আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৪ বছরে ১৪ জুন \ শ্রীমঙ্গলে মাগুরছড়ার ইতিকথা

আমি সততা ও স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি। ১৪ জুন। ১৯৯৭ সনের এই দিনে শ্রীমঙ্গলের মাগুরছড়া গ্যসকুপে ঘটেছিল মারাত্মক এক বিস্ফোরণ। সেদিন নিঝুম বন-পাহাড়ের মাঝে হঠাৎ মধ্যরাতে যেন রক্তিম আলোয় ভরে উঠেছিল রাতের আকাশ। বিকট এক আওয়াজে হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে মাগুরছড়া গ্যাসকুপে।

মানুষের ঘুম ভেঙে যায়। মুহুর্তেই দিশেহারা হয়ে যায় বন-পাহাড়ের আশপাশ এলাকার মানুষসহ বন্য প্রাণীকুলসমূহ। আগুণের লেলিহান শিখা যেন মুহুর্তেই শেষ করে দিয়েছে বিশাল এলাকার ঘরবাড়ি ও জীব বৈচিত্র। যে যেভাবে পেড়েছে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টায় পালিয়েছে। ১৯৯৬ সালের ৭ জুলাই এ অঞ্চলের বৃহৎ এলাকাজুড়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি পেলে এখানে বিভিন্ন ধরণের শিা-গবেষণাসহ ট্যুরিজমের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

২৫০ হেক্টর আয়তনের এই জাত’য় উদ্যানের জরিপ করা হয়। জরিপের তথ্য অনুয়ায়ি, এখানে বিরাজমান ছিল ২৬০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৪২ প্রজাতির পাখি এবং ১০ প্রজাতির সরিসৃপসহ আরো অনেক ধরণের প্রাণী ও উদ্ভিদকুল, যা নিমিষেই নিঃশ্বেষ হয়ে গেছে একটি মাত্র স্ফুলিঙ্গে। এছাড়া বিস্ফোরণের ফলে চা-বাগান, বনাঞ্চল, বিদ্যুৎলাইন, রেলপথ, গ্যাস পাইপলাইন, গ্যাসকূপ, মৌলভীবাজার স্ট্রাক্চার, গ্যাস রিজার্ভ, পরিবেশ, প্রতিবেশ, ভূমিস্থ পানি সম্পদ, রাস্তাসহ এলাকার প্রাণীকুল ও উদ্ভিদকুল মারাত্মকভাবে তিগ্রস্থ হয়। বছর ঘুরেই আসে ১৪ জুন। আর তার সাথে স্মৃতিতে ভেসে ওঠে ভয়াবহ সেই বিস্ফোরণের লেলিহান শিখা।

কাল পরিক্রমা পেরিয়ের ১৪ জুন আজ ১৪ বছর অতিবাহিত করেছে। সেদিনের প্রত্যদর্শী যারা, আজও গা শিওরে উঠে তাদের। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানেরর পাশ্ববর্তী মাগুরছড়ায় গ্যাসকুপ খননের কাজে নিয়োজিত ছিল বহুজাতিক তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানকারী কোম্পানী অক্সিডেন্টাল। ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন তারিখে অক্সিডেন্টালের খামখেয়ালির কারণেই ঘটে এই বিস্ফোরণ। মাগুরছড়ায় এই ভয়াবহ গ্যাসকুপ বিষ্ফোরনের পর পরই দুর্ঘটনার কারন অনুসন্ধানের জন্য এক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়্।

কমিটিটি ১ মাসের মধ্যে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে বিশাল এক তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করে। পরবর্তীতে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিষ্ফোরণের য়তি নিরুপন, তিপূরণ পাওয়া ও বিতরণের বিষয়ে একটি সাব-কমিটি গঠন করে। এতে দূর্ঘটনার জন্য অক্সিডেন্টালের ব্যর্থতার কারণ প্রকাশ করা হয়। তদন্ত রিপোর্ট অনুয়ায়ি এ বিস্ফোরণে ছোট বড় ২৯টি চা বাগানের ৪৬ কোটি ৬ ল ৮৪ হাজার ৮৩০টাকা তি সাধিত হয়। তাছাড়া বনাঞ্চলের ৬৯.৫ হেক্টর এলাকার ২৫ হাজার ৬৫০টি পূর্ণবয়স্ক গাছ আগুনে পুড়ে যাওয়ায় তি হয় প্রায় ৩৩.৬১ কোটি টাকা।

প্রতি বছর ৮০.৩০ কোটি টাকা হিসাবে ১১০ বছরে বনাঞ্চলের পরিবেশগত তির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮,৮৩৯ কোটি টাকায়। বনাঞ্চলের আংশিক তির পরিমাণ ৮,১০০ গাছ এবং ২২.৫০ হেক্টর ভূমি। উল্লেখিত তি কাটিয়ে উঠতে ২০ বছর সময় দরকার। তদন্তে তি বাবদ ধরা হয় ৫০৭.১২ কোটি টাকা। এছাড়া বনাঞ্চলের সম্ভাব্য তিগ্রস্থ হয়েছে ৪০ হেক্টর ভূমি এবং ১৫,৪৫০ টি বৃ।

তি থেকে পুনরুদ্ধার পেতে ১০ বছরে তির পরিমান ৪৮৪.৫৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ বনাঞ্চলের মোট তি ধরা হয়েছে ৯,৮৫৮ কোটি ৩১ ল টাকা। বিস্ফোরণের ফলে ২ হাজার ফুট রেলওয়ে ট্র্যাক ধ্বংস হয়েছে, এতে তি হয়েছে ৮১ ল ৫৪ হাজার ৩৯৫ টাকা (রাজস্ব ব্যতীত)। সড়ক পথের তি ২১ কোটি টাকা। গ্যাস পাইপ লাইনের তি ১৩ ল টাকা।

বিদ্যুৎ লাইনের তি ১ কোটি ৩৫ ল ৯১৮৬ টাকা। খাসিয়া পানপুঞ্জির অধিবাসীদের পানের বরজ সমূহ প্রতিদিন ৪৭,৭৫০ টাকা হারে মোট ১২ ল টাকা। মাগুরছড়া বিস্ফোরণে পুড়ে যাওয়া ভূ-গর্ভস্থ উত্তোলনযোগ্য ২৪৫.৮৬ বিসিএফ গ্যাসের দাম ১৯৬,৬৮,৮০০০০ মার্কিন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৪,৩৫৮,২২৪০০০০ টাকা (প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার উপরে)। সব মিলিয়ে মাগুরছড়ার মোট তির পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে। কিন্তু কে দেবে তিপূরন।

আজ এমনিভাবে চলে গেছে ১৪ টি বছরের ১৪ জুন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।