আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবুময় চারপাশ

:-) গত একমাস শিশুদের ওয়ার্ডে আমাদের ক্লাস চলল। এত মজা লেগেছে বলার মত না। বাচ্চা কাচ্চা,পিচ্চি পাচ্চা আমার বরাবর-ই প্রিয়। এত্ত এত্ত বাবু একসাথে ওয়ার্ডে দেখে তো আমি আনন্দে আত্মহারা। বিভিন্ন ধরনের বাবুদেরকে নিয়ে একটা পোষ্ট লিখে ফেললাম।

জানিনা কেমন হল। রাগী বাবু এই বাবুরা খুব-ই গম্ভীর আর রাগী রাগী হয়। বাবুদেরকে আদর করতে গেলে তারা মোটেই পছন্দ করেনা। বিশেষত উতুপুতু,ওলে বাবুসোনা বলে গাল টিপে আদর করা তাদের মোটেই পছন্দ না। রাগী বাবুরা দেখতে খুব-ই কিউট হয়।

(অবশ্য সব বাবু-ই কিউট) তারা একা একা থাকতে পছন্দ করে। আম্মু ছাড়া আশেপাশে অন্য কাউকে তাদের পছন্দ না। রাগী বাবুরা আধো আধো বোলে আম্মুকে বকা দেয়। মাঝে মাঝে খুব রাগ করে আম্মুকে কামড় ও দিতে পারে। ওয়ার্ডে একটা রাগী বাবুকে আমি একটু গাল টিপে আদর করেছিলাম।

বাবুর সেটা মোটেই পছন্দ হয়নি। মুখ দিয়ে “চাঁইইই” করে বিরক্তি প্রকাশক একটা শব্দ করে আমাকে কষে একটা মাইর দিয়েছিল বাবুটা। রাগী বাবুদের চুল খাড়া খাড়া হয়। আমার ভাই ছোটকালে রাগী বাবু ছিল। কান্না বাবু কান্না বাবুরা সারাদিন কান্নাকাটি করতে ভালবাসে।

কান্না করেই তারা সব কিছু পেতে চায়। কান্না বাবুরা বেশ জেদী হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের পছন্দের জিনিস দেওয়া না হয়,তারা “চ্যাঁআআআআআমুউউউইউইউইইইই” করে কাঁদতে থাকে। এই ধরনের বাবুরা প্রচুর মারধোর খায় বাবা-মা’র কাছ থেকে। কারণ সারাদিন কান্নাকাটি করে তারা বাবা-মা’র বিরক্তির উদ্রেক করে।

কান্না বাবুরা কাঁদার সময় ঠোঁট উল্টে কান্না করে। কান্না বাবুরা কিছুটা আহ্লাদী হয় এবং কোলে ঊঠতে পছন্দ করে। কান্না বাবুদের কান্নাকাটি দেখে কেউ হাসাহাসি করলে কান্না বাবুদের কান্নাকাটি সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়। শান্ত-শিষ্ট বাবু/গোবেচারা বাবু শান্ত-শিষ্ট বাবুরা খুব-ই সুইট হয়। কোন কিছু নিয়েই তাদের কোন কমপ্লেইন থাকেনা।

তাদেরকে যে জায়গাতে বসিয়ে বা শুইয়ে রাখা হয়,তারা সে জায়গাতেই চুপচাপ বসে বা শুয়ে থাকে। তাদের হাতে ফিডার ধরিয়ে দিলে ফিডার খাওয়া শেষ হয়ে গেলেও তারা ফিডার ধরে চুষতে থাকে। শান্ত শিষ্ট বাবুরা কান্নাকাটিও কম করে। হিসু করে দিলে অন্য বাবুদের মত এই বাবুরা চিৎকার করে কান্নাকাটি করেনা,বরং চুপ করে প্যাম্পার খোলার চেষ্টা করে। এই বাবুরা একটু গোল-গাল বা মোটাসোটা থাকে।

শান্ত-শিষ্ট বাবুরা খুব আদর প্রিয় হয়। শান্ত বাবুরা ঘুমাতে খুব পছন্দ করে। দিনের বেশিরভাগ সময় বুড়ো আঙ্গুল মুখে দিয়ে তাদের ঘুমাতে দেখা যায়। আম্মুর কাছে শোনা—আমি নাকি ছোটকালে শান্ত শিষ্ট বাবু ছিলাম। হাসি-হাসি বাবু হাসি-হাসি বাবুদেরকে দেখলেই মন খুশি হয়ে যায়।

হাসি-হাসি বাবুরা যাকে দেখে তার দিকে তাকিয়েই হাসে এবং কোলে উঠার জন্য হাত বাড়ায়। হাসি বাবুদেরকে “গুলু পুচু ভুটু কুটু উবু উবু” টাইপ শব্দ করে আদর করলে তারা খুব খুশি হয়। তখন তারা কট কট করে হাসে। বেশিরভাগ হাসি-হাসি বাবুদেরকে পেট নেড়ে আদর করলে তারা আনন্দ পায়। কারো ঘাড়ে চড়া বা মাথায় উঠে চুল শক্ত করে ধরে রাখার মত ব্যাপার গুলোতে হাসি-হাসি বাবুদের বড়-ই আগ্রহ।

দুষ্টু বাবু দুষ্টু বাবুরা খুব চঞ্চল হয়। তারা বাসার কোন জিনিস ঠিকভাবে রাখেনা। দুষ্টু বাবুরা সারাক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করে। এই বাবুরা খুব কম খায়। জোর করেও এদের কিছু খাওয়ানো যায়না।

দুষ্টু বাবুরা আবার সবাইকে মারতে খুব পছন্দ করে। অনেক সময় তারা জানালা দিয়ে স্যান্ডেল,জুতা,চশমা,টিভির রিমোট এইসব ছোটখাট জিনিস বাইরে ফেলে দিয়ে খুব মজা পায়। বাইরে বেড়াতে গেলে দুষ্টু বাবুদের চঞ্চলতা দেখে তাদের বাবা-মা খুব বিব্রতবোধ করে। দুষ্টু বাবুরা কারো কোলে উঠে বেশিক্ষণ স্থির হয়ে থাকতে পারেনা। হামাগুড়ি দিতে বা টলমল করে দৌঁড়াতে তাদের ভাল লাগে।

ফাইটার বাবু এদের কাজ হল প্রতিটি কাজে ফাইট দেয়া। খাওয়া, ঘুমানো, গোসল প্রতিটি কাজ করানোর জন্য তার সাথে বাবা অথবা মাকে একটা ফাইট দিতে হয়। (আইডিয়াঃ আহমেদ সাব্বির পল্লব) সাহেব বাবু এই বাবুদের চালচলন সাহেবদের মত হয়ে থাকে। হিসুদেয়া বিছানায় ঘুমাবে না, দুধ ছাড়া সাগু বা চালের গুড়া খাবে না, মায়ের দুধ ছাড়া অন্যকারো খাবে না, সামান্য ক্ষুধা, সামান্য গরমেই কান্নাকাটি শুরু করে দিবে - খাটি লাট সাহেব। (আইডিয়াঃ রেনেঁসা) এবার কিছুটা ভিন্নধর্মী বাবুদের কথাঃ এখন যাদের কথা লিখছি তারাও বাবু।

ছোট্ট ছোট্ট নিষ্পাপ বাবু। এই বাবুগুলোরও রাগী বাবু,কান্না বাবু,গোবেচারা বাবু কিংবা হাসি-হাসি বাবু বা দুষ্টু বাবুর দলে পড়ার কথা ছিল। কিন্তু ওরা কোন দলে পড়েনা। এই বাবুদের আমরা বলি ফুটপাতের শিশু। ওরা যখন একটু বড় হ্‌য় ওদের নাম হয় “পথকলি”।

এই বাবুগুলোকে কেউ কোনদিন পেটে হাত দিয়ে আদর করেনা,কেউ মুখে ফিডার তুলে দেয়না,একটাও খেলনা তাদের হাতে থাকেনা। খেলনা তো অনেক দূরের কথা,একমুঠো খাবার ও প্রতিদিন তাদের জোটে না। এদের ছোটবেলাটা কাটে ক্ষুধার তীব্র যন্ত্রনায়। এই বাবুগুলোর ছোটবেলাটা কাটে ফুটপাতে কিংবা ওভারব্রীজের নীচে ধূলোয় লুটোপুটি খেয়ে। তবুও তারাও তো বাবু।

তাই বাবুদের নিয়ে লেখা পোষ্টে তাদের কথাও লিখলাম। আমাদের কি কখনো ইচ্ছা করেনা,এই বাবুগুলোকে একটু আদর করে দিই? একটু আদর? এটা কোন গবেষণাধর্মী পোষ্ট না। সরলতার গরু কর্তৃক নিঃসৃত জৈব সারে পরিপূর্ণ মস্তিক থেকে আগত চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ পোষ্টটি। বাবুদের নিয়ে উক্ত শ্রেনীবিভাগ ছাড়াও আরো বিভিন্ন ক্যাটাগরীর বাবু থাকতে পারে। শ্রদ্ধেয় সহব্লগারদের কাছে অনুরোধ রইল তাঁরা ছোটকালে কোন শ্রেনীর বাবু ছিলেন সেটা বলার জন্য এবং বাবুদের ব্যাপারে তাঁদের সুচিন্তিত মতামত জানিয়ে পোষ্টটিকে সমৃদ্ধ করার জন্য।

বাবু বিষয়ক কমেন্টগুলো পোষ্টে যোগ করে দেওয়া হবে। যদিও বাচ্চা ভয়ংকর কাচ্চা ভয়ংকর! তবুও জয়তু বাবু! জয়তু পিচ্চি-পাচ্চা! ------------------------------------------------------------------------------------ সহব্লগারদের মধ্যেও যে একটা শিশুসুলভ মন লুকিয়ে আছে,এই পোষ্টের কমেন্ট গুলো না পড়লে সেটা জীবনেও জানতে পারতাম না। পোষ্টটা লেখার পর এবং কমেন্টগুলো পড়ে যে নির্মল আনন্দ পেয়েছি,অন্য কোন লেখা লিখে সেই আনন্দ কখনো পাইনি। চলুন দেখে নিই সহব্লগারগণ কে কেমন বাবু ছিলেন ছোটবেলায়ঃ ১। রাগী বাবুঃ স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো..., চশমখোর, আরিশ ময়ূখ, আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় ২।

কান্না বাবুঃ সমুদ্রকন্যা ৩। শান্ত-শিষ্ট বাবু/গোবেচারা বাবুঃ সাধারণ কেউ, পাতালের মেয়ে, আকাশটালাল, স্বপ্নময়ী_আমি, ত্রিনিত্রি, সরল মানুষ,বড় বিলাই ৪। হাসি-হাসি বাবুঃ সাকিন উল আলম ইভান, ছোট ভাই, একরামুল হক শামীম ৫। দুষ্টু বাবুঃ রিফাত হোসেন, সায়েম মুন, শিমন, নষ্টছেলে, আধাঁরি অপ্সরা ৬। খাদক বাবুঃ আর.এইচ.সুমন ৭।

চিন্তাশীল বাবু/আঁতেল বাবুঃ SusthoChinta, রাষ্ট্রপ্রধান ৮। জেদী বাবুঃ লাবন্য ও মেঘমালা ৯। ত্যাঁদড় বাবুঃ কথক পলাশ, রাজসোহান ১০। কান্না বাবু + শান্ত-শিষ্ট বাবু/ গোবেচারা বাবুঃ মেঘ_মেঘা ১১। কটকটি বাবুঃ মাহী ফ্লোরা ১২।

হাবা বাবুঃ জেরী ১৩। ন্যাংটা বাবুঃ বৃষ্টি ভেজা সকাল১১ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.