আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াতীদের মিথ্যাচারের সা¤প্রতিক নমুনা

বাংলা আমার দেশ শাহরিয়ার কবির জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে কিছু লিখলেই তারা যে প্রবলভাবে আবোল তাবোল প্রলাপ বকে দীর্ঘদিন ধরে আমরা তা প্রত্যক্ষ করছি। স¤প্রতি সিলেটে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলায় জামায়াত যারপরনাই ক্ষিপ্ত হয়েছে। এ বিষয়ে জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছেন, মুজাহিদও বিবৃতি দিয়েছেন। নিজের সততার প্রমাণ হিসেবে মুজাহিদ তাদের জমানার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সাক্ষী মেনেছেন নাকি তারাই বলতে পারবেন মুজাহিদরা কী পরিমাণ ‘সৎ’ ছিলেন! জোট সরকারের আমলে প্রশাসনের জোটীয়করণ ও জামায়াতীকরণ কতদূর হয়েছে এ বিষয়ে রাম-শ্যাম-যদু-মধু সবাই জানে। সেই আমলের ডিসি/এসপিদের সাক্ষী মেনে মুজাহিদ আমাদের পুরোনো বাংলা প্রবাদ মনে করিয়ে দিয়েছেন ‘শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল!’ জামায়াতের ‘সততা’র নমুনা আমরা এই দলটির জন্মকাল থেকে দেখছি।

হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, মিথ্যাচার সব কিছু কীভাবে ইসলামের নামে জায়েজ করা যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস কীভাবে জামায়াতের ইসলামীর সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে হালে তার প্রমাণ পাচ্ছি জঙ্গী মৌলবাদীদের বোমা হামলার প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের বিবৃতির মাধ্যমে। ৫ মে তরিকত ফেডারেশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে ‘সরকার ও প্রশাসন জঙ্গী নির্মূল করতে চাইছে অথচ জামায়াতকে রাখছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এটা কি করে সম্ভব? জামায়াত ও জঙ্গীতো একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। যার নাম জঙ্গী তার নামই জামায়াত।

... জঙ্গী তৎপরতার সাথে ইসলামকে জড়িয়ে কোন লাভ নেই। কারণ ইসলামের সাথে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। জঙ্গীবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট ওহাবী ও মওদুদীবাদী জামায়াত ও আহলে হাদিস স¤প্রদায়ের সাথে সত্যিকারের ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। ওরা যে ইসলামের কথা বলে তা এজিদ ও আব্দুল ওহাব নজদীর এবং মওদুদীর ইসলাম। ...’ (ইনকিলাব, ৫ মে ২০০৭) গত ৩ মে জনকণ্ঠে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জঙ্গীদমন অভিযান’ শিরোনামে আমার একটি লেখা ছাপা হয়েছে।

এতে ইসলামী জঙ্গী মৌলবাদীদের আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জামায়াতিদের ইসলামী ব্যাংক-এর সম্পৃক্তির কথা লিখেছিলাম, যার জন্য গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের শাস্তিও দিয়েছিল। আমার এই লেখার প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী ব্যাংক। ৫ মে জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবাদপত্রে তারা বলেছে, ‘গত বছর সন্দেহজনক লেনদেন সংক্রান্ত প্রতিবেদন (এসটিআর) দাখিলের বিষয় নিয়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাথে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল এবং আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংকের নিকট ব্যাখ্যা চেয়েছিল। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অভিভাবক হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায়ই এ রকম বিভিন্ন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু লেখক অন্য কোন ব্যাংকের নাম উল্লেখ না করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শুধু ইসলামী ব্যাংকের নামই উল্লেখ করেছেন।

‘এ প্রসঙ্গে আমরা সুস্পষ্টভাবে জানাতে চাই যে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড কোন ধরনের জঙ্গী তৎপরতাকে সমর্থন করে না; এ ধরনের তৎপরতার সাথে এ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট হওয়ার বা জঙ্গী অর্থ লেনদেন করার কিংবা তাদের যোগানদানকারী হিসাবে কাজ করার প্রশ্নই ওঠে না। ...’ বাংলাদেশ ব্যাংক মানি লন্ডারিং-এর জন্য যাদের জরিমানা করেছিল তাদের ভেতর জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের দ্বারা পরিচালিত ইসলামী ব্যাংক-এর সঙ্গে জঙ্গী মৌলবাদীদের সম্পর্কের বিষয়ে আমরা বিলক্ষণ অবগত আছি। অন্য ব্যাংকের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও জঙ্গীদের আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে এই মুহূর্তে কোন তথ্য আমার কাছে না থাকার কারণে তাদের সম্পর্কে লিখতে পারিনি। এর ভেতর অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই। ইসলামী ব্যাংক-এর কোন কোন শাখায় কোন কোন জঙ্গী মৌলবাদী ব্যক্তি ও সংগঠনের হিসাব আছে গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করলেই তা জানতে পারবে।

আমি এ ক্ষেত্রে এখনকার মতো একটি প্রমাণ উপস্থাপন করতে চাই। বাংলাদেশে হরকতুল জেহাদ একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন, যার নেটওয়ার্ক বার্মা, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়াসহ বহু দেশে বিস্তৃত। বাংলাদেশে জঙ্গী মৌলবাদের আগমণ ঘটেছে হরকতুল জেহাদের মাধ্যমে। হরকতুল জেহাদের আরাকান শাখার একটি প্রকাশনা আমার সংগ্রহে আছে। উর্দু ভাষায় লিখিত গ্রন্থটির নাম ‘তাযকারায়ে আরাকান’, লেখক হরকতুল জেহাদ আল ইসলামীর আরাকানের আন্তর্জাতিক প্রচার সম্পাদক হযরত মওলানা হাফেজ মোহাম্মদ সিদ্দিক আরাকানী বিন মওলানা হাসান আলী।

করাচীর জামিয়া দারুল উলুম কৌরাঙ্গী থেকে দাওরা হাদিস সনদপ্রাপ্ত এই মওলানা আলোচ্য গ্রন্থে আরাকানে জেহাদী কার্যক্রম এবং বাংলাদেশে তাদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন। গ্রন্থটির প্রকাশক হরকতুল জেহাদ আল ইসলামী বার্মা। প্রকাশকাল জুলাই ১৯৯৭। ‘তাযকারায়ে আরাকান’-এর শেষে হরকতুল জেহাদের একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়েছে। এতে জেহাদের জন্য আল্লাহ, কোরাণ ও হাদিসের দোহাই দিয়ে অর্থ সাহায্য চাওয়া হয়েছে।

শুধু ব্যক্তি বা সংগঠন নয়, সংগঠনের মুখপত্র মাসিক ‘আল রাবাত’-এর জন্যও অনুদান চাওয়া হয়েছে। এই বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে উর্দু ও ইংরেজিতে একটি নাম ও ব্যাংক হিসেবে-এর নম্বর ও ঠিকানা দেয়া হয়েছে যেখানে জেহাদের জন্য অর্থ পাঠাতে হবে। হিসাবটি হচ্ছে হরকতুল জেহাদ আল ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আমীর আফগানফেরত জেহাদী আবদুল কুদ্দুস মুজাহিদের নামে। এ্যাকাউন্ট নম্বর ও ঠিকানা হচ্ছে অ/ঈ ঘড়. ২৮৫৩৫, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ, ৭৫ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০। নিচে ডাক যোগাযোগের ঠিকানাও রয়েছে।

বাংলাদেশের ঠিকানা ঃ পোস্ট বক্স-২১, কক্সবাজার এবং পাকিস্তানের ঠিকানা ঃ ইসলাম মেডিকেল সেন্টার, ৩৬ ঝিলান্ডি, করাচী-৩০। হরকতুল জেহাদের যে মুখপত্রের জন্য অনুদান চাওয়া হয়েছে তার কয়েকটি পুরোনো কপি আমার সংগ্রহে রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকওয়ালারা কি এরপর বলবেন তাঁরা হরকতুল জেহাদ বা আবদুল কুদ্দুসের নাম শোনেননি কিংবা উক্ত নম্বর ও ঠিকানায় তাদের কোন হিসাব নেই! বলতেই পারেন, যেভাবে জামায়াতের নেতারা বলেন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী ছিলেন না, কিংবা রাজাকার, আলবদর, আলশামস প্রভৃতি ঘাতক বাহিনী তারা গঠন করেননি কিংবা ’৭১-এ বিজয়ের প্রাক্কালে বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের তারা নয় আওয়ামী লীগ হত্যা করেছিল! যে কথা আগেও বলেছি, আবারও বলছি, বর্তমান সরকার যদি জঙ্গীদমন কার্যক্রমে সাফল্য অর্জন করতে চায় তাহলে যারা জঙ্গীদের আর্থিক লেনদেন কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে এবং যারা তাদের হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আদর্শিক প্রণোদনা সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ১ মে তিনটি প্রধান রেলস্টেশনে ‘জাদিদ আল কায়দা’র বোমা হামলা এবং এনজিও ও কাদিয়ানিদের প্রতি হুমকি নতুন কোন ঘটনা নয়। জামায়াত ও তাদের সহযোগীরা এনজিও ও আহমদীয়া মুসলিম স¤প্রদায়ের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছে এক যুগ আগে।

তারই ধারাবাহিকতায় গত ১২ বছরে আহমদীয়া মুসলিম জামাত ও এনজিওদের উপর উপর্যুপরি হামলা হয়েছে, বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, দফতর, মসজিদ, ঘরবাড়ি ভাঙা হয়েছে কিংবা বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জঙ্গীদের গডফাদারদের বহাল তবিয়তে রেখে জঙ্গীদমন অভিযান সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষায় ‘বন্ধাগমণের মতো নিষ্ফল’ হতে বাধ্য। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।