#
-কি নাম তোমার?
-বেলায়েত।
-পড়াশোনা করনা?
-জি করি।
-কোন ক্লাসে পড়?
-সেভেনে পড়ি।
-এত অল্প বয়সে ভ্যান চালাও! তোমার বাবা কি করেন?
-বাবা আছে, বাসায়।
- বাসা কোথায় তোমার?
-এইতো কুয়েট রোডের পাশে।
-ভাই আপনারা কি কুয়েটে পরেন?
-হ্যাঁ
একেকটা প্রশ্ন করার সাথে সাথে ঝটপট উত্তর দিচ্ছিল। জিজ্ঞাসার জবাব দেয়াতেও যেন আনন্দ। কচি হাতে শক্তকরে হ্যন্ডেল ধরে ভ্যানটাকে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল বেলায়েত। ভাঙ্গাচোরা রাস্তা । কিন্তু কি আত্মবিশ্বাস ! দুই দুইটা ধামড়া ছেলেকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সাবলিল ভাবে।
আমি মুগ্ধ বেলায়েতে। বাজারে নেমে বখশিশ দিলাম। খুশিতে চোখে মুখে অসাধারণ দীপ্তি ছড়িয়ে পড়ছিল।
#
মাসের বড় বাজার করে ফিরছিলাম। সাথে ক্যাম্পাসের এক ছোট ভাই।
সিরিয়ালে থাকা ভ্যান রিজার্ভ করলাম। লোকটা বেশ বয়স্ক। মুখভর্তি সাদা সুন্দর দাড়ি। মাথায় সাদা টুপি। লোকটার ভ্যানে এর আগেও চড়েছি।
আজকের পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। ভ্যন ভর্তি বাজার সাথে চালের বস্তা তার উপর দু জন পুর্নবয়স্ক মানুষ। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের কোন ঘাটতি খুঁজে পাওয়া গেলনা। কিছুটা ইতস্তত করে উঠে পড়লাম। লোকটাকে জানার লোভ সামলাতে পারলামনা।
-চাচা আপনার ছেলে মেয়ে নাই? হেল্প করেনা আপনাকে?
-হাঁ আসে। দুই ছেলে দুই মেয়ে। মেয়ে দুইটার বিয়া হইয়া গেসে। বড় ছেলেরে বিয়া দিসি গত বছরের লাস্টে। আপন ভাইয়ের মেয়ের সাথে বিয়াদিসি।
ঢাকায় দোকানে কাজ করে।
লোকটাকে চাচা বললেও বয়স আমার দাদার চাইতে খুব বেশী কম হবেনা! নাম জিজ্ঞাসা করা ঠিক হবেনা বলে মনে হল। দাদা বললামনা পাছে মনখারাপ করে। কথা বলছিল খুব সুন্দর করে। স্পষ্ট, ভরাট কণ্ঠে।
-ঢাকায় কোথায়?
-টঙ্গীতে। টঙ্গী বাজারে। এখন বাসায় থাকে। ঢাকার যে অবস্থা ওর মায়ে যাইতে দেয়না।
-তাই! আমার বাসাওতো টঙ্গী বাজারের পাশে।
হেঁটে গেলে ১০- ১৫ মিনিট লাগে। আরও আপন হলাম।
-আপনারা খুলানার স্থানীয়?
-না, আমার বাসা নোয়াখালী। রামগঞ্জ। এখানে আইসি ৬৫ নে।
-বলেন কি! আমার বাসাও তো নোয়াখালী, মাইজদী। কথা বলার এক পর্যায়ে রাস্তার পাশে একটা বাসা দেখিয়ে বললেন, আমি এখানে থাকি। এপর্যায়ে আমাদেরকে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে অমূল্য কিছু উপদেশ দিলেন। অল্প সময়ে আপন করে নিলেন। নানান কথা বার্তা বলে এগিয়ে যেতে লাগলেন ভাঙ্গাচোরা রাস্তা ধরে।
নিজের সংগ্রামী জীবনের কথা শুনাচ্ছিলেন। গ্রামের বাড়িতে পাকা ঘর করবেন। এ জন্য টাকা জমাতে ভ্যান চালাচ্ছেন । এমনিতে মিল থেকে পেনশন বাবদ কিছু টাকা পান যা দিয়ে সংসারচলে যায়।
এক পর্যায়ে নিজের ছোট ছেলের কথা বলতে লাগলেন।
ছেলেটা তার মতই কর্মঠ। বাপ কা বেটা সিপাহী কা ঘোড়া। পড়াশোনার পাশাপাশি ভ্যানচালায়। সঙ্গে সঙ্গে বললাম , আপনার ছেলের নাম কি বেলায়েত? বৃদ্ধ হতভম্ব হয়ে বললেন, হাঁ। আমি বললাম , আমি তাকে চিনি।
কি গর্ব ছেলেকে নিয়ে। এমন ছেলে কয়টা হয়!!
কি অপুর্ব! আমি অভিবূত!আমি মুগ্ধ! কি সুন্দর তাদের জীবন যাপন। জীবন সংগ্রামে বাপ-বেটা হেরে যায়নি। কষ্ট সংগ্রামের মধ্যে তারা খুঁজে পেয়েছে আনন্দ। কারো কাছে হাত পাতেনি।
তারা জয়ী।
হ্যাঁ তোমরাই আসল মানুষ। তোমাদের জীবনটাই তো গর্বের। তোমরা আমাদের ও গর্ব। তোমরা রেলওয়ের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করনা।
তোমরা হলমার্কের টাকা খাওনা। তোমরা শেয়ার বাজারের হাজার কোটি টাকা মেরে খাওনা আর তোমাদের কারনে কেউ আত্মহননও করেনা। তোমরা আবুলিও কায়দায় সেতুর টাকা মেরে দাওনা। অতি সাধারণ কিন্তু সুখি তোমাদের জীবন। তোমরাই জাতিরবীর।
জাতির সম্পদ। তোমাদের শির উন্নত।
স্যালুট বেলায়েত ও বেলায়েতের বাপ তোমায়।
আব্দুর রহমান নাইম।
http://www.facebook.com/naem.arahman.1 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।