আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুড়িগঙ্গাতে আবার শুশুক ফিরে আসবে {} -ড. আইনুন নিশাত, উপাচার্য, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

সাইফ শাহজাহান সাক্ষাতকার গ্রহণ : শুচি সৈয়দ প্রশ্ন : বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয় কেন? ড. আইনুন নিশাত : আপনাদের প্রশ্ন হচ্ছে বাংলদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয় কেন? এটা কি নদীর সংখ্যা অনেক, এটা কি নদ-নদী জালের মতো বিছিয়ে আছেÑ তাহলে তো এটা নদীমাতৃক না বলে বলা হতো নদী কর্তৃক বন্দি দেশ। মাতৃ কাকে বলে? যে জš§ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের জš§ তো নদীর মাধ্যমে। কী করে? উত্তরটা হচ্ছে একটা নদী শুধু পানি প্রবাহ বা পানিই ক্যারি করে না নদী পলি বহন করে। এখন এ পলি মানে হচ্ছে ইংরেজিতে সেডিমেন্ট; সেটাই হচ্ছে কারেক্ট শব্দ।

এর মধ্যে নুড়ি পাথর, মোটা বালু, চিকন বালু, পলি, কাদামাটি সব কিছুই অন্তর্ভুক্ত। যেখানে কাদামাটির পরিমাণ বেশি সেখানে নদীটা ঘোলা দেখা যায় যেখানে কাদামাটি খুব কম কিন্তু তলদেশ দিয়ে সেডিমেন্ট প্রবাহমান সেখানে পানিটাকে পরিষ্কার দেখা যায়। এখন বর্ষার সময় নদীর পানির পরিমাণ বেশি থাকে; যে কারণে সেডিমেন্টের পরিমাণ বেশি থাকে। শীতকালে নদীর পানি প্রবাহ কমে যায়, নদীর পরিবহন ক্ষমতা কমে যায় অর্থাৎ সেডিমেন্টটা জমা পড়তে থাকে মাটিতেÑ পড়লেই তখন একটা চরের উৎপত্তি হয়। আবার বর্ষাকালে এগুলো ভাঙতে থাকে কারণ তখন তার পরিবহন ক্ষমতা আবার বেড়ে যায়।

এই যে নদীর ভাঙা-গড়ার খেলা, আমরা দুই পাড়ের ভাঙা-গড়ার খেলা দেখি কিন্তু তলদেশেরও উত্থান-পতন আছে; সেখান থেকেও প্রচুর পরিমাণ মাটি তোলা হয়। এখন উজান থেকে, হিমালয় থেকে কয়েক কোটি টন পলিমাটি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বে অব বেঙ্গলে প্রবাহিত হয়। হয়তো রাফলি ধরে নেয়া যায়, তার এক তৃতীয়াংশ সমুদ্রে পৌঁছায়, দুই তৃতীয়াংশ বাংলাদেশের ওপরে জমা পড়ে অর্থাৎ কয়েক লাখ বছর ধরে হিমালয় থেকে পাথর ভেঙে নুড়ি পাথর, সেই নুড়ি পাথর ভেঙে মোটাবালি, সেই মোটাবালি ভেঙে চিকন বালি, সেই চিকন বলি ভেঙে মিহি বালি, সেই মিহি বালি ভেঙে সিল, সেটাকে ভেঙে পলি অর্থাৎ সেটাই জমা পড়ে পড়ে ধীরে ধীরে এই বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। নদী বাংলাদেশের কাছে মায়ের মতো, যে তাকে জš§ দিয়েছে। এবং এই নদী তাকে লালন-পালন করে।

প্রতি বছর বর্ষায় প্রচুর পানি আসে। তার সঙ্গে সেডিমেন্ট আসে, তার সঙ্গে পলি আসে; সেই পলিটা জমির উর্বরতা বাড়ায় এবং পানিÑ যেটা জলাভূমি ধারণ করে; সেখান থেকে প্রতিবেশের জš§ হয়। বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলার দুটি কারণÑ একটা হচ্ছে বাংলাদেশকে জš§ দিয়েছে এই নদীগুলো তার পলি বহন করে। কিন্তু এই জšে§র প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে কয়েক লাখ বছর ধরে; এটা রাতারাতি হয়নিÑ ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে এবং এর মধ্যে যেগুলো পুরনো মাটিÑ পলির বাইরে যেটা; এইযে লাল মাটি দেখছি আমরা বরেন্দ্র অঞ্চল কিংবা মধুপুর অঞ্চলÑ বাইরে পুরো বাংলাদেশটাই কিন্তু পলি দিয়েÑ সেডিমেন্ট দিয়ে গঠিত। এবং এর কারণেই আমরা একে একটা নদীমাতৃক দেশ বলছি।

প্রশ্ন : নদী ভাঙনের কারণে নদীর দেশের মানুষের যে বিড়ম্বনা তা কাটিয়ে ওঠার জন্যই কি নদী শাসনের প্রয়োজনীয়তা ? ড. আইনুন নিশাত : এরপরে একটা প্রশ্ন ওঠে যে, বাংলাদেশে তো অসংখ্য নদী কেউ বলেন তিন শ’ কেউ বলেন পাঁচ শ’ কেউ বলেন এক হাজারÑ আমার কাছে এই সংখ্যাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ নদীগুলো জালের মতো বিস্তৃত এবং নদীগুলো একটা বড় নদী থেকে শাখা নদীর উৎপত্তি হয়েছে, সেটা গিয়ে আরেকটি বড় নদীতে উপনদী হয়ে গিয়ে পড়েছে। যেমন ধরুন যমুনার থেকে ধলেশ্বরীর আটটা-নয়টা মুখ আছে এবং এই মুখগুলো যখন টাঙ্গাইলের ভেতর দিয়ে গেছে কোনও জায়গায় লৌহজং নদীÑ আপনি ওখানে গেলে কিছুদূর পর পর অনেকগুলো লৌহজং নদী পাবেনÑ আবার এই সময়ের বিবর্তনে নদীগুলোর গতিপথও বিভিন্নভাবে চিহ্নিত হয়েছে। যেমন ধরুন, ইছামতি নদী। পদ্মা থেকে উৎপত্তি হয়ে পাবনা শহরের ভেতর দিয়ে এটা যমুনাতে পড়েছে। এখন থেকে তিন শ’ বছর আগে যমুনা নদী এখানে ছিল না।

তখন এই ইছামতি নদী আরিচার কাছ দিয়ে ঝিটকা বাজার হয়ে পদ্মাতে পড়েছে। অর্থাৎ পাঁচ শ’ বছর আগে যেটা ইছামতি নদী ছিল, মধ্যখানে যমুনা এসে তাকে দ্বিখণ্ডিত করেছে। এবং এই যমুনাও বর্তমান প্রবাহে বর্তমান অবস্থাতে ছিল না; আড়াই শ’ তিন শ’ বছর আগে ভূমিকম্পের কারণে এখন যেটাকে আমরা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র বলিÑ সেটাই ছিল আদি ব্রহ্মপুত্রÑ সেটা লাফ দিয়ে উঠে ঝিনাই চ্যানেলে চলে এসেছেÑ সেখান থেকে এখন যমুনা চ্যানেলে এসেছে এবং এখন থেকে কেউ যদি ১০ লাখ বছর পরে বাংলাদেশে এসে উপস্থিত হন তাহলে হয়তো বর্তমান যমুনাকে আরও অনেক পশ্চিমে দেখতে পাবে কারণ এটা ক্রমান্বয়ে পশ্চিমের দিকে যাচ্ছে এবং এটার সোজা যে আকৃতি আছে সেটা পরিবতির্ত হয়ে বেনী আকৃতি (ব্রেইগেড রিভার) সেটা মিয়ান্ডারিং রিভারে চলে যাবে এবং এটাতে অনেক ধরনের পরিবর্তন হবে। কিন্তু ইতিমধ্যে মানুষ বেড়ে যাওয়ার কারণে। নদী যেখানে ভাঙে প্রাকৃতিকভাবে, সেই প্রাকৃতিক ভাঙনটা আমরা এলাউ করি নাÑ নদী শাসন করিÑ সে কারণে আরেকটা অন্য ধরনের অবস্থা এসেছে।

তবে গঙ্গাÑ যেটা ভারত থেকে ঢুকল আরিচা পর্যন্ত; আমি এটাকে গঙ্গা বলব যদিও সাধারণ লোক এটাকে পদ্মা বলেÑ ব্রক্ষ্মপুত্র যেটা ভারত থেকে ঢুকে আরিচার কাছে গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়েছেÑ সেটাকে আমি ব্রহ্মপুত্রই বলবÑ যদিও সাধারণ মানুষ এটাকে যমুনা বলে থাকেন এবং মেঘনাÑ যেটা ভারতের বরাক নদী, আমলসিদ নামক সিলেটের একটি জায়গাতে এসে দুই ভাগে ভাগ হয়ে সুরমা এবং কুশিয়ারাÑ আবার ভৈরবের কাছে মিলিত হয়ে মেঘনা নাম নিয়ে চাঁদপুরের কাছে গঙ্গা এবং ব্রক্ষ্মপুত্রের মিলিত স্রোত যেটাকে পদ্মা বলা হচ্ছেÑ আরিচা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত সেই পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়ে মেঘনা নাম ধারণ করে বে অব বেঙ্গল পৌঁছুচ্ছে। এখন এই তিনটা নদী আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই জন্য যে, এই নদীগুলো কয়েক হাজার মাইল উজান থেকে এসে বিস্তীর্ণ এলাকার পানি, পলি বহন করে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই তিনটা নদীকে ধরলে শুকনো মৌসুমের প্রায় ৯০ ভাগ পানি এই নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়। যে কারণে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের সঙ্গে এই তিনটা নদীর ভূমি গঠন প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন থেকে কয়েক বছর আগে এই মেঘনা বা বরাক নদী সিলেটের কাছ থেকে এসে (তখন পুরো বাংলাদেশটাই কিন্তু বঙ্গোপসাগরের অংশ ছিল) সিলেটের ওখানটায় পড়ত।

ব্রক্ষ্মপুত্রটা আসাম থেকে এসে রংপুরে পড়ত আর গঙ্গা এসে পড়ত এখন যে আরিচায় পড়ে সেখানটাতেÑ অর্থাৎ এই তিনটা নদীÑ এখন থেকে দশ লাখ বছর আগে হয়তো তিনটা আলাদা আলাদা জায়গায় এসে সাগরে পড়ত। তারপর ভূগঠন প্রক্রিয়াতে একত্রিত হতে হতে এটা এখন এক সঙ্গে হয়ে গেছে। এখন থেকে হয়তো কয়েক লাখ বছর আগে গঙ্গাটা ভাগীরথী দিয়ে চলে যেত। তার পরে কিছুটা পূবে এসে জলাঙ্গী দিয়ে চলে যাচ্ছে, তারপরে একটু পূবে এসে মাথাভাঙ্গা দিয়ে রওনা দিল, তারপরে আরেকটু পূবে এসে গড়াই দিয়ে রওনা দিল। তারপরে আবারও একটু পূবে এসে, আরও কয়েক লাখ বছর পরে সেটা চন্দন বারাশিয়া চ্যানেল দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে; যে নদীটার নাম আমরা এখন ভুলতে বসেছি।

তারপরে আড়িয়াল খাঁ, তারপরে মেঘনা। অর্থাৎ এই ভূতাত্ত্বিক গঠনের দিক থেকে কয়েক লাখ কিংবা কয়েক কোটি বছরের হিসাব করলে হয়তো এই নদীগুলোর গঠন প্রক্রিয়া পুরোপুরি বুঝতে পারব কিন্তু আধুনিক সময়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা তিন বছর, পাঁচ বছরের বেশি চিন্তা করতে পারি না। পাঁচ বছর এইজন্য বলি যে, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আমাদের পাঁচ বছর পর পর ইলেকশন হয়Ñ এ কারণে, যে ভূতাত্ত্বিক গঠনের হিসাবে নদীগুলোকে যদি আমরা রক্ষা করতে চাই, নদীগুলোকে যদি আমরা অবাধে প্রবহমান রাখতে চাইÑ এটা কোন সময় কাজ করবে না। কারণ এখন থেকে ধরুন তিনশ’ বছর আগেÑ বর্তমানে যেটা বাংলাদেশের লোকসংখ্যা ছিল দুই কোটি, এখন থেকে দেড়শ’ বছর আগে লোক ছিল তিন কোটি। এই দুই থেকে তিন কোটির মধ্যে কয়েক হাজার বছর বেঙ্গলের লোকসংখ্যা ছিল।

বাংলাদেশে যে মানুষ বসতি তিন-চার হাজার বছর আগে ছিল সেটা প্রমাণিত হয়েছে উয়ারি বটেশ্বরেই। তাহলে গত তিনশ’ বছর আগের দুই কোটি জনসংখ্যার দেশÑ সেটা এখন ষোল কোটির। নদীর পাড়ে তো কেউ বসত করত না। নদীর পাড়ে বসত না করার জন্য নদী ফ্রিলি ভাঙতে পারত। আমি যদি মুন্সীগঞ্জের কাছে মেঘনা এবং পদ্মার মিলিত স্রোতটা দেখি, সেটা তো গত একশ’ বছরে পঞ্চাশ কিলোমিটার মুভ করেছে।

এই মুভমেন্ট যেহেতু আমরা করতে দিতে চাই না সেকারণে আমরা এই নদীগুলোকে শাসনের আওতায় নিয়ে আসি। নদী রক্ষা প্রকল্প করি, কাজেই তাদের স্বাভাবিক গতিবিধি এখন নষ্ট হচ্ছে। প্রশ্ন : গঙ্গা ব্যারাজ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি? তাহলে আমরা বর্তমান সময়েÑ বাংলাদেশ যেহেতু নদীমাতৃক দেশ, এই নদীর পানি প্রবাহের ওপরই আমাদের সবকিছু নির্ভর করে, কৃষি নির্ভর করে, মৎস্য সম্পদ নির্ভর করে, নৌ চলাচল নির্ভর করেÑ এখন রাজনৈতিক কারণে সীমানা নির্ধারণের কারণে নদীগুলো তিন দেশের চার দেশের হয়ে গেছে। গঙ্গা তো গঙ্গাইÑ কিন্তু এখন গঙ্গা হয়ে গেছে ভারতের, গঙ্গা হয়ে গেছে নেপালের, গঙ্গা হয়ে গেছে বাংলাদেশের। ব্রহ্মপুত্র তো ব্রহ্মপুত্র।

কিন্তু এখন ব্রহ্মপুত্র হয়ে গেছে চীনের, ব্রহ্মপুত্র হয়ে গেছে ভুটানের, ব্রহ্মপুত্র হয়ে গেছে ভারতের। ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের কাজেই যখন আমি পানি ব্যবস্থাপনাতে যাই তখন আমাকে এই রাজনৈতিক বিষয়টাকে মনে রেখেই এগুতে হবেÑ এই কারণে আমাদের পানি বণ্টন নিয়ে যে জটিলতা, তার সৃষ্টি। গঙ্গার ক্ষেত্রে একটা পানি বণ্টন প্রক্রিয়া যে, অর্ধেক অর্ধেক পানি নেব, যে পরিমাণ পানি আসেÑ কিন্তু মনে রাখতে হবে ফারাক্কার পয়েন্টে গঙ্গার যে পানি আসে সেটা হচ্ছে তলানিÑ উজানে পানি তুলতে তুলতে যেটুকু আসে সেটাই আমরা অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে নিচ্ছি। এবং আমরা এই অবস্থাটা অন্য নদীকে হতে দিতে চাই না বলে ১৯৯৬-তে গঙ্গা চুক্তির ক্ষেত্রে বলেছিÑ বাকি সব নদী ভাগাভাগি করতে হবে। সেটার ধারাবাহিকতাতে প্রথমে তিস্তাকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে, কারণ তিস্তার উপর দুই দেশেরই অবকাঠামো আছে।

তিস্তার ক্ষেত্রে ভাগটা হতে হবেÑ দুটো ইস্যু আছে এখানেÑ বর্তমানে যেটুকু পানি পাওয়া যায় সেটা দুদেশের কারোর জন্যই পর্যাপ্ত নয়। শুকনো মৌসুমে ভারতের চাহিদা ষোল হাজার, বাংলাদেশের চাহিদা আট হাজার কিউসেক, নদীতে পানি আছে পাঁচ হাজার কিউসেক। কাজেই প্রথমে যেটা করতে হবেÑ বর্তমানে যে পানি আছে তা ভাগ করতে হবে; তারপরে পানির প্রবাহ প্রবৃদ্ধি করতে হবে। গঙ্গার ক্ষেত্রে আমি নেপালে জলাধার নির্মাণের কথা বলছি। তিস্তার ক্ষেত্রে আমি ভারতের প্রদেশ সিকিমে জলাধার নির্মাণের কথা বলছি।

তাতে কিন্তু দুই দেশের সমগ্র সমাধান সম্ভব। কারণ এই জলাধার নির্মাণ করলে আমরা একটা অবকাঠামো নির্মাণ করি ড্যাম, ড্যামের বাংলা বাঁধ নয়, বাংলা ভাষা অত্যন্ত রোমান্টিক এখানে অনুরাগ-বিরাগ আছে, যেটা ইংরেজি ভাষায় নেই; কিন্তু বাংলায় দুর্বলতা হচ্ছে এমব্যাংমেন্ট আর ড্যাম একটা আড়াআড়ি আর একটা নদীর সমান্তরাল দুটোরই বাংলা এক। কাজেই আপনাকে বলতে হবে যে, আমরা যদি ড্যাম নির্মাণ করতে পারিÑ আমরা নেপালে ড্যাম নির্মাণের প্রস্তাব করছি, যাতে গঙ্গার পানি বাড়ে। আমরা যদি ড্যাম তৈরি করতে পারি তাহলে সেখানে বর্ষার পানি ধরে রাখতে পারি। শীতকালে সেই পানি ছেড়েÑ শীতকালের পানি প্রবাহ বাড়াতে পারি।

এতে করে প্রচুর পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এবং এই পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের যে অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা তাতে কিন্তু এই পুরো প্রকল্পের যৌক্তিকতা দাঁড়িয়ে যায়। কি-ন্তু-! এতে অনেক সামাজিক বিপর্যয় ঘটে! যে বিরাট জলাধার নির্মিত হয়, এতে করে স্থানীয় জনসাধারণকে উৎখাত করতে হয়। কাপ্তাইয়ের ড্যাম নির্মাণের কারণে রাঙ্গামাটির যে বিস্তীর্ণ চাকমা জনগোষ্ঠীকে উৎখাত করতে হয়েছে, যেখান থেকে শান্তিবাহিনীর সৃষ্টি হয়ে দেশে অশান্তির সৃষ্টি করেছেÑ যে কোনও ড্যামেরই উজানের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাজেই বরাকের উজানে টিপাইমুখে যে ড্যাম তৈরির কথা বলা হচ্ছে এতে ভারতে যে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে, সেটা হচ্ছে মনিপুরের যে লোকজন উদ্বাস্তু হবে তাদের দুঃখের জন্যÑ বাংলাদেশের দুঃখের জন্য ভারতে কেউ কান্নাকাটি করছেন বলে আমার জানা নেই।

আর হচ্ছে, উজানে যে অংশে ড্যামটা নির্মিত হয়, সেখানে জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত সংবেদনশীল, প্রতিবেশ অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং সেখানে বহু ধরনের প্রজাতি আছে সেগুলো হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকেÑ এটার জন্য বিশ্বজুড়ে এনজিওরা হৈচৈ করে; কিন্তু এই সমস্যাগুলোর যদি সমাধান করা যায়Ñ লোকজনের প্রোপার রিহেবিলিটেশন করে এবং লোকেশনটাকে ঠিকমত নির্বাচন করে তাহলে কিন্তু ড্যাম নির্মাণ করাটা সঠিক। এবং আমি প্রায়শই একটা কথা শুনি এবং কথাটা শুনে একা একাই হাসি এবং জোরে জোরে হাসিÑ সেটা হচ্ছে যে, মেঘনা নদীর উজানে বরাকে ড্যাম নির্মাণ করলে বিধৌত এলাকা পানিশূন্য হয়ে পড়বে! উ-ল-টো-টা হবে!! পানির পরিমাণ বাড়বে!! যারা বলেন, তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক বলছি যে, বাংলাদেশ যখন নেপালে ড্যাম তৈরির কথা বলে, তার মানে হচ্ছে শুকনো মৌসুমে গঙ্গার পানির প্রবাহ বাড়বে। যে কারণে গঙ্গার পানির প্রবাহ বাড়বে সেই একই কারণে বরাকের থেকেও বর্ষাকালে পানির প্রবাহ বাড়বে। ‘শুকিয়ে যাবে’ এটা কোন কারণেই সম্ভব নয়! অর্থাৎ আমরা ভারতবিরোধী আন্দোলন করত গিয়ে বিজ্ঞানকে উল্টে-পাল্টে ফেলছিÑ এটা কোন মতেই সম্ভব নয়। প্রশ্ন : নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের করণীয় কি? ড. আইনুন নিশাত : একটা কথা আমি সব সময় শুনি যে, নদীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নদীকে তার প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রবাহিত হতে দেয়া উচিতÑ আমি এ কথার সঙ্গে পুরোপুরি একমত।

আমি আমার জীবনের বারো বছর কাটিয়েছি প্রকৃতি সংরক্ষণের কাজে। আমি এখনও এই প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করতে চাই, নদীকে নদীর কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই। নদীকে নদীর মতো প্রবাহিত হতে দিতে চাই। জলাভূমিকে জলাভূমির মতো রক্ষা করতে চাই। কিন্তু সমস্যা বাধিয়েছে মানুষ।

লোকসংখ্যা যখন তিন কোটি থেকে ১৬ কোটি হয়। ধান যখন ৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন থেকে ৩০ মিলিয়ন মেট্রিক টন করতে হয়। তখন প্রথমেই বলী হয় জলাভূমিগুলো, প্রথমেই চাপ পড়ে নদীর ওপরে। নদীকে ভরাট করে শিল্পকারখানা তৈরি হচ্ছে। নগরায়ন প্রক্রিয়ার প্রথম বলী হচ্ছে নদীগুলো।

নদীগুলোকে প্রাকৃতিক ভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নদীকে চিহ্নিত করে, নদীকে রক্ষা করতে হবেÑ এই লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বিরাট অভাব ছিল। এটা পূরণ হয়েছে বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতেÑ আঁতকে উঠলেন? পঞ্চদশ সংশোধনীর অন্য ভালো দিকের কথা বলছি বলেÑ এই পঞ্চদশ সয়শোধনীর জন্য যে রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে আমার বিষয় সেটা নয়। এখানে আমাদের সংবিধানে ১৮ ক ধারা সংযোজিত হয়েছে। ১৮ ক ধারাতে এই প্রথম বাংলাদেশ সরকার স্বীকার করল যে, ‘রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে, জলাভূমি, জীববৈচিত্র্য, প্রকৃতি, বনভূমি এগুলোকে রক্ষা করতে হবে। ’ কাজেই এই যে সংবিধানের যে, জলাভূমিকে রক্ষা করা, জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করা, প্রকৃতিকে রক্ষা করা, নদীকে রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলা হচ্ছেÑ এটা এসেছে কিন্তু কেবল।

এ লক্ষ্যে আইন হয়েছে ১৯৯৫ সালে। এখন এ সংবিধানটা ধরে যদি আমরা এগোতে পারি। এ জন্য আমি মনে করি যে, নদীগুলোকে রক্ষা করার আমাদের যে পরিকল্পনা, তা এখন থেকে ভবিষ্যতে তৈরি হবে। বর্তমান সরকার নদীশাসনের কাজ হাতে নিয়েছে, এটাকে যদি সুচারু রূপে সম্পন্ন করা যায় তাহলে নদী এবং মানুষের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব আছে সেটা দূরীভূত হবে। আরেকটা কথা বলি নদী কিন্তু কেবল যে পানিই বহন করে সেচ কিংবা বন্যার জন্য তা নাÑ এর সঙ্গে নৌ-চলাচলের ব্যাপার আছে।

নৌ চলাচল হচ্ছে বাল্ক নন পেরিশেবল গুডস অর্থাৎ অপচনশীল দ্রব্য বহনের ক্ষেত্রে নদীর মতো আর সস্তা মাধ্যম নেই। আমরা এটাকে অবহেলা করেছি। ব্রিটিশ শাসন আমলে নেভিগেশনকে ইগনোর করা হয়েছেÑ আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে কিংবা পাকিস্তান পিরিয়ডে এদিকে নজর দেয়া হয়নি। আমি আশা করব সরকার যদি নেভিগেশনের দিকে নজর দিতে থাকেন তাহলে কাজে আসবে। নদী ব্যবস্থাপনার কথা রাজনৈতিক মহলে বলা হচ্ছে।

কিন্তু এটাকে সুচারু রূপে কর্মকাণ্ডে এখনও ট্রান্সফার করা হয়নি। প্রশ্ন : বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? ড. আইনুন নিশাত : বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনার জন্য যে একটা মাস্টার প্ল্যান প্রয়োজন এটা বলা প্রয়োজন। আমাদের প্রথম মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। আমেরিকান একটা কোম্পানি এটা করেছিল। তখন এই মাস্টার প্ল্যানের মূল লক্ষ্য ছিলÑ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা।

নদী, প্রকৃতিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে ধান উৎপাদনটা ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। আমি তাদের সাধুবাদ জানাই কারণ অনাহারে কোনও জাতি থাকতে চায় না, খাদ্যের জন্য কারও কাছে ভিক্ষার ঝুলি বাড়াতে চায় না, ভিক্ষার থালা বাড়াতে চায় না। সেই লক্ষ্যে ১৯৬৪ সালের পরিকল্পনার ভিত্তিতেই কিন্তু আমরা এখনও কাজ করে চলছি। কিন্তু ইতিমধ্যে সময় পাল্টেছে, ২০০২-তে পানি উন্নয়ন পরিকল্পনা হয়েছে কিন্তু এটার জন্য ১৯৮৮-তে প্রণীত ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যানÑ যেটাকে এনজিওরা হৈচৈ করে থামিয়ে দিয়েছে; আমি মনে করি এটা একটা বিরাট ভূমিকা রাখতে পারত। দেশজুড়েÑ দেশটাকে ৬টা ভাগে ভাগ করে একটা মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছিল।

প্রথমে বন্যা ব্যবস্থাপনার দিকে নজর ছিল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দিকে নজর ছিল, পরের দিকে সেচ ব্যবস্থাপনাটা ঢুকিয়ে সারা বছর কি করে পানি ব্যবস্থাপনা করতে চাইÑ সেটাÑ ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যানে কেবল আমরা লিপিবদ্ধ করা শুরু করেছিলাম। ১৯৯৫-তে কর্মকাণ্ডটা থেমে গেল। তারপর জাতীয় পানি পরিকল্পনা নামে আমরা এমন একটা জগাখিচুড়ি ডকুমেন্ট তৈরি করলামÑ সেটা কতগুলো রিপোর্ট হিসেবে সেলফে জমা হয়ে আছে। আমি মনে করি যে, আমরা প্রকৃতি সম্মত পানি ব্যবস্থাপনা করতে গেলেÑ আমাদের মাইন্ড সেটের পরিবর্তন প্রয়োজনÑ পানি মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়েরÑ সেগুলো এখনও হয়নি।

আমাদের মানুষ বেড়েছে, পানি ব্যবহার বেড়েছে। যে কারণে নদী থেকে পানি তোলার পরিমাণ বেড়েছে যে কারণে বহুলাংশে জোর করে কিছু কিছু পানি ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবেÑ একটা অবকাঠামো হচ্ছে গঙ্গা ব্যারাজ। গঙ্গা ব্যারাজ যদি আমরা করতে পারি। ভারতের সঙ্গে ১৯৯৬-র চুক্তিতে যে ৩৫ হাজার কিউসেফ পানি পাই। সবচেয়ে কম যেটুকু পাই সেটুকু থেকে যদি ১৫ হাজার কিউসেক পানি খুলনাকে দিতে পারি তাহলে খুলনা অঞ্চলের লবণাক্ততা বহুলাংশে দূর হয়।

১৯৭৫-এ ফারাক্কার মাধ্যমেও গঙ্গার পানি প্রত্যাহারের কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লবণাক্ততা মারাÍকভাবে বেড়েছে, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এই সমস্যাটা আরও জটিল হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সমুদ্রের পানির পৃষ্ঠ কিছুটা বেড়ে যাওয়ার কারণেÑ এখন এটাকে ঠেকানোর জন্য গঙ্গা ব্যারেজ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে আমাদের আন্তঃমন্ত্রণালয় দ্বন্দ্ব বড় অন্তরায়। একটা ব্যারাজ করলে সেটা সেতু হিসেবে কাজ করে কিন্তু একটা সেতু নির্মাণ করলে সেটা একটা ব্যারাজ হিসেবে কাজ করে না। গঙ্গার ওপর আমাদের একটা রেলওয়ে ব্রিজ আছে, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, তার পাশে লালন শাহ ব্রিজ আছে, সেটা রোডব্রিজ।

কিন্তু এরপর যদি একটা ব্যারাজ নির্মাণ করি পাংশাতে তাহলে তৃতীয় সেতু হবে সেটা। এটা অবিলম্বে করা উচিত এবং ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করে যে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি আনা হয়েছে এটার ব্যবহার শুরু করতে যত দেরি হবে ততই আমাদের কাছে খারাপ লাগবে। ভারত বলবে যে তোমরা তো পানি নিচ্ছ কিন্তু তার সঠিক ব্যবহার করছ না। আপনারা একটা প্রশ্ন আমাকে প্রায়ই করেন, সেটা হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সে অবস্থায় আমাদের নদ-নদীগুলোর পরিণতি কি হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম।

তার কারণ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইনটেনসিটি ও ফ্রিকোয়েন্সি দুটোই বাড়বে এবং ইনটেনসিটি বাড়ার কারণে বন্যা ও খরাÑ গত ৫-৬ বছরে খরার পরিমাণ বেশি দেখছি। যে কোনও সময় বন্যা চলে আসবে। তার থেকে আমি বেশি ভয় পাই জলোচ্ছ্বাসকে। জলোচ্ছ্বাসের পরিমাণ বাড়বে, উপকূলে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়বেÑ তো এগুলো নিয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করেছি এবং এগুলো নিয়ে বাংলাদেশের যে জাতীয় পরিকল্পনা আছে (ইঈঈঅঝচ) বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড এ্যাকশন প্ল্যান ২০০৯Ñ এখানে পরিষ্কার করে ফ্রেমওয়ার্ক করা আছে, মাস্টার প্ল্যান করা আছে আমাদের কোথায় কি করতে হবে। এখন প্রয়োজন এটার সঠিক বাস্তবায়ন।

প্রশ্ন : বুড়িগঙ্গা দূষণ বিষয়ে আপনি কি বলবেন? ড. আইনুন নিশাত : আমরা যখন পানির কথা বলি তখন আমরা কিন্তু পানির গুণগত মানের কথাটা বলি না। সাধারণত পরিমাণের কথা বলি। আমাদের সময় এসেছে গুণগত মানের কথা বলার। শহরের পাশে, নগর-বন্দরগুলোর পাশে সাধারণত নদী থাকে। নগরগুলো গড়ে ওঠে নদীকে কেন্দ্র করে এবং এই নদীর পাড়টি পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে ব্যবহার করা হয় বিনোদনের জন্য।

টেমসের পাড়ে কিংবা রাইন নদীর পাড়ে কিংবা সিন নদীর পাড়ে আপনি হেঁটে বেড়াতে পারেন বিকেলবেলা। আমাদের এখানেও কিন্তু দু’শ বছর আগে বাকল্যান্ড বাঁধের ওপর দিয়ে বাবুরা হেঁটে বেড়াতেন। তো আমরা মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর পাড়গুলোকে নষ্ট করেছি, নদীতে তরল বর্জ্য, সলিড বর্জ ফেলে নদীর বারোটা বাজিয়েছি। আমি অবশ্য এতে আশাহত নই, কারণ ষাটের দশকে কিন্তু টেমসের অবস্থা কিংবা রাইনের অবস্থা একই ছিল। তারা আইন করে, দূষণ রোধ করে নদীকে নদীর কাছে পরিমাণগত ভাবে যেমন ফিরিয়েছে, গুণগত মানেও তেমন ফিরিয়েছে।

আমি বুড়িগঙ্গাতে শুশুক দেখেছি, আমি বুড়িগঙ্গাতে ইলিশ মাছ ধরতে দেখেছি, যখন স্কুলে পড়তাম। আমি আশায় রইলাম, বুড়িগঙ্গাতে আবার শুশুক ফিরে আসবে, তার জন্য যে আইনগত ব্যবস্থা প্রয়োজন সেটা আছে এখন প্রয়োজন আইনের কার্যকর ব্যবহার। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।