ঢাকা থেকে প্রকাশিত ভারত বিচিত্রার পঞ্চদশ বর্ষ মার্চ ১৯৯৮ ফাল্গুন চৈত্র ১৩৯৪, পৃষ্টা ২৪-২৮ এ গোয়াস্থ ন্যাশানাল ইন্সটিটিউট অব অসেনোগ্রাফি এর মেরিন আরকিওলজি সেন্টারের প্রজেক্ট ডাইরেক্ট্রর ডঃ এস আর রাও বলেছেন- জলনিমগ্ন সবারকা নগরী খুঁজে পাওয়া গেছে। এই প্রবন্ধে তিনি সুমুদ্রে ডুবে যাওয়া জাহাজ আবিষ্কারের সময় খুঁজে পাওয়া পানির নিচে অবস্থিত হিন্দু মন্দির সহ একটা নগরী আবিষ্কারের এক অত্যাশ্চর্য বর্ণনা দেন। রুপকথার গল্প থেকে তিনি তুলে আনেন দ্বারকা কে মানুষের চোখের সামনে। এই স্থানেই পাওয়া গেছে ২১০ টি জাহাজের ভগ্নাবশেষ যা প্রমান করে এখানে এক সময় অবস্থিত ছিল এক বিশাল সমুদ্র বন্দর যা আবার মানুষের চোখের সামনে ঊঠে আসছে। ভারতীয় সমুদ্র উপকুলে অনেক প্রাচীন বন্দর ডুবে গেছে তার মাঝে দ্বারকা অন্যতম ।
Dwarka
মানচিত্রে দ্বারকা
যদিও পুরানো দ্বারকা র উপর ই নতুন দ্বারকা অবস্থিত তবুও এর প্রকৃত পরিচয় ১৯৭৯-৮০ সালের আগে পাওয়া যায়নি। এ সময় দ্বারকাধীষ মন্দিরের সমানের মাটি খুড়ে খ্রিষ্টপূর্ব ১৪ শতকের তিনটি মন্দিরের ধবংসাবশেষ পাওয়া যায়-এবং ডুবন্ত নগরী টির বাস্তু ধবংস আবিষ্কার করা হয়। এর মাঝে খ্রীষ্ট পূর্ব নবম শতকে নির্মিত বিষ্ণু মন্দির সব চেয়ে পুরোনো। এখানে বিষ্ণু, ব্রহ্মা ও দেবাদিদেবের মূর্তি আছে। প্রথমদিকে মাটির স্থরে একটা লাল মাটির বস্তু পাওয়া গেছে।
এটি প্রভাসক্ষেত্রের এবং বয়স ১৫শ খ্রিষ্টপূর্বের ( কার্বন ১৪ প্রণালী তে বয়স পাওয়া গেছে)। প্রভাস হচ্ছে আরেকটি মহাভারতীয় তীর্থ যেটি সৌরাষ্ট্রের দক্ষিনে অবস্থিত। আরকিওলজিষ্ট হিসে বোরালা বলেছেন মহাভারতের যুদ্ধ খ্রিষ্টপূর্ব ১৪০০ শতকে হবার প্রমান ও পাওয়া গেছে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ শতকে সমুদ্রের তীরে বসতি ছিল বলে প্রমান পাওয়ার পর ডুবন্ত দ্বারকার খোজার সম্ভাবনা অনেক খানি বেড়ে গিয়েছিল।
বিজ্ঞানীরা কচ্ছ উপকুলে মাটি পরীক্ষা করে জানিয়েছেন ১০০০০ বছর আগে এই কচ্ছ উপসাগরীয় অঞ্চল ৬০ মিটার নিচু ছিল।
হরি বংশে (বিষ্ণু পর্ব- ৫৭-১০৩) একে সমুদ্রের ভেতরে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমান বেট দ্বারকার ৩২ কিমি দুরে খুঁজতে শুরু করেন।
এই বেট দ্বারকাতে ই পাওয়া গেছে হরপ্পা যুগের পুতির মালা, হাড়ি পাতিল এবং পলা আকৃতির বিরাট দালানের খন্ডাংশ। এগুলো অনেক প্রাচীন বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। এছাড়া শামুক ঝিনুক এর তৈরি দেয়াল, সিন্ধু সভ্যতার শঙ্খের সিল মোহর সহ আরো অনেক আরটিফেক্ট এ ভর্তি এই স্থান।
পানির ৬.৪১ মিটার নিচে একটি দুর্গ পাওয়া গেছে,যেটা চুনাপাথরের অর্ধ বৃত্তাকার ব্লক দিয়ে তৈরী। এটি সমুদ্র নারায়ন মন্দির থেকে ৬০০ মিটার সমুদ্র গভীরে অবস্থিত। এখানে তিন ছিদ্র বিশিষ্ট ত্রিফলা নোঙর উদ্ধার করা হয়েছে- যা ক্ষয় রোধক দেয়াল হিসেবে ব্যাবহৃত হত সাথে সাথে শত্রুর আক্রমন থেকে ও বাচাত ।
ডুবে যাওয়ার কারনঃ বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষরীক্ষানিরীক্ষার পর এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে- ১০০০০ বছর আগে সমুদ্র পৃষ্ট বর্তমান থেকে ৬০ মিতার নিচু ছিল। অতএব ৩৫০০ বছর আগে সমুদ্র ৯ মিটার নিচু ছিল।
দ্বারকা ডুবে যাওয়ার কারন সমুদ্র পৃষ্টের ঊচ্চতা বৃদ্ধি। এভাবে সমুদ্র উপকুল ধবংস হতে খুব একটা দেখা যায়না- শুধু মাত্র কার এস সিটি বাহরাইনের এক বন্দর এই সময় এই ডুবে যায়। দুই স্থানের বয়সকাল প্রায় একই বলে নিরধারন করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বেট দ্বারকায় যে তৈজসপত্র পাওয়া গেছে তা থেকে বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন যে এ স্থানে অনেক পুরোনো এক সভ্যতা ছিল যা মহাভারতে বর্ণীত শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগরীর সাথে মিলে যায়।
মহাভারতে আছে- শ্রীকৃষ্ণের বয়স যখন ১২৫ তখন যদু বংশ ধবংস হয় সামান্য এক কারনে।
এটা দেখে শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম বনবাসী হবার সংকল্প করেন এবং অর্জুন কে সংবাদ পাঠান। বনে শ্রীকৃষ্ণ বসে থাকা অবস্থায় জরা নামে এক ব্যাধ হরিন মনে করে কৃষ্ণ কে বান মারেন। শ্রীকৃষ্ণ সেখানেই দেহ ত্যাগ করেন। অর্জুন এই সংবাদ পেয়ে দ্বারকায় এসে শ্রীকৃষ্ণের দেহ সৎকার করেন। এর পর পরই দ্বারকা সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়।
যে নগরী শ্রীকৃষ্ণ নিজের হাতে শাসন করেছিলেন সে নগরী শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যুর পর পরই সমুদ্রের মাঝে বিলীন হয়।
দ্বারকা সম্পর্কে আরো জানতে
ঊইকি
হারানো শহর
হারানো দ্বারকা
লেখাটা এখান থেকে লেখকের অনুমতি নিয়ে প্রকাশিত
ধন্যবাদ সবাইকে । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।