আমার চলার পথ এক অমীমাংসীত সমীকরণ । ।
চারদিকে অন্ধকার নেমেছে। শহরটা কিছুক্ষণের মধ্যে নিঝুম হয়ে যাবে। সবাই যে যার মত করে কল্পবিলাসী হয়ে উঠবে।
চাঁদটা হেসে সূর্যের অভাবটা বুঝিয়ে দিবে। অরিত্র জানালার ফাঁক দিয়ে দেয়াল ঘড়িটা দেখছে। ঠিক রাত দশটা বাজে। রোজ দশটায় অরিত্র তার শোয়ার ঘরের পাশের বারান্দায় বসে একটি সিগারেট জ্বালায়। আজ তায় করলো! চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে অরিত্র সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে রাস্তার দিকে তাকায়।
রাস্তায় এখন মানুষ হাঁটছে। এখন মানুষের নীড়ে ফেরা হয়নি। কিছুটা দূরে কয়েকটি মেয়েকে দেখা যাচ্ছে আগন্তুক ছেলেদের সাথে কথা বলছে আর হাসছে। বোধহয় খদ্দের খুঁজছে। রাতের ঢাকাটা যতটানা নিষ্পাপ সুন্দর ততটাই নোংরা।
পাশের বাড়ির বারান্দায় কানে হেডফোন লাগিয়ে একটি মেয়ে কথা বলছে। মেয়েটিকে প্রতিদিনি দেখা যায়। হয়ত মেয়েটি তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থেকে অরিত্রের মনটা বিষাদে ভরে গেলো । সে সিগারেট টি আর জোরে জোরে ফুঁকতে শ্রেয়ার কথা ভাবে।
শ্রেয়া অরিত্রের জীবনের একমাত্র ভাললাগা বা ভালোবাসা। শ্রেয়া বারান্দার মেয়েটার মত স্লিম, লাম্বা ৫.৬” হবে দেখতে শ্যামলা। চোখ দুটি জীবনান্দের বর্ণিত বনলাতা সেন এর মত। বলতে গেলে পরিপাটি সুন্দরী বাঙ্গালী ললনা। যার চোখের মায়ায় যেকোন পুরুষকে পড়তেই হবে।
অরিত্রের ও ঠিক তেমনি হয়েছে। ভাললাগার বয়স থকে আজঅব্ধি সেই চোখ দুটির মায়ায় পড়ে আছে। অরিত্রের রুম থেকে গানের আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।
“নয়নও তোমাকে পাইনা দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে,
হৃদয়ও তোমারে পাইনা জানিতে হৃদয়ে রয়েছ গোপনে”
সবুজ গানটি শুনে প্রতি রাতে। সবুজ অরিত্রের পাশের রুমে থাকে।
বিবিএ পড়ছে। একই বাসায় থাকে বলে প্রায় সময় অরিত্রের রুমে আশে গান শুনতে ও ছবি দেখতে। দুজনের সম্পর্কটাও ভালো। অরিত্র তাকে “ছোটা ভাই” বলে ডাকে।
গানটা শুনতে অরিত্রের কাছে খুব ভাল লাগছে।
ঠিক যেন তার বিষাদ ভরা মনের কথা বলছে। সে সবুজকে ডেকে সিগারেটের প্যাকেট ও লাইটার দিতে বলল। সবুজ লাইটারও সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে আসলো। অরিত্র আরেকটি সিগারেট ধরাতে ধরাতে সবুজকে বলল ,
অরিত্র : কেমন আছ ছোটা ভাই।
সবুজ : ভাল ।
ভাই আপনি ?
অরিত্র : ক্লাস কর ঠিকমত? নাকি ফাঁকি বাজি কর?
সবুজ : না ভাই। কি যে বলেন। আপনার অফিস কেমন চলছে?
অরিত্র : ভালো ।
সবুজ : ভাই আপনি প্রতিদিন এখানটায় বসে বসে কি ভাবেন মধ্য রাত পর্যন্ত ?
অরিত্র : সময়ের স্তুপে পড়ে থাকা জীবনকে খুঁজে বেড়াই।
সবুজ : ভাই বিয়ে করছেন কবে? দাওয়াত খেতে পারিনা অনেক দিন!
অরিত্র : আমার আবার বিয়ে!! আমার বিয়ে খাওয়ার আশায় থাকলে তোমার জীবন সারছে।
সবুজ : ভাই আমি কিন্তু ভাবি কে দেখেছি? অনেক সুন্দর!! আপনার সাথে অনেক মানাবে।
অরিত্র : ভাবি!! কোথায় দেখেছ?
সবুজ : আপনার নেটবুকে । ভাই আপনাদের পরিচয় কি ভাবে ?ভাবি প্রথম বলেছে না আপনি?
অরিত্র : যে দিন থেকে রুহ তৈরি হয়েছে দুজনের। [ একটু মেজাজগরম করে বলল ]
সবুজ : ভাই তাহলে আমি যাই!! কালকে ক্লাস সকালে, ঘুমতে হবে।
এই বলে সবুজ চলে গেছে।
তখন রাত সাড়ে এগারটা। অরিত্র বসে বসে সবুজের করা শেষ প্রশ্নটা ভাবছে। আসলেইতো যে দিন থেকে রুহ তৈরি হয়েছে সে দিন থেকে বোধয় আমরা একজন একজনের। আমি শ্রেয়াকে ভালোবাসি কথাটা বলেছি হোক সেটা অনেক দেরিতে। কথাটা ভাবতে ভাবতে অরিত্রের মুখটা আর কালো হয়ে গেলো।
অরিত্র তার মোবাইলে গান শুনতে শুরু করে।
আমি তোমারি বিরহে রহিব বিলীন ...
তোমাতে করিবো বাস
দীর্ঘ দিবসও দীর্ঘ রজনী দীর্ঘ বরষও মাস
যদি আর ও ফিরে নাহি আসো
যদি আরও কারে ভালোবাসো
তবে...তুমি যাহা চাও ...তাই যেনও পাও
আমি যত দুঃখ পাই । ।
শ্রেয়াতো কখন আমাকে বলেনি ভালোবাসি। তার মানে কি? রুহ তৈরি থেকে শুধুই আমি শ্রেয়ার!!এই ভাবতে ভাবতে দক্ষিণা বাতাস এসে হুহু করে অরিত্রের চোখে কাঁটা বিঁধে দেয়।
অরিত্রের চোখ দিয়ে টলটল করে জল পড়তে থকে । অরিত্র দুহাত দিয়ে চোখ মুছে আর আকশের চাঁদ ও তারার মাঝে শ্রেয়াকে খুঁজে বেড়ায়। আর নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কেন সে এতটা সময় নিয়েছে ভালবাসার কথা জানাতে? নাকি শ্রেয়া তাকে নিজের যোগ্য মনে করে নি ? নাকি শ্রেয়া সময় নিচ্ছে? নাকি শ্রেয়ার মজা লাগছে আমাকে এই অবস্থায় দেখে?
এই ভাবে কেটে যায় অরিত্রের হাজারো প্রশ্নবিদ্ধ শত রাত। অরিত্র এখন শ্রেয়ার জন্য পথ চেয়ে বসে আছে।
অরিত্রের এই ভাবলেশহীনতায় ভালোবাসা।
শ্রেয়াও কি ঠিক সে সময়ে অরিত্রের কথা ভাবছে?
নাকি শ্রেয়াও তার প্রিয় কোন মানুষের জন্য অপেক্ষা করছে ঠিক অরিত্রের মত করে !!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।