একসময় দেখলাম, সবই কল্পনা, বাস্তবতায় শূন্য পৃথিবী। নিতান্তই একজন সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের বাসনা থেকে আমার এই জীবনের শুরুটা হয়েছিল। আমি যখন স্কুলে পড়ি তখন আমার ধারণাও ছিলনা আসলে আমি কি করছি। ক্লাস এইটের দিকে টের পেলাম আমার এইসমস্ত পড়াশোনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমার নতুন জাল বোনা। এর অর্থ অতি সাধারণ, নিজের বাবা মা বোন এর জাল থেকে বেড় হয়ে আমার নিজের (জন) জাল মানে বউয়ের হাতে পড়া।
এবং আমার বিবাহিত জীবন যাতে সুখে শান্তিতে চলে আমার পড়াশোনার মূল উদ্দেশ্য তাই। কিন্তু আমি এই উদ্দেশ্যে পড়াশোনা করতে রাজি নই। পড়াশোনা যদি করবোই আমার নিজের জন্য নয়, মানুষের জন্য করবো। আমার অস্তিত্ব যেন পৃথিবীর বুকে কিছু মানুষের জন্য শান্তির প্রশ্বাস নিয়ে আসে। সেই ছিল আমার লক্ষ্য।
কিন্তু জালে পড়ে গেলাম। মানে প্রেমে পড়ে গেলাম। এক নারীর প্রেমে পড়া যে কি জটিল হিসাব নিকাশের খেলা তা আর কি বলব। ইন্টারের প্রথম বর্ষ থেকে ইন্টারের শেষ অবধি আমার প্রেমের স্থায়িত্বকাল, এবং যথারীতি রেজাল্টের বারোটা।
সেই সময়টাতে উপলব্ধি করেছিলাম, আসলেই নতুন জাল বোণা কত সুখের, কত আনন্দের, এক নারীর বাহুর মধ্যে নিজেকে জড়াতে আসলে কতটা ভালো লাগে।
আমার সমস্ত চেতনা, এবং মানুষের ভালোর জন্য কিছু করব, এই ধরণের ভাবনায় আঘাত পড়ল। আমি হয়ে গেলাম, স্বার্থাবাদী এক মানুষ। নিজের স্বার্থ আমাকে পাগল করে রাখে। অন্ধ করে রাখে। তার স্বপ্ন আমার চোখের আনাচে কানাচে খেলতে থাকে।
কি অপূর্ব তার গন্ধ।
তবে তার সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর থেকে নিজের জীবনের লক্ষ্য অনেকটা বদলে গেল। আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে উঠে এলাম জনমানবের কল্যাণ সাধনের পথে। মানে মানুষের জন্য কিছু করার সে কি মহায়দ্যম আমার ভেতর। এই ব্যাপারটাও যে তাকে ভুলে থাকার জন্য একটি প্রয়াসমাত্র তাও কিঞ্চিৎ সত্য।
এরপরে আমি বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত হলাম, যারা সুযোগ পেলেই মানব বন্ধন করে থাকে। আমি সেই মানববন্ধনের অংশ হয়েছি বহুবার। অনেকসময় সেমিনার অথবা প্রতিবাদ সভায় কি হাবার মত দাঁড়িয়ে ভেবেছি, আমার এখানে আসলে কাজ কি? ওকে ভুলে থাকা, এবং দেশ উদ্ধার করা।
ব্যাপারটা তাই হতে পারত, কিন্তু পর্যায়ে ক্রমে আমি যে যে সংগঠনের সদস্য ছিলাম, তারা এক অদ্ভুত কীর্তি করল। তারা অন্যান্য কিছু মানবতাবাদী (মানববন্ধনবাদী) সংগঠনকে আমার নাম্বরখানা নিয়ে বলল, "এই ছেলেটাকে ডাকলেই আসে।
"
আমি ডাকলেই যেতে লাগলাম। এবং এ যাবতকাল পর্যন্ত এমন কোন দলের বা প্রতিষ্ঠানের সদস্য হতে পারলাম না যারা আসলেই কিছু একটা করে কিছু একটা করতে পেরেছে। শুধু মানব বন্ধন কিংবা মৌন মিছিলের এক কোণায় একটা হাবা ছেলের বোবা চরিত্রেই আমার অভিনয় ছিল।
ক্রমেই বুঝতে পারলাম এই সকল সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য আসলে মানুষের জন্য কিছু করা নয়। মানুষকে দেখানো, আর মিডিয়াতে আসা।
মানববন্ধনের একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। বৃক্ষরোপণের জন্যে যাদের উদ্দেশ্য ছিল সরকারকে স্মারক লিপি দেওয়া। আমাকে শুদ্ধ সে মানববন্ধনে মানুষ হলো সবে আটজন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি এই কয়জনে মিলে জমা দিতে যাওয়ার প্রভুত বিপদের উৎপত্তির কথা কল্পণা করে সেবার স্মারকলিপি বোগলদবা করে বাসায় ফিরে এলাম।
আজ হঠাৎ করেই একটা সংগঠনের একজন ফোন দিলেন। তিনি অতীব আনন্দিত।
তার প্রতিষ্ঠান নাকি রেজিষ্ট্রি হয়েছে। তিনি আমাকে বললেন, কাল তারা তাদের অফিসে একটা সংবাদ সম্মেলন করবে। আমাকে সেখানে তিনি দেখলে খুশি হবেন। ব্যাস এইটুকুই...
তাই আমার জীবনের সেই নায়িকার কাছে যেতে খুব ইচ্ছে করছে, যার জন্য জনহিতকর কাজ শুরু করতে গিয়েও শেষ করে ফেলেছি। আসলেই সত্য, সব সফলতার পেছনে একজন নারীর অবদান আছে! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।