আগুন্তক এ কিতাবটি রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ , এতে কোন সন্দেহ নেই৷ [ আল কোরআন(৩২:০২)]
আল কোরআনে এক অত্যাশ্চর্য সংখ্যা তাত্ত্বিক জটিল জাল পাতা রয়েছে যা অতি অভিনব এবং অতিশয় বিস্ময়কর। এটি ১৯ সংখ্যার সুদৃঢ় বুনন। কয়েক বছর আগে আমেরিকার বিশিষ্ট বিজ্ঞানীগণ কোরআনের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর দ্বারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেন এটি ঐশী গ্রন্থ কিনা। পরীক্ষার ফলাফল যা আসে তা এক কথায় বিস্ময়কর এবং অবিশ্বাস্য। বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে ১৪০০ বছর পূর্বে কোন অক্ষরজ্ঞানহীন লোকের পক্ষে এমন গ্রন্থ রচনা করা অসম্ভব, এমনকি তিনি যদি তার পূর্বে পৃথিবীতে আসা সকল জ্ঞানের অধিকরিও হতেন তাও তারপক্ষে এমন গ্রন্থ রচনা করা সম্ভব নয়।
তারা প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে সমস্ত পৃথিবীর মানুষ যদি সম্মিলিত ভাবে পৃথিবীর সমস্ত বয়স জুড়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে পরিশ্রম করে যেত অনুরূপ একটি গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্যে, তবু তা চিরদিন থেকে যেত সম্ভাব্যতার সীমানা থেকে অনেক বাইরে। কোরআনে যেসব নিয়ম-কানুন-শৃঙ্খলা মানা হয়েছে, ১৯ সংখ্যার জটিল জালকে যেভাবে এঁটে দেয়া হয়েছে এর মধ্যে- তেমনিভাবে সম শব্দে সম বাক্যসংখ্যায় সমানসংখ্যক অক্ষরে একটি অনুরূপ বৈশিষ্ট্যের গ্রন্থ রচনার জন্য প্রয়োজন পড়ত ৬.২৬ x ১০২৬ বছর। অর্থাৎ ৬২৬ এর পর ২৪ টি শূন্য। বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর বর্তমান বয়স ৪৬০ কোটি বছর এবং মানুষ সৃষ্টির সূচনা হয় প্রায় ২ মিলিয়ন বছর পূর্বে। প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী বিশ্বের বর্তমান ৬০০ কোটি মানুষ যদি নিরবিচ্ছিন্নভাবে পৃথিবীর বয়স সীমার শুরু থেকে লেখা আরাম্ভ করতো তাহলে ৪৬০ কোটি বছরে ০.০০০০০০০৩৫% কাজ সম্পন্ন করতে পারত।
অর্থাৎ ৪৬০ কোটি বছর বয়সে আজকের দিন পর্যন্ত যে পরিমান কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হতো তার পরিমান হত কোরআন লেখার সমস্ত প্রকল্পের মাত্র একশ কোটি ভাগের ৩৫ ভাগ। বিশাল প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে এক ফোটা পানির মত। আর এ প্রকল্পের প্রধান শর্ত এই যে ৬০০ কোটি মানুষের প্রতিটি মানুষের আয়ুষ্কাল ৪৬০ কোটি বছর হতে হবে।
মোট ২৩ বছরে অল্প অল্প করে অবতীর্ণ হয় আল-কোরআন। ২৩ বছরের এই ব্যাপ্তিতে অবতীর্ণ কোরআনে যে বিন্যাস, বিভাগ ও কাঠামো রচিত হয়েছে তাতে ১৯ সংখ্যাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সর্বপ্রথমে নাযেলকৃত ৫ টি আয়াতঃ
পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। [আল কোরআন (৯৬:১-৫)]
এই সুরার স্থানাঙ্ক শেষ দিক থেকে ১৯ তম। এতে আয়াতের সংখ্যাও ১৯।
২য় বার অবতীর্ণ হল ৬৮ নম্বর সুরার কতিপয় আয়াত। ৩য় বার ৭৩ নম্বর সূরার কিছু আয়াত। ৪র্থ বার ৭৪ নম্বর সূরার ৩০ টি আয়াত। এই ৩০ নম্বর আয়াতটি হল ১৯ এর প্রস্তাব যাতে বলা হয়েছে “ জেনে রাখ সবার উপরে ১৯” বা “ইহার মাহাত্ম্য ১৯” । এরপর ৩১ নম্বর আয়াতের প্রথমাংশে বলা হয় “ আমি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতাই রেখেছি।
“ তার পর “আমি কাফেরদেরকে পরীক্ষা করার জন্যেই তার এই সংখ্যা করেছি-যাতে কিতাবীরা দৃঢ়বিশ্বাসী হয়, মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং কিতাবীরা ও মুমিনগণ সন্দেহ পোষণ না করে এবং যাতে যাদের অন্তরে রোগ আছে, তারা এবং কাফেররা বলে যে, আল্লাহ এর দ্বারা কি বোঝাতে চেয়েছেন। এমনিভাবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে চালান। আপনার পালনকর্তার বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন এটা তো মানুষের জন্যে উপদেশ বৈ নয়। “
৭৪ নম্বর সূরায় একসাথে ৩০ নম্বর পর্যন্ত নাজিল হয় যার ৩০ নম্বর আয়াতে ১৯ সংখ্যার প্রস্তাব করা হয়। এর পর যে আয়াতটি নাজিল হয় তা হল “ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” ।
এই আয়াতের অক্ষর সংখ্যা ১৯। এর মধ্যে ব্যবহৃত হয়েছে ৪ টি মৌলিক শব্দ ইসম, আল্লাহ্ , রহমান, রাহিম। এই শব্দগুলো আল কোরআনে যতবার ব্যবহৃত হয়েছে প্রত্যেকেই ১৯ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। যেমন ঃ
“ইসম” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১৯ বার(১৯X ১)
আল্লাহ্ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ২৬৯৮ বার ( ১৯ X ১৪২=২৬৯৮)
“রহমান” শব্দটি ৫৭ বার ( ১৯ X ৩= ৫৭)
“রাহিম” শব্দটি ১১৪ বার ( ১৯ X ৬ = ১১৪)
শুধু এটাই নয়। কোরআনে সূরার সংখ্যাও ১১৪ ( ১৯ X ৬)।
“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” আয়াতটি ১১৩ টি সূরায় ব্যবহৃত হয়েছে। একটি সুরাতে এর ব্যবহার নেই কিন্তু অন্য এক সুরাতে ব্যবহৃত হয়েছে ২ বার অর্থাৎ এর ব্যবহারও ১১৪ বার যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। এছাড়াও কোরআনে কিছু আরবি অক্ষর, শব্দ ইত্যাদি এমন সুশৃঙ্খল ভাবে সজ্জিত আছে যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য যা আলোচনা করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। আমি শুধু অল্প কিছু উদাহরণ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এখানে।
এখন প্রশ্ন এসে যায় কোরআনে সংখ্যার জাল বুননের জন্য এই ১৯ সংখ্যাটিকে কেন বেছে নেয়া হল।
এর উত্তর কোরআনের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহই সবচেয়ে ভাল বলতে পারবেন। আমরা শুধু ধারণা করতে পাড়ি। ১৯ হল অনন্য এক সংখ্যা যার মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা ১ এবং ৯ বিদ্যমান। ১ হল সংখ্যা সমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এবং শূন্য (০) বা অস্তিত্বহীনতার পরে সর্বপ্রথম অস্তিত্ব। ১ এককত্ব, অসিমত্ব ইত্যাদি নির্দেশ করে।
আর ৯ হল আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্যময় সংখ্যা যার রয়েছে অনুপম গুণ যা অন্য কোন সংখ্যায় নেই। ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা যাদের ছাড়া কোন সংখ্যাই সম্ভব নয়। ৯ এর সাথে অন্য যে কোন গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা ( ১, ২,৩,----,৯) যোগ করুন, দেখবেন প্রাপ্ত সংখ্যা সকল অবস্থাতেই যোগকৃত গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যার সমান। যেমন, ৯+১=১০=১ ( ১+০) , ৯+৮=১৭=৮ ( ১+৭) ইত্যাদি। আবার ৯ এর সাথে যে কোন গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা গুণ করে যে মান পাওয়া যায় তা সকল সময় ৯ ই থাকে।
যেমন , ৯ X ৩ = ২৭=৯ (২+৭), ৯ X ৭=৬৩=৯(৬+৩)। তাই ১ এবং ৯ দুটি সংখ্যার ২টি বিশেষ গুণ প্রকাশ পায় যা যোগকৃত (১+৯=১) অবস্থায় ১ তার সত্ত্বা হারায় না। মহান আল্লাহতায়ালা কোরআনকে এমনি সুশৃঙ্খল, সুচারু রুপে সাজিয়েছেন যে সমগ্র জীন এবং মানব জাতী একত্রীত হয়েও এর মত আরেকটি গ্রন্থ রচনা করতে পারবে না।
এর আয়াতগুলো পাকাপোক্ত এবং বিস্তারিতভাবে বিবৃত হয়েছে, এক পরম প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ সত্তার পক্ষ থেকে ৷ [ আল কোরআন (১১:০১) ]
বাতিল না পারে সামনে থেকে এর ওপর চড়াও হতে না পারে পেছন থেকে৷ এটা মহাজ্ঞানী ও পরম প্রশংসিত সত্ত্বার নাযিলকৃত জিনিস৷ [আল কোরআন ( ৪১:৪২) ]
বলে দাও, [হে মুহাম্মদ (সাঃ)] যদি মানুষ ও জিন সবাই মিলে কুরআনের মতো কোনো একটি জিনিস আনার চেষ্টা করে তাহলে তারা আনতে পারবে না, তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়ে গেলেও৷ ( সূরা বনী ইসরাইল-৮৮)
হে মুহাম্মাদ! বলো, যদি আমার রবের কথা লেখার জন্য সমুদ্র কালিতে পরিণত হয় তাহলে সেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে কিন্তু আমার রবের কথা শেষ হবে না৷ বরং যদি এ পরিমাণ কালি আবারও আনি তাহলে তাও যথেষ্ট হবে না৷ [আল কোরআন(১৮:১০৯)]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।