আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভোগসূত্রে মার্কিনীদের জীবনবিলাস ও ভোগের উচ্ছিষ্টে উপভোগ...

সমাজ পচনস্তরের বিপ্রতীপ মেরুর এই বাসিন্দার পেট চলে শব্দ শ্রমিকের কাজ করে অধুনা বিশ্বে কেনা-বেচা’র সরল সূত্রে আর সীমাবদ্ধ রাখা গেল না পণ্যকে। কেননা গোলকায়ন বাণিজ্য তার উদারীকরণ মোড়কে বাজারজাত পণ্য হয়ে উঠছে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। ব্যাক্তি জীবন থেকে সামাজিক রীতিশ্রীদ্ধ অনেক বিষয়ই আজ পণ্যের গন্ডিতে বাধা পড়ে ছটফট করছে। মানসিকতার বৈকালঙ্গে আমাদের সুখানুভূতিগুলোকে আজ একটু একটু করে গিলে খাচ্ছে 'ভোগ' চিন্তা। পণ্য বা সেবা কিংবা পানি বা ধর্ম, গিলে খাওয়ার আয়োজনে সে দৈত্যের সঙ্গী বিজ্ঞাপন নামের আরেক ফ্রাঙ্কেনস্টাইন।

তাইতো অহরহ আমরা বলতে শুনছি 'জীবিকার স্বার্থে বাঁচো, জীবনের জন্য নয়'। ফলস্বরূপ উঠানের এক চিলতে জায়গা থেকে পারিবারিক বন্ধন পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে যোগ হয়েছে বহুজাতিক ভোগ লালসা। আর অসম এ বন্দোবস্তকে হালাল করতে দেয়া আছে গ্লোবালাইজেশন বা গোলকায়ন পেসক্রিপশন। তাতে বলা আছে, পণ্যের প্রয়োজনে যেমন খুশি তেমন সাজো, লোকালাইজডকে করো গ্লোবালাইজড। এককথায় সবার উপরে পণ্য বিক্রি তাহার উপরে নাই।

আর এতে ত্বক মেজে হরদম বিক্রি বাড়ছে নতুন নতুন সব পণ্য। সাথে চমকে দিতে আছে মোড়কজাত বিজ্ঞাপন। বাজার অর্থনীতির এ যুগে উৎপাদিত পণ্যের ব্যবহার ও চলাচল শুধুমাত্র মানুষের ইচ্ছাশক্তির উপর আর চলছে না। পণ্য বলছে, সে প্রবেশ করেছে বস্তু অর্থনীতির যুগে। যে যুগে তার প্রাণ থাকার জানান দিয়েছে সে নিজেই।

সূত্র মতে, Extraction>Production>Distribution>Consumption>Disposal চক্রে তার জীবন বাধা। এর প্রতিটি পর্ব পরস্পরের সাথে যোগসূত্রে বাধা। চাইলেই কেউ এ চক্রের বাইরে যেতে পারে না। কেননা এর প্রভাব সরাসরি আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত। উল্লিখিত চক্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মানুষ বা রাষ্ট্রের জনগণ।

কেননা প্রতিটি স্তরের কোন না কোন পর্যায়ে মানুষ জড়িত। কিন্তু সব মানুষের অংশগ্রহণ এখানে সমান নয়। এক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণ ও নিয়ন্ত্রন থাকে সরকারের হাতে। তাই সরকারই অর্থব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন ও বন্টন করে থাকে যাকে সরল ভাষায় বাজেট বলা হয়। তাই রাস্ট্রযন্ত্র Avgv‡`i নসিহত করছে Of the people, For the people, By the people এর মন্ত্র| কিন্তু সত্যি কি সরকার জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটায়? এ নিয়ে বিশ্ব মাতব্বর মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের জনগণের ভোক্তা অধিকার নিয়ে গবেষণা করেছেন এ্যানি লিওনার্ড।

তার গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রদত্ত আয়করের ৫০ ভাগেরও বেশি বরাদ্দ রাখা হয় সেনাবাহিনীর জন্য। যা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার বৈসাদৃশ্য। বিপুল এ বাজেট সংস্থানের জন্য বাধ্য হয়ে সরকারকে হাত বাড়াতে হয় বেসরকারী অর্থের দিকেও। সেখানে কখনো সরকারের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে কোম্পানি। এ্যানির মতে, পরস্পরের সমঝোতার ভিত্তিতে পুঁজিবাদি সমাজ ব্যবস্থায় কোম্পানিগুলো সরকারকে নিয়ন্ত্রন করে যাচ্ছে।

যার সাথে সাধারণ মানুষের ইন্টারেষ্ট মোটেই যুক্ত নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট অর্থনীতির ৪৯ শতাংশ সরকার এবং বাকী ৫১ শতাংশ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রনে। তাই দিন দিন কোম্পানিগুলো ক্রমশ ফুলে ফেঁপে উঠছে, বিপরীতে সরকার হয়ে যাচ্ছে কর্পোরেট শক্তির তাবেদার। সেখানে আজ কর্পোরেট শক্তির হাতছানি এড়ানোর ক্ষমতা হরিয়েছে সরকার। আজ সম্পদ ভোগে পণ্যচক্র নিয়ন্ত্রণ করে দিচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো।

এ বিষয়ে গবেষণা পত্রটির ধারাবাহিক বর্ণনা দিচ্ছি। প্রকৃতিক সম্পদের সুষম ব্যবহার : কথাটির মর্মার্থ হলো ‘প্রকৃতির ধ্বংস’। যার প্রমান- বিশ্বব্যাপী বনজ সম্পদ হ্রাস, প্রজাতির বিলুপ্তায়ান, মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ বাড়ার মত ঘটনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীর মোট প্রাকৃতিক সম্পদের এক তৃতীয়াংশ আমরা ভোগ করেছি গত ত্রিশ বছরে। উপরন্তু যে হারে ভোগ বাড়ছে, সে হারে প্রকৃতিক সম্পদ তার নিজের নিয়মে বৃদ্ধি পাচ্ছে না।

তাই পৃথিবীর মোট বনভূমির ৮০ ভাগ আমরা ইতিমধ্যে উধাও করেছি। শুধু আমাজানেই মিনিট প্রতি কাটা পরছে ২ হাজার গাছ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পা পড়েনি বিশ্বে এমন বনভূমি রয়েছে মাত্র ৪ভাগ। একইসাথে বিশ্বজুড়ে সুপেয় পানির ৪০ শতাংশ এরই মধ্যে পানের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কাজেই ভোগ তারা যথেষ্ট করেছে।

বরং বলা যায়, ভাগের অতিরিক্ত ভোগ করছে মার্কিনীরা। পরিসংখ্যান মতে,বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ৫ ভাগ বসবাস করে যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু তারাই পৃথিবীর মোট সম্পদের ৩০ ভাগ ভোগ করছে। এই হারে যদি বিশ্বের প্রতিটি দেশ ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে ওঠে তাহলে আমাদের প্রিয় এই পৃথিবীর মত ৫ টি পৃথিবী লাগবে বসবাস করতে। এ চিত্র পুরো উন্নত বিশ্বের।

আজ তাই যুক্তরাষ্ট্রের মত উন্নত বিশ্ব নিজে মিতব্যায়ী না হয়ে হাত বাড়াচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর দিকে। তার উপর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট মৎস্য চাহিদার ৭৫ ভাগ মেটাচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো। যে অঞ্চলের সম্পদ আহরণ শেষ হয়ে যাচ্ছে পরমূহুর্তে সে অঞ্চলের মানুষ বুর্জোয়া শ্রেণীর কাছে হয়ে পড়ছে মূল্যহীন। পণ্য উৎপাদনের জন্য আহরিত প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে মেশানো হচ্ছে রাসায়নিক বিষ। ফলে ঝুঁকি বেড়েছে দ্বিগুন।

বর্তমানে বিশ্বে এক লাখেরও অধিক কারখানায় রাসায়নিক বিষ বা সিনথেটিক টক্সিক ব্যবহার হচ্ছে। অথচ এ বিষ আমাদের শরীরে কী পরিমান ক্ষতি করছে তার বিবরণ নেই উন্নত বিশ্বের কাছে। তবে আমরা এটুকু বুঝি, রাসায়নিক বিষ মিশ্রিত হয়ে যা তৈরি হচ্ছে তা আরেক বিষ। এ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিকর বিষের নাম “‌নিওরোটক্সিক”। যা প্রতিদিন ঢুকছে আমাদের শরীরে।

মানবসৃষ্ট এ বিষ প্রভাব ফেলছে সরাসরি আমাদের মস্তিস্কে। মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক নিওরোটক্সিকের জন্ম আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য দাহ্যহীন বস্তু থেকে। ভেবে দেখুন বিষ গ্রহণের এ যাত্রা শুরু হয় শিশুকাল থেকেই। যে শিশুটি কেবলই পৃথিবীতে এলো, সেই নিস্পাপ প্রাণটি মায়ের বুকের দুধ থেকে পেল প্রথম নিওরোটক্সিকের স্বাদ। তাই আমাদের সমাজের সবচেয়ে ছোট সদস্যটির জীবন শুরু হয় তার মায়ের কাছ থেকে নেয়া বিষের মধ্য দিয়েই।

তাই বলে কি মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। মোটেই না। এ অচলাবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে বহুজাতিক কোম্পানি এবং সরকার। বিষ দেয়ার এ প্রক্রিয়ায় মুনাফা ভোগ করে শুধুমাত্র মালিকশ্রেণী। কেননা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় এ বিষ টেনে নিচ্ছে কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকও।

বিশাব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, মানব শরীরে অধিক বিষ প্রবেশের অন্যতম মাধ্যম “রিসাইকেল সিস্টেম”। এ প্রক্রিয়ায় মানুষকে কাজ করতে হয় রিসাইকেল পণ্য এবং বিষের সাথে। কিন্তু কেন কোম্পানীগুলো জেনেশুনে এ ধরনের বিষ উৎপাদন করে সবার ক্ষতি করছে ? উত্তরটা মূলত মুনাফা ও শ্রেণীশোষণের সাথে সম্পর্কিত। ফিরে যেতে হয় লেখার শুরুতে। এসব কারখানায় উৎপাদন কাজে নিয়োজিত হয় সেসব দেশের মানুষ যাদের বনভূমি উজার ও তাদের শোষণ করে উন্নত দেশে শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে।

নিঃস্ব দেশের গরীব মানুষ অভিবাসী হয়ে আসে উন্নত বিশ্বে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইএমও এর মতে, বিশ্বে গড়ে প্রতিদিন ২ লাখ মানুষ কাজের খোঁজে অভিবাসী হচ্ছে। আগেই বলেছি, বিষ দিয়ে বিষ উৎপাদন হচ্ছে কারখানাগুলোতে। প্রোডাক্টের সাথে বাই প্রোডাক্টের ফলে দূষিত হচ্ছে বায়ু ও পানি (যেমন: ঢাকা ও আশপাশের নদীগুলো)। যুক্তরাষ্ট্র সরকার হিসাব করে দেখলো, ফিবছর তারা ৪০০ কোটি পাউন্ড বিষ উদগীরণ করছে।

এ হারে চলতে থাকলে একসময় সে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। তাই তারা কল-কারখানাগুলো ছড়িয়ে দিল বিশ্বের অন্যান্য স্থানে। এর ফলে দুটি লাভ হলো। প্রথমটি, বিশ্বায়নের ফলে সেই দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করা যাচ্ছে। আর ডলারের হিসাবে কম বেতনে শ্রমিক পাওয়াটা দ্বিতীয় কারন।

প্রয়োজনে আমার উৎপাদিত পণ্য পরে উন্নত বিশ্বের ট্যাগ লেগে বেশি দামে আমাকেই কিনতে হবে। অবশ্য সরল এই কেনা বেচার পেছনে রয়েছে বায়ু ও পানিতে বিষ ছড়িয়ে পরার মত মারাত্মক সমিকরন। অবশ্য পরিবেশবাদিদের তকমা নিয়ে উন্নত বিশ্বের কিছু দেশ উপরিতল (সারফেস) রক্ষাকবচ তৈরির প্রেসক্রিপশন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গভীরভাবে এর প্রভাব ও দায় তারা জানাতে বা নিতে নারাজ। পরিবেশন: এ ধাপের লক্ষ্য বিষপণ্যগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিক্রি করা।

এজন্য দেয়া হয় ছাড়,উপহার ক্ষেত্র বিশেষে বিনামূল্যে। একটা কথা বেশ চালু আছে চারিদিকে : প্রচারেই প্রসার। অন্যদিকে বাজারজাতকারকদের দ্রুত পণ্য বিক্রি করতে দেয়া হচ্ছে টার্গেট ও তাড়া। ডিস্ট্রিবিউটররা তা আমাদের গছিয়ে দিতে প্রদর্শণ করে বিভিন্ন “মূলা”র । মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভোগে উদ্বুদ্ধ করতে পণ্য উৎপাদনের সাথে যোগ হচ্ছে বিভিন্ন বিশেষন এবং সর্বনাম।

যেমন : গ্রীণ প্রোডাক্ট। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়-সুপারশপে একটি রেডিও কিনতে গিয়ে মার্কিন গবেষক এ্যানি লিওনার্ড দেখলেন ছোট্ট গ্রীণ রেডিওটির গায়ে লেখা ৪ ডলার ৯৯ সেন্টের প্রাইস ট্যাগ। তিনি ভেবে পাচ্ছিলেন না কিভাবে এত কম দামে পণ্য বিক্রি করা যায়? উত্তরটা এখন আমি জানি। রিডিওটার মেটাল সংগ্রহ করা হয়েছে সাউথ আফ্রিকা থেকে,উৎপাদন তেল সংগ্রহ করা হয়েছে ইরাক থেকে,চীন থেকে নেয়া করা হয়েছে প্লাস্টিক বা দানা এবং পুরো পণ্যটি এ্যাসেম্বলিং করা হয়েছে মেক্সিকোতে। পরিবেশনের আগে উৎপাদনের এই ধারায় ৪ ডলার ৯৯ সেন্টের মধ্যে আছে কর্মচারীর বেতন,পরিবহন ব্যায়সহ আনুসঙ্গিক খরচ।

সে হিসেবে পণ্য বিক্রি করে লাভ বলে কিছু নেই। বরং কিছু কোম্পানি ভর্তূকি দিয়ে পণ্য বা সেবা বিক্রি করছে। তাই এ্যানি উপলব্ধি করলেন, পণ্যটার জন্য তিনি অর্থ পরিশোধ করছেন না। তাহলে অর্থটা পরিশোধ করছে কে? এর উত্তর খুঁজে মার্কিন গবেষক এ্যানিকে পেরোতে হয়েছে অনেকটা সময়। অবশেষে মার্কিনী হওয়ার সুবাদে সে যা জানতে পারলো তা বাইরের কারো পক্ষে জানা অসম্ভব ছিলো।

কেনান তার কেনা রেডিওটির জন্য আক্ষরিক অর্থে এ্যানি মূল্য পরিশোধ করলেও আসল সাফারার তারা, যারা তাদের বনভূমি ও বাসভূমি হারিয়েছে। যেমন : আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে ৩০ শতাংশ শিশু আজ স্কুলের বদলে লাভজনক এ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে। এ্যানি শুধু অর্থ দিয়েছে আর তৃতীয় বিশ্বের অবুঝ দেশগুলো দিচ্ছে মূল্য। এ মূল্যা তারা পরিশোধ করছে, যারা পণ্যের উৎপাদনে শরীরে বিষ টেনে নিচ্ছে। এর বিনিময়ে তারা পাচ্ছে এ্যাজমা, ক্যান্সারসহ নানা দূরারোগ্য ব্যাধি।

এতগুলো মানুষের ত্যাগে সুশীল দেশগুলোতে এ্যানির মতো লক্ষ মানুষ ভোগ করছে উন্নত জীবন। তবে শেষ পর্যন্ত গরীব মানুষের এ ত্যাগ ও শ্রম কোন কোম্পানীই তার হিসাবের খাতায় যোগ করে না। তাই একবিংশ শতাব্দিতে পণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ভোগের অন্যতম একটি সূত্র হচ্ছে: “সত্যিকারের উৎপাদন ব্যায় ভিন্ন কিছু” যা সাদা চোখে দেখলে আর চলছে না। ভোগ : ভোগ বিষয়টি এই লেখার হার্ট হিসেবে বিবেচিত। পূর্বের বিরবরণকৃত পুরো ব্যবস্থাকে ভোগই নিয়ন্ত্রন করে।

মন্দ ভালোর উপাখ্যান এই ভোগের কারনেই বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী- মার্কিন অর্থনীতি হয়েছে ৯/১১ এর শিকার। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর মার্কিন অর্থনীতির সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতি কেমন বেসামাল হয়ে পরে সে তো আমরা দিখেছি। বিশ্ব অর্থনীতির তাবৎ রথী-মহারথীরা সেই অস্থির সময় যে ঢেউ উতরে যেতে খাবি খাচ্ছিলো এতবছর পরও সে মন্দার বলয় থেকে বেরোতে পারেনি অনেক দেশ। গ্রীস, ইতালীর বাজারে সেই সুনামীর রেখা আজও দেখা যায়। এ তো আজকের অবস্থা।

কিন্তু সেসময় এমন পরিস্থিতির জন্য অপ্রস্তুত মার্কিনীরা মুখোমুখি হয় অন্তহীন সমস্যার। সঙ্গত কারনেই চিন্তিত ছিলেন প্রেসিডেন্টও জর্জ ডব্লিউ বুশও। তাই প্রেসিডেন্ট ঠিক করলেন এসময় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়া উচিত। অতঃপর প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশ এড্রেসড টু পিপলস অব ইউনাইটেড স্টেট (বিশ্ব)। আশ্চর্যের বিষয়, বুশ তার ভাষণে মৃতদের জন্য দোয়া, দোষীদের বিচারের আশা বা জনগণকে ধৈর্য্য ধরতে না বলে সবাইকে অবাক করে তিনি জোর দিলেন একটি শব্দের উপর-“শপ”।

কেনাকাটা করো। বলা দরকার প্রয়োজনে যা কেনা হয় তা “বাই”। আর কাজ নেই, ঘুরতে বেরিয়ে ভালো লাগলো কিনে ফেললাম তা “শপ”। (শপ এবং বাই এর মধ্যে পার্থক্য)। প্রেসিডেন্ট এই শপের আহ্বান জানালেন মার্কিন জাতি বা বিশ্ববাসীর প্রতি।

ফলে মার্কিনীদের নির্দিষ্ট কাজ ছাড়াও এসময় ঘরের বাইরে কাটাতে হলো অনেকটা সময়। বলা চলে, কাজে লাগলো বুশ পলিসি। বুশ গভর্ণমেন্টের চাপিয়ে দেয়অ ক্রয়নীতি গ্রহণ করলো পুরো দেশ ও ইউরোপীয় দেশগুলো। কেনা মার্কিন অর্থনীতির সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির সূচকও জড়িত। ৯/১১ পরবর্তী সময়ে মার্কিনিরা হয়ে গেল পুরোপুরি ভোগের জাতি।

সে সময় মার্কিনিদের প্রাথমিক পরিচয় হয়ে উঠলো -ভোক্তা। মা,বাবা,শিক্ষক,কৃষক সব পরিচয়কে ছাপিয়ে ভোক্তা পরিচয়টি প্রধান হয়ে দেখা দিলো যুক্তরাষ্ট্রে। সেসময় মার্কিনীদের সামাজিক মর্যাদা (ষ্ট্যাটাস) মাপা হতো কে কতটুকু ভোগ করতে পারছে তার উপর। এক সপ্তাহের মাথায় ৯/১১ এর জায়গায় প্রতিবেশীদের আলাপে জায়গা করে নিলো পণ্য ভোগের আলোচনা। এ্যানির মতে, আমরা একের পর এক কিনতে থাকলাম,আর ভোগ করলাম।

পক্ষান্তরে মার্কিন অর্থনীতির গতি সচল রাখলাম আমরা, মার্কিনীরা। মার্কিনীদের সব টাকা চলে গেল বাজারের হাত ঘুরে কোম্পানিগুলোর একাউন্টে। বেশ ভালো। এবার ধারণা করুন,ক্রয়কৃত সেসব পণ্যের কতটুকু সেসময় ভোগ করতে পেরেছিল মার্কিনীরা ? বিশ্বাস করুন বা নাই করুন উত্তরটা বেশ হতাশাজনক। মার্কিন কনস্যুমার এসোসিয়েশন এন্ড কনসালল্টেশনের মতে, তা মাত্র ১ শতাংশ।

অন্যভাবে বলা যায়,বিশাল ক্রয়যজ্ঞের ৯৯ শতাংশই ছয় মাস পর বাতিল হয়ে গিয়েছিলো তাদের কাছে। এ পরিমান পণ্য ক্রয় ও ব্যবহারের অসামঞ্জস্যতা দ্বারা উন্নত বিশ্বের একটি দেশ কীভাবে পৃথিবীর মঙ্গল কামনা করে? প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন কয়েকজন বর্ষীয়ান মার্কিন নাগরিক। তাদের দেয়া তথ্য মতে,ভোগের এ চিত্র অর্ধশতক আগেও এমনটা ছিল না। পণ্যের অভিহীত মূল্যের তুলনায় ভোগ্যমূল্য বৃদ্ধির এ ঘটনা এমনি এমনি ঘটেনি,একে ঘটানো হয়েছে। আসুন সেই অজানা রহস্যই জানি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ডলারের অসম্ভব মূল্য বৃদ্ধি ঘটে।

মার্কিন অর্থনীতি তখন ফুলে ফেঁপে একাকার। সেই অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক কর্পোরেশনগুলো। সেসময় রিটেইলার এনালিস্টিক ভিক্টর লোবো মার্কিন অর্থনীতির জন্য কিছু প্রস্তাবনা দাড় করান যার উপর ভিত্তি করে মার্কিন অর্থনীতিতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। লোবোর সেই সংস্কার প্রস্তাবের মূল কথা ছিলো : Our enormously productive economy demands that we make consumption our way of life, that we convert we buying and use of goods into rituals. That we seek our spiritual satisfaction, our ego satisfaction, In consumption... we need things consumed, burned up, replace and discarded as an ever-accelerating rate. ওই বিশাল অর্থনীতি ভোগের মানসীকতা গড়ে তুলতে লোবো মার্কিনীদের মধ্যে সার্থকভাবে ভোগ বিলাসীতার বীজ বপন করলেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইজেন হাওয়ারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কাউন্সিল এর সাথে আরও ভোগ্য পণ্য উৎপাদনের গুরুত্ব আরোপ করেন।

তারা যুদ্ধপরবর্তী অর্থনীতিকে বিশ্ব চালকের আসনে বসাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা,শিক্ষা,নিরাপদ চলাচল,স্থীতিশীলতা বা ন্যায়বিচারের মত বিষয়কে প্রধান্য দিলো না। মার্কিন নীতিতে প্রাধ্যান্য পেল নতুন একটি বিষয়- ভোগ্যপণ্য। তারা উৎপাদন করলো। আর ভোগ করতে উদ্দীপ্ত করলো। পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে দু’টি নীতি মেনে চলল তারা।

যা এত বছর পর আজও অপ্রতিদ্বন্দী হয়ে চলেছে। যার রেশ রয়েছে ভিক্টর লোবোর প্যারায়। প্ল্যান অবসোলেসেন্স : ডিজাইন ফর ডাম্প (দ্রুত বাতিলের তালিকায় চলে যাবে এমন) যেমন - ডিসপো গ্ল্যাস,প্ল্যাস্টিক ব্যাগ,ডিভিডি,বারবিকিউ স্ট্যান্ড,ক্যামেরা ইত্যাদি ধরনের পণ্য বেশি উৎপাদন। এককথায় যেসব পণ্যের মেয়াদকাল দীর্ঘ তা ক্রেতার আগ্রহ ও ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাও। প্রয়োজনে দেশের বাইরে রপ্তানী করো।

প্রথমে চাহিদা তৈরি করো পরে বাজার থেকে গায়েব করে দাও। ফলে ভোক্তা বাধ্য হবে একটু বেশি দামে লেটেস্ট পণ্য কিনতে। এক্ষেত্রে যন্ত্রাংশের তুলনায় পুরো পণ্যটির দাম যেন কাছাকাছি হয় এবং মডেল যেন অবশ্যই অনেকগুলো হয়। চোখ ধাধাঁনো রূপ থাকতে হবে সবার- সে পণ্য হোক বা হোক পণ্য বিক্রেতা। প্ল্যান অবসোলেন্স নীতির বড় উদাহরণ “কম্পিউটার”।

আপনার কেনা কম্পিউটারকে আপনি এখন কয়ঘন্টা/কয়দিন আপডেট পিসি বলতে পারছেন। এর প্রধান কারণ প্রযুক্তির বদলের তুলনায় পিসির আদল বেশি বদলানো। আজ যে পিসিটি কিনলেন তার হার্ডওয়্যার এক বছর পর আপনি বাজারে পাচ্ছেন না। সুতরাং দ্রুত পণ্যের বাজার বদলের লক্ষ্যে তারা হার্ডওয়্যারের আদল বদলে বাজারে ছাড়ছে। ফলে আপনি বাধ্য হচ্ছেন কিছুকাল পর নতুন আর একটি সিস্টেম কিনতে।

পঞ্চাশের দশকে প্ল্যানড অবসোলেশন নিয়ে অনেক খোলামেলা আলোচনা হলেও বর্তমান যুগে তা ক্রেতাকে না জানানোর পরামর্শ দিয়েছে অর্থনৈতিক উপদেষ্টারা। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান লক্ষ্য দ্রুত,স্বস্তা,হালকা পণ্য ভোক্তাদের হাতে তুলে দেওয়া,যার দীর্ঘস্থায়ীত্বের নিশ্চয়তা থাকবে না। ওয়ারেন্টি দেয়া হবে লাইফটাইমের। সেখানে শর্ত থাকবে পণ্যটি যতদিন বাজারে থাকবে ততদিন নষ্ট পণ্যটি বদলে আরেকটি নতুন দিয়ে দেয়ার। ফলে একই একটু বেশী টাকা দিয়ে যেখানে আগে দশ বছরের জন্য নিশ্চিত হওয়া যেত এখন সেখানে এক বছর পার করাই মুশকিল।

উপরন্তু পণ্যের মেয়াদকাল দাড়াচ্ছে সর্বোচ্চ ৩ বছর। যার ফলে দশ বছর সেবা পেতে আমাকে খরচ করতে হবে তিন গুন অর্থ। সমিকরনটা এমনই। পুরো প্রক্রিয়াটি ইচ্ছাকৃত সংকট ও সংকীর্ণ মানসীকতার প্রকাশ। এ নিয়মে পণ্যের গতি হবে দ্রুততর।

আর সেজন্য দরকার মানুষকে পণ্য কিনতে বাধ্য করা। তার পকেটের পয়সা পকেট থেকে বাজারে নিয়ে আসা। তাই আবিস্কার করা হলো নতুন থিওরী। প্রিসিভড অবসোলেসন্স : এ ব্যবস্থায় পণ্য নিজেই তার ভাষায় কথা বলবে এবং অন্যকে উৎসাহ যোগাবে তাকে কিনতে। যেমন- আপনার ঘরে আপনি যখন সিআরটি মনিটর ব্যবহার করছেন,তখন আপনার পাশে আরেকজন নিয়ে এলো ঝাঁ চকচকে স্লিম এলসিডি।

স্বভাবতই আপনাকে নতুন এলসিডি তার রূপে গুনে আকৃষ্ট করবে। এ প্রক্রিয়ায় আপনি উদ্বুদ্ধ হবেন সচল একটি মনিটর থাকতেও সেটা বদলে ফেলার। এক্ষেত্রে ফ্যাশনও একটি বড় উদাহরণ। ধরুন আপনি যে জুতো ব্যবহার করছেন তার হিল ফ্ল্যাট। অথচ চারপাশে অনেকেই পেনসিল হিলের জুতা পরছে।

আপনি তাদের দেখাদেখি দিব্যি চলতে থাকা জুতাডেজাড়া বদলে কিনলেন পেনসিল হিল। একইভাবে ইলেকট্রনিক্স ও ফ্যাশনেবল সব ধরনের পণ্যের জন্য প্রযোজ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তখন ভোক্তার কাছে প্রয়োজনের তুলনায় উপলক্ষ্যকে প্রধানরূপে উপস্থাপন করা হয়। সঙ্গে জোর দেয়া হয় স্থানীয় সংস্কৃতির উপর। ব্যাস দাও ঘুটা।

হয়ে গেল চাহিদা তৈরি। আর চাহিদা যখন আছে তখন ভোগ তো বাধ্য। প্রিসিভড অবসোলেন্স পদ্ধতির পেছনে বড় অবদান রাখছে পণ্য নিজেই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পেটেন্ট, ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রোপার্টির মতো কিছু মোক্ষম অস্ত্র। তবে প্ল্যানড এবং প্রিসিভড দুটো ব্যবস্থায়ই বড় ভূমিকা পালন করে বিজ্ঞাপন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার বিজ্ঞাপন বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হয়ে থাকে। আজ আমরা একবছরে যত বিজ্ঞাপন দেখছি পঞ্চাশ বছর আগে মানুষ তা সারা জীবনে দেখতো কিনা সন্দেহ। লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই বিজ্ঞাপন আজ আমাদের মূল্যবোধ শেখাচ্ছে। সে বলছে চুল, চামড় বা শার্ট নয় আজ গোটা মানুষটাই ভুল, আনস্মার্ট। তাই শোধরাতে চাইলে ‘গো শপিং’।

কোম্পানির সাথে সাথে গণমাধ্যমের ভূমিকাও এ পুরো ব্যবস্থা সঞ্চালনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সুতরাং বস্তু অর্থনীতির এ পর্বে দেখা যাচ্ছে চালিকা শক্তির উৎস শপিং। Extraction>Production>Disposal সূত্রে আমরা না চাইলেও অনেকটা বাধা পড়েছি। এখন আমাদের ঘরের তুলনায় শপিং মল বেশি চাই। ওজনে হালকা, স্বস্তা, সাময়িক প্রয়োজন মেটায় এমন পণ্য চাই।

হোক না সে দেয়াশালাই থেকে ভিডিও গেম কিংবা দান বাক্স বা কপাটবদ্ধ প্রেম। সবই চাই তবে দ্রুত। এদিক থেকে মার্কিনীদের সঙ্গে বাঙালিদের পার্থক্য খুব একটা নেই বললেই চলে, কী বলেন। আজ আমরা যে প্রচুর ভোগ করছি তারপরও কী আমরা যথেষ্ট সুখী? দেখা যাচ্ছে ১৯৫০ সালের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে সুখী মানুষের সংখ্যা ও পরিবার কমছে,অথচ এ সময় থেকেই তাদের ভোগ বেড়েছে কয়েকগুন। এর প্রধান কারন-আজ তাদের প্রচুর ভোগ্য পণ্য আছে,কিন্তু যথেষ্ট সময় নেই।

পরিবার,বন্ধু বা অলস সময়ের জন্য আজ মার্কিনীদের সময় বের করা মুশকিল। তারা প্রতিদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটছে। তারপর দিন শেষে সম্পর্কের সেই জায়গা ও বন্ধনগুলো একটু একটু করে ঢিল দিচ্ছে। আজ মার্কিন মুল্লুকে অলস সময় কাটানোর প্রধানত দুটি উপায় ১.টেলিভিশন দেখ ২.শপিং করো। একজন মার্কিনী তার জীবনচক্রে একজন ইউরোপীয়ানের তুলনায় ৩ থেকে চারগুন বেশি শপিং করে।

তাদের দৈনন্দিন জীবনচক্র লক্ষ্য করলে বিষয়টা পরিস্কার হয়। একজন মার্কিনি কাজে যায়,কাজ করে। কেউ কেউ একাধিক চাকরীও করে। কাজ শেষে বাসায় এসে টেলিভিশন সেটের সামনে বসে পরে,অনুষ্ঠান ভালো না লাগলে বিরক্ত হয়ে ছোটে কাছাকাছি শপিং মলে। শপিং করে ঘরে ফেরে।

ঘুমায়। সকালে’ আবার কাজে বের হয়। আর ছুটির দিনে একটু দূরের পানশালার খোঁজে ছোটা। এই তো জীবন। তাহলে কি মানুষ আবার জঙ্গলে গিয়ে বাস করবে ? কেননা বর্তমান বিশ্বে ভোগ ছাড়া জীবন তো কল্পনাই করা যায় না।

এজন্য সমাজ সংস্কারকরা বলছেন ভোগ হতে হবে পরিমিতভাবে। আমরা ভোগ করতে গিয়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, মানবতা, মূল্যবোধকেও যেন গিলে না ফেলি। সমাজবদ্ধ মানুষরে প্রাত্যহকিতার জন্য অবশ্যই নানাবধি পণ্য আবশ্যক। প্রাণ রক্ষার জন্য খাদ্য গ্রহণ,সামাজকি জীবন যাপনে পোষাক-পরিচ্ছদ,আসবাবপত্র সহ একজন ব্যক্তি মানুষের বহুবিদ ভোগ্যপণ্যের প্রয়োজন। জীবনের প্রয়োজনে আবশ্যকীয় পণ্য ভোগবাদ দর্শনের আওতাভূক্ত নয়।

এর প্রভাবে যা কিছু হচ্ছে তার জন্য আমরাই দায়ী। বিশ্ব জলবায়ুর অস্বাভাবকি পরবির্তনের কারনে প্রাণীজগতের প্রায় ৩৭% প্রজাতি বিলুপ্ত হতে চলছে। পরসিংখ্যানে জানা যায়, পৃথিবীর মাত্র ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠী,যারা উন্নত বিশ্বের বাসিন্দা উৎপাদিত ভোগ্যপণ্যের ৮৬ শতাংশ ব্যবহার করে। অন্যদিকে বিশ্বের ২০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠি জনগোষ্ঠীর ভোগ্যপণ্যরে ব্যবহার মাত্র ১.৩ শতাংশ। বিশ্বের ৫ শতাংশ ধনী জনগোষ্ঠী বিশ্বের মোট আয়রে ৮৭.৭ শতাংশ অর্জন করে থাকে।

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠী বাস কর উন্নয়নশীল দেশগুলোত এবং তাদের ব্যবসা বানিজ্য অংশগ্রহনের শতকরা হার মাত্র ১৭ ভাগ। এই হতাশাব্যঞ্জক চিত্র ক্রমশই বাড়ছে এবং এর বড় কারন ভোগবাদ দর্শনের মাঝেই নিহিত। ডিসপোজাল : দেখা যাচ্ছে ১৯৭০ সালের তুলনায় বর্তমানে মার্কিনিদের বাড়ির আকার দ্বিগুন। এ বাড়তি জায়গায় তাকে সংকুলান করতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভোগ্যপণ্য। যার অধিকাংশই সে ব্যবহার করে না।

তাই তাকে নিয়মিত ডিসপোজ করতে হচ্ছে। ডিসপোজাল বস্তু অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের শেখানো হচ্ছে ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলো। আমরা ফেলছি। একটি পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন সাড়ে চার পাউন্ড ময়লা ডাস্টবিনে ফেলছে।

ডিসপোজাল প্রক্রিয়ায় আগে সব ময়লা মাটিতে পুঁতে ফেলা হতো। এখন ময়লার কিছু অংশ রিসাইক্লিংয়ের জন্য পোড়ানো হচ্ছে,আবার পোড়ানো উচ্ছিষ্ট মাটিতে পোতা হচ্ছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে মাটি ও বাতাস। লক্ষ্য করে দেখুন পণ্যটি উদপাদন প্রক্রিয়ায় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ যোগ করা হয়েছিল,ফলে ডিসপোজাল প্রক্রিয়ায় যখন পুনরায় বাতিল অংশ পোড়ানো হচ্ছে সেখানেও পুড়ছে বিষ। বাতাসে মিশে যাচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক।

বরং এপর্বে জন্ম নিচ্ছে সুপার টক্সিক। যেমন-ডাইঅক্সিন। বিজ্ঞানীরা বলছেন,মানব সৃষ্ট বিষের মধ্যে ডাইঅক্সিন সর্বাধিক বিষাক্ত। তাই বিষাক্ত বর্জ্য ফেলতে আবার দরকার হয় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে। বলা হচ্ছে,রিসাইক্লিং আমাদের পরিবেশ সহায়ক।

হ্যাঁ তা সত্য। আমরা সবকিছু রিসাইকেল করতে পারি, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়,কয়েকটি কারনে। পরিমানগত দিক থেকে বর্জ্য সম্পূর্ণ রিসাইকেল করা যায় না,সব ধরনের বর্জ্য রিসাইকেলের যোগ্য নয় যেমন-জুসের টেট্রাপ্যাক। এতে ব্যবহার করা হয় প্ল্যাষ্টিক,মেটাল ও পেপার। কাজেই আপনি একে আলাদা করবেন কী করে।

সুতরাং দেখছেন কীভাবে একটি সিস্টেম বেড়ে চলছে। জলবায়ু পরিবর্তন,সুখ কমে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটলেও এটি তার আপন গতিতে কাজ করে যাচ্ছে। সুখের বিষয় এ ব্যবস্থার বিপরীতে দিন দিন জনমত গড়ে উঠছে। কর্পোরেশন গতি রুখতে আনা হচ্ছে নতুন চিন্তাধারা। যে চিন্তা কাজ করবে বনভূমি ও অধিবাসী রক্ষায়,পরিচ্ছন্ন উৎপাদনে।

মানুষ চাচ্ছে কর্মী অধিকার,স্বচ্ছ বাণিজ্য,সচেতন ভোগ সর্বপরি সরকারের কাছ থেকে নিশ্চয়তা। যা নিশ্চিত করবে বাই দ্য পিপল,ফর দ্য পিপল। কেননা পুরো ব্যবস্থায় একটির সাথে আরেকটি সম্পর্কযুক্ত। আমরা পুরো সিস্টেমকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে পারি। যা সম্পদ নষ্ট করবে না।

তার জন্য প্রয়োজন মানসীকতার পরিবর্তন। দরকার সাসটেইনেবিলিটি,ইকুইটি, গ্রীণ কেমেষ্ট্রি,জিরো ওয়েষ্ট,ক্লোজ লুপ প্রোডাকশন,রিনিউবল এনার্জী,লোকাল লিভিং ইকোনমি। যা ইতোমধ্যে ঘটতে শুরু করেছে। অনেকেই বলছেন, এটি অবাস্তব। যদি এ প্রক্রিয়ায় আমরা চলতে পারি তাহলে কেন সম্ভব নয়।

এটা কোন মধ্যাকর্ষণ ব্যবস্থা নয় যা আবিস্কার করতে হবে। এ ব্যবস্থার তৈরি ও ভোগ মানুষই করবে। : সমাপ্ত : ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।