যে মুখ নিয়ত পালায়......। । আমাদের রনিলাল ও দরবেশ মহাশয়। ক’দিন আগেও দুজনের ছিল খুব ভাল সম্পর্ক। গত বৈশাখী মেলা থেকে তারা দুজন সমান টাকা যোগ করে এক জন্তু কিনে আনল।
বাড়িতে এসেই দরবেশ বলল, রনিলাল, এর মুখের দিক টা আমার থাক, আর পিছনের দিকটা তোর।
রনিলাল চিন্তা করে দেখল মুখ যার দিকে থাকবে তাকেই খাওয়াতে হবে। এমনকী কাউকে যদি জন্তুটা কামড়ায় তাহলে দোষ পড়বে মুখের মালিকের উপর। অতএব লাভ ক্ষতি হিশাব করে রনিলাল রাজি হল সানন্দে।
রনিলাল পিছনের দিকে হাত বুলায়।
দরবেশ সামনের দিকে। একে অন্যকে বলে, ওই সাবধান আমার জায়গায় তর হাত যেন না আসে।
মাঝে মাঝে জন্তুটি যখন পা দিয়ে কান চুলকায় তখন রনিলাল লাফ দিয়ে উঠে। চিৎকার করে উঠে, দে ব্যাটারে, লাথ দে...
জন্তুটি যখন পিছনের দিকটা চুলকাতে মুখ দিয়ে কামড়ে ধরে তখন দরবেশ আনন্দে আটখানা হয়। খুশিতে গলা ফাটায়, দে হারামজাদারে, কামড়ে দে...
একদিন মারাত্বক ঘটনা ঘটল।
জন্তুটির পিছনের দিকে প্রকান্ড লাল পিঁপড়া কামড়ে ধরেছিল। জন্তুটি তারস্বরে চেচাচ্ছে। দরবেশ রনিকে বলল, রনি তোর দিকে পিঁপড়া কামড়াচ্ছে, ওটা ফেলে দে।
রনিলাল হাসিমুখে জবাব দেয়, আমি ফেলব কেনো? আমার দিক থেকে তো আর চেচাচ্ছে না। সে উল্টো আরো কয়েকটি পিঁপড়া এনে ছেড়ে দিল।
সেইদিন থেকে আসলে আমাদের রনিলাল ও দরবেশ বাবুর বিবাদের শুরু।
জন্তুটি একদিন তার লেজ নিয়ে খেলা করছিল। পা দিয়ে লেজ ধরার খেলা। জন্তুটি বসে থাকে। সামনে লেজ এনে নাড়ে।
এটা যে তার লেজ সে নিশ্চয়ই ভুলে যায়। তাই হঠাৎ করেই লেজ ধরতে ঘুরে দাঁড়ায়। ঘোরার সাথে সাথে লেজ ও দূরে সরে যায়। ধরা হয় না।
দরবেশ বাবু এই অবস্থা দেখে জন্তুকে উৎসাহ দিতে লাগল, ধর বাবা, লেজটাকে ধরে খেয়ে ফেল...
রনিলাল চেচায়, লেজ তুই সরে যা...
অনেকক্ষণ এই খেলার পর জন্তুটি ক্লান্ত হয়।
তার লেজ ধরা হয় না। রনিলাল বলে, জিতলাম আমি। শালা দরবেশের মুখটা শুধু খায় ই। কাজের বেলায় আমার লেজই ভালো।
দরবেশ বাবু চটে গেলেন।
রনিলাল একটু দৃষ্টির আড়াল হইতে তিনি ধারালো দায়ের এক কোপে লেজের এক বিঘত ক্যাচ করে কেটে ফেললেন। জন্তুটা বিকট গর্জনে চেচিয়ে উঠল।
রনিলাল পড়িমড়ি করে ছুটে এসে দেখে, ল্যাজ টিকটিকির কাটা লেজের মত লাফাচ্ছে। আর পাশে দা হাতে দাঁড়িয়ে দরবেশ বাবু।
রনিলালের বুঝতে বাকী রইল না কি ঘটেছে।
সে কুকুরটাকে লেলিয়ে দিল দরবেশ বাবুর উপর। কুকুর লেজ হারিয়ে এমনিতেই দরবেশ বাবুর উপর ক্ষুব্ধ ছিল। দরবেশ বাবুর পায়ে চোখ বন্ধ করে তাই সর্বশক্তি দিয়ে কয়েকটা কামড় বসিয়ে দিল।
কুকুরের কামড়ে আহত দরবেশ বাবু গেল থানায় পুলিশের কাছে। সে মামলায় বলল, জন্তুর লেজ কাটা হয়েছে।
তা না হলে সে লেজের পিছনে ঘুরতে ঘুরতে মাথা ঘুরে মারা যেত। তখন দুজনেরই ক্ষতি হত। সুতরাং লেজ কেটে জন্তুটাকে প্রাণে বাঁচানো হয়েছে। কিন্তু রনি জন্তুটাকে তার উপর লেলিয়ে দিয়ে অপরাধ করেছে। এর শাস্তি হওয়া চাই।
রনি টকশো তে গিয়ে বলল, দরবেশকে কামড়েছে ওর মুখের অংশ। এতে আমার কি দোষ! সে মুখকে ঠিকমত শিক্ষা দিতে পারে নি। এতে আমি কি করব!
বিজ্ঞজনেরা এই সমস্যা সমাধানের জন্য বললেন, রনিলাল ও দরবেশ তোমরা আধাআধি করে জন্তুটাকে সমান দুইভাগ করে নাও।
কিন্তু এ প্রস্তাবে তারা দুইজন ই রাজী হয় না। তাদের উভয়েরই পুরোটা চাই।
কেউ ই আধা ভাগ জন্তুর মালিক হতে চায় না।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জন্তুর মালিকানা নিয়ে তাদের লড়াই চলছে...
উল্লেখ্য জন্তুটির নাম “আওয়ামিলীগের সুবিধা”!
বি দ্রঃ ছোটদের হাসির গল্পের এক বটবৃক্ষ সুকুমার রায়। তার এক গল্পের নাম কুকুরের মালিক। এই গল্প “কুকুরের মালিক” গল্পের রনি দরবেশ ভার্শন।
এক কপি এখানেও থাকল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।