আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। কিস্তি ::৬৯ ::
আয়োজনটা অসাধারন। আমরা ছুটলাম সুন্দরবনে। সেখানে দিন তিনেক কাটানোর ইচ্ছে।
ডাটস থেকে এই ট্যুরের আয়োজন। সোয়ারীঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ল। আমরা ছুটছি নদী পথে। সুন্দরবন আমি আগেও গিয়েছি। তবে ডাটস থেকে প্রথম বারের মত যাত্রা।
আগের বার আমরা যাত্রাবাড়ির বন্ধুরা মিলে গেছিলাম। ্ সেই বার আমাদের লঞ্চ আটকা পড়লো সাগরে। সেই কী কান্না সবার। আমরা কয়েক বন্ধু লঞ্চের ছাদে আড্ডা মারছিল। এই সব কিছু আমাদের স্পর্শ করেনি।
সেই ট্যুরে আমার সাথে ছিলো আলিম, হাবিব, আলী আজম। আমরা সবাই এখন অনেক দূরত্বে বসবাস করি। সে কথা বাদ দেই ডাটসের সুন্দরবন অভিযানের কথায় আসি।
আমরা ঢ্যাংমারি স্টেশনের বদলে বাগরেহাটের শরণখোলা হয়ে ঢুকলাম সুন্দরবনে। অসম্ভব ও জীব বৈচিত্রে অসাধারণ সুন্দরবন আমার বরাবরই ভালো লাগে।
আমাদের লঞ্চ চলছে। সবাই আড্ডায় মগ্ন। এর মধ্যে হইচই শোনা গেলো। হুল্লোড় শুনে বেরিয়ে জানা গেলো লঞ্চ মাঝিদের জাল নিয়ে ছুটছে। তাই এত হুল্লোড়।
অবশেষে লঞ্চ থামিয়ে জাল ফেরত এবং ক্ষমা চেয়ে মুক্তি। আমরা তিন দিন খুব ভালো কাটালাম সুন্দরবনে। বাঘ দর্শন ঘটেনি, ঠিকই তবে হরিণ দর্শণ হয়েছে। তাতে সবাই তুষ্ট। সবচেয়ে মজা হয়েছির জঙ্গল ট্রেকিংয়ে।
কটকা ও জামতলীতে আমরা জঙ্গল ট্র্যাকিং করেছিলাম। সেই ২০০২ সালে। ভাবতে ভালো লাগছে। এখন সুন্দরবনে পর্যটকদের জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর স্থাপনা ও ওয়াকওয়ে তৈয়ার করা হযেছে। শহুরের পর্যটকরা সেই সব পথ ধরে যান।
আমি আর বাবু কচিখালী টাইগার পয়েন্টে গিয়ে ভেতরে সাপুড়েদের গ্রামে গেছিলাম। সুন্দরবনের বিষধর সাপ ধরে ওরা চালান করে। একজন সাপুড়ে তার ধরা বিভিন্ন সাপ দেখাচ্ছিলেন আমাদের। অনেক্ষণ ধরে এ সব সাপ দেখা শেষে আমরা টাইগার পয়েন্টের ভেতরে চলে গেলাম। খাল বেয়ে অনেক দূর।
পরে জানতে পারলাম এ অঞ্চলে বাঘের বসবাস। কিন্তু সেটি সে বয়সে আমাদের কাছে তুচ্ছ ছিল।
সুন্দরবন থেকে আমরা ফিরছিলাম। সেই ফেরার পথে আমরা একটা খারাপ খবর পাই। সে সময় আমাদের মাঝি রাতে কুয়াশার মধ্যে চরে লঞ্চ আটকে দিয়েছিল।
সবাই ঠেলে ঠুলে কোনো গতি করতে না পেরে জোয়ারের অপেক্ষায় থাকলাম। পরে জোয়ার এসে আমাদের নামালো। সে সময় মোবাইলফোনের নেটওয়ার্ক ছিল না। আমরা বরিশালের সীমানায় আসার পর জানতে পারলাম শহীদ ভাইয়ের আব্বা মারা গেছেন। মুহুর্তেই থেমে যায় আমাদের উচ্ছ্বাস।
প্রথম দিকে বিষয়টা আমরা অল্প ক’জন জানতাম। পরের দিকে সবাই জেনে গেলো। শহীদ ভাই নেমে পড়লেন পথে। আমরা ফিরলাম ঢাকায়। একটা অপরাধবোধ আমাদের ঘিরে ধরেছে।
সেই ট্যুর সত্যি আমাদের জীবনে একটা দু:খজনক ও আনন্দময় ঘটনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।