আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাদকে ছেয়ে গেছে সারা দেশ.............

গুলশানের এক রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী মাসুদ (ছদ্মনাম)। নেশার পেছনে তিনি প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ব্যয় করেন। মাদকসেবীদের কাছে হালে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ইয়াবায় আসক্ত তিনি। শরীরের 'আলসেমি' কাটাতে তিনি ইয়াবা সেবন করেন বলে জানান তরুণ এই ব্যবসায়ী। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমিন।

ফেনসিডিলে তার আসক্তি ছিল। কিন্তু বন্ধু বান্ধবদের পরামর্শে তিনি ইয়াবা সেবন করতে শুরু করেন। এখন এটা ছাড়তে পারছেন বলে এ প্রতিনিধিকে জানান। সারাদিন কাগজ কুড়িয়ে রাতে কারওয়ানবাজার এলাকায় ঘুমায় ১২ বছরের আলেক। কাগজ বিক্রির টাকা দিয়ে খাবার কেনার পাশাপাশি নিয়মিত মাদক কেনে সে।

মাদক কেনার জন্য মাঝে মধ্যে অপরাধেও জড়িয়ে পড়ে। অলোক জানায়, নেশা করলে ঝিমঝিম লাগে। মনে আনন্দও হয়। এদের মতোই বিভিন্ন শ্রেণীর বিভিন্ন পেশার লাখো মানুষ সারা দেশে ভয়াল মাদকের জালে আটকা পড়ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাকড়সার জালের মতোই সারা দেশে মাদকের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত।

শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামেও পাওয়া যাচ্ছে মরণনেশা। আর এসব মাদক আসছে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমারের বিস্তৃত সীমান্ত দিয়ে। বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের সর্বশেষ একটি জরিপে ভয়ানক কিছু তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে কমপক্ষে ৬৫ লাখ মানুষ সরাসরি মাদকাসক্ত। এদের মধ্যে ৮৭ ভাগ পুরুষ, ১৩ ভাগ নারী এবং শিশু-কিশোর।

আর এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এক লাখেরও বেশি মানুষ। এদের মধ্যে প্রভাবশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী এবং শিশু-কিশোররাও জড়িত। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এসব মাদকসেবী বছরে অন্তত ১২ হাজার কোটি টাকা মাদকের পেছনে খরচ করছে। ৬০ শতাংশ মাদকাসক্ত মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৫০ লাখ বলে স্বীকার করা হয়েছে।

আসক্তদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ। বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের (ইউসএ) তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি মাদকাসক্ত হয় বন্ধু-বান্ধবের প্রভাবে। এদের সংখ্যা শতকরা ৩০ দশমিক ৬৩ ভাগ। পারিবারিক সমস্যার কারণে মাদকাসক্ত হওয়ার সংখ্যাও কম নয়। বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি সূত্র জানায়, বিস্তীর্ণ সীমান্তের ৫১২টি পয়েন্টকে মাদক আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহার করে চোরাচালানীরা।

এসব পয়েন্টে বিজিবি এর বিশেষ নজরদারি থাকা সত্ত্বেও চোখ ফাঁকি দিয়ে হেরোইন, আফিম, প্যাথেড্রিন, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক আনছে। মাদক সংক্রান্ত মামলার চিত্র সারা দেশে বর্তমানে মাদক সংক্রান্ত প্রায় ৩০ হাজার মামলা ঝুলে আছে। র‌্যাব ও পুলিশের হাতে তদন্তাধীন মামলার সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি। এরমধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হাতে তদন্তাধীন মামলা রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। মামলা হলেও সাক্ষী-প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে অভিযুক্তরা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্র জানায়, রাজধানীতে মাদক ব্যবসার 'বাজার' নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এমন ১১৬ জন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর তালিকা করা হয়েছে। বিভিন্ন থানা এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে এই তালিকা করা হয়েছে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, মাদকের পাচার ও ব্যবহার রোধে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন তারা। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল না থাকা ও আইনি দুর্বলতার কারণে তারা বেশি দূর এগুতে পারছেন না। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।