আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একপেয়ে রিক্সাওয়ালা

রহস্যময় গ্যালাক্সি ঘুরে, অসীম আকাশে উড়ে আর সাগরের অতল গভীরে ডুবে আমৃত্যু পান করতে চাই ভালোবাসার অমৃত সুধা... অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। রাতুল তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ফাইল কলম ইত্যাদি নিয়ে দ্রুত বের হয়ে পড়ল মেসের ছোট্ট কক্ষটি থেকে। চোখে যেন কিছু দেখতে পাচ্ছে না সে। শুধু বইয়ের কালো কালো অক্ষরগুলো ভাসছিল। কোন প্রশ্ন আসবে, পরীক্ষার সব প্রশ্ন ঠিকমতো লিখতে পারবে কি না ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে হাঁক দিল- এ্যাই রিক্সা, যাবে? ধীর গতিতে রিক্সাটি এগিয়ে আসলো।

- আরে মিয়া তাড়াতাড়ি আসো। কাছে আসতেই বিদ্যুৎ বেগে রিক্সায় উঠে বসল। তারপর নোট খাতাটা মেলে ধরল চোখের সামনে। গর গর করে পড়তে থাকলো। রিক্সা কোথায় যাবে? তার কোন ভ্রুক্ষেপই নেই যেন।

- ভাই কোন দিকে যাবো? রিক্সাওয়ালার প্রশ্নে যেন সম্বিৎ ফিরে পেলো। - আরে যাও না, বাঁয়ে সামনে, ঢাকা কলেজের গলির গেইটে। রিক্সা চলছে। রাতুল পড়ছে। কোন দিকে তাকানোর সময় নেই তার।

মাঝে মাঝে আবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। ঘড়ির কাঁটা যেন বিদ্যুৎ বেগে এগিয়ে চলছে। কিছু পড়া মনে হচ্ছে এখনো শেষ হয়নি। কিছু মনে হচ্ছে আরো কয়েকবার রিভিশন দিলে ভালো হতো। কিছু আবার ভুলো ভুলো হয়ে যাচ্ছে।

আবছা লাগছে সবকিছু। - আরে মিয়া, কী চালাও? দ্রুত যাও। আবার পড়ার গুন গুন শব্দে রাতুল ডুব দিলো। - ধুর মিয়া সময় নাই তো, জলদি করো না। পা চালাও না কেন? এতো ধীরে মিয়া তোমার মতো ইয়াং পোলা রিক্সা চালায়? মারো প্যাডেল।

তোমার সাথের রিক্সাগুলো কেমন করে তোমাকে ওভারটেক করে যাচ্ছে দেখছো না? আসলে রাতুলের রিক্সা তুলনামূলকভাবে ধীরেই যাচ্ছিল। রিক্সাওয়ালা কথা বলে উঠল- ভাই আমি তো এর চেয়ে বেশি জোরে চালাতে পারি না। একটু সমস্যা আছে। রাতুল আরো কিছু বলতে চেয়েছিল। হঠাৎ চোখ গেলো রিক্সার প্যাডেলে দিকে।

তাকিয়ে যা দেখলো তাতে তার ভেতরটাকে দুমড়ে মুচড়ে দিলো। থামিয়ে দিলো তার নোট পড়ার গতিকে। সে স্থির হলো। একেবারে শান্ত। এদিকে তার কলেজের গেইটের সামনে রিক্সাওয়ালা কয়েকটি বেল দিয়ে থেমে গেলো।

কিছুটা সময়ের জন্য যেন পৃথিবী স্তব্ধ হলো। ধীরে সে রিক্সা থেকে নামলো। পকেট থেকে ভাড়ার ২০ টাকার নোটের সাথে আরও ১০ টাকার নোট অতিরিক্ত দিয়ে যেতে যেতে বলল- ভাইজান একদম কিচ্ছু মনে করবেন না। আমি বুঝতে পারিনি। আমাকে ক্ষমা করবেন।

আপনার একটি পা নেই। এক পায়ে কত কষ্ট করে আপনি সংসার চালাচ্ছেন। টাকা উপার্জন করছেন। আর আমরা বাবার টাকা খরচ করে রিক্সায় উঠে কত কথাই না বলি আপনাদেরকে। কখনো কোন সময় আমরা রিক্সাওয়ালার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি না।

দেখি না যে রিক্সা চালাচ্ছে সে আমার ভার বইতে পারবে তো? তার প্রতি আমাদের কেমন আচরণ করা উচিৎ? তাদের চেহারা, অবয়বই বলে দেয় তাদের জীবন যাপনের স্বচ্ছ চিত্র। অথচ আমাদের মধ্যেই অনেকে কত সম্পদ, অর্থ অপচয় করছে। কালো বা রঙ বেরঙের টাকার মালিক। মানুষ কে মানুষ হয়ে উঠতে হলে জীবন থেকেই শেখা উচিৎ। উচিৎ মানুষকে চর্চা করা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.