আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রবন প্রতিবন্ধি এক বাংলাদেশী তরুনীর অক্সফোর্ড জয়।

আলোকিত জীবনের একজন সহযাত্রী মেয়েটির জন্ম হয়েছিল সময়ের দুই মাস আগেই। ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে। এক সপ্তাহ পরই দেখা দিল—মারাত্মক নিউমোনিয়া । বহু যত্ন আর চিকিৎসার পর বেঁচে গেলেও সবার মনে তৈরী হলো এক অজানা আশঙ্কার । কারো ডাকে মেয়েটি সাড়া দেয় না।

কানের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো হলো ভারত, সিঙ্গাপুর, ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ নানা জায়গায়। তাঁরা নিশ্চিত করলেন যে, মেয়েটি শুনতে পায় না। অর্থাৎ সে শ্রবণপ্রতিবন্ধী, বধির। ব্যবসায়ী বাবা মুহাম্মদ ইয়ামীন এই মেয়েটির জন্য অত্যন্ত দুরূহ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। তিনি ঠিক করলেন, সবকিছু ছেড়ে দিয়ে মেয়েকে নিয়ে থাকবেন এমন একটা দেশে, যেখানে মেয়েকে ঠিকমতো লেখাপড়া শেখানো সম্ভব হবে।

ইংল্যান্ড থেকে আনা শ্রবণ-বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বুদ্ধি দিলেন ইংল্যান্ডে নিয়ে যেতে। স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে ভর্তির ব্যবস্থা পাকাপাকি হলো। তারপর বধির সন্তান, স্ত্রী আর একজন সেবিকাকে নিয়ে ১৯৯২ সালে মুহাম্মদ ইয়ামীন চলে এলেন ইংল্যান্ডে। শুরু হলো মেয়েটির প্রাথমিক লেখাপড়া। মেয়েকে ভালো শিক্ষাদানের জন্য মুহাম্মদ ইয়ামীন চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেননি।

স্কুল মেয়ের খুব ভালো যত্ন নেবে—এই প্রত্যাশায় স্কুলকে টেনিস কোট করে দিলেন, খেলার মাঠের সংস্কার করে দিলেন। স্কুলের শিক্ষকদের প্রায়ই নিমন্ত্রণ করতেন নিজের বাড়িতে। দ্রুত লেখাপড়া শিখতে আরম্ভ করল মেয়েটি। অর্পিতা, যার পোশাকি নাম সাবিরা, সাবিরা ইয়ামীন। কম্পিউটিং, আর্টস, অঙ্ক ও বিজ্ঞানে বিশেষ করে বায়োলজিতে অর্পিতা খুব ভালো করলেন।

ছবি আঁকায় তিনি এমন নৈপুণ্য আর সৃজনশীলতা দেখালেন যে একবার তার আঁকা একটি ছবি দিয়ে স্কুল বড়দিন উপলক্ষে বিক্রির জন্য একটি ক্রিসমাস কার্ড ছাপিয়ে আনল। মাধ্যমিক স্কুলের শেষ পরীক্ষা—জিসিএসইতে(ও’লেভেল) তিনি উত্তীর্ণ হলেন খুবই কৃতিত্বের সঙ্গে। তিনটা বিষয়ে তিনি পেয়েছিলেন । এ স্টার; দুটোতে এ, আর দুটোতে সি। অর্পিতা ‘এ-লেভেল’ পরীক্ষাও কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করলেন।

স্কুলের পালা শেষ। ইংল্যান্ডের বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী এখানেই তাদের লেখাপড়া শেষ করে। অর্পিতাও এ পর্যায়ে তার লেখাপড়া শেষ করতে পারতেন। কিন্তু তার মা-বাবার উৎসাহ এবং উচ্চাশা গেল আরও বেড়ে। অর্পিতা ভর্তি হলেন ব্রুকস বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তিনি বায়োলজিতে প্রথমে অনার্স ডিগ্রি করলেন চার বছরে। তারপর আরও এক বছর লেখাপড়া করে তিনি বায়ো-ইমেজিংয়ে এমএসসি শেষ করলেন কৃতিত্বের সঙ্গে। ১৫ বছরের কঠিন সাধনায় অর্পিতার মা-বাবা সফল হলেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির জন্য আবেদন করে অর্পিতা চাকরি পেলেন প্রথম চেষ্টাতেই। গবেষণাগারে চাকরি ।

গ্রে ইনস্টিটিউট ফর রেডিয়েশন অ্যান্ড বায়োলজিতে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি কাজ করছেন সেই গবেষণাগারে। জন্ম থেকেই মুখ ও বধির মেয়েটির সাফল্যের পিছনে রয়েছে তার মা বাবার আত্মত্যাগ। মেয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ পেয়েছে। তাই তার অসাধারণ আত্মত্যাগী পিতা প্রতিষ্ঠিত কন্যাকে অক্সফোর্ডে রেখেই দেশে ফিরে আসেন।

আসার সময়ে কী ভেবেছিলেন জানি না; কিন্তু দেশ থেকে তাঁর আর ফেরা হলো না। স্নানের ঘরে দুর্ঘটনা থেকেই তাঁর মৃত্যু। কিন্তু তিনি মারা গেলেও পেছনে রেখে গেলেন তাঁর মূর্তিমান সাফল্য—সাবিরাকে; আর সন্তানের জন্য একজন সংকল্পবদ্ধ বাবা কী অসাধ্য সাধন করতে পারেন, সেই তুলনাহীন দৃষ্টান্ত। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষনাগারে অর্পিতার কর্মব্যস্ততা দেখে কে বলবে যে, সমস্ত পৃথিবীটাই তার কাছে নীরব-নিঝুম শব্দহীন এক ছায়াচিত্র!! আরো বিস্তারিতঃ । View this link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।