আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজ্যহীনা রাণী

আমি আমার দেশকে ভালবাসি। দেশের জন্য কাজ করতে চাই। লিখতে চাই মানুষ ও মানবতার জন্য। চার তলার সিড়ি বেয়ে পানির কলস নিয়ে উপরে উঠছে রাণী। কয়েক ধাপ উঠছে, একটু জিরিয়ে নিচ্ছে, আবার উঠছে।

চোখে মুখে রাজ্যের ক্লান্তি। মনে হচ্ছে হাত দু’টো ছিরে পরে যাবে কলসের সাথে। মেরুদন্ড সোজা হবে না আর কখনও। মাথাটাও ধরেছে প্রচন্ড। সেই সকাল ছ’টায় ঘুম থেকে উঠেছে।

এরপর একটু বসার সময়ও পায়নি। শুধু কাজ আর কাজ। গত রাত থেকে টেপে পানি আসছে না। মটর নষ্ট হয়ে গেছে। সকাল থেকে কয়েক বার সেপ্টি ট্যাংকি থেকে পানি তুলতে হয়েছে।

আরও বিশ কলস তুলতে হবে। বাসার সবার গোছলের পানির ব্যবস্থা আজ রাণীকে করতে হবে। বাসায় মেহমান আসবে তাই বাজার থেকে অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগ বয়ে আনতে হয়েছে। কাপড় কাচা, ঘর মোছা, আপাকে রান্নার কাজে সাহায্য করা, ঘর সাজানো, বাসন মাজা, যেন কাজ শেষই হচ্ছে না। একর পর এক কাজ সমুদ্রের স্রোতের মত ধেয়ে আসছে রাণীর দিকে।

রাণীর বয়স দশ বছর। বাবা মা কেউ বেঁচে নেই। থাকত খালার সাথে মোহাম্মদ পুর বস্তিতে। ওকে নিয়ে খালা খালুর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত। একদিন খালা এই বাসায কাজ করতে দিয়ে গেছেন।

তখন থেকে এখানেই আছে রানী নামের এই নিঃস্ব মেয়েটি। হেলাল সাহেব এসেছেন বন্ধুর বাসায় বেড়াতে। অনেক দিন পরে দেশে আসলেন। প্রবাসে থাকেন প্রায় পঁচিশ বছর। দেশে আসলে পুরানো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সময কাটান।

আজ এসেছেন সেই স্কুল জীবনের বন্ধু খুরশিদের বাসায়। খুরশিদ সাহেব পুরানো বন্ধুকে কাছে পেয়ে খুব আনন্দিত । জম্পেস আড্ডা চলছে দু’বন্ধুর। তখনই কলস নিয়ে প্রবেশ করল রাণী। কলস রাখতেই কিছু পানি উপচে পরে ভিজিয়ে দিল দামী কার্পেট।

প্রচন্ড রেগে গিয়ে ধমক দিলেন খুরশিদ সাহেব। ভয়ে জড়সড় রাণী কলস নিয়ে চলে গেল ভিতরের রুমে। খুরশিদ সাহেবের খুব ইচ্ছে করছিল কঁষে এক চড় বসিয়ে দিতে রাণীর গালে। কিন্তু বন্ধু সমনে বলে পারলে না। মুখে কৃত্রিম হাসি নিয়ে তাকালেন হেলাল সাহেবের দিকে।

হেলাল সাহেব অপ্রস্তুত হলেন কিন্তু কিছু বলতে পারলেন না। আবার মেতে উঠলেন আড্ডায়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে। খাওয়া দাওয়া, রেস্ট, আড্ডা সবই শেষ। এবার বিদায়ের পালা।

বন্ধুকে এগিয়ে দিতে বাইরে এসেছেন খুরশিদ সাহেব। একটি টি স্টলে বসে চা খাচ্ছেন দুই বন্ধু। একটু দুরে একই রকম পোশাক পরা দুই কিশরী কাগজ কুড়াচ্ছে। প্রচন্ড কৌতুহল নিয়ে দেখছেন হেলাল সাহেব। “কিরে কি করস।

চকলেট খাবি? এদিকে আয়?” খুব মমতা মাখা কন্ঠে ডাকলেন হেলাল সাহেব। লাজুক ভঙ্গিতে কাছে আসল শিশু দু’টি। চকলেট এগিয়ে দিতেই একে অপরের মুখে তাকিয়ে ইতস্ততার সাথে হাতে নিল। “তোরা দুইজন কি বইন লাগস?” জানতে চাইলেন হেলাল সাহেব। মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল শিশু দু’টি।

“তোগো মইদ্দে বড় কে?” “পুস্প বড়” “তোর নাম কি?” “মালা” “পুস্প তোর কত দিনের বড়?” “তিন মাসের”। মালার কথায় একটু অবাক হলেন হেলাল সাহেব। “তোরা তাইলে সৎ বইন। ” হাসি মুখে বললেন হেলাল সাহেব। “না।

মালার মায় বস্তিতে আমাগো পাশ্বের ঘরে থাকত। ওর বাবা নাই। মালারে ছোড রাইখা ওর মায়ও মইরা গেছে। তহন আমার মায় ওরে আমাগো বাসায় লইয়া আইছে। ” পুস্প বলল।

“তোর বাবা কি করে?” উৎসুক কন্ঠে জনতে চাইলেন হেলাল সাহেব। “আমারও বাবা নাই। আমাগো ছাইরা কই যেন চইলা গেছে। ” ব্যাথিত কন্ঠে বলল পুস্প। হেলাল সাহেব দুঃখিত হলেন।

উদাস মনে কি যেন ভাবছেন। “ওই পুস্প ইস্কুলে যাইবি না? তাড়াতাড়ি ল। দেরি অইয়া যাইবতো। ” মালা বলল। “তোরা দুইজন স্কুলে যাস?” মালার কথায় সম্মিত ফিরে পেয়ে বলল হেলাল সাহেব।

“হ। মায় কইছে আমাগো দুই বইনেরে পড়া লেহা কইরা অনেক বড় অইতে অইব। ” বলে মালার হাত ধরে দ্রুত দৌড় দিল পুস্প। হেলাল সাহেব ওদের চলে যাওয়া পথের দিকে তকিয়ে আনমনে বললেন “আহারে!! এক অসহায় কিভাবে আরেক অসহায়কে আপন করে নিছে...”। খুরশিদ সাহেব খুব মনোযোগ দিয়ে বন্ধুর কান্ড কারখানা দেখছিলেন।

হেলাল সাহেবের কথা গুলো প্রচন্ড ভাবে নাড়া দিল তার বিবেক কে। কেমন যেন অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। চোখের সমনে ভেসে উঠল রাণীর অসহায় মুখ। স্মৃতির পাতা উল্টে বেরিয়ে আসছে রাণীর সাথে তার ব্যাবহারের কিছু খন্ডচিত্র। নিজেকে এখন মানুষ ভাবতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.