চিনলে মানুষ রতন,সে থাকে না আগের মতন
আমেরিকা
সাম্রাজ্যের অযৌক্তিক অবস্থান
ফিদেল কাস্ত্রো
যখন সাম্রাজ্যের অন্তর্জ্বালা চলতে থাকে, তখন সেই সাম্রাজ্য যে মানবজাতিকে কোনো বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে না, সে কথা কেউ হলফ করে বলতে পারে না।
মানবজনমের ধারা যত দিন জারি থাকবে, তত দিন প্রতিটি মানুষের পবিত্র দায়িত্ব আশাবাদী হওয়া। অন্য রকম আচরণ অগ্রহণযোগ্য। আমার মনে পড়ে, আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগের একদিনের কথা, যেদিন আমি বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা এক প্রজাতির কথা বলেছিলাম। সেই প্রজাতির নাম মানুষ।
একদল বুর্জোয়া শাসক, যাঁদের মধ্যে ছিলেন সিনিয়র বুশের (জুনিয়র বুশের চেয়ে কম অনিষ্টকর) অনুগত, নিষ্ঠাবান বিশালদেহী ও ভোজনবিলাসী জার্মান নেতা হেলমুট কোহল এবং তাঁর মতো স্বভাবের আরও কিছু রাষ্ট্রনেতা। সাম্রাজ্যের প্রতি প্রেমে তাঁরা পতিত হওয়ার আগেই আমি সেই সত্য কথাটা না বলে পারিনি। যদিও এখনো সেই সময় আসার অনেক দেরি, তবু আমার আন্তরিক বিশ্বাস, আশঙ্কাটি পুরোপুরি বাস্তব।
দুপুর ১২টা ১৫ মিনিট নাগাদ টেলিভিশন খুলে বসলাম। কেউ একজন বলেছিলেন, পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে বারাক ওবামা তখন বক্তৃতা শুরু করেছেন।
ওবামার কথা শোনায় মনোযোগ দিলাম।
প্রতিদিন আমি একগাদা খবর পড়ি অথচ কেন জানি না, তিনি যে এ সময় বক্তৃতা দেবেন, সে ব্যাপারে কোনো প্রতিবেদন আমার নজরে পড়েনি। পাঠকদের আশ্বস্ত করতে পারি, প্রতিদিন নাটকীয় সত্য ও নানা ধরনের ঘটনার ভেতর যেসব হাস্যকর ব্যাপার ও মিথ্যা আমি পড়ি, শুনি কিংবা ছবি হিসেবে দেখি, তার পরিমাণও কম নয়। এবারের বক্তৃতার গুরুত্ব ছিল অসামান্য। সমগ্র দুনিয়া যখন সাম্রাজ্যের নানা অপকর্ম, গণহত্যা, মানববিহীন বিমান থেকে প্রাণনাশী বোমা নিক্ষেপের ভার বহন করছে, সেই সময় কী বলেন ওবামা, সেটা দেখার বিষয়।
এসব অপকর্মের কথা ওবামা হয়তো ভাবতেও পারেননি কিছুদিন আগে, যখন তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এখন তো কিছু জীবন ও মৃত্যু তাঁর সিদ্ধান্তের অধীন।
ওবামা পরিস্থিতির নিয়ন্তা নন। তিনি শুধু কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দের শাসন চালান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সাংবিধানিক প্রেসিডেন্ট’কে সেই ক্ষমতা দিয়েছে দেশটির দীর্ঘকাল ধরে টিকে থাকা ব্যবস্থা।
স্বাধীনতা ঘোষণার ২৩৪ বছর পর পেন্টাগন ও সিআইএর হাতে এখন সাম্রাজ্যিক শক্তির তৈরি মৌলিক হাতিয়ারগুলো—কয়েক মুহূর্তে মানব প্রজাতিকে ধ্বংস করতে সক্ষম এমন প্রযুক্তি, বিদেশি সমাজের গভীরে ঢোকার উপায়, প্রয়োজনে অন্য রাষ্ট্রকে নির্লজ্জভাবে ভাঁওতা দেওয়া। তারা মনে করে, সাম্রাজ্যের শক্তি সীমাহীন। তারা এক শান্ত, বশীভূত দুনিয়া শাসন করতে চায়, যেখানে কোথাও কোনো গোলযোগ থাকবে না।
এই সেই আজগুবি ধারণা, যার ওপর ভিত্তি করে তারা আগামীর দুনিয়া দাঁড় করাতে চায় ‘সেখানে স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, সমান সুযোগ ও মানবাধিকারের শাসন’ কায়েম করার কথা বলা হয়। দারিদ্র্য, প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থানের (অথবা খাদ্য, খাওয়ার পানি, বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদার) ঘাটতির নিদারুণ বাস্তবতা তারা দেখতে অক্ষম।
একটি উদাহরণ দিই। কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, প্রতিবছর মাদকসংশ্লিষ্ট সহিংসতায় যে ১০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে (মূলত মেক্সিকোতে) তা ভবিষ্যতে কী রূপ নেবে। মেক্সিকো ছাড়াও মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি রাষ্ট্রে এ ধরনের সহিংসতায় অনেক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এসব দেশের মানুষের মনে আঘাত দিতে চাই না। আমার উদ্দেশ্য, শুধু প্রায় প্রতিদিন ঘটে যাওয়া বাস্তব চিত্র তুলে ধরা।
এখনই যে প্রশ্নটি তোলা দরকার তা হলো, স্পেনে তাহলে কী ঘটতে যাচ্ছে? স্পেনের প্রধান প্রধান শহরে এখন বিক্ষোভ চলছে। এমন সংগ্রামী চেহারায় জনগণ আবির্ভূত হওয়ার শুধু একটা কারণই বলি, ৪০ শতাংশ তরুণ কর্মসংস্থানহীন। ন্যাটোর সদস্য এই রাষ্ট্রে বোমা হামলা শুরু হওয়ার কোনো আশঙ্কা কি আছে?
ইংরেজি থেকে অনূদিত
ফিদেল কাস্ত্রো: কিউবার বিপ্লবের নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।