আধুনিক সভ্যতার পুঁজীবাদের অভিশাপের আরেকটি দিক হল দেশের সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে যায একটি বিশেষ গোষ্টির কবলে এবং তারাই বড় বড় শিল্প কারখানার ও বহজাতিক কোম্পানির মলিক হওয়ায় এক পর্য়ায়ে দেশের প্রশাসন, মিডিয়া সহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি প্রতিষ্ঠান চলে যায় তাদের দখলে। বাংলাদেশেও পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকায় এক বিরাট পুঁজীপতিকে "দরবেশ বাবাজি" বলে সবাই জানে যার সান্নিদ্ধে গেলে রাতারাতি আলাদ্দিনের প্রদীপ চলে আসে হাতে। সাম্প্রতিক শেয়ার বাজারের কেলেঙ্কারিতে দরবেশ বাবাজির হাত আছে শুনা যায় তাই খবরে প্রকাশ: পুঁজিবাজারের অস্থিরতার পিছনে দায়ী ব্যক্তিদের সনাক্ত করা গেলেও তাদের নাম প্রকাশ করা হবে না - অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত
বিগত কয়েক দশকে আধুনিক সভ্যতার বিশ্ব বাজার ব্যবস্থায় যে-সব পরিবর্তন হয়েছে তার মাঝে অন্যতম পরিবর্তন হল মানুষের খাদ্য শিল্প ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনায়। পত্র-পত্রিকা, টিভি, রেডিও ইত্যাদি যে কোন মিডিয়াতে একটু খেয়াল করলে দেখতে পাবেন প্রতিদিন শত শত অকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের মধ্যামে কোন না কোন কোম্পানির তৈরী খাদ্য গ্রহণে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে।
দিন রাত এসব বিজ্ঞাপনের মধ্যামে তাদের জিনিষ খাওয়ার জন্য দর্শকদেরকে বলা হচ্ছে। আসল খবর হচ্ছে এদের প্রস্তুতকৃত এই সব খাদ্যদ্রব্য যা কিনা প্রসেস ফুড তার সবিকছু কিন্তু অপনার আমার স্বাস্থ্য সম্মত নয়।
প্রশ্ন হচ্ছে বহুজাতিক বড় বড় কোম্পানির প্রস্ততকৃত এই সব খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত ও বাজারজাত করার পিছনে সে সব কোম্পানি আপনার আমার স্বাস্থ্যের প্রতি না তাদের মুনাফা লাভের প্রতি বেশী খেয়াল করে? সিগারেট কোম্পানিকে মানুষের স্বাস্থ্যের কল্যানের পক্ষে শুভাকাংঙ্কী ভাবা যেমন বোকামী ঠিক সেভাবে খাদ্য শিল্পে বর্তমান বহূজাতিক কোম্পনিদের কাজকর্মকে মানুষের স্বাস্থ্যের কল্যানী ভাবা হবে মারাত্মক ভুল।
প্রসেস ফুডের কূফল:
আমেরিকার হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায় সে দেশের জনসংখ্যার ৭% মানুষ প্রতিদিন ম্যাকডনাল্ডসে খেতে যায় এবং ২০-২৫% লোক দিনে কোন না কোন জাতীয় ফাস্ট ফুড খায় আর ৪ থেকে ১৯ বছর বয়সের ছেলেমেয়েরা দিনে অন্তত একবার হলেও ফাস্ট ফুড খায়। এটা কিন্তু হচ্ছে মূল সমস্যার কেবল সামান্য একটি দিক।
ফ্যাক্টরিতে প্রস্তুতকৃত প্রসেস ফুড শুধুমাত্র রেস্টুরেন্ট ছাড়াও স্থানীয় মুদির দোকান তথা গ্রসারী স্টোর থেকেও মানুষ ক্রয় করে। আমেরিকানরা এখন তাদের খাদ্যের বাজেটের ৯০% শতাংশ ফ্যাক্টরির প্রস্তুতকৃত খাদ্য তথা প্রসেস ফুডের জন্য খরচ করে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার লুডউইক ও তাঁর সহকর্মীদের জরিপে দেখা যায় যে সব ছেলেমেয়রো রেস্টুরেন্টে খায় তারা প্রতিদিন দেহে ক্যালরি বৃদ্ধি করে ১২৬ সংখ্যক বেশী তাদের তুলনায় যারা রেস্তোরায় খাওয়া দাওয়া করে না। আর জাতিসঙ্ঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে প্রসেস ফুড খাওয়ার ফলে বিশ্বে বর্তমানে মানব দেহে ওবিসিটি বা অতিরিক্ত মোটা হওয়ার রোগের প্রবণতা বাড়ছে। অবশ্য খাদ্য প্রস্তুতকারি বহুজাতিক কোম্পানির মালিকেরা এ জন্য মানুষের ব্যক্তিগত খাদ্য অভ্যাস ও স্বাস্থ্য সচেতনার আভাবকে দায়ী করেন কেননা তাহলে তারা তাদের প্রস্তুতকৃত হাই ক্যলরীর পানীয় ও অতিরিক্ত ফ্যাট/চর্বী মিশ্রিত নিম্নমানের খাদ্য দ্রব্যের বাজারজাত করণের অপরাধের জবাবদিহি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
“আসল কথা হল, প্রসেস ফুড সহজলোভ্য করে মানুষকে স্বাস্থ্য-উপযোগী ভাল খাবার খাওয়া থেকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে এবং এক বিষাক্ত খাদ্য পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে” বলে মন্তব্য করেন প্রফেসার ডেভিড লুডউইড। গত ৫০ বছরে খাদ্য বাজার ও খাদ্য শিল্পে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার প্রভাবে মুনাফাখোর বহুজাতিক কোম্পানির প্রস্তুতকৃত প্রসেস ফুড খাওযার ফলে মানব দেহে ডাইবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ সহ অন্যান্য রোগ যে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা এখন সবাই জানেন। ফুড কোম্পানির প্রস্তুতকৃত এসব অধিকাংশ প্রসেস ফুডে ট্রেন্সফ্যট (TFA) জাতীয় মারাত্মক চর্বী সংমিশ্রিত উপাদান থাকে। অমেরিকান হার্ট ফাউন্ডেশনের মতে ট্র্যন্সফ্যট (TFA) মানব দেহের রক্তে ক্ষতিকর কলস্ট্রেল (LDL) বৃদ্ধি করে এবং ভাল কলস্ট্রেল (HDL) কমিয়ে ফেলে যা হার্ট এটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
আমেরিকান খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন FDA দপ্তরে ৩০০ হাজার রাসায়নিক খাদ্য উপাদানের এক তালিকা আছে যা খাদ্যের রং, কৃত্রিম স্বাদ, মিষ্টি, ঘনত্ব, গন্ধ ও মেয়াদ বৃদ্ধি ও প্রিজারভেটিব ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
তবে সবচেয়ে আতংকের ব্যপার হল সে সব উপাদানের মাঝে অনেক কিছুই সঠিক পরীক্ষা ছাড়াই বজারে চলছে যদি এগুলা GRAS (Generally Recognized As Safe) তালিকায় খাকে। আসলে ফুড ইন্ডাষ্ট্রি যেন ইচ্ছাকৃতভাবে এমন এক ধরণের গোপনীয়তা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে যে সাধারণ ভোক্তা ও ফ্যাক্টরীর কার্যকলাপের মাঝে তথ্য আড়াল করতে সক্ষম হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রখ্যাত ফুড ইন্ক ডকুমেন্টারী পরিচালক। আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত বহজাতিক ফুড কোম্পানিরা এত শক্তিশালী যে তাদের কার্যকলাপের বিপক্ষে কথা বলার সাহস প্রশাসনের নাই কেননা রাজনীতিবিদ, মিডিয়া তাদের পকেটে এবং এদের প্রভাব পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও বিস্তার লাভ করছে দ্রুত গতীতে।
নিম্নের ভিডিও ক্লিপগুলা যদি সময় করে দেখতে পারেন তখন সম্পূর্ণ ব্যপারটা অরো পরিস্কার হবে। কী করতে পারবেন জানিনা তবে জানা দরকার নিজের স্বাস্থ্যের স্বার্থে।
Click This Link
৪৫ দিনে মুরগী কি ভাবে বড় করা হয় দেখেন? এসব কি সত্যিই মুরগী? Click This Link
http://www.youtube.com/watch?v=LFM2IXtl3bE
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।