সপ্তাহ কয়েক আগে টিওবির আড্ডায় পুষান এসে বললো - "রাব্বি ভাই চলেন অনেকদিন বড় ট্রিপ দি না, একটা ল্যাটাইন্যা ট্রিপ দি", কথাটা মনে ধরলো, বেশ কিছু ছুটিও পাওনা আছে অফিসের থেকে। ঠিক করলাম বান্দরবন যাবো, কিন্তু কোন পিক সামিটের গোল থাকবে না, এদিক ওদিক ঘুরে চলে আসবো। সবাই আলোচনা করে ২ টা প্রাথমিক গন্তব্য ঠিক করলাম, রেমাক্রি অথবা টোয়াইন খালের শুরু থেকে শেষ। অফিসে ছুটি নিয়ে পরদিন আমাদের গ্রুপে ইভেন্ট দিয়ে দিলাম, ৮ দিনের এক্সপিডিশন, কোথায় যাবো লিখলাম না (কারন যারা আসলেই এমন একটা ট্রিপ করতে চায় তাদের জন্য এই ট্রিপ, পিক আর ফলস চেসার দের দুরে রাখার জন্য এই ব্যাবস্থা - সবাই নাফাকুম যেতে চায়)।
সালেহিন নিজ দায়িত্বে ট্রিপ এর জিপিএস রুট আর প্ল্যান করে দিবে বললো, কাউয়া শুরুতেই একপায়ে খাড়া।
প্রাথমিক ভাবে ঠিক হলো টোয়াইন খালে যাবো, এইদিকটাতে বেশি মানুষ যায় না। ট্রিপের এক সপ্তাহ আগে কাওয়া ডিগবাজি মারাতে আমি একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম, পুরা গ্রুপে অভিগ্গ মানুষ কম এইবার, একা কেমনে সামলাবো নতুন জায়গায় ভাবতে লাগলাম। প্রথম মিটিং করার সময় কারো কাছ থেকে চাঁদা নেয়া না হলেও জামানের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা সিকিউরিটি ডিপোজিট নেয়া হয়েছে, করন এর আগে অনেক ট্রিপ সে শেষ মুহুর্তে ক্যানসেল করায় বাকিদের ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। দ্বিতীয় মিটিঙে সবার থেকে টিকেট কাটার জন্য ১ হাজার করে চান্দা নেয়া হলো, জামানের থেকে আরো ১ হাজার, সে দুর্বল গলা্য় বলার চেস্টা করলো যে তার তো ১ হাজার আগের দেয়া আছে, আমরা হেসে উড়ায়ে দিলাম - যে ওটা সিকিউরিটি ডিপোজিট, ট্রিপ শেষে ফেরত দেয়া হবে। ৬ জনের টিকেট করে ফেলা হলো, আমি, পুষান, নিয়াজ, জামান, ইমরান আর মিষা।
কাউয়া ডিগবাজি মারাতে উপায় না দেখে আমি ঠিক করলাম টোয়াইন খাল বাদ, আমরা যাবো রেমক্রি খাল, ঐ দিক টা আমার আইডিয়া আছে মোটামোটি। সালেহিন কে বললাম নতুন রুট প্ল্যান করে দিতে, কাউয়া আর আনিকা কে বললাম ফুড প্যাক এর লিস্ট দিতে.... দেখতে দেখতে ট্রিপের দিন ঘনিয়ে আসলো, প্ল্যানেরো দেখা নাই, ফুডপ্যাকেরও দেখা নাই। শেষে কোনরকমে গুগল আর্থে পুরা রেমাক্রি একে ফেলে ফাইলটা জিপিএসে চালান করে দিলাম, টোটাল ট্রেইলটাতে ২ ইন্চি পরপর ক্যাম্প সাইট মার্ক করে ফেললাম। একটা ফুডপ্যাক লিস্ট ও দিয়ে দিলাম ২ দিন আগে, সবাইকে বলে দিলাম এইবার আমরা কোন পাড়ায় থাকবো না, পুরাটাই ব্যাকপ্যাকিং ট্রিপ হবে, কাজেই নিজেদের প্রয়োজনের সবকিছু সাথে নিয়ে নিতে হবে, আবার অতিরিক্ত কিছু নেয়া যাবে না, কারন বেশি ভারি ব্যাগ ৮ দিন ধরে টানা খুব কষ্টের হবে।
এদিকে শাহবাগে আন্দোলন শুরু হয়েছে রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে, মন খারাপ করে ৭ই ফেব্রুয়ারি বাস স্ট্যান্ডে হাজির হলাম একে একে সবাই, জামান আসে নাই, শেষ মুহুর্তে মনে হয় বৌ এর কাছে ছুটির দরখাস্ত না-মন্জুর হয়েছে, আমাদের যদিও বললো জ্বর এসেছে, আমরা ঐ গল্পে ভুললাম না, এমন জ্বর ওর আগেও দেখেছি অনেকবার।
আমাদের প্ল্যান রেমাক্রি খালের উৎস ট্ল্যাবং এর ডাবল ফলস থেকে শুরু করে পুরা খালের পাশ দিয়ে হেঁটে আমরা রেমাক্রি বাজারে আসবো যেখানে রেমাক্রি সঙ্খ নদীতে পড়েছে। যদিও গাইডের দরকার নাই কারন ঐদিকের সব ট্রেইল জিপিএস এ নিয়ে নিয়েছি তারপরও প্রসাশনিক ঝামেলা এড়ানোর জন্য ঠিক হলো গাইড নেয়া হবে, আমাদের পছন্দের গাইড আপেল মল্লিক কে ফোন করে রেডি থাকতে বললাম ৮ দিনের জন্য, সাথে যেনো বড় ব্যাগ নেয় আর কম্বল ঘুমানোর জন্য- কোথায় যাবো বলি নাই।
শুক্রবার সকালে বান্দরবন পৌছে নাস্তা করতে বসলাম থ্রিস্টার হোটেলে, ওখানে সাগর ভাইয়ের সাথে দেখা হলো। সবাই ডিম পরটা অর্ডার দেয়ার সময় বেয়ারা পুষানকে জিগ্গাসা করলো মামলেট নাকি ওমলেট, পুষান অনেক্ষন চিন্তা করে উত্তর দিল "ডিম" ।
দুপুরে আমরা রুমা পৌছালাম, সবাই মিলে ভাত খেয়ে চান্দের গাড়িতে রওয়ানা দিলাম বগালেকের দিকে, এটাই আমার প্রথম গাড়িতে করে বগালেক যাওয়া, করন আমাদের মুল ট্রেকিং শুরু হবে রেমাক্রি খাল থেকে, সময় না বাঁচালে পরে শেষ করতে পারবো না রেমাক্রি খাল পুরাটা এই ভয় ছিল।
বিকালে বগালেকে উঠে পালই দার দোকানে চা আর একটা পাকা পেঁপে খেয়ে আমরা হাঁটা দিলাম কেউক্রাডং এর দিকে। কেউক্রাডং যখন পৌছালাম তখন আকাশে তারার ঝিকিমিকি, আমরা শিড়িতে বসে ইমরান কে পিক সামিটে পাঠিয়ে দিলাম, সিড়ি ভাঙার কোন আগ্রহ ছিলনা বেচারার (রুগি মানুষ, হাটুতে ব্রেন টিউমার), কিন্তু এইটা ওর প্রথম বান্দরবন ভ্রমন, তাই পিড়াপিরি করলাম ঝুলিতে একটা পিক সামিট ভরার জন্য।
এরপর আবার হাঁটা, পাসিং পাড়াতে দোকানে বসে সবাই পানি আর বিস্কুট খেলাম, সবাইকে বললাম এটাই শেষ দোকান, তড়িঘড়ি করে কয়েক প্যাকেট বিস্কিট আর কিছু লবন কিনে নেয়া হলো সামনের দির্ঘ ৭ দিনের জন্য। আপেল বললো ১ কেজি বেগুন কিনতে - রাতে পুড়ায়ে ভর্তা খাবে, আমি রাজি হলাম এক শর্তে, বেগুন ওর ব্যাগে যাবে। বেচারা বেগুন খাওয়ার আসা ত্যাগ করলো, ওর ব্যাগও ভর্তি, ওর ভাগের রেশন আর তাবু (প্রায় ৫-৬ কেজি) হাঁটার শুরুতেই ওর ব্যাগে চালান করে দিয়েছি আমি আর নিয়াজ।
আপেল আসা ত্যাগ করলেও আমার মনে বেগুন ভর্তা দাগ কেটে গেছে গভীর ভাবে। লিডার হিসাবে অর্ডার দিলাম সবাই ৩-৪ পিস করে বেগুন ব্যাগে নিয়ে নাও, সবাই বেশ অনিচ্ছার সাথে ব্যাগটাকে আরেকটু ভারি করলো। আবার শুরু হলো হাঁটা, এবার পুরাটাই নিচে নেমে যাচ্ছি, হাঁটার গতি ভালো, আজকেই ট্ল্যাবং পৌছানোর ইচ্ছা।
পুরাটা পথ আমাদের গান শোনাচ্ছিল রেডিও গারলিক (নেপালে অন্নপূর্না বেসক্যাম্প ট্রেকিংয়ের সময় নিয়াজের এই নামকরন করা হয়), এর আগেও খেয়াল করেছি, সন্ধা হয়ে গেলেই আপেলের চেহারা কেমন যেন শক্ত হয়ে যায়, হাসি মুছে যেয়ে কেমন যেন একটা দু:স্চিন্তার ছায়া পড়ে, হঠাত করে সবাইকে চুপ করতে বললো, আমরা চুপচাপ হাঁটতে লাগলাম। রেডিও গারলিক মৃদুস্বরে গান ধরতেই আপেলের বকা খেলো।
আমি কারন জানতে চাইলে বললো "ভয়ানক আছে, শব্দ কইরেন না"।
আমরা মনের ভেতর ভয়ানকের ভয় নিয়ে এইবার এক ঘন ঘাসের জংগলে ঢুকলাম, সবাই কাছাকাছি হাঁটছি, আপেল সবার সামনে দা হাতে নিয়ে। হঠাত সে আমাকে বললো সামনে যেতে কারন আমার মাথায় লাইট লাগানো আছে। আমি লাঠি হাতে ঘাস ঠেলে ঠেলে আগাচ্ছি, এর মাঝে পুষান আবার বললো শামিম শাহাদাত নাকি ভাল্লুক দেখেছে এই এলাকায় কয়দিন আগে। মনে হচ্ছে হুস করে ঐ মনে হয় বিশাল কালো "শ্বেত ভল্লুক" বের হয়ে এলো সামনের ঝোপ থেকে।
একসময় ক্লান্তির শেষ পর্যায়ে পৌছে আমরা একটা ফাঁকা যায়গায় পৌছালাম, আকাশ নিকষ কালো, সামনে শব্দ পাচ্ছি ঝরনার, আপেল বললো ডাবল ফলস এটাই। সময় তখন ঠিক রাত ১২টা। আমরা টর্চের আলোয় কিছু কাঠকুটা জড়ো করে একটা আগুন জালালাম, এরপর কিছু ঘাস কেটে তারউপর সবাই একে একে তাবু ফেললাম। সব মিলিয়ে ৪ টা তাবু। একটাতে আমি আর নিয়াজ, আরেকটাতে পুষান দম্পতি, ইমরান আর আপেল একা ঘুমাবে আমাদের ব্যাগ সহ।
তাড়াতাড়ি করে রান্না করে খেয়ে নিলাম সবাই, পোলাউ এর চালের ভাত, বেগুন ভর্তা আর চিংড়ির সুটকি ভর্তা। আমি এর মাঝে একটা বড়সি ফেলে এসেছি, মাছ পেলে সকালে খাওয়া হবে।
ছবি: পুষান শান
রেমাক্রি খালের প্রথম দিন:
সকালে ঘুম ভাঙলো মানুষের কথা বার্তায়, তাবু থেকে বেরিয়ে দেখি টুরিস্ট আসছে। তারা একটুক্ষন ঝরনার দিকে তাকিয়ে এরপর আমাদের দেখতে লাগলো, ঝরনার থেকে আমাদের দেখে চমৎকৃত বেশি তারা। আমাদের হাবভাবে ভাবলো আমরা না জানি কত বড় "হাই অলটিচুড ট্রেকার", জানতে চাইলো কিভাবে কোথায় যাওয়া যায়।
তাদের প্ল্যান তাজিংডং আর নাফাকুম এই দুই বস্তু দেখা, তাদের গাইডের (বিকাশ) তেমন কোন আগ্রহ দেখলাম না। আমরা যতটুকু পারলাম বুদ্ধি দিলাম, আপেলের কাছ থেকেও পথের কিছু হদিস নিলো ওরা। সবাই হাফ নুডুলস আর সুপ সাথে কফি দিয়ে নাস্তা সেরে রওয়ানা দিলাম খাল ধরে। আপেল বেশ কয়েকবার উপর দিয়ে রাস্তা আছে বলার পর ওকে বুঝিয়ে বললাম এইবার আমরা খাল ধরেই যাবো। শুরুতে খালটা অনেক চিকন আর দুর্গম ছিল, আস্তে আস্তে প্রসস্হ হতে লাগলো যত এগুলাম।
স্থানীয় কিছু মানুষকে পেলাম খাল সেঁচে মাছ ধরছে, কিন্তু সবই ছোট ছোট পোনা মাছ। মাঝখানে ২/৩ বার ছোট্ট করে ব্রেক দেয়া হলো নাস্তা-পানির জন্য, একবার চাও বানানো হলো। পথে পুষান বকা খেলো আমরা কাছ থেকে, কারন ওকে দেখলাম পথে একজন কে জিগ্গাসা করছে সামনে খোলা যায়গা পাওয়া যাবে কিনা তাবু খাটানোর জন্য
সন্ধার আগে আগে ঝিরির পার্শ্বে একটা সুন্দর খোলা জায়গায় থামলাম, দেরি করে শুরু করায় আজ লান্চ করা হয় নাই, আপেল আগুনের জন্য কাঠকুটা জড়ো করতে লাগলো আর আমরা তাবু খাটাতে লাগলাম, ইমরান কে বলা হলো চা-নাস্তার ব্যাবস্থা করতে। এর মাঝে পুষান দম্পতি সাবান শ্যাম্পু আর ক্যামেরা নিয়ে একটু আড়ালে গেলো গোসল করতে.... বেশ বড় করে আগুন জ্বালি্যে আমরা বসলাম ইমরানের আনা মশারির নেট দিয়ে একটা তিনকোনা জাল বানাতে। আমি এর মাঝে বড়সি দিয়ে কিছুক্ষন ট্রাই করে ফেরত আসছি, মাছ খায়না।
আপেল কে টর্চ দিয়ে পানিতে চিংড়ি দেখাতেই ছেলেটা পাগল হয়ে গেলো, কনকনে ঠান্ডা পানিতে নেমে হাত দিয়ে চিংড়ি ধরতে লাগলো, কিছুক্ষন পর মিষা আর আমি যোগ দিলাম আমাদের জাল নিয়ে। দেখতে দেখতে বেশ কিছু ছোট মাছ, অনেকগুলা চিংড়ি আর ৩ টা বড় সাইজের মাছ পেয়ে গেলাম। রাতের খাবার সেদিন হলো তাজা তাজা মাছের দোপিয়াজি, সাথে মাশরুমের ঝোল ঝোল ভাজি। অনেক রাত পর্যন্ত আগুনের পাশে কফির মগ হাতে নিয়ে আড্ডা দিয়ে সেদিন ফুরফুরা মন নিয়ে ঘুমাতে গেলাম সবাই। এই ক্যাম্পের নাম আমরা দিয়েছিলাম "মৎস শিকার ক্যাম্প"
"মৎস শিকার ক্যাম্প
দ্বিতীয় দিনের শেষে ধুলি ক্যাম্প:
দ্বিতীয় দিনটায় বেশ কিছু ছোটখাটো ঝরনা পার হয়ে চলতে থাকলাম।
আমাদের মুল এন্টারটেইনমেন্ট পুষান কে পচানো। আনিকার অভাব পুষান বেশ ভালোভাবে পুরন করছে, একটাই পার্থক্য, পচালে আনিকা কাউকাউ শুরু করে - কিন্তু পুষান হয় চুপ থাকে নাইলে একটা ক্যাবলা মার্কা হাসি দ্যায়। পচায়ে খুব একটা শান্তি পাচ্ছিলাম না। পথে পুষানের জামাই মিষা জংগলের ভেতর একটা কলা গাছের থেকে কলার মোঁচা পেড়ে আনলো, আমরা সবাই জিহ্বাটায় ঠোট বুলিয়ে নিলাম রাতের খাওয়ার কথা চিন্তা করে। বিকালের পর রোজকার মতো খেয়াল রাখতে থাকলাম ক্যাম্প করার উপযোগি যায়গার খোঁজে, শেষে একটা সমান জায়গা পেলাম, খালের থেকে একটু উপরে, বেশ শুকনা জায়গাটা।
প্রথমে বালু ভাবলেও পরে দেখলাম মিহি ধুলা। এখানেই ক্যাম্প করে ফেললাম, পাশে একটা মরা ঝিরির খোড়লে জালালাম আগুন। সন্ধায় চায়ের পর রাতে রান্না হলো ভাত, কলার মোঁচা আর মাশরুম দিয়ে চিংড়ির শুটকি ভাজি। খাওয়া শেষে আপেল তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গেছে, আমরা আগুনের ধারে চা খাই আর আড্ডা দি, ওদিকে পুষান ব্যাস্ত সেটাপ ছবি (মেকি ছবি) তুলতে। তাবু মাথায় নিয়ে খালের ঐপারে যায় একবার, এদিকে এসে আগুন নিভাতে বলে একবার.... আমরা সবাই ওর জন্য আগুন আড়াল করে বসি যেনো ওর সাজানো সেট এ আগুনের আলো না পড়ে, আর ও চলে গেলেই সরে বসি আর আগুনে আরো কিছু খড়কুটা দিয়ে বড় করে দি।
রান্না
পুষানের ছবির সেট তৈরী
ধুলি ক্যাম্প
দূর্যোগের রাত:
একই রুটিন মেনে আরেকটি দিন শুরু করলাম, যেহেতু আমরা ইচ্ছা মতো সুন্দর জায়গা পেলেই ল্যাটায়ে পড়ি নাহলে পানিতে ঝাঁপ দি তাই মনে ভয় দেখা দিল এভাবে চলতে থাকলে ট্রিপ ১০ দিনেও শেষ হবে না, সবাইকে তাড়া দিলাম যে আজকে অনেক হাঁটতে হবে, যেভাবেই হোক ক্যাম্প ৫ এর আশেপাশে পৌছাতে হবে। ঠিক হলো আজকে আমরা যত বেশি সম্ভব দুরত্ব কাভার করবো, তারপর হাতে সময় থাকলে শেষের দিকে মজা করা যাবে। কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক, একটা বড় কুমের পাশে বেশ চমৎকার একটা যায়গা দেখে আমরা একটু জিরাতে বসলাম, একটু বিস্কিট, পানি আর বিড়ি খাওয়ার জন্য। হঠাৎ শুনি আপেলের চিৎকার, বড় একটা পাথরের উপর দাড়িয়ে সে আমাকে ডাকছে। আমি দৌড়ে যেয়ে দেখি পানির দিকে উত্তেজিত ভাবে দেখাচ্ছে আমাকে, তাকিয়ে দেখি টলটলে পানির ভেতর বেশ বড় একটা মাছের ঝাঁক ঘুরে বেড়াচ্ছে।
কিষের দেরি কিষের কি, সব ব্যাগ ট্যাগ গাছের ছায়ায় ফেলে আমি আপেল আর মিষা ছুটলাম বড়সি নিয়ে। তিনজন অনেক্ষন বসে থাকলাম কিন্তু মাছ আর টোপ খায় না, বড়সির আসে পাসে ঘুরে শুধু। মাছগুলাকে গালি দিলাম যে বড়সি কি জিনিস চেনে না এরা, টোপ যে খেতে হয় তাও যানে না মূর্খের দল। ওদিকে ইমরান আর নিয়াজ আমাদের এখানে দেরি হবে বুঝে চুলা বানায়ে দুপুরের খাওয়ার ব্যাবস্থা করে ফেলেছে, আর পুষান ছোট্ট বাচ্চার মত একটা ঝরনার মধ্যে গোসল করছে। ৩ ঘন্টা সময় নষ্ট (!! নাকি এনজয় বলবো?) করে খেয়ে নিয়ে বিকালের দিকে বেশ টেনে হেঁটে আমরা ঐদিন ৬-৭ কিলো পথ পাড়ি দিয়ে একটা খোলা যায়গায় আসলাম, দ্বীপের মত, দুইদিক দিয়ে খাল চলে গেছে, চারিদিকে খোলা প্রান্তরে হু হু করে ঠান্ডা বাতাস বইছে।
আগুনের ধারে সবাই গোল হয়ে বসে রান্না করছি তারপরও ঠান্ডায় কাঁপছি। খাওয়া আর আাড্ডা শেষে ক্যাম্পিংএর সবচেয়ে কঠিন নিয়ম ভেঙে কুকিংসেটের ভেতর অনেকখানি কয়লা নিয়ে তাবুর ভেতরে কিছুক্ষন বসে থাকলাম তাবু গরম করার জন্য। ইমরান আমার দেখাদেখি এলুমিনিয়ামের মগে কয়লা নিয়ে মিষার মেলামাইনের প্লেটে করে বসে থাকলো, একটু পর দেখি ইমরান মিষাকে বললছে ওর কোন দোষ নাই, সব দোষ মেলামাইনের প্লেটের, ঘটনা হচ্ছে গরমে মিষার প্লেটের তলা ফেটে গেছে। আমরা সবাই উল্টা মিষাকে বকাবকি করলাম ২৮টাকা দামের প্লেট কেনার দায়ে। সবাই যাযা কাপড় আছে পড়ে ঘুমাতে গেছিলাম ঐরাতে।
ঘুমানোর আগে ওষুধ মনে করে আমি ইমরান আর নিয়াজ ওর আনা মধু ২ চুমুক করে মেরে দিলাম চুপ চুপ করে।
রাতে ঘুমানোর আগে সবাইকে বকা বকি করলাম সকালে দেরি করার জন্য, যদিও আমরা সবাই ৭ টার দিকে উঠি, কিন্তু প্রতিদিন ১১টা বেজে যায় রওয়ানা দিতে দিতে। আপেলকে বললাম সকাল ৮ টার সময় যে রেডি হবে তাকে নিয়ে যেন রওয়ানা হয় ও। পরদিন সকালে উঠে দেখি চারিদিকে কুয়াশা, রোদের কোন দেখা নাই, দূর্যগপূর্ন আবহাওয়ার দোহাই দিয়ে আমি আইন বদলালাম যে রোদ উঠলে আমরা যাবো। বলাই বাহুল্য ঐদিন সকালে আমরা ১২ টার দিকে রওয়ানা দিয়েছিলাম।
ভয়ানক ক্যাম্প:
বেশ দেরি করে সকালে উঠে দেখি ক্যাম্পের সামনে ৩জন স্থানীয় ভদ্রলোক বসে আছেন, আমি আয়েশ করে একটা সিগারেট ধরাতেই একজন এসে বললো সিগারেট দেন, আমি ১ টা অমূল্য ব্যানসন বের করে বাড়িয়ে দিতেই কেমন যেন ক্ষিপ্ত ভাবে উনি বললেন উনারা ৩ জন, ৩টা দিতে হবে। আমার তো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার দষা, কয় কি, ৬ দিন ধরে রেশন করে করে বিড়ি খাই আমি আর নিয়াজ। অবস্থা বেগতিক দেখে নিয়াজ আমাদের ব্যাকআপ থেকে স্টার লাইট বের করে দিল ২ টা। এই ঘটনা দেখে মিষা অনেক্ষন হাসলো, বেপার কি? ব্যাপার কিছুই না, এই ৩ জন নাকি ঘন্টা ২ ধরে আমার আর নিয়াজের ঘুম থেকে উঠার জন্য অপেক্ষা করছে, কারন মিষার কাছে সিগারেট চাওয়ার পর ও বলেছিল যে ও খায় না, আর যারা খায় তারা ঘুমাচ্ছে নাক ডাঁকায়ে মিষারে একপ্রস্থ গালাগালি করে আমরা নাস্তা করে রওয়ানা দিলাম।
বলে রাখা ভালো, এই পর্যন্ত এসে আমাদের পথে খাওয়ার টুকটাক (ট্রেইলমিক্স, বিস্কিট, চকলেট) সব প্রায় শেষের পথে, কারন কিছুই না, ম্যানডাটরি যে লিস্ট দেয়া হয়েছিল তার থেকে পুষান সাহেব আবার কমিয়ে কমিয়ে এনেছেন সবকিছু, ক্ষিদা লাগলেই আমরা পুষানকে গালাগালি করে পেট ভরাই।
মাঝে এক যায়গায় লান্চ ব্রেক দিলাম, এর মাঝে দেখা হলো জাল হাতে একজনের সাথে, অভ্যাসমত আমরা যানতে চাইলাম মাছ আছে কিনা, উনি নাই উত্তর দিতে আবার কমন প্রশ্ন খাওয়ার মত ফল কিছু পাওয়া যাবে কিনা, পেঁপে পাওয়া যাবে শুনে আমরা বললাম ৫ টা পেঁপে এনে দিতে। উনি বল্লেন ৩০মিনিট সময় লাগবে বুলম পাড়ায় যেয়ে নিয়ে আসতে, আমরা অভয় দিলাম পেঁপে খাওয়ার জন্য দরকার হলে আমরা সারাদিন অপেক্ষা করতে রাজি। ৩০ মিনিট পর একটা পাকা পেঁপে খেয়ে বাকিগুলা কাঁচা থাকায় ১টা সাথে নিয়ে রওয়ানা হলাম বুলম দাদাকে বিদায় জানিয়ে। পথে পড়লো সাতভাইকুম। জলমানব মিষা আর আপেল সাঁতার কেটে ওপারে গেল দেখতে ভেলা পাওয়া যায় কিনা, না থাকলে ওরা বানায়ে আনবে।
কিছুক্ষন পর ভেলা নিয়ে হাজির হলো আপেল, প্রথমে ট্রিপে গেল সব ব্যাগ আর নিয়াজ। পরের ট্রিপে আমরা বাকিরা। মিষা আনন্দের সাথে সাঁতরে পার হলো কুম। একদিকে পাহাড়ের খাঁড়া দেয়াল আরেকপাশে রেমাক্রি নিয়ে আমরা হেঁটে চললাম, একসময় বেশ কিছুটা জন্গল পার হয়ে হাজির হলাম নাইক্ষামুখে। বিশাল বিশাল পাথর, ২ টা প্রপাত, একদিকে রেমাক্রি, পাশেই এসে পড়েছে নাইক্ষা।
পাথরের একটা চাতালের মতো জায়গা, অনেক নীচে পানি, পেছনে পাহাড়ের দেয়াল উঠে গেছে জংগলে ভর্তি। এখানে এসে সবার গান কথা বন্ধ হয়ে গেল, বিকাল পার হয়ে গেছে। সামনে এগিয়ে দেখলাম পথ নাই, কুম দিয়ে যেতে হবে, জিপিএসে দেখলাম এটা অমিয়াকুম এর এই মাথা।
সাঁতরে ভেলা আনতে যাচ্ছে মিষা আর আপেল।
ভেলা নিয়ে ফিরছে মিষা আর আপেল।
ভেলায় করে কুম পাড়ি।
আমরা যেহেতু উল্টা দিক দিয়ে আসছি কাজেই কোন ভেলা নাই এইপারে। মিষা ঠান্ডার মধ্যে নামতে খুব একটা ইচ্ছা প্রকাশ না করাতে আমি মনে মনে খুশি, এমন একটা যায়গায় না থাকতে পারলে জীবন বৃথা। আপেলের মুখ শুকনা, ভয়ানকের ভয়ে মনে হলো বেচারা বেশ কাতর। আমরা সবাইমিলে পাথরের চাতালে ছড়ায়ে ছিটায়ে তাঁবু পাতলাম, সবাই মাঝের দিকে থাকতে চায়, শেষে একপ্রান্তে আমি আর নিয়াজ আরেকপ্রান্তে আপেলের জায়গা হলো, পুষান দম্পতি আর ইমরানের তাঁবু মাঝে।
খাবারের টানাটানি শুরু হয়ে গেছে, কাঁচা পেঁপের সাথে শুকনা চিংড়ির ভাজি আর ভাত। এই সময় আপেলকে ভয়ানকের কথা মনে করায়ে দিয়াতে হঠাত উত্তেজিত ভাবে বলে উঠলো "আসুক ভয়ানক, পুড়ায়ে খায়া ফালাবো"।
আমরা হেসে থমথমে ভাবটা কাটাতে চাইলাম। আমরা এই ট্রিপের সবচেয়ে নির্জন স্থানে ক্যাম্প করেছি আজকে, দুইদিকে কুম, পানি ছাড়া মানুষের আসার কোন পথ নাই, আর টুরিস্ট ছাড়া সাধারন কোন মানুষের এখানে আসার কথা না। মানুষ যেহেতু আসে না, বন্য প্রানি থাকার সম্ভবনা অনেক বেশি।
একমাত্র এই ক্যাম্পেই আমরা রাতে ক্যাম্পফায়ার না নিভিয়ে ঘুমাতে গেলাম। রাতে চারিদিক থেকে শুনতে পেলাম হরেকরকম শব্দ, গাঁ কাটা দেয়া শব্দ, রাতে ঘুমের মধ্যেই শুনলাম কিছু একটা হালকাভাবে তাবুর আশেপাশে হেঁটে বেড়াচ্ছে, ঘাপটি মেরে আবার ঘুমিয়ে গেলাম। এই ক্যাম্পটার নাম ছিল "ভয়ানক ক্যাম্প"।
সকালে উঠে দেখি পুষান মিষা আর নিয়াজ ফটো শুট করতে ব্যাস্ত, পুষানের ডিরেকশন অনুযায়ি মিষা বিভিন্ন পাথরের উপর একবার করে তাঁবু পাতছে, তারপর ৩ জন মিলে পোজ দিয়ে দিয়ে ছবি তুলছে, বেশ মজা লাগলো দেখে। নাস্তার পর জলমানব মিষা সাঁতরে যেয়ে ভেলা নিয়ে আসলো কুমের অপরদিক থেকে।
এই কুমে ২ টা ভেলা পাওয়া গেছে, একটা ভিআইপি (বেশ বড়) আরেকটা লোকাল সার্ভিস টাইপ। ভিআইপি ভেলাতে নিয়াজ কে উঠানো হলো সবার ব্যাগ সহ, পাইলট আপেল। লোকাল সার্ভিসে উঠলাম পুষান, ইমরান আর আমি, সাথে এক্সট্রা ইন্জিন হিসাবে পানিতে মিষা ঠেলতেছে। আমাদের সবার ভারে এই ভেলা কোমর পর্যন্ত ডুবে গেলো, ওভাবেই আমরা কুম টা পার হয়ে গেলাম।
আমাদের রেশনের অবস্থা এতদিনে খুবই খারাপ অবস্থায় এসে পৌঁছেছে, কারো কাছে কিছু নাই খাওয়ার মত, এর ভেতর একেতো পুষান রেশন কম এনেছে, আবার ইমরানকে দোষারোপ করলো যে রাতের বেলা ওর ব্যাগ খুলে নাকি বিশাল বড় বড় সব ক্যাডবেরি চকলেট চুরি করে খেয়ে নিয়েছে।
ইমরান মনের দু:ক্ষে আমার কাছে বিচার দিল, আমি ভেবে চিন্তে রায় দিলাম ইমরান নিরাপরাধ, কারন এতগুলা চকলেট চুরি করলে ও নিস্চয় আমাকেও ভাগ দিত, আর নাহলে আমরা ওকে খেতে দেখতাম, নাইলে অন্তত চকলেটের খোসা তো পাওয়া যেত। আর যেহেতু আমরা শুরু থেকেই জানি যে পুষান রেশন কম এনেছে (খেজুর ও মাশরুম খুঁজে পায়নি ঢাকা শহরে) তাই সবাই উলটা পুষান কে বকে দিলাম যে কি এনেছে নিজেই জানে না আবার নিজের দোষ ঢাকতে অন্যকে চোর বলে ইত্যাদি ইত্যাদি। ইমরান নির্দোষ রায় পেলো আর পুষানকে মিথ্যা অপবাদ দেয়ার দায়ে একটা চকলেট ওয়েফার জরিমানা করা হলো। বিসন্ন মুখে ব্যাগ থেকে শেষ চকলেটবারটা আনা মাত্র আমরা ওকে না দিয়ে সবাই ভাগাভাগি করে খেয়ে ফেললাম। পুষান রাগত ভাবে যানতে চাইলো কেন ওকে দেয়া হলো না, আমরা বললাম "বিচারের পর আসামি জরিমানা দিলে আসামি কি সেটার ভাগ পায় নাকি!!", এই অবস্থায় পুষানের মাথা আরো গরম হয়ে গেল, সে বলতে লাগলো বিচারকও চোর, সে এই রায় মানে না।
টিওবি ভ্রাম্যমান আদালত অবমাননার জন্য ওকে সাথে সাথে আমি আর নিয়াজ মিলে আবার ফাইন করে দিলাম, আরেকটা চকলেটবার আনাদায়ে বান্দরবনে কালাভুনা (এই কালাভুনার গল্প গত ৪ দিন ধরে পুষান শুনাচ্ছিল আমাদের। )...... [পরবর্তিতে বান্দরবন শহরে পুষান আমাদের কালাভুনা (!) বলে যা খাওয়ালো সেটা হোটেলের সবাই এবং আমরাও গরুর গোশত বলে রায় দিলাম। পেটভরে গরুর ভুনা আর ভাত খেয়ে - আদালতের জরিমানা ঠিক ভাবে দিতে না পারায় পূষানের এই কেস ভ্রাম্যমান থেকে টিওবি সাহাবাগ কোর্টে আমরা স্হানান্তর করে দিলাম]
আমিয়াকুমের প্রপাত
পথে আমিয়াকুমের পাশে বেশ কিছুক্ষন দাপাদাপি করে আমরা আবার হাঁটা শুরু করলাম, আজকের গন্তব্য হরিন ক্যাম্প। এর আগেও এইখানে একবার ক্যাম্প করেছিলাম, চারিদিকে হরিন ডাকাডাকি করে তাই এই নাম। এবারো পেলাম হরিনের ডাক।
আর গতবারের মতো এইবারো আমাদের ধরলো কুত্তা পোকা (tick). হরিন ক্যাম্পই আমাদের শেষ ক্যাম্প এরপর আমরা পৌছেযাবো রেমাক্রি বাজারে। শেষ ক্যাম্প হিসাবে আমরা এইরাতে খেলাম খিচুড়ি (৭ দিন ধরে আধাকেজি ডাল ব্যাগে নিয়ে ঘুরছিলাম এই রাতের জন্য। ) মাঝখানে পথে খাবার সব শেষ হয়ে যাওয়ায় আপ্রুকুমের কাছে আমরা ঝিরি থেকে পাহাড়ে পাড়ায় উঠেছিলাম কিছু ফল বা বিস্কিটের আসায়। ৩ ঘন্টা পাহাড় ডিঙায়ে ৪ প্যাকেট মিস্টি টোস্ট আর ৩ প্যাকেট মুড়ি কিনে কান ধরে তবা করে আবার আমরা যখন খালে নামলাম তখন আপ্রুকুম পার হয়ে গেছি, মিষা মন খারাপ করলো এই কুমটাতে সাঁতার কাটতে পারলো না তাই, সময় নাই হাতে তাই আমরা আর ব্যাক করলাম না।
হরিন ক্যাম্প
পরদিন পথে পড়লো নাফাকুম, স্বভাবমত মিষা ঝাপিয়ে পড়লো পানিতে, আর মাত্র ৩ ঘন্টা পর আমরা গন্তব্যে পৌছে যাবো তাই সবাই রিলাক্স, সবাই এখানে নেমে পড়লাম পানিতে।
আমি একটু সাঁতার কেটে পাথরের উপর শুয়ে ঘুম দিলাম একটু। সবাই দাপাদাপি করে উঠার পর আমরা মুড়ি আর শুকনা নুডুলস মাখালাম, একি সাথে ২ টা বাঁশের ভেতর বাকি চাল যা ছিল সেগুলো, সাথে চিনি, আর ট্রেইলমিক্সের বাকি কিসমিস, বাদাম, আমসত্ব দিয়ে ফিন্নি বানাতে আগুনে বসায়ে দিয়েছি। সবাই কাঁচা বাসের ঘ্রানওয়ালা ফিন্নি খেয়ে আমরা আবার রওয়ানা দিতে যাবো, এর মাঝে হাজির স্থানীয় কিছু মানুষ জাল হাতে। আমরা আবার বসে পড়লাম মাছ ধরা দেখতে। নাফাকুম থেকে ওরা পেলো বেশ কিছু বড় বড় অদ্ভুত চেহারার মাছ, নাম বললো বাঘ মাছ।
বিকালে রেমাক্রি বাজারে এসে পেট ও মন ভরে দুধ চা আর বিস্কিট/চিপস খেয়ে আমরা মংপ্রু দার নির্মানাধিন কটেজে গেলাম, পাহাড়ের উপর সুন্দর কাঠের কটেজ, বারান্দা থেকে দেখা যায় রেমাক্রি যেখানে সঙ্খ নদীতে পড়েছে। আমরা বারান্দায় তাঁবু পাতলাম। রাতে খেলাম বিশাল সাইজের এক পাহাড়ী মোরগ, সাথে আলুর চপ ডাল আর ভা্ত।
লক্ষ করুন: আমরা এই ট্রিপ টা করেছিলাম "লিভ নো ট্রেস" ব্যাপারটা মাথায় রেখে, আমরা কোন প্লাস্টিক বা অপচনশীল কোন কিছু ফেলে আসিনি ট্রেইলে, সাথে করে নিয়ে এসেছি অথবা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আগুন সবসময় নিভিয়ে কয়লা গুলা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, কিছু কিছু স্থানে বালি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে।
সাতভাইকুম থেকে আমরা দেখা পাচ্ছিলাম সভ্য মানুষের সভ্যতার নিদর্শন: লাভ ক্যান্ডি, স্যালাইন, চিপস, বিস্কিট, সিগারেট এবং আরো হরেকরকম খাবারের প্যাকেট, এগুলো যে শুধু পরিবেশ ও সৌন্দর্য নষ্ট করছে তাই না, আমাদের মতো যারা ৭ দিন যাবত এইসব সভ্য পন্যের দেখা পায় নাই তারা চরম ভাবে মানষিক বিপর্যস্থ হয়েছে।
ট্রাভেলগ এখানেই শেষ।
পূর্বে প্রকাশিত আমার ব্যাক্তিগত ব্লগ সাইটে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।