‘শেয়ারবাজার এই সপ্তাহ থেকে ঠিক হয়ে যাবে এবং আগামীকাল আশা করা যায় ইনডেক্স আপ থাকবে এবং টানা কিছু দিন ভালো থাকবে আশা করি। শেয়ারবাজারের জন্য খুব ভালো ভালো নিউজ আসবে এই আগামী সাত দিনের মধ্যে এবং নতুন শেয়ারের জন্য খুব বিশেষ খবর আসছে, যেগুলো এখনো ডিভিডেন্ড দেওয়া হয় নাই। ’ গত ৭ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে একটি গ্রুপের পোস্টে এ কথা বলা হয়।
ওই গ্রুপে আরেকটি পোস্টে বলা হয়, ‘...সবাই আমাদের সঙ্গে থাকুন, যদি আপনাদের ইউনাইটেড এয়ার-ইউনিক হোটেল এবং বেক্সিমকো থেকে থাকে, তাহলে দাম এখনই এভারেজ করে নিন, খুব ভালো ইপিএস আসবে নিউজ সত্য এবং কোম্পানি তিনটা তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এত ভালো ডিভিডেন্ড এই প্রথম দিবে সত্য নিউজ পেলাম আজ। ’
গত ৩ মে আরেকটি গ্রুপের পোস্টে বলা হয়, ‘বঙ্গজ খুব শিগগির ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা হবে।
বঙ্গজ ছাড়া কোনো কথা নেই। ’
এভাবেই শেয়ারবাজার নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হচ্ছে ফেসবুক ও মুঠোফোনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে। বাজার যখনই কিছুটা ইতিবাচক ধারায় যায়, তখনই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এসব সংঘবদ্ধ চক্র। তারা বিভিন্নভাবে গুজব ছড়িয়ে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে। আর দ্রুত মুনাফা লাভের আশায় অনেক বিনিয়োগকারী গুজবের পেছনে ছোটেন।
এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁরা। সাম্প্রতিক বাজার-পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এমনটিই মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
এক ব্রোকারেজ হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘শেয়ার কেনার আগে বিনিয়োগকারীরা খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন দাম কতদূর পর্যন্ত যাবে। তারপর তাঁরা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। কোম্পানি সম্পর্কে না জেনে এভাবে অন্যের কাছে শুনে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া ব্যক্তিরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।
’ বিনিয়োগকারীদের এসব কর্মকাণ্ড থেকে অবশ্যই দূরে থাকার পরামর্শ দেন ওই কর্মকর্তা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদের ঊর্ধ্বতন এক সদস্য বলেন, ‘বর্তমানে বাজার পুরোটাই গুজবনির্ভর হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ’
ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, গত মে মাসের শুরুতে বঙ্গজের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩০০ টাকা। গত ১৬ জুলাই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৭৯৯ টাকা ৭০ পয়সায় ওঠে।
সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার প্রতিটি শেয়ার ৫০৮ টাকায় লেনদেন হয়। কেবল বঙ্গজ নয়, একই অবস্থা লক্ষ করা যায় সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি লিমিটেড, জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেস লিমিটেড, বিএসসিসিএল, বিএসসি এবং জ্বালানি ও বিদ্যুত্ খাতের কয়েকটি কোম্পানিসহ নির্দিষ্ট বেশ কয়েকটি কোম্পানিতে।
কোনো প্রকার করপোরেট ঘোষণা ছাড়াই কেবল গুজবের ওপর ভিত্তি করে সম্প্রতি এসব কোম্পানির দাম কয়েকগুণ বেড়েছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, ওই সব কোম্পানির দাম অতি মূল্যায়িত হয়ে এমন একটা পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে বিনিয়োগকারীরা তার ওপর যেতে চাইছেন না। আর তাই ওই সব কোম্পানির শেয়ারে দরপতনের ঘটনা ঘটছে, যা গোটা বাজারে প্রভাব ফেলছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মোহাম্মাদ এ হাফিজ প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা খুব বেশি গুজবের পেছনে দৌড়ান। একটা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির দাম পড়ে গেলে তাঁরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই গুজবের পেছনে দৌড়ানো আমাদের বন্ধ করতে হবে। ’
এ বিষয়ে শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম দুর্বল হওয়ায় গুজব ছড়িয়ে নির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক শেয়ারের দাম বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। এর ফলে ওই সব কোম্পানিতে তারল্য অনেক বেশি চলে যাওয়ায় দাম অনেক বেড়ে গেছে।
এসব গুজবের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ’
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, গুজব থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বিনিয়োগকারীদের সচেতন ও শিক্ষিত হতে হবে। অন্যথায় এটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়।
সাইফুর রহমান আরও বলেন, ‘গুজবে কান না দেওয়ার জন্য আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছি। বিএসইসি ও দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটেও গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
’ এ ছাড়া ডিএসই ও সিএসইর ওয়েবসাইটেও গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে প্রতিদিন সংবাদ পরিবেশনও করা হয় বলে জানান তিনি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।