প্রকৃতিকে করো তব দাস-চে দ্য আইডল (ব্লগার নং - ৩১৩৩৯)
১।
এই ফোঁটাটা আসমান থেকে নামছে। সরাসরি আসমান থেকে। আসমানে কালা কালা মেঘ। রাইতের মত কালা কালা মেঘ।
বড়লোগের উঁচা উঁচা বিল্ডিঙের কাঁচের জানালা বাইয়া বিজলীর আলো য্যামনে উপচায়া উপচায়া পড়ে আর নাইমা আইসা ফুটপাতে গড়ান দ্যায়, ত্যামনি আসমানের জানালা দিয়াও বিজলী চমকাইয়া চমকাইয়া পেলাস্টিক ভেদ কইরা ভেতরে হান্দাইলে আমি ফোঁটাটা দেখতে পাই।
ফোঁটাটা আসমান থেকে নামছে। আসমানে কালা কালা মেঘ। মেঘের উপর খোদার আরশ।
২।
ছাদের কার্ণিশে বিশাল লাইটে আলোকিত হয়ে থাকে আকাশের অনেকখানি। এই ব্যপারটা আমার ভালো লাগে না। প্রকৃতি আলোকিত হবে নিজস্ব আলোয়। রাতে সে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। তবে কেন তার নিজস্বতা-হরণ? অবশ্য এটাই স্বাভাবিক।
কার নিজস্বতা হরণ হয়ে যাচ্ছে না? ঐ মাথার মোড়ের বিশাল বিলবোর্ডে আমার রুমের সমান্তরালে যে মেয়েটি ঝকঝকে দাঁতের বিজ্ঞাপন, তার কি কোনো নিজস্বতা আছে!
তবে আমার এই মুহুর্তে প্রকৃতির নিজস্বতা-হরণ ভালোই লাগছে। বৃষ্টির প্রত্যেকটি ফোঁটা ঝিকমিক করতে করতে নিচে নেমে যাচ্ছে। নেমে যাচ্ছে সোজা ফুটপাথে। বৃষ্টির মত সুন্দর একটা জিনিস ফুটপাথে আত্মাহুতি দেয়, এই ব্যপারটা আমার কখনোই ভালো লাগে না।
৩।
পেলাস্টিকের একটা কোণা উইঠা গেলেও আমি কিছু বুঝবার পারি না। কেডা হইবার পারে? মাজারের পোলাটা? তাইলে আইজ খানকির পোলার কপালে শনি আছে। একডা লাথি দিমু নাক বরাবর।
বিজলী চমকাইলে দেহি, মাজারের পোলাটা না, তালেবর। গামছা দিয়া মাথা মুছতাছে।
আইজ মনে লয় সুবিধা করবার পারে নাই।
৪।
আমি এখন দাঁড়িয়ে আছি ফুটপাথে। বৃষ্টির প্রত্যেকটা ফোঁটা আমার দেহ ছুঁয়ে যাচ্ছে আর বৃষ্টির স্পর্শ ছড়িয়ে পড়ছে মস্তিষ্কে – শিরায় – হৃদপিন্ডে। ‘এমন দিনে তারে বলা যায়...’
কারে বলা যায়? বৃষ্টিকেই বলি...
ঝিরঝির প্রেমের মত
প্রথম ও প্রবল প্রেমের মত
স্পর্শ করো আমার তৃষিত অবিশ্বাস
কান্নার গোধূলি থেকে সমুদ্রের ডাক
স্পর্শ করো হে বৃষ্টি, স্পর্শ করো...
আমার লেখার খাতাটা বৃষ্টি তে ভিজে গেছে।
চরণগুলো লিখে রাখা দরকার। একটুকরো পচা ইটে আমি লিখতে শুরু করলাম ফুটপাথে...!
৫।
আমার কী কোনো নিজস্বতা ছিলো কোনো কালে? আদৌ? আমি ভাঙনের গহীনে জন্ম নিয়ে ভাঙতে ভাঙতেই বেড়ে উঠেছি। কেউ আমায় গড়তে আসে নি, কখনো কাছেও ডাকে নি। কেবল ভাঙনে নতুন নতুন সুরযোজন করে গেছে।
একাকিত্বের নাম যদি নিজস্বতা হয় তবে তা আমার অনেকখানিই ছিলো। কিন্তু আমি জানি এসবের নাম নিজস্বতা নয়। আমার নাম তাই পাল্টে রেখেছি রাত্রি। যার নিজস্বতা রোজ হরণ হয়ে যায়।
৬।
-পেলাস্টিকডা পাল্টান দরকার। জায়গাডাও ভালা না। মাজারের পোলাটা ডিসটাব করে।
তালেবর আমার কথার উত্তর দ্যায় না। সে পেলাস্টিকের ফুটা দিয়া আসমানে চায়া থাকে।
আমিও চাইয়া থাকি। কিচ্ছু দ্যাখা যায় না। তালেবর কী কিছু দেখতে পায়? আরশ দেখতে পায়?
আরশ থেকে আরেকটা ফোঁটা নাইমা আইসা তালেবরের চোখে পড়ে। চোখ থেকে গড়ায়া পড়লে মনে অয় তালেবর কাঁদছে। আমি তালেবর কে জড়ায়া ধরি।
আইজ রাইতে আর ক্ষ্যাপে যামু না।
তালেবর জানব, বৃষ্টির লাইগা। আর আমি জানব, তালেবরের লাইগা।
৭।
কবিতাটা আমি লিখতে পারছি না।
বৃষ্টির কবিতা বৃষ্টির জলেই ধুয়ে ধুয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি, ফুটপাথে আত্মাহুতি দিয়ে কী লাভ তোমার? বরঙ আমার বুকে আশ্রয় নাও। রাত্রির মত চুপচাপ আশ্রয়।
৮।
কলিঙবেলটা সবসময় বিরক্তিকর।
এই সময়ে আরো বেশি। রহিমার মা সন্ধ্যার আগেই চলে যায় বলে আমাকেই দরজা খুলতে হয় এবঙ সুন্দর একটি সুখের হাসি হাসতে হয়। আমি মানুষটাকে দোষ দিতে পারি না আবার নিজেকে ক্ষমাও করতে পারি না। মানুষটা আমাকে ভালোই বাসে। আজ রাতে ছাদে মানুষটাকে নিয়ে বৃষ্টিবিলাস করলে কেমন হয়? অন্তত চেষ্টা করা যায়।
না। চেষ্টা করে লাভ নেই। মানুষটার টনসিলের সমস্যা। বৃষ্টি তে ভিজতে পারে না।
ডিংডং!
৯।
তালেবর আমারে ঝাপটায়া ধরছে। হপ্তায় একবার কি দুইবার। তবু তালেবরের কোনো খেদ নেই। আমি অবশ্য তালেবরকে এখন আর আলাদা করতে পারি না। কত জনেই তো ঝাপটায়া ধরে।
কয়জনের ঘাম আর বিড়ির গন্ধ মনে রাখন যায়!
তালেবর হঠাৎ থাইমা যায়। কী অইলো? তালেবর হাইসা কয়, পেলাস্টিকের ফুটা দিয়া বৃষ্টির পানি পড়তাছে।
১০।
কবিতা ধুয়ে গেছে। বৃষ্টি, তুমি আমার সব কবিতা ধুয়ে দাও কেন? তুমি তো এখন রাত্রি।
রাত্রি তো কবিতার আশ্রয়। তবু কেন ধুয়ে দাও! একটা কবিতা আমায় লিখতে দাও। শেষ কবিতা।
১১।
মানুষটা আমায় জড়িয়ে ধরেছে।
কিন্তু সে জানে না যে আমি তাকিয়ে আছি বিলবোর্ডে। বিলবোর্ডটায় বিজ্ঞাপন বদল হয়ে হয়ে গেছে। ওখানে একটা মেয়ে কয়েকদিন ধরে। ঘরের দাওয়ায় বসে বৃষ্টিভেজা দিগন্তে চেয়ে থাকে।
কার প্রতীক্ষায়? তার প্রতীক্ষা কী ফুরাবে?
১২।
আমি সজোরে বললাম, কাট!
একে একে তাকালাম প্লাস্টিকের ছাঊনির নিচে, ফুটপাথে ধুয়ে মুছে যাওয়া কবিতায় আর উচুঁ বিল্ডিঙটার জানালায়। তারপর বললাম, আপনারা প্রত্যেকেই চমৎকার অভিনয় করেছেন।
আমার পরিচয় টা বলি। আমি এই সিনেমাটার পরিচালক। আমার সিনেমাটির নাম ‘বৃষ্টি কবিতা ও কতিপয় কীটপতঙ্গ’ ।
==========================================
আমার লেখালেখি এমন আহামরি কিছু নয় যে কাওকে উৎসর্গ করলে সে খুশি তে গদ্গদ হয়ে যাবে। তবুও আমি আমার প্রায় সৃষ্টি উৎসর্গ করি। এটা আমার ভালোবাসা জানানোর একটা মাধ্যম বলা যায়। এই পরমানুগল্প টা উৎসর্গ করতে প্রথমে দু’জনের নাম মনে এসেছিলো। দীপ আর সনেট।
বৃষ্টি শুরু হলেই আমাদের তিনজনের মাথা খারাপ হয়ে যায়। আমাদের মাথা খারাপের বর্তমান অবস্থা হলো, গভীর রাতে পুকুরে নেমে তারা দেখা, চাঁদ দেখা, বৃষ্টিবিলাস করা। কিন্তু এই দুইজন কে উৎসর্গ করছি না। বৃষ্টিপ্রেমিকদের বৃষ্টিবিষয়ক গল্প উৎসর্গ না করলেও চলে।
আমার দুই রুমমেটের একজন দীপ, অন্যজন বাহাদুর।
যাকে আমরা ভালোবেসে ডাকি, ভরটেক্স বাহাদুর। পরমানুগল্প টি বাহাদুর কেই উৎসর্গ করলাম। সে যদি কোনো একরাতে আমাদের সাথে জলে নেমে যায়, তবে বুঝবো, গল্পটি সার্থক হয়েছে।
============================================
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।