আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুযাকাটার ইউসুফরাই গোটা বাংলাদেশ

আমাদের একটা মানুষের সমাজ লাগবে ইউসুফ হাওলাদার, কুয়াকাটা সমূদ্র সৈকত থেকে হাত ছোঁয়া দুরত্বে তার ঘর। বিশালায়তন আছড়ে পড়া ঢেউ, বালুর তট, ঝাউবনের ঝোপ আর ভ্যারাইটিজ মাছ নিয়ে তার সংসার। তার সংসারে আরো চারটি মনুষ্য প্রাণ আছে। দুই ছেলে এক মেয়ে আর একজন বৌ। আমাদের কাছে তার অনেক জিজ্ঞাসা।

বিম্পি আম্লীগের প্রশ্ন, ঢাকার পরিস্থিতির জিজ্ঞাসা, পড়াশোনার জিজ্ঞাসা ইত্যাদি ইত্যাদি, তবে একটা জিজ্ঞাসা তার মুখ্য জিজ্ঞাসা- বিবাহের জিজ্ঞাসা। আমরা কেন বিবাহ করিনি, আমরা তো তার বয়েসিই হবো( তিনি নিজের বয়স ৪০ বছর বলে দাবি করছেন)!!!। উনার ভাষ্যমতে ” এলাকার লোকজন আম্লীগ ছিল তবে এইবার পরিস্থিতি ভিন্ন, ভোট সবাই বিম্পিকেই দেবে। আম্লীগ হুজুরদের গুলি কইরা খুব খারাপ কাজ করছে। " স্বগতোক্তি করল ইউসুফ " মেয়েদের এত পড়ানো ঠিকনা, অবিবাহিত মেয়েরা কোথায় কি করে তার কি ঠিক আছে?" উনাকে জিজ্ঞেস করলাম এলাকায় কয়টা মেয়ে ডাক্তার আছে? মাথা নাড়লেন, জানেন না।

জিজ্ঞেস করলাম কত মেয়েরা মা হবার সবার সময় মারা যায় বলতে পারেন? উনি বললেন আমার ভাইয়ের বউ গেলবার মা হবার সময় মারা গেছেন। আমি আর কিছু বল্লাম না, মাথা নিচু ইউসুফ ভাইয়ের। একটা কাঠের ঘর আছে তার, নিয়ত ঝড় ঝন্ঝা জলোচ্ছাসের আতঙ্কে দিন গুজরান তার। ১২,১৩ বছরের তার মেয়েটা দ্রুত পাত্রস্থ করতে চান তিনি। এই মেয়েটাই হয়তো মা হতে গিয়ে মারা যাবে, কিছুদিন বিলাপ শেষে সব ভুলে গিয়ে আবার জীবন শুরু হবে।

এটাই চক্র। ইউসুফ ভাই ফোন নম্বর চান, লিখে দিলাম। কোথায় লিখেছি খুজে পাচ্ছেন না। খুজে বার করে দিলাম। একটা বড় ধাক্কা খেলাম লোকটা লিখতেও পারেন না, পড়তেও পারেন না।

তাই নাম্বারটা কোথায় সেটা তিনি দেখে নিলেন। আমি বিস্মিত। হেফাজতের ঘটনায় এই এলাকার মানুষজন খুবই বিক্ষুব্ধ হয়েছে। ওই রাতের ঘটনার পর এলাকার ইমামদের প্রভাব বেড়েছে বহুগুণে। রমজানে খাবার দোকানের উপর এক অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইমামগণ।

এই এলাকা পর্যটকদের এলাকা, অথচ কোরানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে অসুস্থ অথবা মুসাফিরগণ অন্যদিনে রোজা রাখার সুবিধা পাবে। তার ধার ধারছে না কেউ। ইউসুফ হাওলাদাররা ইমামদের পিছনে সমবেত হচ্ছেন তাদের উপর নির্যাতনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে। তাদের কথাবার্তা শুনছেন। বিম্পিকে সমর্থণ দিচ্ছেন আম্লীগের হাত থেকে বাঁচার জন্য।

অথচ ইমামগণ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আর দান-খয়রাত চেয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করছেন। তাদের নেতৃত্বে সামাজিক নিরাপত্তার( খাদ্য, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের ) জন্য কোন আন্দোলন গড়ে উঠছে না। অশিক্ষা, কুশিক্ষা তাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়েছে, দৃষ্টির উপরে দেয়াল তুলে দিয়েছে, কিন্তু তাদের অনুভূতিটা কেড়ে নিতে পারেনি। ইউসুফরা বারবার প্রত্যাশা করে ধর্মীয় নেতা কিবা বিম্পি আম্লীগের হাতে নেতৃত্বের ছড়িখানি তুলে দিচ্ছেন। ভাগ্যাহত ইউসুফ হাওলাদাররা জীবন যাপন থেকে শিখতে পারছেন বিম্পি আর আম্লীগ তাদের জীবনের কোন উন্নতি ঘটাতে পারেনি।

কিন্তু তবু্ও.... হঠাত ইউসুফ বলে উঠেছিল, "মোরে বিয়া না হরাইলে মুইও আম্মেগো লগে ভার্সিটিতে পড়তে যাইতাম"। অথচ কিছুক্ষণ আগেও সে পড়াশোনা বিষয়ে বিরুপ মন্তব্য করেছিল। নিজেই বলতে থাকেন" পোলাপানগুলারে পড়ানো দরকার কিন্তু টাহা পামু কোথায়?" না পড়ানোর বিষয়টা জায়েজ হয় যখন দেয়াল তোলার কাজে নিয়োজিত ব্যাক্তিগন এসে বুঝায় ছেলেমেয়েরা গোল্লায় যাবে। তখন টাকা না থাকার অপারগতা ভুলে ইউসুফরা গোল্লায় যাওয়ার যুক্তি আঁকড়ে ধরে। এদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে যত হইচই হয় তার ধারেকাছেও নিয়ে প্রাথমিক জরুরী বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শণ জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা।

আমরা একবিংশ শতাব্দিতেও সকলকে শিক্ষার সুযোগ দিতে পারিনি। প্রয়োজনীয় ন্যুনতম গণশিক্ষা ছাড়া আমরা আর এক পা ও এগোতে পারবোনা। দরকার হলে আজকেই রাষ্ট্রের সকল তথাকথিত উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থগিত করে সকল বরাদ্দ শিক্ষা খাতে নিয়োজিত করা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় আর কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের গ্রামে গ্রামে মানুষকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পাঠদান করা বাধ্যতামুলক করে ডিক্রি জারি করা দরকার। তবেই মানুষজন তাদের মুখের ভাষা ফিরে পারে।

নেতৃত্বের ছড়ি এই চাঁদ সমূদ্র নাড়িকেল গাছ টেংরামাছ উদ্দাম বাতাস আর ছোট্ট খাল বিল দেশের মানুষ কাকে দেবেন সে সিদ্ধান্তটাও নিতে পারবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.