আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘আমাগেরে অভাবের কথা একটু মন্ত্রী-এমপিগেরে জানান’

ঘুম অনেক প্রিয় পরিবারের প্রথম কর্তা হাসমত আলী মৃধা। গ্রামের বাড়ী ছিল কুমিল্লার লাকসামে। দেশ স্বাধীনের পর অভাব-অনটনের সংসার চালাতে কাজের খোজে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি চলে আসেন রাজশাহীতে। অনেকের হাতে-পায়ে ধরে অনেক কষ্টে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের সহকারী বাবুর্চীর চাকুরী পান হাসমত। ডাইনিং বাবুর্চীর কাজ করে যে যৎসামান্য বেতন-কড়ি পেত তা দিয়ে রাজশাহীতে ঘর ভাড়া করে থাকার সামার্থ্য ছিল না তার।

তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বিনোদপুর এলাকায় রাস্তার ধারে কলা ও তাল পাতা দিয়ে একটি ছুপড়ি ঘর তৈরী করে হাসমত আলী। সেখানেই তার স্ত্রীকে নিয়ে সংসার জীবন শুরু করে। ভাঙ্গা উইপোকার সেই ছুপড়ি ঘরেই একে একে জন্ম নেয় বড় ছেলে আব্দুল মালেকসহ তার ৪ পুত্র ও ৪ কন্যা। জন্ম নিয়ন্ত্রণ কিংবা পরিবার পরিকল্পনা কি জিনিস সেটি জানা হয়নি হাসমতের। দারিদ্র ঘেরা সংসার কোন রকম কষ্টের মধ্য দিয়ে ভালোই চলছিলো হাসমতের।

কিন্তু সৃষ্টিকর্তার নিয়তির কাছে হার মেনে ছোট শিশুদের এতিম করে পরপারে পাড়ি জমায় হাসমত মৃধা। বাবার অবর্তমানে বাস্তুহারা পরিবারের দায়িত্বের বোঝা চাপে বড়পুত্র আব্দুল মালেকের ঘাড়ে। পরের বাড়িতে চাকরের কাজ করে যে পয়সা কড়ি পেত মালেক তা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি বহু কষ্টে কিছু অর্থ দিয়ে মালেক একে একে বিয়ে দেয় তার ৪ বোনকে। কিন্তু দূভার্গ্য যেন তাদের পিছু ছাড়েনা। পরপর বিবাহ হওয়া দুই বোনের বিয়ের হাতের মেহেদীর রং উঠতে না উঠতেই চম্পট দেয় দুই বোনের লম্পট স্বামী।

মালেক জানায়, তার ওই বোন দুটি এখন চট্রগ্রামের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করছে। অন্যদিকে তার আর একভাই দুটি মাসুম বাচ্চা ও স্ত্রীকে রেখে নিরুদ্দেশ হয়। মালেকের আর দুটি বোন তাদের আদি জন্মস্থান কুমিল্লার লাকসামের পূর্ব বাজার খালের পাড়ে বস্তিতে বাস করে পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেই স্বামী ও বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে তাদের সংসার জীবন চালাচ্ছে। অপর দুই ভাই অভাবের যাতনা সহ্য করতে না পেরে বেছে নিয়েছে ফুটপাতের টোকাইয়ের কাজ। আর বাবার বড়ছেলে সেই মালেক আজ ক্ষুধার কাতরতা নিয়ে বাস্তুহারা বিরাট সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে।

মালেক জানান, তার বাবার ৮ সন্তান থেকে তাদের পরিবারে জনসংখ্যা হয়েছে বর্তমানে ৩৯জন। সবাই বেকার, কোন চাকরী-বাকরী নাই। এমনকি তাদের মরার পরে মাটি দেয়ারও কোন জায়গা-জমি ও নাই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বরে হতদরিদ্র বাস্তুহারা মালেক তার দু:খ অভাবের কথা বলতেই হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠছিল বারবার। সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের সামনেই মালেক আর্তনাদ করে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বারবার বলছিল “আব্বাজান আজ কয়েকদিন ধরে চুলায় কোন হাড়ি জ্বলেনি; ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আমার বাচ্চাগুলি আপনাদের ডাইনিংয়ের ফেলে দেয়া পচাঁ বাশি খাবার খেয়ে বেঁেচ আছে।

আপনাদের কাছে অনুরোধ যে পত্রিকা আমাগেরে দেশের মন্ত্রী-এমপিরা পড়ে সেই পত্রিকায় আমাগেরে দুঃখ-কষ্টের কথা একটু লেখেন, যেন ওনারা আমাদের দিকে তাকায়। ” ওই হতদরিদ্র পরিবারের বর্তমান ঠিকানা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচন্ডী পূর্ব পাড়া ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.