বিডি'তে থাকতে পারিবারিক ব্যবসার দেখা শোনা করতে প্রায়-ই ফেঞ্চুগঞ্জ,শ্রীমঙ্গল,মৌলভীবাজার এবং সিলেটে যাতায়াত করতে হতো।
২০০১ এর মাঝা মাঝি সময়ে আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে সিলেট থেকে ঢাকা আসছি:-
১। ভৈরব জংশনে বসে আছি ইঞ্জিন বদল হবে, ডাব বিক্রেতা,সিগারেট বিক্রেতা সবার ঝুড়ির নীচে বোতল চোখের ইশারায় বেচাকেনা!
২। বিডিয়ার জওয়ানরা (অধুনা বিলুপ্ত) হাতে স্ক্রু-ড্রাইভার নিয়ে ট্রেনের কামরার এখানে ওখানে খোঁচা-খুঁচি করলেন, এদিক সেদিক উঁকি-ঝুঁকি মেরে নেমে গেলেন।
লুঙ্গী পরা মাঝ বয়সী একজন লোক এলেন,আশ্চর্য দক্ষতায় ট্রেনের দরজার ফ্রেম (ভিতরে বেশ ফাঁপা) খুলে ফেললেন দ্রুততার সাথে ফাঁপা জায়গাটিতে দুইটি বান্ডিল রাখলেন।
মূহুর্তের মধ্যে ফকিরনি টাইপ দুজন মহিলা এসে দরজায় পিঠ দিয়ে বসে পড়লেন। ঐ লোকটিকে আর দেখলাম না।
এটেনডেন্সকে কোথাও দেখতে পেলাম না।
৩। বাইরে তাকিয়ে দেখি বিডিআর সদস্যরা একজনকে তাড়া করছে, সবাই বন্দুক উঁচিয়ে কারো পিছু নিলো।
ষ্টেশন ফাঁকা।
সেই ফাঁকে আমাদের কামরায় এক দম্পতি উঠে এলেন,হাতে বিশাল ট্রলি ব্যাগ!
শ্রীমঙ্গল থেকে ট্রেনটির প্রতিটি আসন যাত্রীতে পুরো ছিল।
ভৈরব এসেও দেখেছি সবাই আছেন।
অথচ এখন দেখি দুটো সিট ফাঁকা পড়ে আছে!
দম্পতির জন্য এই আয়োজন সবই একটা পরিকল্পনার অংশ বিশেষ!!
খুব রোমাঞ্চিত হচ্ছিলাম চোখের সামনে চোর-পুলিশ খেলা!!
৪। ট্রেন ছেড়ে দিল খিলগাঁও এসে দাড়িয়ে গেল;দম্পতি নেমে গেল, ফকিরনি টাইপ বুয়া দুজন নেমে গেল।
উঠে এলো ১৫/১৬ বছর বয়সী এক কিশোর।
মাদ্রাসা ছাত্রদের পোশাক পরনে।
মাথায় টুপি।
আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি।
কমলাপুরে ট্রেন থামবে থামবে অবস্থা ছেলেটি দ্রুততার সাথে একটি চটের ব্যাগ বের করলো,
ঝটপট দরজার ফ্রেমের ভিতরে লুকানো বান্ডিল দুটো ভরল।
তাকে আজ পুলিশে দেব এমন ভাবনা নিয়ে আমিও আমার ব্যাগ নিয়ে নীচে নামলাম।
কোথাও দেখতে পেলাম না! শত শত যাত্রীর ভিতর সে একেবারে হাওয়া!
অনেক বছর পর কথাগুলো আজ আবার মনে পড়লো। মাদ্রাসা ছাত্রের লেবেল যাকে পড়ানো হল সে কি আদৌ মাদ্রাসার ছাত্র ছিল?
ভৈরব ষ্টেশনে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী যা করেছিল তাও কি সাজানো ছিল?
নিরাপত্তা তল্লাশির পর ঐ দম্পতি ট্রেনে চেপেছিল,তাদের জন্য সিট দুটি কোথা হতে বুকিং দেয়া হয়েছিল?
আর তাদের ঐ বিশাল ট্রলি ব্যাগ গুলোতে কি ছিল?
তেজগাঁও কিম্বা খিলগাঁও এলে ট্রেন চালক কার ইশারায় এবং কাদের স্বার্থে ট্রেন থামিয়ে দেয়?
বিচ্ছিন্ন এই ঘটনাগুলো একত্রিত করলে আমরা কি দেখতে পাই?
যাদের অঙ্গুলি হেলনে এসব ঘটছে তাদের খুঁজে বের করার মত দক্ষ,স্বাধীন আর আধুনিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রত্যাশা করাটা কি আদৌ অসমীচীন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।