আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাস্থানগড়ে স্থানীয়দের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে বাঁচলেন মুনতাসীর মামুনরা

আমার সম্পর্কে আসলে বলার তেমন কিছু নাই। সহজ-সরল একটা পোলাপান আমি। আমি অতি সহজেই যে কাউকে বোকা বানাতে পারি। বগুড়া, ২৯ মে : গণবিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি বগুড়ার মহাস্থানগড়। স্থানীয় অধিবাসী হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ নারী-পুরুষের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে বেঁচেছেন মুনতাসীর মামুনের নেতৃত্বে আসা বিশেষ তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

পুলিশি নির্যাতন এবং বাপ-দাদার বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ আতঙ্কে থাকা বিক্ষুব্ধ জনতার বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচিতে রোববার সকাল থেকে উত্তাল হয়ে উঠে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন মহাস্থানগড়। এ বছরের শুরুতেই বগুড়ার মহাস্থান মাজার উন্নয়ন কমিটি মহিলাদের নামাজ ঘর এবং এতিমখানা নির্মাণ করতে গেলে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতর বাধা দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট মহাস্থানের প্রত্নসম্পদ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং মহাস্থানগড়ের এক বর্গমাইল এলাকার মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ, খনন এবং সংস্কারকাজ নিষিদ্ধ করে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে নির্ধারিত এলাকার মধ্যে থাকা কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার অধিবাসী তাদের বাপ-দাদার নিজস্ব সম্পত্তিতে তাদের অধিকার হারানোর আশঙ্কায় থাকেন। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞায় নির্ধারিত এলাকার প্রায় ২ হাজার ২শ’ বিঘা জমির মধ্যে স্থানীয়দের পৈত্রিক সম্পত্তি রয়েছে ১৬শ’ বিঘা।

আদালতের নিষেধাজ্ঞায় তারা এখানে দখলদারিত্ব হারাতে বসেছেন। এ ঘটনার পর থেকেই গণবিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, তাদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে তারা চাষবাস করতে পারছেন না। এমনকি রান্নার জন্য চুলা বানানো এবং মৃতের দাফনের জন্য কবর পর্যন্ত খুঁড়তে পারছেন না। নিজের জমিতে কিছু করতে গেলেই পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে নানা হয়রানি করছে।

সেই সঙ্গে তাদের বহু বছরের পৈত্রিক বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদের কথা বলায় তারা দিনে দিনে ক্ষুব্ধ হতে থাকে। এলাকাবাসী বার্তা২৪ ডটনেটকে জানিয়েছে, সরকার প্রত্নসম্পদ রক্ষার নামে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি নামমাত্র মূল্যে হুকুম দখল করে নিয়ে সেই সম্পত্তি আবার চড়াদামে সাধারণ মানুষের কাছে লিজ দেয়ার ব্যবসা শুরু করেছে। তারা বলছেন, প্রত্নসম্পদ রক্ষার জন্যই যদি আমাদের চৌদ্দ পুরুষের জমি ছাড়তে হয়, তাতে আমরা রাজি আছি। কিন্তু আমাদের জমি পানির দামে নিয়ে অন্যের কাছে চড়াদামে লিজ দেয়ার এই অবৈধ ব্যবসা আমরা মানতে পারি না। প্রত্নতাত্তিক অধিদফতর আমাদের জমি নিয়ে আমাদের উচ্ছেদ করে সেই জমিগুলো যদি সংরক্ষণ করতো, তাহলে আমারা প্রতিবাদ করতাম না।

প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতরের সঙ্গে স্থানীয় অধিবাসীদের বিরোধের এই জের ধরে চলে আসা দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভ রোববার গণবিদ্রোহে রূপ নেয়। মহাস্থানগড় পরিস্থিতি তদন্ত করতে রোববার সেখানে আসে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন, ইউনেস্কো প্রতিনিধিসহ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ তদন্ত টিম। টিম সদস্যদের সঙ্গে এলাকাবাসী কথা বলতে চাইলে তাদের কোনো কথা না শোনায় এলাকাবাসী আরো ক্ষুব্ধ হয়। এ অবস্থায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সংগঠিত হতে থাকে এবং তদন্ত কমিটিকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে এলাকার কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু বিক্ষোভ মিছিল করে এবং মহাস্থানগড়ের প্রাচীর ঘিরে বিশাল মানবঢাল তৈরি করে।

এলাকাবাসীর দাবি, তারা জীবন দেবে কিন্তু বাপ-দাদার বাড়ি থেকে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ হবে না। বিশেষ তদন্ত টিমের সদস্য অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, আমরা কোনো বিরোধে জড়ানোর জন্য এখানে আসিনি। আমরা এখানকার প্রকৃত পরিস্থিতি রিপোর্টের মাধ্যমে তুলে ধরবো। তার প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। স্থানীয়দের ধাওয়া খেয়ে একপর্যায়ে তদন্ত টিম মহাস্থান জাদুঘর গেস্ট হাউজে আশ্রয় নিলে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ নারী-পুরুষ একত্র হয়ে গেস্ট হাউজের দিকে তেড়ে আসতে থাকে।

সেখানে অবস্থানরত পুলিশ তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশি প্রহরায় মুনতাসীর মামুন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক, ইউনেস্কোর প্রতিনিধিসহ কমিটির সদস্যরা দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যান। গণবিক্ষোভ ঠেকাতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। মহাস্থানের রোববারের এই গণবিক্ষোভ দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। দিন যত যাবে এখানকার এই গণবিক্ষোভ ততই উত্তাল হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এজন্য স্থানীয় অধিবাসীদের সেখান থেকে সরানোর আগে তাদের সুষ্ঠুভাবে পুনর্বাসন না করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।