আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্ল্যাডি মেরি: ইংল্যান্ডের ধর্মান্ধ রক্তপিপাসু রানী

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ ইংল্যান্ডের রানী প্রথম মেরি (১৫১৬-১৫৫৮ খ্রিস্টাব্দ )। তবে ইনি ইংল্যান্ডে প্রোটেষ্টান্ট ধর্মের অসংখ্য অনুসারী কে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করার নির্দেশ দিয়ে Bloody Mary নামেই কুখ্যাত। যে কারণে ব্ল্যাডি মেরির ৬ বছরের শাসনকালটিকে (১৫৫৩-১৫৫৮খ্রিস্টাব্দ ) ইংল্যান্ডের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় বলে মনে করা হয়।

রানী মেরির ৪২ বছরের জীবনটিও ছিল হঠকারী সিদ্ধান্তে পরিপূর্ণ। ৩৬ বছর অবধি অবিবাহিতা থাকার স্পেনের যুবরাজ ফিলিপকে বিয়ে করেন রানী মেরি এবং স্বামীর নির্দেশে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন । ফলে ফ্রান্সের কাছে ইংল্যান্ড তার ভূখন্ড হারায়। রানী মেরি এক পরিপূর্ণ ব্যর্থতার নাম ; তার জীবনের কোনও স্বপ্নই সার্থক হয়নি, এমন কী কোনও উত্তারাধিকার না রেখেই মৃত্যু বরণ করেন ওই ধর্মান্ধ রক্তপিপাসু রানী । রানী মেরির হাত প্রোটেষ্টান্ট দের রক্তে রঞ্জিত হলেও তার মৃত্যুর পর তার সৎ বোন রানী প্রথম এলিজাবেথ ইংল্যান্ডে প্রোটেষ্টান্ট ধর্মের অনুকূল পরিবেশ ফিরিয়ে আনেন ... মার্টিন লুথার।

(১৪৮৩-১৫৪৬ খ্রিস্টাব্দ) জার্মান ধর্মতাত্ত্বিক এবং প্রোটেষ্টান্ট ধর্মের প্রবর্তক। মার্টিন লুথার এর নেতৃত্বে রোমান ক্যাথলিকবিরোধী ধর্মসংস্কার আন্দোলন সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল। তার অপ্রতিরোধ্য ঢেউ ষোড়শ শতকে ইংল্যান্ডেও এসেও পড়েছিল । ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাজা অস্টম হেনরি রোমান ক্যাথলিক গির্জার কর্তৃত্ব থেকে থেকে চার্চ অভ ইংল্যান্ড (এঞ্জেলিকান) কে পৃথক করার আদেশ জারী করেন। ইংল্যান্ডে প্রোটেষ্টান্ট ধর্মীয় আন্দোলন প্রবল হওয়ার পিছনে তিনটি কারণ ছিল।

(১) সামন্ততন্ত্রের ক্ষয়;(২) জাতীয়তাবাদের উদ্ভব এবং (৩) সেকুলার বিধিবিধানের প্রচলন। মেরির জন্ম হয়েছিল লন্ডনে। সময়টা ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি । বাবা ছিলেন ইংল্যান্ডের রাজা অস্টম হেনরি । মা ক্যাথেরিন অভ আরাগন ।

জাতে স্প্যানিশ এবং গোঁড়া ধর্মে ক্যাথলিক। আমৃত্যু মেরির জীবনে তার মায়ের প্রভাব অক্ষুন্ন ছিল। ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে রাজা এবং তাঁর স্ত্রীর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে এবং একটি পুরনো সেঁতসেঁতে দূর্গে ক্যাথেরিন অভ আরাগন কে নির্বাসিত করা হয়। মেরির বয়স সে সময় ১৭। মেরি বাবাকে (এবং সম্ভবত বাবার প্রোটেষ্টান্ট এঞ্জেলিকান ধর্মকেও) ঘৃনা করতে থাকেন।

রাজা অস্টম হেনরি এবার বিবাহ করেন অ্যানি বোলেন কে। অ্যানি বোলেন এলিজাবেথ (পরবর্তীকালে রানী প্রথম এলিজাবেথ) নামে এক কন্যার জন্ম দেন। এরপর রাজা মেরিকে অবহেলা করতে থাকেন এবং দ্বিতীয় স্ত্রী অ্যানি বোলেন এবং শিশু এলিজাবেথ কে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন । মেরি এলিজাবেথকে ঘৃনা করতে থাকে। যাহোক।

১৫৩৬ খ্রিস্টাব্দে পরকীয়া এবং রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে অ্যানি বোলেন কে শিরচ্ছেদ করে হত্যা করার নির্দেশ দেন রাজা অস্টম হেনরি। এ প্রসঙ্গে জনৈক ইংরেজ ঐতিহাসিক লিখেছেন: Mary is not sorry when her father murders her step mother Anne. ইংল্যান্ডের রাজা অস্টম হেনরি। ইনি ইংল্যান্ডের ইতিহাসে অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি চরিত্র। কারও মতে যোদ্ধা রাজা ইংল্যান্ডের ভাবমূর্তি উদ্ধার করেছেন। কারও মতে রাজা অস্টম হেনরি ছিলেন স্বৈরশাসক।

ক্যাথলিক লেখকদের চোখে শয়তান। ইংল্যান্ডে প্রোটেষ্টান্টরা তাদের ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য রাজা অস্টম হেনরির প্রতি কৃতজ্ঞ। ভীষন ভোজন রসিক ছিলেন রাজা অস্টম হেনরি ...অনেক খেতে পারতেন। ছয়টি বিবাহ করেছিলেন। তবে তাঁর রাজত্বকাল নিরুদ্রপ ছিল না।

নিরাপত্তার কারণে প্রায়ই একে ওকে শিরচ্ছেদের আদেশ দিতে হত। রাজা অস্টম হেনরির তৃতীয় স্ত্রীর নাম জেন সেইমুর। ইনি এক পুত্র সন্তানের মা হয়েছিলেন। সেই পুত্র সন্তানের নাম রাখা হয়েছিল অ্যাডোয়ার্ড (পরবর্তীকালে রাজা ষষ্ট অ্যাডোয়ার্ড ) । ১৫৪৭ খ্রিস্টাব্দ।

মেরির বয়স তখন ৩১। রাজা অস্টম হেনরি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন । বয়েস মাত্র ৯ বছর অ্যাডোয়াড ইংল্যান্ডের রাজা হলেন । তাকে ইংল্যান্ডের রাজা ষষ্ট অ্যাডোয়ার্ড বলা হল। তিনি ছিলেন একজন একনিষ্ট প্রোটেষ্টান্ট ।

প্রোটেষ্টান্ট আর্চবিশপ থমাস ক্রামনার ছিলেন তার পরামর্শদাতা। রাজা ষষ্ট অ্যাডোয়ার্ড লাতিনের বদলে প্রার্থনার ভাষা ইংরেজি তে করার নির্দেশ জারী করে । তখন বলেছিলাম যে ইংল্যান্ডে প্রোটেষ্টান্ট ধর্মীয় আন্দোলনের পিছনে অন্যতম একটি কারণ ছিল জাতীয়তাবাদের উদ্ভব। এই ছবিটি ফরাসি চিত্রকর পল দেলারোচের আঁকা। এই ছবিতে যাকে শিরচ্ছেদ করা হচ্ছে তিনি হলে লেডি জেন গ্রে।

‘ব্ল্যাডি মেরি’র জীবনে এই নারী বড় এক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এই ছবিটির মাধ্যমে তৎকালীন রাজতন্ত্রের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের ভয়াবহতা তুলে ধরে। ১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দ । মাত্র ১৫ বছর বয়েসে রাজা ষষ্ট অ্যাডোয়ার্ড মারা যান। তিনি লেডি জেন গ্রে নামে ১৫ বছর বয়েসি একজন ঘনিষ্ট আত্মীয়াকে ইংল্যান্ডের সিংহাসনের উত্তারিকারী নির্বাচিত করে যান ।

এই নির্বাচনের অন্যতম একটি কারণ ছিল লেডি জেন গ্রে ছিলেন একজন একনিষ্ট প্রোটেষ্টান্ট । লেডি জেন গ্রে মাত্র ৯ দিন ইংল্যান্ড শাসন করেছিলেন। এ জন্য তাকে ‘৯ দিনের রানী’ বলা হয়। ইংল্যান্ডের জনগন অবশ্য মেরির পক্ষেই ছিল। রাজতন্ত্রে রাষ্ট্রপ্রধানকে পরামর্শ দেয় প্রিভি কাউন্সিল ।

তো, ইংল্যান্ডের প্রিভি কাউন্সিল মেরির পক্ষে মত দেয় এবং ১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর লন্ডনের ওয়েস্টমিনিষ্টার অ্যাবিতে মেরিকে ইংল্যান্ডের রানীর মুকুট পরিয়ে দেওয়া হয়। লেডি জেন গ্রে -র বিরুদ্ধে যথারীতি রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ আনা হয়। এবং তার শিরোচ্ছেদ করা হয়। টিউডর ইংল্যান্ডের মানচিত্র । রানী মেরি টিউডর ইংল্যান্ডের শাসক।

ইংল্যান্ডের ইতিহাসে টিউডর যুগের সময়কাল ১৪৮৫-১৬০৩ খ্রিস্টাব্দ ; এই সময়কাল সূচিত হয় রাজা সপ্তম হেনরির শাসনামল থেকে এবং শেষ হয় রানী প্রথম এলিজাবেথ-এর শাসন অবসান হলে। টিউডর যুগের অন্য শাসক হলেন রাজা অস্টম হেনরি, রাজা ষষ্ট অ্যাডোয়ার্ড, লেডি জেন গ্রে, প্রথম মেরি এবং রানী প্রথম এলিজাবেথ। টিউডর ইংল্যান্ড মধ্যযুগের নাগপাশ থেকে বেরিয়ে এসে এক উদার সহিষ্ণু যুগের সুচনা করেছিল। কেবল ধর্মান্ধ রানী মেরির নৃশংসতা তাকে যেমন ‘ব্ল্যাডি’ আখ্যা দিয়েছে তেমনি ইংল্যান্ডের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ক্ষমতা গ্রহনের পর মেরি ইংল্যান্ডে রোমান ক্যাথলিক গির্জার কর্তৃত্বও ফিরিয়ে আনার উদ্যেগ নেন।

এ ক্ষেত্রে তিনি চরমপন্থা অবলম্বন করেন। তবে রানী মেরির প্রথম পদক্ষেপগুলি ছিল স্বাভাবিক। যেমন: রাজা অষ্টম হেনরি Mass (ক্যাথলিক ব্রত) নিষিদ্ধ করেছিলেন; মেরি পুনরায় ব্রতটি উদযাপনের নির্দেশ দেন। এতে তিনি কোনও ধরনের বিরোধীতার সম্মূখিন হননি। তবে রাজা অস্টম হেনরি ক্যাথলিক গির্জের যে সব জমি জব্দ করেছিলেন সেসব বাজেয়াপ্ত জমি উদ্ধারে পার্লামেন্ট সম্মত হয়নি।

টিউডর আমলের লন্ডন শহর। এই আপাত প্রশান্তির আড়ালে টিউডর সমাজে ছিল দারিদ্র; অপরদিকে অভিজাত মহলে চলছিল ক্ষমতার লোভে ষড়যন্ত্র, অজাচার, গুপ্তহত্যা, শিরোচ্ছেদ আর ধর্মীয় মৌলবাদীদের আকন্ঠ রক্তপিপাসা ... রাজা অস্টম হেনরি একবার বলেছিলেন:I am very sorry to know and hear how unreverently that most precious jewel, the Word of God, is disputed, rhymed, sung and jangled in every ale-house and tavern, contrary to the true meaning and doctrine of the same. (দেখে শুনে কষ্ট পাই কী অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই না সবচে মূল্যবান সম্পদ (বাইবেল) যা ঈশ্বরের বানী, তার সত্যিকারের অর্থ না বুঝেই তা নিয়ে বির্তক চলছে, প্রতিটি পানশালায় আর রঙ্গশালায় সুর করে গাওয়া হচ্ছে) ১৫৫৪ খ্রিষ্টাব্দ । রানী মেরি যখন ৩৮ বছরের কুমারী- প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে স্পেনের রাজা ২য় ফিলিপ বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নেন। এই বিয়ের পিছনে বিন্দুমাত্র রোমান্স ছিল না, ছিল অতি নিমর্ম উপায়ে বিরোধী পক্ষকে নিশ্চিহ্ন করবার এক ভয়াবহ পরিকল্পনা । মেরি নির্যাতন চালিয়ে ইংল্যান্ডে ক্যাথলিক ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে চান।

স্পেনের রাজা ২য় ফিলিপ ধর্মান্ধ ক্যাথলিক হওয়ায় স্পেনে ক্যাথলিক বিরোধীদের উপর ইনকুইজিশনের নামে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিলেন। কাজেই স্পেনের রাজা ২য় ফিলিপ-এর সঙ্গে রানী মেরির বিবাহের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের প্রোটেষ্টান্টরা বিদ্রোহ করে । তারা ইংল্যান্ডেও স্পেনের মতো ইনকুইজিশনের আংশকা করছিল। তাই কিন্তু হয়েছিল। তারা মানবিক বিপর্যয় এড়ানোর জন্য মেরির বদলে মেরির সৎবোন এলিজাবেথকে ইংল্যান্ডের শাসনক্ষমতায় দেখতে চাইল ।

ব্রিটিশ সেনাবাহিনী মেরির নির্দেশে প্রোটেষ্টান্ট বিদ্রোহীদের নির্মম ভাবে দমন করে । যা হোক। ফিলিপ ইংল্যান্ডে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেন নি । তার নির্দেশে ১৫৫৮ খ্রিস্টাব্দে রানী মেরি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। পরিনতিতে ফ্রান্সের কাছে কালাইস প্রদেশ হারায় ইংল্যান্ড ।

স্পেনের রাজা ২য় ফিলিপ। না, ইনি রানী মেরিকে বিয়ে করে স্পেনে নিয়ে যাননি। ইংল্যান্ডে ঘরজামাই ছিলেন। রানী মেরির সঙ্গে বিবাহ হলেও তার লোলুপ চোখ ছিল মেরির সৎবোন তরুণি এলিজাবেথের ওপর। রাজপ্রাসাদের আরও তরুণির সঙ্গে ঘনিষ্টতা কথা পরবর্তীকালের রসিক ঐতিহাসিকগন জানতে পেরেছেন।

রানী মেরি কি নিজ স্বার্থেই স্বামীর অজাচার উপেক্ষা করেছিলেন? প্রেমের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছিল প্রোটেষ্টান্টদের পুড়িয়ে হত্যা করে ইংল্যান্ডে ক্যাথলিক ধর্মের প্রতিষ্ঠা? ক্ষুদ্র স্বার্থে মানুষ কত নীচ হতে পারে ভাবলে বিস্মিত হতেই হয়! স্পেনের রাজাটি ব্যাভিচারে আসক্ত হলেও ধর্মান্ধ ক্যাথলিক হওয়ায় ইনকুইজিশন নামে স্পেনে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিলেন ঠিকই! স্পেনের রাজা ২য় ফিলিপ ইংল্যান্ডেও স্প্যানিশ ইনকুইজিশন মতো ব্যবস্থা গ্রহন করতে স্ত্রীকে উৎসাহিত করেন। রানী মেরি রাজা ষষ্ট অ্যাডোয়ার্ড -এর প্রোটেষ্টান্টদের অনুকূলে পূর্বেকার ধর্মীয় আদেশ রদ করেন এবং ক্যাথলিক গির্জার বিপক্ষে বিরোধীতার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রবর্তন করেন। এর পর পরই ধড়পাকড় শুরু হয়। একে একে ৩০০ প্রোটেষ্টান্ট কে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় । এই অমানবিক ঘটনাটি ইংল্যান্ডের ইতিহাসে Marian Persecutions বলে চিহ্নিত হয়ে আছে।

এই অমানবিক হত্যাযজ্ঞের কারণেই রানী মেরিকে Bloody Mary বলে অবহিত করা হয়। অবশ্য এই নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডে তৎকালীন ইংল্যান্ডের সাধারণ জনগন ও অভিজাত সমাজের সমর্থন ছিল না। প্রোটেষ্টান্টদের পুড়িয়ে হত্যা করার দৃশ্য। প্রশ্ন হল প্রোটেষ্টান্টদের পুড়িয়ে মারা হল কেন-যখন ইংল্যান্ডে মৃত্যুদন্ড হিসেবে শিরচ্ছেদ প্রচলিত ছিল ? স্পেনে স্প্যানিশ ইনকুইশনে ক্যাথলিক ধর্ম বিরোধীদের পুড়িয়ে মারা হত। যে কারণে বোঝা যায় রানী মেরিকে প্রোটেষ্টান্টদের পুড়িয়ে মারার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্পেনের রাজা ২য় ফিলিপ ।

নিহত প্রোটেষ্টান্টদের তালিকা রয়েছে ফক্স লিখিত The Book of Martyrs বইতে। এই বইটিতে প্রথম শতাব্দী থেকে রানী মেরি শাসনামল অবধি যে সব খ্রিষ্টান শহীদ হয়েছেন তাদের তালিকা রয়েছে। মনে থাকার কথা প্রোটেষ্টান্ট আর্চবিশপ থমাস ক্রামনার ছিলেন রাজা ষষ্ট অ্যাডোয়ার্ড এর পরামর্শদাতা। প্রথম দিকে যাদের পুড়িয়ে মারা হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রোটেষ্টান্ট আর্চবিশপ থমাস ক্রামনার। যা হোক।

এ আলোচনার শুরুতে বলছিলাম: রানী মেরি এক পরিপূর্ণ ব্যর্থতার নাম ; তার জীবনের কোনও স্বপ্নই সার্থক হয়নি। মেরি মা হতে পারেন নি। হয়তো মধ্যত্রিশে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়াই এর এক কারণ। তবে রানী মেরি বিশ্বাস করতেন যে তিনি দু’বার গর্ভবতী হয়েছিলেন। রানীর শরীরে গর্ভের লক্ষণও ফুটে উঠেছিল।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই লক্ষণকে hysterical pregnancy বলা হয় । ১৫৫৮ খ্রিস্টাব্দে মেরিকে পরিত্যাগ করে স্পেনে ফিরে যান ২য় ফিলিপ । সম্ভবত হতাশায় ভেঙে পরেছিলেন মেরি। যে কারণে ওই বছরই নভেম্বর মাসে লন্ডনের সেন্ট জেমস প্রাসাদে মেরির মৃত্যু হয়। মেরির বয়স তখন ৪২ ... রানী প্রথম এলিজাবেথ (১৫৩৩-১৬০৩ খ্রিস্টাব্দ) ।

রানী মেরির মৃত্যুর পর ২৫ বছর বয়সে এলিজাবেথ ইংল্যান্ডের শাসনভার গ্রহন করেন। এলিজাবেথ ছিলেন এঞ্জিলিকান প্রোটেষ্টান্ট । কাজেই অসংখ্য প্রোটেষ্টান্ট-এর মৃত্যুর পর ইংল্যান্ডে পুনরায় প্রোটেষ্টান্ট ধর্ম চর্চার অনুকূল পরিবেশ ফিরে আসে। রানী প্রথম এলিজাবেথ এর আমলে ইংল্যান্ডে স্প্যানিশ আর্মাডার (নৌবহরের ) আক্রমনের আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছিল। স্পেনের রাজার স্ত্রী হওয়ায় মেরির প্রতি ইংল্যান্ডের জনগন প্রবল ঘৃণা প্রকাশ করে ।

তাকে ‘ব্লাডি মেরি’ বলা হয় । আজও ইংল্যান্ডের রানী প্রথম মেরি Bloody Mary বলে পরিচিত - যে রক্তপিপাসু ধর্মান্ধ নারীটির প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল বিভ্রান্তিকর ! ছবি: ইন্টারনেট। তথ্যসূত্র: http://www.tudorhistory.org/ http://englishhistory.net/tudor.html http://www.the-tudors.org.uk/bloody-mary.htm Click This Link Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.