মেহেদী হাসান
আওয়ামী লীগ সরকারের বাকি আড়াই বছরে যেকোনো রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় পাশে থাকবে জাতীয় পার্টি। বিএনপি সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে বা আগামী নির্বাচন বর্জন করলে জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে বেরিয়ে এককভাবে নির্বাচন করবে। দুই দলেরই শীর্ষস্থানীয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, সপ্তাহ খানেক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সংসদ ভবনে একান্ত বৈঠক করেছেন। এক ঘণ্টার বৈঠকে আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি, পরবর্তী সম্ভাব্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা হয়।
এ সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল ও নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে দুই নেতা নীতিগতভাবে একমত হন।
সূত্র জানায়, উভয় নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর সম্ভাব্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ স্বীকৃত গণতান্ত্রিক পন্থা হিসেবে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার পক্ষে মত দেন। সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল এনে দ্রুত পাস করার কথাও হয় তাঁদের মধ্যে। বিএনপি নির্বাচনে না এলে করণীয় সম্পর্কে তাঁরা কথা বলেন।
ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে। দলের চেয়ারম্যান এরশাদ এ ব্যাপারে শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছেন।
যোগাযোগ করা হলে এইচ এম এরশাদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক সরকারের অধীনেই আমরা নির্বাচন করব। অন্য কেউ নির্বাচনে না এলে আমরা এককভাবেই অংশ নেব। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নেই।
তাহলে আমরা কি চাঁদে বাস করছি?’
জাতীয় পার্টি ক্ষমতাসীন মহাজোটের অংশীদার হলেও বছর দেড়েক ধরে এইচ এম এরশাদ সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছেন। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা-পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তিনি ছিলেন সমালোচনামূখর। এমনকি তাঁর ছোট ভাই বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদেরের মন্ত্রণালয়ে কোনো ক্ষমতা নেই বলেও প্রকাশ্যে মন্তব্য করেন তিনি।
এ পরিস্থিতিতে গত এক মাসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এরশাদের দুই দফা বৈঠক হয়। এ বৈঠকের পর থেকে তাঁর মুখ থেকে সরকারের সমালোচনা শোনা যায়নি।
শেখ হাসিনা ও এরশাদের মধ্যে বৈঠকের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধান সংশোধনী বিল জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। সংসদে গত শনিবার বাজেট আলোচনায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, বিরোধী দল বিএনপি সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে উপনির্বাচন দিয়ে এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা করা হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, আগামী সপ্তাহেই সংবিধান সংশোধনী বিল জাতীয় সংসদে পাস হতে পারে। তবে সরকার মনে করে, আদালতের রায় অনুসারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হলেও আলোচনার দরজা খোলা থাকবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সংবিধান সংশোধনী বিল পাস হবে।
তবে আলোচনার পথ খোলা থাকবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হলেও নানা ফর্মুলায় অন্তর্বর্তী সরকার করা যাবে। বিএনপির সদিচ্ছা থাকলে ফর্মুলা দিতে পারে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা জানান, আলোচনার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হলেও বিরোধী দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় নানা কৌশল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিরোধী দলের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণার কারণে সরকারি দলকে বিকল্প চিন্তাভাবনা করতে হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে ১৪ দলের ভূমিকা কী হবে জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাংসদ রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘এখনই বলাটা বেশি আগাম হয়ে যায়। তবে আমরা ১৪ দলে ছিলাম এবং আছি। ’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এখনই সব কথা বলছি না। আলোচনা হবেই। ’ তা ছাড়া তিনি আলোচনার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিরোধী দলের অপেক্ষায় থাকবেন বলে জানান।
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হলেও নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ থাকবে। আর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাইলে বিএনপিকে আলোচনায় আসতেই হবে। কারণ গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র উপায় নির্বাচন। সুতরাং বিএনপি নির্বাচন বর্জন করবে—এটা মনে করার কারণ নেই। তাঁদের মতে, ১৯৮৬ সালের নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও সে পরিস্থিতি এখন নেই।
তখন ছিল সামরিক সরকার। এখন নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের অধীনে আইন ও সংবিধান অনুসরণ করে সরকার পরিচালিত হচ্ছে। এ জন্য অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন নিয়োগ এবং একে আর্থিকভাবে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার পক্ষে সরকারদলীয় নেতারা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।