বিপুল আগ্রহ!! লজ্জায় মরে যাই...................
রাজনৈতিক জীবনে জনাব জিল্লুর রহমান তৈলমর্দনের জন্য অত্যন্ত বিখ্যাত ছিলেন, খাঁটি তেলের নাম হিসাবে জিল্লুর তেলের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল, আবার তিনি আলোচনায় এলেন বউ মরার পর থেকে। যে মানুষ নিজে থেকে দাড়িয়ে থাকতে পারেন না, যিনি নিজের ভরই বহন করতে পারেন না, উনাকে বানানো হয়েছে জাতীয় শামি, রাষ্ট্রপতি!! উনি নাকি বইবেন পুরা দেশের ভর!!
সাম্প্রতিককালে এই খোঁজা আবারও তার কিছু উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডে হেরেমের বাইরে সভ্যজগতের মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
বিএনপির নেতা আইনজীবী নুরুল ইসলামকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে (১৯৯৬-২০০০)।
নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় আওয়ামীলীগ নেতা তাহেরের ছেলে এ এইচ এম বিপ্লবের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। কিন্তু তাহেরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ মওকুফ করেন। নুরুল ইসলাম হত্যা মামলা ছাড়াও বিপ্লব আরও চারটি হত্যা মামলার আসামি। এর মধ্যে দুটিতে তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। উল্লেখ্য,রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় সরকারমন্ত্রী থাকাকালে লক্ষ্মীপুরে একটি অনুষ্ঠানে আসেন।
ওই সময় তিনি দলীয় নেতা আবু তাহেরের বাসায় নৈশভোজ করেন। এদিকে ১০ বছর পর আবু তাহের আবার পৌরসভার মেয়র হয়েছেন,দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে মানুষের অসুবিধা হয় না। কাক চোখ বন্ধ করে রেখে মনে করে তাকে বোধ হয় কেউ দেখে না!!! আমাদের রাষ্ট্র জামাই কাক অপেক্ষা অধিক বোকা। আওয়ামীলীগের অধিকার রক্ষায়, স্বার্থ রক্ষায় যদি প্রেসিডেন্ট নিজে নাচেন, তাইলে তিনি কি নপুংশক নন?? হায়রে আমার রাষ্ট্র জামাই!!!!!!!!!!!!
আমরা এই তাহের সম্পরকে ভালো ভাবে জানি না, তবে সেই এলাকার প্রথম আলোর এক পাঠক লিখেছেনঃ
তাহের এবং তার বাহিনী কি, যারা লক্ষীপুরে থাকেন তারা হাড়ে হাড়ে জানেন।
১) কেউ জমি কিনবে বা বেচবে, তাহেরকে ভাগ দিতে হবে
২) বিদেশ থেকে টাকা আসবে, আগে তাহেরের ভাগ দিয়ে তার পর নিজের টাকা নিতে হবে।
৩) থানায় মামলা হবে, পুলিশ আগে তাহেরের অনুমতি নিতে হবে।
৪) ঠিকাদারি কাজ কে পাবে, সেটা তাহের ঠিক করবে।
৫) আপনি আগন্তুক হিসাবে তাহেরের এলাকায় যান, নানা জায়গায় তাহেরের লোক বসে আছে, আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে, আপনি কে, কোথায় যাবেন, কোথা থেকে এসেছেন। এরপর আপনার কাছে দামি কিছু থাকলে রেখে দিয়ে হয় আপনাকে যেতে দিবে বা বলবে যেই পথে আসছেন সে পথে ফেরত যান।
৬) আপনি আওয়ামীলীগ ছাড়া অন্য কোন দলের নাম মুখে আনতে পারবেন না।
আর ও আছে, বলে শেষ করা যাবেনা।
বিপ্লবের মৃত্যুদণ্ডাদেশ মওকুফের কথা শুনে হতভম্ব পিতা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কাছে আমরা বারবার পরাজিত। রাষ্ট্রপতি খুনিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। এখন আমার ছেলে হত্যার ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়েও শঙ্কায় আছি। চিন্তায় আছি আমাদের নিরাপত্তা নিয়েও।
’
নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার প্রথম বাদী লক্ষ্মীপুর আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি তারেক উদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী বিপ্লবের মৃত্যুদণ্ডাদেশ মওকুফের প্রতিক্রিয়াতে রাগে-ক্ষোভে বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা হত্যা করবে, আর রাষ্ট্রপতি তাদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ মওকুফ করে দেবেন, এটা ন্যায়বিচার হতে পারে না। এতে খুনিরা আরও উৎসাহিত হবে। ’
প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান কিসের বিনিময়ে এমন একটি নিকৃষ্ট পরিবারের ছেলে ও দেশের সেরা হত্যাকারীর দণ্ডাদেশ মওকুফ করলেন ? তিনি আল্লাহর কাছে কি জবাব দিবেন ? যারা হত্যা হয়েছে তাদের আত্মার কাছে কি জবাব দিবেন ? আর মৃত পরিবারের সদস্যরা কি পেল সরকারের কাছ থেকে ?তার কেমন লাগবে যখন তার স্ত্রীর হত্যাকারীদের দেশের কোন এক প্রেসিডেন্ট সাজা মওকুফ করে বেকসুর খালাস করে দেয় ? দেশের একজন প্রেসিডেন্ট হয়ে প্রফেশনাল সন্ত্রাসী ও হত্যাকারীকে দণ্ডাদেশ মওকুফ করে প্রেসিডেন্টের আসন কলঙ্কিত করেছেন জিল্লুর । প্রমাণ করেছেন তিনি এই আসনে বসার অনুপযোগ্য । উনার মত বয়জষ্ঠ ব্যাক্তির কাজ দেখে একটু অবাকই হতে হয় ।
জনগন কোথায় পাবে তার নিরাপত্তা?
রাষ্ট্রপতি দলীয় রাজনীতির কাছে এভাবে হার মানবেন এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। একটু পিছনে তাকালে দেখা যায় একই দলের হয়ে রাষ্ট্রপতির আসনে বসে ছিলেন প্রাক্তন তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান শাহাবুদ্দিন আহমেদ। তিনি পেরেছিলেন দলীয় স্বার্থের উর্ধে উঠে রাষ্ট্রপতির আসনকে জাতির সামনে সম্মানের প্রতিক হিসাবে তুলে ধরতে। কারণ তিনি কোন দলের ছিলেন না। বর্তমান রাষ্ট্রপতি পারলেন না।
কারণ তিনি একটি দলের। তবে বিবেকের কাছে এভাবে হেরে যাওয়ার মধ্যে কোন সম্মান নেই।
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের আওতায় রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে দিনের পর দিন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই দেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হীনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। এটা সাংবিধানিক ক্ষমতা অপব্যবহার ছাড়া আর কি হতে পারে?
রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার অধিকার কোনো সাধারণ অধিকার নয়।
ইংলিশ কমন ল-এর যে ‘রয়্যাল প্রিরোগেটিভ’, সেটাই আমাদের ৪৯ অনুচ্ছেদ ধারণ করেছে। সে কারণেই সংবিধানে বাংলায় ‘অধিকার’ লেখা হলেও এর ইংরেজি কিন্তু সঠিক অর্থেই ‘প্রিরোগেটিভ’। এটা একটা বিশেষ অধিকার। যথেষ্ট নিয়ন্ত্রিত ও সংরক্ষিত অধিকার। আমাদের নীতিনৈতিকতা-বিবর্জিত জনপ্রশাসন রাষ্ট্রপতির ‘প্রিরোগেটিভ’কে যেভাবে ধ্বংস করে ফেলছে, তাতে দেশের বিচারব্যবস্থা বড় ধরনের হোঁচট খেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার অপব্যবহার রোধে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি গাইডলাইন বেঁধে দিয়েছেন। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, দণ্ড মওকুফে ‘প্রকৃত যুক্তি’ থাকতে হবে। আদালতের এক নির্দেশে হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রসচিবকে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত সময়ে দণ্ড মওকুফের সব তথ্য হলফনামা দিয়ে প্রকাশ করতে হয়েছিল। সংবিধান বিশেষ ও অত্যন্ত বিরল ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য রাষ্ট্রপতিকে যে অধিকার দিয়েছে, তার মর্যাদা ও যথাপ্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট আইন রয়েছে।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদেও এ বিষয়ে একটি আইন প্রণয়ন জরুরি ।
যদি আইনে দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে রাস্ট্রুপতি ক্ষমা করার কে? আর যদি রাস্ট্রপতি আইনকে ক্ষমা করে দিতে পারে তাহলে আইনের মূল্য বা সম্মানটা রইল কোথায়?
মিথ্যা মামলা বা দোষ নির্দোষ সব আদালতে ফয়সালা হবে। কেউ চাইলেই নিষ্পত্তি ছাড়া কোন মামলাকে সত্য বা মিথ্যা বলতে পারে না।
রাস্ট্রপতির ক্ষমা করার বিধানটি তুলে দেয়া উচিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।